তড়িৎ বিশ্লেষ্য হচ্ছে এমন একটি পদার্থ যা কোন পোলার দ্রাবকে (যেমন- পানি) দ্রবীভূত করলে তড়িৎ-পরিবাহী দ্রবণ তৈরি করে। দ্রবীভূত তড়িৎ বিশ্লেষ্য বিশ্লিষ্ট হয়ে ক্যাটায়ন (ধনাত্মক আয়ন) ও অ্যানায়নে (ঋণাত্মক আয়ন) বিভক্ত হয়, যা দ্রবণে সুষমভাবে বিন্যস্ত থাকে। তাড়িতিকভাবে, এমন দ্রবণ নিরপেক্ষ। এমন দ্রবণে তড়িৎ বিভব প্রয়োগ করা হলে, দ্রবণের ক্যাটায়নগুলো ঐ তড়িৎদ্বারের দিকে যায়, যার ইলেকট্রন প্রাচুর্য আছে; অন্যদিকে অ্যানায়নগুলো সেই তড়িতদ্বারের দিকে যায়, যার ইলেকট্রন ঘাটতি আছে। দ্রবণের মধ্যে অ্যানায়ন ও ক্যাটায়নের এমন বিপরীতমুখী গতি তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি করে। অধিকাংশ দ্রবণীয় লবণ, অম্ল ও ক্ষারক এর অন্তর্ভুক্ত। কিছু কিছু গ্যাস, যেমন- হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl), উচ্চ তাপমাত্রা অথবা নিম্ন চাপে তড়িৎ বিশ্লেষ্য হিসেবে কাজ করতে পারে। কিছু কিছু জৈবিক (যেমন- ডি.এন.এ, পলিপেপটাইড) এবং কৃত্রিম পলিমার (যেমন- পলিস্টাইরিন সালফোনেট) এর বিশ্লেষণ থেকেও তড়িৎ বিশ্লেষ্য দ্রবণ পাওয়া যেতে পারে, যাদেরকে "বহু-আণবিক তড়িৎবিশ্লেষ্য" (poly-electrolytes) বলা হয়, এবং এদের আধানযুক্ত কার্যকরী মূলক থাকে। কোন পদার্থ যা দ্রবণে দ্রবীভূত হয়ে আয়নে বিশ্লিষ্ট হয়, তাদের তড়িৎ পরিবহনের ক্ষমতা থাকে। সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, এবং ফসফেট এমন তড়িৎ বিশ্লেষ্যের উদাহরণ।
চিকিৎসাক্ষেত্রে, কোন ব্যক্তির দীর্ঘায়িত বমি বা ডায়রিয়া হলে, এবং শ্রমসাধ্য ক্রীড়া বিষয়ক ক্রিয়াকলাপের প্রতিক্রিয়া হলে, তড়িৎ বিশ্লেষ্য পুনঃস্থাপন করা প্রয়োজন হয়। বাণিজ্যিক তড়িৎ বিশ্লেষ্য দ্রবণ পাওয়া যায়, বিশেষ করে অসুস্থ শিশুদের (যেমন- মৌখিক পুনরুদন (re-hydration) দ্রবণ, সুয়েরো ওরাল, বা পিডিয়ালাইট) এবং ক্রীড়াবিদদের জন্য (ক্রীড়া পানীয়সমূহ)। ক্ষুধামান্দ্য (anorexia) ও অতিভোজন (bulimia) রোগের চিকিৎসায় তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মাত্রা পর্যবেক্ষণ বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা থেকে দেখতে পাই, সিলভার কপার অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতু গ্রাফাইট ও গ্যাস কার্বনের মতো অধাতু সালফিউরিক অ্যাসিড নাইট্রিক এসিড প্রভৃতি এসিড কস্টিক সোডা কস্টিক পটাস প্রভৃতি ক্ষার ও সোডিয়াম ক্লোরাইড ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন। এগুলিকে তড়িৎ পরিবাহী বলা হয়। এদের মধ্যে ধাতু ও গ্রাফাইট এর মত অধাতুগুলি মুক্ত ইলেকট্রনের সাহায্যে তড়িৎ পরিবহন করে এগুলিকে ইলেকট্রণীয় পরিবাহী বলা হয়। অ্যাসিড ক্ষার ও লবণ বিগলিত অবস্থায় বা জলীয় দ্রবণে বিপরীত তড়িৎযুক্ত আয়নে নিয়োজিত হয় এবং এই আয়ন গুলির সাহায্যে তড়িৎ পরিবহন করে এগুলিকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ বলা হয়।
কাজ রবার বাতাস প্রভৃতি পদার্থ সাধারণ অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে না। এইগুলিকে তড়িৎ অপরিবাহী পদার্থ বলা হয় আবার ইথান নল বেনজিন চিনির জলীয় দ্রবণ ও তড়িৎ পরিবহন করে না এইসব যৌগকে তড়িৎ ও বিশ্লেষ্য পদার্থ বলা হয়।
8.3.2
তীব্র ও মৃদু তড়িৎ বিশ্লেষ্য:
যেসব যৌগিক পদার্থ বিগলিত অবস্থায় অথবা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিপরীত আনন্দযুক্ত আয়নে নিয়োজিত হয় বিয়োজিত অয়নের সাহায্যে তড়িৎ পরিবহন করে এবং তড়িৎ পরিবহনের সময় নির্দিষ্ট তড়িৎদ্বারে রাসায়নিকভাবে উৎপন্ন করে তাদের তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ বলা হয়। উদাহরণ:- ১)অ্যাসিড:HCL,H2SO4.
