ডেথ নোট (জাপানি: デスノート দেসু নোওতো) একটি জাপানীএনিমে। এটি মূলত জাপানী ম্যাঙ্গাকা সুগুমি ওহতা রচিত জাপানীম্যাংগা সিরিজ ছিল। পরবর্তীতে তাকে এনিমেতে রুপ দেয়া হয়েছে। কাহিনীটি নির্মিত হয়েছে উচ্চাভিলাষী এক ছাত্রকে কেন্দ্র করে। অতিপ্রাকৃত একটি ডেথ নোটের সাহায্যে সে পৃথিবীর সকল অপরাধীর বিচার করতে শুরু করে এবং নিজেকে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর ঈশ্বর হিসাবে মনে করতে থাকে। ডেথ নোট মৃত্যুর দেবতাদের ব্যবহৃত একধরনের ডাইরি। এই ডাইরিতে যদি কোন মানুষের নাম লেখা হয় তাহলে সে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মারা যায়।
ডেথ নোট প্রথম শুরু হয় ম্যাংগা সিরিজ হিসেবে । মে, ডিসেম্বর, ২০০৩ সালে ১২ পর্ব বিশিষ্ট ম্যাংগা সিরিজটি সাপ্তাহিক সোনেন জাম্প পত্রিকাটিতে সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়। ম্যাংগাটির কাহিনীর উপর ভিত্তি করে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়। চলচ্চিত্রটি জাপানে মুক্তি পায় জুন ১৭, ২০০৬ তারিখে। একই কাহিনীর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় একটি এনিমে সিরিজ। এনিমে সিরিজের কাহিনী লিখেছেন নিশিও ইজিন। এনিমে সিরিজটি জাপানে প্রথমবারের মত প্রদর্শিত হয় আগস্ট ১, ২০০৬ তারিখে।
মেধাবী ছাত্র ইয়াগামি লাইতো। একটা সময় জীবন তার কাছে বিরক্তিকর হয়ে দেখা দেয়। যেমনটা দেখা দেয় মৃত্যর দেবতা বা শিনিগামিরিউকের কাছে। বিরক্তি কাটাবার জন্য সে মানুষের জগতে ফেলে দেয় একটা ডেথ নোট। ইচ্ছা মানুষের কর্মকাণ্ড দেখার। কে ডেথ নোটটা পাবে তার ঠিক না থাকায় ব্যবহারের নিয়মাবলি লিখে দেয়া হয় ইংরেজিতে। আর এই ডেথ নোটটাই পায় লাইতো। সে প্রথমে বিশ্বাস না করলেও মজা করার জন্য খবরে প্রচারিত এক খুনীর নাম তাতে লিখে রাখে। নিয়ম অনুযায়ী লোকটির মারা যাবার কথা ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে। যেহেতু সে কোন কারণ লিখেনি তাই মৃত্য হবে হৃদ যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে। পরের দিন সকালে পত্রিকায় লোকটির মৃত্যর খবর দেখে লাইতো ডেথ নোটটা নিয়ে ভাবা শুরু করল। তার ইচ্ছাকৃত প্রথম পরিক্ষার শিকার হয় সেদিন রাস্তায় এক কিশোরীকে উত্যক্তকারী একদল গুণ্ডার দলনেতা। সেই থেকে লাইতো তার পরিকল্পনা শুরু করে। সে ভাবতে থাকে এভাবেই একদিন সে পৃথিবীর সকল পাপী মানুষদের মেরে ফেলবে। নতুন পৃথিবীতে থাকবে তার পছন্দ করা মানুষেরা। সে হবে সেই পৃথিবী ঈশ্বর। বাবা পুলিশের বড় কর্মকর্তা হবার সুবাদে সে হাতের কাছেই পেতো অপরাধীদের সকল তথ্যাবলী। ডেথ নোট দিয়ে মানুষ মারার জন্য দরকার দুটি জিনিসের। প্রথমটি হলো যাকে মারা হবে তার নাম অপরটি তার চেহারা । কারো চেহারা মনে করে যদি তার নাম ডেথ নোটে লেখা হয় তাহলেই সে মৃত্য বরণ করবে। একই নাম বিশিষ্ট অন্য কেউ তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেনা। এদিকে অপরাধীদের হঠাৎ করে এই মৃত্যুর হার জাপানী পুলিশ বাহিনীর টনক নড়িয়ে দেয়। তারা এই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কোন কুল কিনারা করতে পারেনা। তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে বিখ্যাত গোয়েন্দা এল । শুরু হয় এল আর লাইতোর বুদ্ধির খেলা।
