তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতা (আইএমএল) মানুষকে তথ্য ও গণমাধ্যমের ব্যবহারকারী হিসাবে তথ্যের ব্যাখ্যা ও তথ্যবহুল মতামত প্রকাশে সক্ষম করে তোলে। একই সাথে তাদের নিজেদের অধিকারবলে তথ্য ও গণমাধ্যম বার্তার দক্ষ প্রস্তুতকারীতে পরিণত করে। [১]
১৯৯০ এর আগে, তথ্য সাক্ষরতার প্রাথমিক কেন্দ্রবিন্দু মূলত গবেষণা দক্ষতা ছিল। [২] ১৯৭০ এর দশকে উদীত একটি অধ্যয়ন হলো গণমাধ্যম সাক্ষরতা, প্রচলিতভাবে যার কেন্দ্রবিন্দু ছিল বিভিন্ন ধরনের গণমাধ্যমের সাহায্যে তথ্যের বিশ্লেষন ও সরবরাহ করা।[৩] বর্তমানে যুক্তরাজ্য,[৪] অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সহ বিভিন্ন দেশে তথ্য সাক্ষরতার পরিধি বিস্তৃত করে এর সাথে গণমাধ্যম সাক্ষরতা সংযুক্ত করা হয়েছে।[৫] তথ্য সাক্ষরতার বর্তমান অধ্যয়ন ও সম্মিলিত অধ্যয়নের মধ্যে পার্থক্য করতে "তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতা" শব্দটি ইউনেস্কো [১] কর্তৃক ব্যবহৃত হয়। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) হিসাবেও পরিচিত। [৬][৭] গ্রেগরি উমার এর মতো শিক্ষকগণও এই ক্ষেত্রটিকে ইলেক্ট্রিসি হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।
আইএমএল হলো তথ্য সাক্ষরতা এবং গণমাধ্যম সাক্ষরতার সমন্বয়। তথ্য এবং গণমাধ্যম সাক্ষর হওয়ার উদ্দেশ্য হলো ডিজিটাল সমাজে যোগদান করা; বুঝতে পারা, অনুসন্ধান, সৃষ্টি, যোগাযোগ ও সমালোচনা মূলক চিন্তা করায় ব্যক্তির দক্ষ হওয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন উপায়ে কার্যকরী ভাবে কোনো বার্তার অধিগমন, সাজানো, বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন ও তৈরী করা গুরুত্বপূর্ণ।[৮] এটির রূপান্তরযোগ্য প্রকৃতির মধ্যে সৃজনশীল কাজ ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টি অন্তর্ভুক্ত; দায়িত্বপূর্ণ ভাবে কোনো কিছু প্রকাশ ও সহযোগিতা করার জন্য নৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বোধশক্তি প্রয়োজন।
আইএমএল এর শিখন ক্ষমতা শিক্ষার্থীদের একবিংশ শতাব্দীর সাক্ষর হতে প্রস্তুত করে। জেফ উইলহেমের (২০০০) মতে, "সাক্ষরতার সাথে কাজ করার জন্য সবই আছে প্রযুক্তির। এবং সাক্ষর হওয়ার জন্য যা প্রয়োজন তার সব আছে সর্বাধুনিক বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারার মধ্যে।" [৯] তিনি জে. ডেভিড বোল্টারের সাথে তার বক্তব্যকে সমর্থন করেন যে "আমাদের শিক্ষার্থীরা যদি বিভিন্ন বৈদ্যুতিক প্রযুক্তির সাথে পড়তে বা লিখতে না পারে, তবে তারা অশিক্ষিত। তারা শুধু ভবিষ্যৎ এর জন্যই অপ্রস্তুত নয়, বরং তারা এই মুহূর্তে আমাদের বর্তমান সময় ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী অশিক্ষিতও বটে।" [১০]
কানাডার মিডিয়া সতর্কতা নেটওয়ার্কের ৫০০০ গ্রেড ৪-১১ এর শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত ২০০৫ ওয়্যার্ড ওয়ার্ল্ড ফেজ ২ এর সমীক্ষাতে উইলহেম এর বক্তব্যটি সমর্থিত হয়।[১১] এই জরিপের প্রধান প্রধান অনুসন্ধান গুলো হলোঃ [১২]
যারা ডিজিটাল বিশ্বে বড় হয়েছেন তাদের বর্ণনা দিতে মার্ক প্রেন্সকি (২০০১) "ডিজিটাল স্থানীয়" শব্দটি ব্যবহার করেন। [১৪] তরুণদের গৃহজীবনে ইন্টারনেট একটি ব্যাপ্তিশীল উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে ৯৪% বলেছে, তাদের বাসায় ইন্টারনেটের ব্যবহার রয়েছে এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যাগরিষ্ঠের (৬১%) দ্রুতগতিসম্পন্ন সংযোগ রয়েছে।
