ব্যবহারিক দৃষ্টিকোণ থেকে তথ্যব্যবস্থা বিজ্ঞান (ইংরেজি: Informatics) বলতে যে মানবনির্মিত যান্ত্রিক পরিগণন ব্যবস্থাসমগ্র (কম্পিউটিং সিস্টেমস) ব্যবহার করে কোনও বৈজ্ঞানিক বা পেশাগত ক্ষেত্র থেকে ইলেকট্রনীয় যন্ত্রপাতি ও কম্পিউটারভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় প্রতিনিয়ত অর্জিত-সংগৃহীত-উৎপাদিত ও উপাত্তাধারে (ডাটাবেস) রক্ষিত বিপুল পরিমাণ উপাত্ত, তথ্য ও জ্ঞান অধ্যয়ন, মূল্যায়ন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, শ্রেণীবদ্ধকরণ, সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ, দ্রুত স্থানান্তরণ, উদ্ধরন ও বিশ্লেষণ করা হয় এবং ঐ ব্যবস্থাসমগ্রের সাথে আন্তঃক্রিয়াশীল বিভিন্ন শ্রেণীর মানব ব্যবহারকারীদের কাছে ঐসব তথ্য-উপাত্ত দক্ষতার সাথে ও কার্যকারীভাবে বিতরণ ও উপস্থাপন করা হয়, সেই ব্যবস্থাসমগ্রের নকশা, গঠনকাঠামো ও আচরণ কীরকম হয় ও এর ভেতরে মানব ও যন্ত্রের আন্তঃক্রিয়া কীভাবে ঘটে, এ সবকিছুকে অধ্যয়নকারী বিজ্ঞানকে বোঝানো হয়। তথ্যব্যবস্থা বিজ্ঞানে মানুষ, তথ্য ও প্রযুক্তি (বিশেষত যান্ত্রিক পরিগণন বা কম্পিউটিং প্রযুক্তি) - এই তিনের মেলবন্ধন ঘটেছে। তথ্যব্যবস্থা বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হল যান্ত্রিক পরিগণন প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে তথ্যের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা, যাতে তা মানুষের সর্বোচ্চ উপকারে আসে।[১] এই সংজ্ঞা অনুযায়ী তথ্যব্যবস্থা বিজ্ঞানের সাথে যান্ত্রিক পরিগণন বিজ্ঞান তথা কম্পিউটার বিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। একই কারণে তথ্য বিজ্ঞান ও তথ্যব্যবস্থা বিজ্ঞানের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। তথ্য বিজ্ঞান ক্ষেত্রটিতে আরও বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে তথ্যের প্রকৃতি ও আচরণ নিয়ে গবেষণা করা হয়, যার সাথে ইলেকট্রনীয় ও কম্পিউটার ব্যবস্থা ছাড়াও গণিত, যুক্তিবিজ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, সঙ্কেতবিজ্ঞান, চিত্রলৈখিক শিল্পকলা, পরিচালন বিদ্যা, যোগাযোগ বিদ্যা, ব্যবস্থাপনা, ইত্যাদি বিভিন্ন শাস্ত্রের সম্পর্ক আছে।[২]
কোন্ বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র বা পেশাগত ক্ষেত্রের উপর প্রযুক্ত হচ্ছে, তার উপরে ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের তথ্যব্যবস্থা বিজ্ঞান রয়েছে। যেমন জৈবিক তথ্যগুলির জন্য জৈব তথ্যব্যবস্থা বিজ্ঞান, চিকিৎসাগত তথ্যের জন্য চিকিৎসা তথ্যব্যবস্থা বিজ্ঞান, জনস্বাস্থ্যগত তথ্যের জন্য জনস্বাস্থ্য তথ্যব্যবস্থা বিজ্ঞান, স্নায়বিক জৈব তথ্যের জন্য স্নায়ু তথ্যব্যবস্থা বিজ্ঞান, ভূতাত্ত্বিক তথ্যাবলির জন্য ভূ-তথ্যব্যবস্থা বিজ্ঞান এবং রাসায়নিক যৌগ ও বিক্রিয়া সংক্রান্ত তথ্যাবলির জন্য রাসায়নিক তথ্যব্যবস্থা বিজ্ঞান রয়েছে।[৩]
আবার তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে তথ্যব্যবস্থা বিজ্ঞানের আরেকটি বৃহৎ পরিসরের সংজ্ঞা আছে, যাতে উপরোল্লিখিত যান্ত্রিক পরিগণন বিজ্ঞানের (কম্পিউটার বিজ্ঞান) পাশাপাশি ধীবিজ্ঞান ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নামের জ্ঞানের শাখাগুলিও অন্তর্ভুক্ত।[৪] যান্ত্রিক পরিগণন বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হল তথ্যকে প্রক্রিয়াজাত করার উদ্দেশ্যে প্রকৌশলের সাহায্যে নির্মিত যান্ত্রিক পরিগণন ব্যবস্থার (কম্পিউটিং ব্যবস্থা) নকশাকরণ এবং এর কাঠামো ও আচরণের তাত্ত্বিক গবেষণা। আবার, প্রকৃতিতে প্রাপ্ত জৈব ব্যবস্থাগুলিতে সঞ্চিত বিভিন্ন জটিল তথ্যব্যবস্থাগুলির কাঠামো, সংগঠন, এগুলির ভেতরে তথ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ, রূপান্তর, প্রবাহ ও পরিবেশের সাথে জৈব ব্যবস্থাগুলির যোগাযোগ ধীবিজ্ঞানে অধ্যয়ন করা হয়। অন্যদিকে প্রকৃতিতে স্বাভাবিকভাবে সৃষ্ট তথ্যব্যবস্থাগুলিকে অনুকরণ করে এগুলির সদৃশ কৃত্রিম যান্ত্রিক তথ্যব্যবস্থা নকশা করার ব্যাপারটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (যান্ত্রিক শিখন) ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এভাবে জৈবিক তথ্যব্যবস্থা ও যান্ত্রিক পরিগণন ব্যবস্থার মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করে। তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে দৃষ্ট তথ্যব্যবস্থা বিজ্ঞানে উপরের এই তিনটি ক্ষেত্রের ভিত্তিমূলে তথ্যের গঠন-কাঠামো ও প্রক্রিয়াসমূহের যে মৌলিক ধারণাগুলি বিদ্যমান, সেগুলির তুলনামূলক গবেষণা করা হয় এবং সেখান থেকে একটি অভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরিকাঠামো নির্মাণ করার চেষ্টা করা হয়।[৪] এই গবেষণা ভবিষ্যতে মানবজাতির বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে ও মানবজীবনের মানোন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। এমনকি "জীবন কী" ও "মন কী?"-র মতো মৌলিক বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজে পেতেও এই গবেষণা সহায়ক হতে পারে।