২) ক্ষার:NaOH,Ca(OH)2 ৩) লবণ:NaCL,KCL
তড়িৎ বিশ্লেষ্য শব্দটির ইংরেজি পরিভাষা electrolyte শব্দটির উদ্ভব হয়েছে গ্রীক lytós থেকে, যার অর্থ "খোলা বা বন্ধনমুক্ত করা যায় এমন"।
স্ভান্তে আরেনিউস তার ১৮৮৪ সালের গবেষণামূলক নিবন্ধে, যার জন্য তিনি ১৯০৩ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন, ব্যাখ্যা করেন যে, কঠিন স্ফটিকসদৃশ লবণ দ্রবীভূত হলে তা বিয়োজিত হয়ে আধানযুক্ত কণার জোড় তৈরি করে।[১][২][৩][৪]
আরেনিউসের ব্যখ্যা ছিল এই যে, দ্রবণ তৈরির সময় লবণ বিয়োজিত হয়ে আধানযুক্ত কণায় পরিণত হয়, বহু বছর আগেই মাইকেল ফ্যারাডে যার নাম দিয়েছিলেন “আয়ন”। ফ্যারাডের বিশ্বাস ছিল যে, তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আয়ন তৈরি হয়। আরেনিউস প্রস্তাব করেন যে, তড়িৎ প্রবাহের অনুপস্থিতিতেও লবণের দ্রবণে আয়ন বিদ্যমান থাকে। এজন্য তিনি প্রস্তাব করেন যে, দ্রবণে রাসায়নিক বিক্রিয়া আদতে আয়নসমূহের মধ্যে বিক্রিয়া।[২][৩][৪]
তড়িৎ বিশ্লেষ্য দ্রবণ সাধারণত তৈরি হয় যখন কোন লবণকে কোন দ্রাবক, যেমন- পানিতে মেশানো হয় এবং দ্রাবক ও দ্রবের অণুসমূহের মধ্যে তাপগতীয় মিথষ্ক্রিয়ার কারণে প্রতিটি উপাদান বিয়োজিত হয়ে যায়, যে প্রক্রিয়ার নাম “দ্রবণীকরণ” (solvation)। উদাহরণস্বরূপ, যখন খাবার লবণ (সোডিয়াম ক্লোরাইড), NaCl, পানিতে মেশালে, লবণ (কঠিন) এর উপাদান আয়নে বিশ্লিষ্ট হয়ে যায়, বিশ্লেষণ বিক্রিয়া অনুসারে,
পানির সাথে বিক্রিয়া করেও কোন পদার্থের দ্বারা আয়ন তৈরি করা সম্ভব। যেমন- কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস পানিতে দ্রবীভূত হয়ে একটি দ্রবণ তৈরি করে যেখানে হাইড্রোনিয়াম, কার্বোনেট, এবং হাইড্রোজেন কার্বোনেট আয়ন থাকে।
গলিত লবণও তড়িৎ বিশ্লেষ্য হতে পারে, যেমন উদাহরণস্বরূপ, যখন সোডিয়াম ক্লোরাইড বিগলিত অবস্থায় থাকে, ঐ তরল লবণও তড়িৎ পরিবহন করে। বিশেষত, আয়নিক তরলসমূহ, যারা হচ্ছে গলিত লবণ যাদের গলনাংক ১০০°C এর নিচে[৫], তারা উচ্চ-পরিবাহিতা সম্পন্ন অ-জলীয় তড়িৎ বিশ্লেষ্য এবং এ কারণে জ্বালানি কোষ ও ব্যাটারিতে এদের বহুধা ব্যবহার রয়েছে।[৬]
কোন দ্রবণে দ্রবীভূত তড়িৎ বিশ্লেষ্যকে “গাঢ়” বলে বর্ণনা করা যায় যদি তার আয়নের ঘনত্ব বেশি থাকে, অথবা “লঘু” বলা যায় যদি ঘনত্ব কম হয়। যদি কোন দ্রব অধিক অনুপাতে বিশ্লিষ্ট হয়ে মুক্ত আয়ন গঠন করে, ঐ তড়িৎ বিশ্লেষ্যটি তীব্র/শক্তিশালী; যদি অধিকাংশ দ্রব বিয়োজিত না হয়, ঐ তড়িৎ বিশ্লেষ্যটি দুর্বল। তড়িৎ বিশ্লেষণ ব্যবহার করে তড়িৎ বিশ্লেষ্যের ধর্মাবলি কাজে লাগিয়ে দ্রবণে উপস্থিত গঠনকারী উপাদান এবং যৌগসমূহ নিষ্কাশন করা যায়।