স্কুল ছাত্র। তার মেধার চেয়ে সবচেয়ে বড় যে ব্যাপার তা হলো তার বুদ্ধি। ডেথ নোট এর আগেও অনেকবার মানুষের হাতে পরেছিল। কিন্তু লাইতোর মত এত পরিকল্পনা মাফিক কেউ এটাকে ব্যবহার করতে পারেনি। লাইতো নোটটি পেয়ে প্রথমেই বিশ্বের সব সন্ত্রাসীদের মারা শুরু করে। কিন্তু তাদের মৃত্যু আইনের মাধ্যমেই হওয়া উচিত বলে আইসিপিও ও জাপান পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ তাকে খুঁজে বের কারার চেষ্টা শুরু করে। পুলিশের সাহায্যে এগিয়ে আসে বিশ্বসেরা গোয়েন্দা এল। এল এবং লাইতোর মধ্যে লড়াই শুরু হয়ে যায়। কখনও এল-এর ফাঁদে পড়ে যেতে থাকে লাইতো, আবার কখনওবা লাইতোর কাছে হেরে যায় এল। এক সময় লাইতো তার প্রায় সব শত্রুকে নিশ্চিহ্ন করতে সমর্থ হয়। সে স্বপ্ন দেখতে থাকে একটি নতুন পৃথিবীর যেখানে কোন সন্ত্রাসী খাকবেনা, সে যাদের চাবে তারাই সেই পৃথিবীতে থাকতে পারবে। আর লাইতো হবে সেই নতুন পৃথবীর ইশ্বর।
এল
পৃথিবীর সেরা গোয়েন্দা। তার কাজ কিরাকে শনাক্ত করে তাকে গ্রেফতার করা। এনিমিতে লাইতো তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। বিভিন্ন পরিকল্পনার দ্বারা সে সব সময় লাইতোকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে। এল এর বেশ কিছু আকর্ষণীয় ব্যাপার আছে। বসার ভঙ্গিটি অভিনব, সবসময় দুই পা চেয়ারের উপর তুলে হাটুতে দুই হাত রেখে বসে; যেকোন কাগজ বা বস্তু ধরে চার আঙ্গুলে এমনভাবে যেন বস্তুটি হাত থেকে ঝুলে আছে। আর মোবাইল ধরে দুই আঙ্গলে। এক্ষেত্রেও মনে হয় হাত থেকে মোবাইলটি ঝুলে আছে। কিরার তদন্তের আগে এল বিভিন্ন সময় গোয়েন্দা সংস্থাকে সাহায্য করলেও সে কখনো কারো সামনে আসেনি। স্বয়ং পুলিশ কমিশনারও তার সম্পর্কে কিছু জানতেননা। কিন্তু কিরার তদন্তের সময় সে তদন্তকারী দলটিকে দেখা দেয়। কিরাকে ধরার জন্য এল বিভিন্ন সময় তার জীবনের ঝুঁকি নেয়। এল-এর বেড়ে উঠার বিষয়টিও চমকপ্রদ। তার একমাত্র সহযোগী ওয়াতারি ছোটবেলায় তাকে এক এতিমখানায় নিয়ে গিয়েছিল, উল্লেখ্য ছোটবেলাতেই তার বাবা মা মারা যায়। সেই এতিমখানাতেই তার বুদ্ধির বিকাশ ঘটে। যাহোক, কিরা এবং এল-এর দ্বন্দ্বই ছিল এনিমের মূল আকর্ষণ। কখনও এল জিতে যায় আবার কখনওবা কিরারুপী লাইতো। যদিও শেষ পর্যন্ত এল এর বুদ্ধির কাছে লাইতোর হার মানতে হয়।
আমানে মিসা
জাপানের জনপ্রিয় মডেল। তার পরিবারের সবাই সন্ত্রাসীর হাতে খুন হয়। খুনীকে মিসা নিজের চোখে সন্ত্রাসীকে শনাক্ত করার পরও বিচারে সে ছাড়া পেয়ে যায়। বাবা মা মরা এই মেয়েকে একজন শিনিগামি (ডেথ গড) প্রচন্ড পছন্দ করতেন। একবার সে এক ধর্ষকের দ্বারা আক্রান্ত হয়। উপর থেকে এই ঘটনা লক্ষ্য করছিলেন সেই শিনিগামি। একজন শিনিগামি শুধুমাত্র কোন মানুষের আয়ু যখন শেষ হয় তখনি তার নাম ডেথ নোটে লিখে তাকে মেরে ফেলতে পারেন। কিন্তু আয়ু শেষ হবার আগেই কোন মানুষের নাম যদি শিনিগামি তার ডেথ নোটে লিখে তাকে মেরে ফেলে তাহলে ওই সাথে সাথে সেই শিনিগামিও মারা যায়। আক্রান্ত মিসাকে বাচাঁবার জন্য শিনিগামি তার জীবন উৎসর্গ করেন। আর মিসাকে দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান আরেক শিনিগামি রেমকে। তার