শিশুরা গ্রেড ১১ তে উত্তীর্ণ হতে হতে, তাদের অর্ধেক শিশুরা (৫১%) ইন্টারনেট সংযুক্ত পারিবারিক কম্পিউটার থেকে পৃথক, ব্যক্তিগত কম্পিউটার পেয়ে যায়। [১৫] জরিপে আরও দেখানো হয় যে, তরুণ ক্যানাডিয়ানরা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংযুক্ত। পূর্বের গৎবাঁধা বিচ্ছিন্ন ও উদ্ভট কম্পিউটার আসক্তদের তুলনায় বর্তমানের এইসব ইন্টারনেট ব্যবহারকারী শিশুরা বেশ সামাজিক। [১৬]
সাধারণত, বেশিরভাগ শিক্ষক ও অভিভাবক যারা প্রযুক্তির কার্যক্ষমতা হয়তো বুঝতে পারবে না, তাদের তুলনায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে বেশি সংযুক্ত। শিক্ষার্থীরা আর ডেস্কটপ কম্পিউটারে সীমিত নেই। তারা গাণিতিক সমস্যার সমাধানে, সামাজিক শিক্ষার কোনো প্রশ্নের গবেষণা করতে, কোনো তথ্যের জন্য কোনো অভিজ্ঞ ব্যক্তির কাছে বার্তা পাঠাতে বা ড্রপ বক্সে তাদের বাড়ির কাজ জমা দিতেও মুঠোফোন ব্যবহার করতে পারে। [১৭] এমএসএন, ব্যক্তিগত ওয়েবপেজ, ওয়েবব্লগ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর সাহায্যে শিক্ষার্থীরা তথ্যের অনুসন্ধান করতে পারছে।
অনেক শিক্ষক শিক্ষাদানের বিগত ৫০ বছরের ঐতিহ্য অনুসরণ করে চলেন। ঐতিহ্যগত ভাবে শিক্ষকগণ তাদের জ্ঞান শিক্ষার্থীদের সাথে ভাগ করে নেওয়ায় দক্ষ ও অভিজ্ঞ হয়ে এসেছেন। প্রযুক্তি ও শিক্ষণ উপকরণ গুলো আমাদেরকে শিখনের সঞ্চালক হতে অভিগম্যতা দেয়, এবং বাধ্য করে। শিক্ষক যে তথ্য বিতরণে অভিজ্ঞ এবং শিক্ষার্থী হলো সেসব তথ্যের গ্রাহক, ডিজিটাল শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এই গৎবাঁধা ধারণা আমাদেরকে পরিবর্তন করতে হবে। শিক্ষককে শুধু ডিজিটাল পদ্ধতিতে বক্তব্য পেশ করতে শেখার পাশাপাশি এই ডিজিটাল গোষ্ঠীর ভাষাও আয়ত্ত করতে হবে।
ভাষাকে সাধারণত যোগাযোগ করার জন্য ব্যবহৃত একটি প্রক্রিয়া হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয় [১৮] যেখানে সংকেতগুলো বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে থাকে। ডিজিটাল অধিবাসীগণ ডিজিটাল যন্ত্রের মাধ্যমে অনর্গলভাবে যোগাযোগ করতে পারেন এবং এমন ভাবে তথ্য আদান প্রদান করতে পারেন যা এসব ডিজিটাল যন্ত্র ছাড়া অসম্ভব ছিল। যারা ১৯৮৮ সালের পূর্বে জন্ম নিয়েছেন, অনেক সময়ে তাদেরকেই "ডিজিটাল অভিবাসী" হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে তারা ভিসিআর এর মতো সাধারণ যন্ত্র পরিচালনাতেও সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। ডিজিটাল অভিবাসীরা যন্ত্রে কাজ করার জন্য বোতাম টেপা শুরু করে দেন না।
শিশুর বিকাশের প্রথম দিকেই ভাষা শিখন সবচেয়ে ভাল হয়ে থাকে।
দ্বিতীয় ভাষা শেখার ক্ষেত্রে, হিলটেন্সটাম (১৯৯২) খুঁজে পান যে, ৬ এবং ৭ বছর বয়সই অন্য কোনো দ্বিতীয় ভাষায় নিজ ভাষার মতো দক্ষতা অর্জনের মোক্ষম সময়। সেই বয়সের পর, দ্বিতীয় ভাষা শেখায় শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ ভাষার মতো অনেকটা দক্ষতা অর্জন করতে পারলেও অনেক ক্ষেত্রে ভুল থেকে যায় যা তাদের নিজ প্রথম ভাষার মতো দক্ষ হওয়ার থেকে আলাদা করে দেয়। যদিও সাম্প্রতিক আরও গবেষণা প্রস্তাব করে, এই প্রভাবটি এখন প্রায় ১০ বছর বয়স পর্যন্তও স্থায়ী হয়। [১৯]