মৃৎক্ষার ধাতুসমূহ, উপাদান আয়নসমূহের মধ্যে তীব্র আকর্ষণের কারণে, শক্তিশালী হাইড্রক্সাইড গঠন করে, যেগুলো পানিতে স্বল্প-দ্রবণীয়। এ কারণে তাদের প্রয়োগ শুধুমাত্র যেক্ষেত্রে উচ্চ-দ্রবণীয়তা আবশ্যক নয়, সেসব ক্ষেত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।[৭]
আরও দেখুন: তড়িৎ-রাসায়নিক আনতি এবং পানি-তড়িৎ বিশ্লেষ্য ভারসাম্যহীনতা
শারীরতত্ত্বে, প্রাথমিক তড়িৎ বিশ্লেষ্য আয়নগুলো হচ্ছে- সোডিয়াম (Na+), পটাশিয়াম (K+), ক্যালসিয়াম (Ca2+), ম্যাগনেসিয়াম (Mg2+), ক্লোরাইড (Cl−), হাইড্রোজেন ফসফেট (HPO42−), এবং হাইড্রোজেন কার্বোনেট (HCO3−)। তড়িৎ আধানের চিহ্ন যোগ(+) ও বিয়োগ (-) দ্বারা বোঝানো হয় যে, পদার্থটি আয়নিক প্রকৃতির এবং ইলেকট্রন বণ্টনে অসামঞ্জস্য আছে, যা রাসায়নিক বিশ্লেষণের পরিণতি। বহিঃকোষীয় প্রবাহী পদার্থের মধ্যে প্রাপ্ত তড়িৎ বিশ্লেষ্যগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে সোডিয়াম, এবং পটাশিয়াম হচ্ছে প্রধান অন্তঃকোষীয় তড়িৎ বিশ্লেষ্য[৮]; উভয়ই প্রবাহী ভারসাম্য ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অপরিহার্য।[৯]
সকল জ্ঞাত উচ্চশ্রেণির জীবে অন্তঃকোষীয় ও বহিঃকোষীয় পরিবেশের মধ্যে সূক্ষ্ম ও জটিল ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। বিশেষ করে, তড়িৎ বিশ্লেষ্যগুলোর যথাযথ অভিস্রবণ ঢাল অক্ষুণ্ণ রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। এমন ঢাল শরীরের পানিযোজন ও একই সাথে রক্তের pH কে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রণ করে, এবং স্নায়ু ও পেশির ক্রিয়াকলাপের জন্যও অপরিহার্য। জীবিত প্রজাতিসমূহের মধ্যে বিদ্যমান নানা কলাকৌশল দ্বারা তড়িৎ বিশ্লেষ্যসমূহের ঘনত্ব কঠিন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা হয়।
পেশিকলা ও নিউরন উভয়ই শরীরের তড়িৎ কলা হিসেবে বিবেচিত হয়। বহিঃকোষীয় প্রবাহী বা আন্তঃকোষীয় প্রবাহী, এবং অন্তঃকোষীয় প্রবাহীর মধ্যকার তড়িৎ বিশ্লেষ্যের ক্রিয়াকলাপের দ্বারা পেশি ও নিউরন সচল হয়। কোষ ঝিল্লিতে সংবদ্ধ “আয়ন পথ” নামক বিশেষায়িত প্রোটিন কাঠামোর মধ্য দিয়ে তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ ঝিল্লিতে প্রবেশ করতে বা নির্গত হতে পারে। যেমন- পেশি সংকোচন নির্ভর করে ক্যালসিয়াম (Ca2+), সোডিয়াম (Na+), এবং পটাশিয়াম (K+) এর উপস্থিতির ওপর। এসব তড়িৎ বিশ্লেষ্য পর্যাপ্ত মাত্রায় না থাকলে, পেশি দৌর্বল্য অথবা মারাত্মক পেশি সংকোচন ঘটতে পারে।