মৃত্যর পর তার ডেথ নোটের মালিক হয় মিসা। এই ডেথ নোট পেয়ে মিসা হয়ে উঠে দ্বিতীয় কিরা। সমাজের প্রচলিত আইন মিসার বাবা মায়ের হত্যাকারীর বিচার করতে না পারলেও তার বিচার করে কিরা। কিরা কর্তৃক হত্যাকারীর বিচার হবার পর মিসা কিরার উপর দূর্বল হয়ে পড়ে। তাই ডেথ নোট পাবার পর সে প্রথম কিরার সাথে দেখা করার জন্য পাগল হয়ে যায়। তার বিভিন্ন দূর্বল পরিকল্পনার কারণে লাইতো (কিরা) তার ঊপর বিরক্ত হয়। প্রথম কিরা কে জানার পর আমানে মিসা তার সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করে এবং তাকে ভালোবাসার প্রস্তাব দেয়। তখন লাইতো জানতে পারে আমানে মিসা তার চেয়ে ক্ষমতাবান। কারণ মিসা তার অবশিষ্ট জীবনের অর্ধেককের বিনিময়ে শিনিগামি চোখের মালিক হয়ছে শুধুমাত্র তাকে খুঁজে বের করার জন্য। লাইতো তাই মিসাকে নিজের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করার জন্য তার ভালোবাসার প্রস্তাবে রাজি হয়।
নিয়ার
এল মারা যাওয়ার পর, লাউতো এল-এর নাম নিয়ে কাজ করছিল। কিন্তু এক বছরের মাথায় এল-এর ইনস্টিটিউটে খবর চলে যায় যে এল মারা গেছে। এল-এর প্রধান উত্তরসূরী ছিল নিয়ার। অবশ্য নিয়ার ও মেলো কেই কারও চেয়ে কম ছিলনা, তাই চিফ তাদেরকে একসাথে কাজ করার প্রস্তাব দেয়। এতে মেলো অস্বীকৃতি জানিয়ে চলে যায়। নিয়ার হয় এল-এর উত্তরসূরী। সে এফবিআই ও আইসিপিও-এর সাথে মিলে কিরা বিষয়টি তদন্তের জন্য 'এসপিকে নামক একটি সংস্থা গঠন করে। এসপিকে'র প্রধান হয় নিয়ার। এল-এর মতো নিয়ারের চালচলনেও কিছু অস্বাভাবিকতা ছিল। যেমন: সে এক পা চেয়ারের উপর তুলে বসে, যেখানো এল দুই পা-ই উপরে তুলে রাখতো। এল যেখানে সবসময় মিষ্টি জাতীয় ভাবার খেতো, সেখানে নিয়ার সবসময় ছোট ছোট ব্লক দিয়ে বিশালায়তন দালান-কোঠা নির্মাণ করে। যাহোক, এর পর থেকে নিয়ারের সাথে কিরার যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল মুখ্য।
যার নাম ডেথ নোটে লেখা হবে তার চেহারা মনে রাখতে হবে। এর ফলে একই নাম ধারণকারী একাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হবে না।
কারও নাম লেখার পরবর্তী ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে তার মৃত্যুর কারণ লেখা হলে, উক্ত ব্যক্তি সেই কারণেই মারা যাবে।
কোন কারণ না লেখা হলে সে কেবল হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যাবে।
কারণ লেখা হলে লিখার পরবর্তী ৬ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে মৃত্যুর আগে সে কি করবে তা লিখতে হবে। তাহলে সে ঐ কাজগুলো করে তারপরই মারা যাবে।
এই পাঁচটি নিয়ম মেনেই লাইতো তার কাজ করতে থাকে। পরবর্তীতে ডেথ নোটের আরও কিছু নিয়ম সে দেখতে পায়। এগুলো রিউক লিখে দিয়েছিল। অন্য পাতায় এ নিয়মগুলো ছিল। এনিমের বিভিন্ন পর্বের ফাঁকে ফাঁকে নিয়মগুলো দেখানো হয়েছে। এই নিয়মগুলো হচ্ছে:
এই নোটটি যখনই পৃথিবীর মাটি স্পর্শ করবে বা পৃথিবীতে পৌঁছাবে তখন থেকে এটি মানুষের পৃথিবীর সম্পত্তি বলে বিবেচিত হবে।
পৃথিবীতে ডেথ নোটের মালিক মূল মালিক তথা শিনিগামির অবয়ব ও কণ্ঠ চিহ্নিত করতে পারবে।
যে মানুষ ডেথ নোট ব্যবহার করবে সে স্বর্গ বা নরক কোথাও যেতে পারবেনা। মৃত্যুর পর সে কেবল শূন্য দেখবে।