কিন্ডারগার্টেন এবং গ্রেড ১ ও ২ হলো ডিজিটাল অধিবাসী হিসেবে সফল হওয়াতে শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ কঠিন একটা সময়, কারণ সব শিক্ষার্থীর শৈশব ডিজিটাল সমৃদ্ধ হতে পারে। গ্রেড ৩ এর আগে প্রযুক্তিগত দক্ষতা শেখা শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন ভাষা শেখার সমান হতে পারে। "ভাষার দিক থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা যারা দক্ষতার সাথে ইংরেজিতে লিখতে বা পড়তে পারেনা, তারা আমেরিকার বিদ্যালয়, কর্মক্ষেত্র ও সমাজে পরিপূর্ণ ভাবে অংশগ্রহণে ব্যর্থ হবে। তারা সীমিত চাকরী ও উপার্জনের সম্মুখীন হবে"। [২০] উত্তর আমেরিকার সমাজ ও সুযোগে পরিপূর্ণ ভাবে অংশগ্রহণের জন্য "ডিজিটাল" ভাবে বলা সাক্ষর হওয়ার মতোই গুরুত্বপূর্ণ।
গণমাধ্যম ও তথ্যে অনেক শিক্ষার্থীকেই বিভিন্ন কারণে অশিক্ষিত হিসেবে গণ্য করা হয়। একবিংশ শতাব্দীর শ্রেণিকক্ষে তারা হয়তো গণমাধ্যম ও তথ্য সাক্ষরতার গুরুত্ব দেখতে পায়না। অন্যরা আবার নতুন ধরনের তথ্যের উত্থান সম্পর্কে সচেতন নয়। এসব শিক্ষার্থীদের গণমাধ্যম ও তথ্য সাক্ষর করতে শিক্ষকদের উচিত তাদেরকে প্রথমে গণমাধ্যম ও তথ্য সাক্ষরতার সাথে পরিচিত করে তোলা। শিক্ষকগণ যদি তাদের শ্রেণিতে গণমাধ্যম ও তথ্য সাক্ষরতাকে সমর্থন না করেন, তবে খুব সামান্য পরিবর্তন হবে।
কার্যক্রমের মাপকাঠি, তাদেরকে সমর্থনের ভিত্তি এবং তাদেরকে বাস্তবায়নের সরঞ্জাম, সবই সহজলভ্য। সফলতা তখনই আসবে যখন সেখানে পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ও নায্য অভিগম্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে। কৌশলগত কাজের সাথে পরিমাপযোগ্য ফলাফলের ওপর গুরুত্ব দেয় এমন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যও প্রয়োজন।
কোন কোন মূল্যবোধ ও প্রত্যাশা অর্জিত হবে তার দিকে পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ তৈরি হবে যখন কর্মচারী ও সমাজ একসাথে কাজ করবে, তাদের শিশুদের কী জানাতে চায় ও কী করতে সক্ষম করে তুলতে চায় সে বিষয়ে তাদের মূল্যবোধ, বিশ্বাস, পরিগ্রহ ও উপলব্ধি গুলো চিহ্নিত ও পরিষ্কার করে তুলবে। [২১] তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতা পরিমাপে ধারণক্ষমতার উপকরণ ব্যবহার, প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিত শিক্ষা চাহিদাগুলো কতো ভাল ভাবে শিক্ষার্থীরা পূরণ করছে তার ওপর প্রভাব ফেলতে শিক্ষার্থী, কর্মচারী, ও সমাজকে সক্ষম করে তুলবে।
শিক্ষার্থীদের শিক্ষণ চাহিদা পূরণ হচ্ছে কী না তা প্রমাণ করতে তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতা কার্যক্রমের মানদণ্ড তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের অনুমতি দেয়। শিক্ষার্থীদের তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতার মূল্যায়নের পর তিনটি প্রশ্ন করা যেতে পারেঃ
যেসব ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মনোযোগ ও সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে সেসব ক্ষেত্র শনাক্তকরণে শিক্ষকগণ শ্রেণিকক্ষের মূল্যায়ন ব্যবহার করতে পারেন। একই জিনিস শিক্ষার্থীরা তাদের শেখার লক্ষ্য নির্ধারণেও ব্যবহার করতে পারে।
বাক্স হিসেবে প্রদর্শিত কম্পিউটার শেখা থেকে প্রযুক্তিগত যোগাযোগ সরঞ্জাম হিসেবে কম্পিউটার ব্যবহারের দিকে পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শিক্ষাক্রম এর সাথে প্রযুক্তির এই সংমিশ্রণ একটি ইতিবাচক পরিবর্তন। একই সাথে, বর্তমানের শিক্ষাবিজ্ঞান প্রযুক্তির মাধ্যমে জ্ঞানের উৎপাদক হিসেবে শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তিকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর টেকনোলজি ইন এডুকেশন (আইএসটিই) [২২] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের জন্য জাতীয় শিক্ষামূলক প্রযুক্তি মানদণ্ড বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি প্রমাণ শিক্ষাক্রম তৈরি করে আসছে। [২৩]
যুক্তরাজ্যে একটি তথ্য সাক্ষরতা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শিক্ষকদের মাঝে তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতার প্রচার ঘটানো হয় [২৪] যা এই ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত কয়েকটি সংগঠনের মাধ্যমে তৈরি হয়।
আমেরিকা শিক্ষা বিভাগের অর্থায়নে তৈরি ২১ শতকের অংশীদারি কর্মসূচিতে তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। [২৫] আরিযোনা, ইওয়া, কানসাস, মেইনি, নিউ জার্সি, ম্যাসাচুসেটস, উত্তর ক্যারোলিনা, দক্ষিণ ড্যাকোটা, পশ্চিম ভার্জিনিয়া ও উইস্কনসিন এ বিশেষ আদেশের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। [২৬] স্বতন্ত্র স্কুল বিভাগ যেমন ক্লার্ক্সটাউন সেন্ট্রাল স্কুল বিভাগ[২৭] তাদের নিজস্ব তথ্য সাক্ষরতার শিক্ষাক্রম তৈরি করে নেয়। আইএসটিই শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও প্রশাসকদের জন্যও জাতীয় শিক্ষা প্রযুক্তি মানদণ্ড তৈরি করে।
কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়াতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথ্য প্রযুক্তিকে একক একটি বিষয় হিসেবে পুনরায় তালিকাভুক্ত করে। [২৮] এটি এখনও প্রত্যাশিত যে প্রতিটি নির্ধারিত শিখনফল সংমিলিত হওয়া অব্যাহত থাকবে।
বাক্স হিসেবে প্রদর্শিত কম্পিউটার শেখা থেকে প্রযুক্তিগত যোগাযোগ সরঞ্জাম হিসেবে কম্পিউটার ব্যবহারের দিকে পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শিক্ষাক্রম এর সাথে প্রযুক্তির এই সংমিশ্রণ একটি ইতিবাচক পরিবর্তন। একই সাথে, বর্তমানের শিক্ষাবিজ্ঞান প্রযুক্তির মাধ্যমে জ্ঞানের উৎপাদক হিসেবে শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তিকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতাকে বাস্তবায়নের জন্য পরিষ্কার কোনো নির্দেশনা নেই।
২০০৫ সালে বিসি শিক্ষা মন্ত্রণালয় গ্রেড ৫ থেকে ১০ এর আইসিটিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সংমিশ্রন নিষ্পাদন মানদণ্ড প্রকাশ করেছে। [২৯] এই মানদণ্ডগুলি ৫ থেকে ১০ গ্রেডের জন্য কর্মসম্পাদন মানদণ্ডের প্রত্যাশা সম্পর্কে সবহিত করে; তবে তারা অন্যান্য গ্রেডের জন্য দিকনির্দেশনা সরবরাহ করে না এবং গ্রেড ৫ এবং গ্রেড ১০ এর শিক্ষার্থীর জন্য এসকল প্রত্যাশা একই রকম।
আরব বিশ্বে, ২০১১ সাল পর্যন্ত গণমাধ্যম ও তথ্য সাক্ষরতা বেশ উপেক্ষিত ছিল যখন বেইরুটের আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের গণমাধ্যম শিক্ষা কার্যক্রম, ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন ও আরব-আমেরিকা এ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিকেশন এডুকেটরস (এ ইউ এস এ সি ই) "নতুন নির্দেশনাঃ ডিজিটাল ও মিডয়া সাক্ষরতা" শীর্ষক একটি আঞ্চলিক সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনটি আরব বিশ্ববিদ্যালয় ও পণ্ডিতগণের থেকে উল্ল্যেখযোগ্য দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যারা আরবিতে শিক্ষাক্রম তৈরি, প্রশিক্ষণ অনুষদ এবং এই ক্ষেত্রটির প্রচার সহ আরব অঞ্চলে গণমাধ্যম সাক্ষরতার অগ্রগতির জন্য প্রতিবন্ধকতা ও প্রয়োজন নিয়ে আলোচনা করে।
এই সুপারিশ অনুসরণ করে, এইউবি তে গণমাধ্যম শিক্ষা কার্যক্রম এবং স্যালজবার্গ একাডেমির (গণমাধ্যম ও বৈশ্বিক পরিবর্তন) সহযোগীতায় ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন ২০১৩ সালে আরব অঞ্চলে গণমাধ্যম শিক্ষার শিক্ষার বিকাশ, প্রাণচাঞ্চল্য এবং অগ্রগতির প্রথম আঞ্চলিক উদ্যোগ চালু করে। বৈরুতের গণমাধ্যম ও ডিজিটাল সাক্ষরতা একাডেমি (এমডিএলএবি) গণমাধ্যম সাক্ষরতার শিক্ষাক্রম এবং কার্যক্রমগুলির বিকাশের জন্য বছরব্যাপী কাজ করার পাশাপাশি একটি বার্ষিক দুই সপ্তাহের গ্রীষ্মকালীন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করে। একাডেমিটি আরবি এবং ইংরাজীতে পরিচালিত হয় এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের তরুণ আরব শিক্ষাবিদ এবং স্নাতক শিক্ষার্থীদের উন্নত ডিজিটাল ও গণমাধ্যম সাক্ষরতার ধারণাগুলি শেখানোর জন্য অগ্রণী আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষক এবং পেশাদারদের নিয়ে আসে। এমডিএলএবি আশা করে যে অংশগ্রহণকারী আরব একাডেমিকরা যা শিখেছে তা তাদের দেশ এবং প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রয়োগ করবে। আরব বিশ্ববদ্যালয় ও বিদ্যালয় শিক্ষাক্রমে ডিজিটাল ও গণমাধ্যম সাক্ষরতার একীভূতকরণকে সহায়তা ও উৎসাহিত করতে গণমাধ্যম সাক্ষরতা পাঠ্যসূচি, লেকচার, অনুশীলন, পাঠ পরিকল্পনা, মাল্টিমিডিয়া উপকরণ সহ আরবী ও ইংরেজিতে বিনামূল্যে শিক্ষাক্রমের উপকরণগুলো সরবরাহ করে।
আরব অঞ্চলে মিডিয়া সাক্ষরতার শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে এমডিএলএবি'র কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসাবে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ২০১৫ ইউনেস্কো-ইউএনএওসি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও তথ্য সাক্ষরতার পুরস্কার পেয়েছেন।
২০১৩ সালের আগে কেবল দুটি আরব বিশ্ববিদ্যালয় গণমাধ্যম সাক্ষরতা বিষয় সরবরাহ করত: আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অফ বৈরুত (এউবি) এবং আমেরিকান শারজা বিশ্ববিদ্যালয় (এউএস)। এমডিএলেবি চালু হওয়ার তিন বছর পরে, দুই ডজনেরও বেশি আরব বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষাক্রমের সাথে গণমাধ্যম সাক্ষরতার শিক্ষাকে একীভূত করেছে, উভয়ই স্বতন্ত্র আলাদা বিষয় বা তাদের বিদ্যমান গণমাধ্যম বিষয়ের পাঠ্যসূচিতে অনুশীলন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পুরোপুরি গণমাধ্যম সাক্ষরতার বিষয় রয়েছে (২০১৫ হিসাবে) সেগুলো হলো লেবাননের আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় (লেবানন), বিরজিট বিশ্ববিদ্যালয় (প্যালেস্টাইন), বালাম্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় (লেবানন), দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয় (সিরিয়া), রফিক হারিরি বিশ্ববিদ্যালয় (লেবানন), নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয় (লেবানন), আহরাম কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় (মিশর), আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় বৈরুত (লেবানন), আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অফ শারজা (ইউএই), এবং আল আজম বিশ্ববিদ্যালয় (লেবানন)। কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ হিসাবে গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষাকে এক করে নেওয়া প্রথম আরব স্কুলটি লেবাননের ইন্টারন্যাশনাল কলেজ (আইসি)। ইউনেস্কো, ইউএনএওসি, আড়াকোর, ডিএএডি এবং ওএসএফের মতো অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় এই অঞ্চলের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কুলগুলিতে গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষার প্রবর্তনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
সিঙ্গাপুরে [৩০] এবং হংকংয়ে,[৩১] তথ্য সাক্ষরতা বা তথ্য প্রযুক্তি একটি আনুষ্ঠানিক শিক্ষাক্রম হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়েছিল।
পড়া শেখার ক্ষেত্রে একটি প্রতিবন্ধকতা হলো বইয়ের অপ্রতুলতা, যেখানে তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতা ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হলো প্রযুক্তির অধিগম্যতার অভাব। তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতা সকলের দৃষ্টিগোচর করার প্রক্রিয়াটি বিদ্যালয় অবকাঠামো, কর্মী উন্নতীকরণ ও সহযোগীতা ব্যবস্থাপনায় কী কী প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা শনাক্ত করতে সাহায্য করে। যেখানে টেকশই ও ন্যায়সঙ্গত প্রবেশগম্যতা দিতে মূল ভিত্তিতে আরও কাজ করা প্রয়োজন, সেখানে বিদ্যালয়ের পরিবেশ সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
মার্ক প্রেনস্কি [৩২] প্রতিবন্ধকতা শনাক্ত করেন যেখানে শিক্ষকগণ ডিজিটাল যন্ত্রগুলোকে মনোযোগের বিক্ষিপ্ততার কারণ হিসেবে দেখছেনঃ "চলুন মানা যাক মুঠোফোন নিষিদ্ধকরণের পেছনে আমাদের সত্যিকার কারণ কী ছিল। যখন কোনো উপস্থাপনা বাধ্যতামূলক থাকে না এবং তাদেরকে এটি ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া হয় তখন শিক্ষার্থীরা তাদের মনোযোগ সহকারে ভোট প্রদান করে ঠিক যেমন প্রাপ্তবয়স্করা ঘর থেকে পায়ে হেঁটে বের হয়ে তাদের ভোট দেয়।
নতুন প্রযুক্তি নিষিদ্ধকরণের মানসিকতা এবং নেতিবাচক ঘটনা ঘটার যে আশঙ্কা শিক্ষামূলক সিদ্ধান্তগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে। ডিজিটাল যন্ত্রকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারটি শিক্ষার্থীদের সারা জীবন প্রভাবিত করে।
দুর্বল বা ভুলভাবে ব্যবহৃত যে কোনও সরঞ্জামই অনিরাপদ হতে পারে। শিল্প প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সুরক্ষা পাঠ বাধ্যতামূলক। তবুও প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য সুরক্ষা বা নৈতিক পাঠ বাধ্যতামূলক নয়।
বিদ্যালয়ের সকল সিদ্ধান্ত প্রচলিত সাধারণ বিশ্বাস থেকে মূল্যায়ন করা হয়না। ওন্টারিওর একটি বিভাগীয় বিদ্যালয় তাদের বিদ্যালয় থেকে ডিজিটাল যন্ত্রগুলোকে নিষিদ্ধ করে। স্থানীয় বিদ্যালয়গুলোতেও একই কাজ করতে দেখা গেছে। এধরনের সিদ্ধান্তগুলো বেশিরভাগ সময়ে তাৎক্ষনিক ক্রিয়াকলাপের সাথে সম্পর্কিত, এর সাথে শিক্ষন, শিখণ বা সমাধান তৈরির কোনো সম্পর্ক নেই। এসব বাদেও তথ্য ও মিডিয়া সাক্ষরতার আরও অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)