মুখ দিয়ে, অথবা জরুরি ক্ষেত্রে, শিরাপথ দিয়ে তড়িৎ বিশ্লেষ্যবাহী-পদার্থ প্রবিষ্ট করে তড়িৎ বিশ্লেষ্যের ভারসাম্য রক্ষা করা হয়, এবং তা হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, আর সাধারণত অতিরিক্ত মাত্রায় থাকলে বৃক্ক তা নিষ্কাশন করে। মানবদেহে তড়িৎ বিশ্লেষ্যের সাম্যাবস্থা নিয়ন্ত্রিত হয় মূত্র-হ্রাসকারী হরমোন (anti-diuretic hormones), অ্যালডোস্টেরন (সোডিয়াম শোষণকারী হরমোন) এবং প্যারাথাইরয়েড হরমোন (ক্যালসিয়াম নিয়ন্ত্রক হরমোন)- এর মাধ্যমে। তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মারাত্মক অস্বাভাবিকতা, যেমন- পানিশূন্যতা ও অতিরুদন, হৃদযন্ত্রজনিত এবং স্নায়বিক জটিলতার কারণ হতে পারে, এবং দ্রুত নিরসন করা না হলে, জরুরি চিকিৎসার দরকার হতে পারে।
চিকিৎসা-প্রযুক্তিবিদগণ কর্তৃক আয়ন-নির্দিষ্ট তড়িৎদ্বার দ্বারা রক্ত পরীক্ষা অথবা মূত্র-বিশ্লেষণের মাধ্যমে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পরিমাপ করা একটি গতানুগতিক রোগ-নির্ণয় পদ্ধতি। রোগীর চিকিৎসার ইতিহাস বিশ্লেষণ ব্যতীত এইসব মানের ব্যাখ্যা করা অনেকটাই মূল্যহীন, এবং যুগপৎভাবে বৃক্কীয় কার্যকলাপের পরিমাপ ছাড়া অনেক সময় তা অসম্ভব। তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্যে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের মাত্রাই অধিকাংশ সময় পরিমাপ করা হয়। যেহেতু ক্লোরাইডের মাত্রা সহজাতভাবেই সোডিয়ামের মাত্রার সাথে সম্পর্কিত, সেহেতু ধমনিবাহিত রক্তে গ্যাস সংক্রান্ত বিশ্লেষণ ব্যাতিরেকে, ক্লোরাইডের মাত্রা পরিমাপ করা বেশ বিরল ঘটনা। মূত্র নিয়ে করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হচ্ছে আপেক্ষিক গুরুত্ব পরীক্ষা, যা তড়িৎ বিশ্লেষ্যের অসামঞ্জস্যতা সংঘটন নির্ণয় করে।
মৌখিক পুনরুদন চিকিৎসায়, অনুশীলন, অতিরিক্ত মদ্যপান, ডায়াফোরেসিস (অতিরিক্ত ঘাম নিঃসরণ), উদরাময়, বমি, মাদকের নেশা অথবা অনাহারজনিত কারণে সৃষ্ট পানিশূন্যতা, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম-বাহী পানীয়ের মাধ্যমে, যা দেহের পানি ও তড়িৎ বিশ্লেষ্যের ঘনত্ব পুনরুদ্ধার করে। চরম অবস্থায় অনুশীলনকারী ক্রীড়াবিদগণ (তিন বা ততোধিক ঘণ্টাব্যাপী একটানা যেমন- ম্যারাথন ও ট্রায়াথ্লন) যারা তড়িৎ বিশ্লেষ্য গ্রহণ করেন না, তাদের পানিশূন্যতার (বা হাইপো-ন্যাট্রেমিয়া) ঝুঁকি থাকে।[১০]
যথাযথ অনুপাতে পানি, চিনি এবং লবণ মিশ্রিত করে[১১], ঘরে-তৈরী তড়িৎ বিশ্লেষ্যবাহী পানীয় তৈরি করা যায়। মানুষ এবং প্রাণিদের জন্য বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত পানীয়ও বেশ সুলভ।[১২]
ফলের রস, ক্রীড়া পানীয়সমূহ, দুধ, বাদাম, এবং অনেক ফল ও শাকসবজিতে (আস্ত অথবা রস হিসেবে) তড়িৎ বিশ্লেষ্য বিদ্যমান থাকে (যেমন- আলু, আভোকাডো)
মূল নিবন্ধ: তড়িৎ বিশ্লেষণ
যখন কোন তড়িৎ বিশ্লেষ্যে তড়িৎদ্বার স্থাপন করা হয়, এবং একটি বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করা হয়, তখন ঐ তড়িৎ বিশ্লেষ্য তড়িৎ পরিবহন করে। অযুগ্ম ইলেকট্রন সাধারণ অবস্থায় তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে না; তার পরিবর্তে ক্যাথোডে একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয়, যা তড়িৎ বিশ্লেষ্যকে ইলেকট্রন সরবরাহ করে। আরেকটি বিক্রিয়া ঘটে অ্যানোডে, যেখানে তড়িৎ বিশ্লেষ্য থেকে তড়িৎদ্বারে ইলেকট্রন গৃহীত হয়। ফলাফলস্বরূপ, তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্যে ক্যাথোডের চারপাশে একটি ইলেকট্রন মেঘ গঠিত হয়, এবং অ্যানোডের চারপাশে ধনাত্মক আধান সৃষ্টি হয়। তড়িৎ বিশ্লেষ্যে বিদ্যমান আধানসমূহ এই আধানগুলোকে প্রশমিত করে, যা ইলেক্ট্রনের প্রবাহ অক্ষুণ্ণ রাখে ও বিক্রিয়া চলতে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, পানিতে সাধারণ খাবার লবণের (সোডিয়াম ক্লোরাইড, ) দ্রবণে,
ক্যাথোড বিক্রিয়া:
এবং হাইড্রোজেন গ্যাস বুদবুদ আকারে নির্গত হবে;
অ্যানোড বিক্রিয়া:
এবং ক্লোরিন গ্যাস বিমুক্ত হবে। ধনাত্মক আধানবিশিষ্ট সোডিয়াম আয়ন ক্যাথোডের দিকে যায়, ও এর ঋণাত্মক আধানকে প্রশমিত করে, এবং ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট অ্যানোডের দিকে যায় ও এর ধনাত্মক আধানকে প্রশমিত করে। তড়িৎ বিশ্লেষ্যের আয়ন ছাড়া, তড়িৎদ্বারের চারপাশের ইলেকট্রন অবিচ্ছিন্ন তড়িৎ প্রবাহে বিঘ্ন ঘটাত; পানির মধ্য দিয়ে ও -এর তড়িৎদ্বারের দিকে ব্যাপন, লবণ আয়নের তুলনায় বেশি সময় নেয়। তড়িৎ বিশ্লেষ্য পানিতে বিশ্লিষ্ট হয়, কেননা পানির অণুসমূহ তড়িৎ-দ্বিমেরু, এবং দ্বিমেরুগুলো আয়ন দ্রবীভূত করার জন্য একটি শক্তি-সুনির্দিষ্ট বিন্যাসে নিজেদের বিন্যস্ত করে।
অন্যান্য ক্ষেত্রে, তড়িৎ বিশ্লেষ্যের আয়নের সাথে সাথে, তড়িৎদ্বারের ধাতুও তড়িৎদ্বার বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে।
ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিতে, যেখানে ধাতু-তড়িৎ বিশ্লেষ্য সংযোগ-তলে রাসায়নিক বিক্রিয়া কার্যকরী ভূমিকা পালন করে, সেখানে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পরিবাহী ব্যবহৃত হয়।
কঠিন তড়িৎ বিশ্লেষ্যসমূহকে মূলত চারটি ভাগে বিভক্ত করা যায়: