তাঁতরাবিরা Long-brand bushbrown | |
---|---|
ডানা বন্ধ অবস্থায় | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | Arthropoda |
শ্রেণী: | Insecta |
বর্গ: | Lepidoptera |
পরিবার: | Nymphalidae |
গণ: | Mycalesis |
প্রজাতি: | M. visala |
দ্বিপদী নাম | |
Mycalesis visala Moore, 1858[১] |
তাঁতরাবিরা[২] (বৈজ্ঞানিক নাম: Mycalesis visala (Moore)) প্রজাতি নিমফ্যালিডি (Nymphalidae) গোত্র ও 'স্যাটিরিনি' (Satyrinae) উপ-গোত্রের অন্তর্ভুক্ত প্রজাপতি।[৩][৪]
তাঁতরাবিরা প্রসারিত অবস্থায় ডানার আকার ৪৫-৫৫ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়।[৫][৬]
ভারতে প্রাপ্ত তাঁতরাবিরা এর উপপ্রজাতি হল-[৭]
ভারত (ভারতীয় উপদ্বীপ [কর্ণাটক থেকে দক্ষিণদিকে], পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ থেকে অরুণাচল প্রদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারত), নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা এর বিভিন্ন অঞ্চলে এদের পাওয়া যায়।[৮]
প্রজাপতির দেহাংশের পরিচয় বিষদ জানার জন্য প্রজাপতির দেহ এবং ডানার অংশের নির্দেশিকা দেখুন:-
সাধারণ দর্শনে এই প্রজাতিকে খয়রাবিড়া (Mycalesis mineus) প্রজাতির অনুরূপ দেখায়, তবে এরা খয়রাবিড়াদের তুলনায় আকারে বড়। তাঁতরাবিরা প্রজাতির রূপভেদ অনেক (variable) এবং ডানার দাগ-ছোপ-চক্ষুবিন্দু (ocellus) ঋতুপরিবর্তনের সাথে পরিবর্তিত হয়।
ডানার উপরিতল: ডানার উপরিতল কালচে বাদামি বা কালচে খয়েরি। সামনের ডানায় ডিসকাল অংশে ২ নং শিরামধ্যে (inter-space) হলুদ বলয়াবৃত ও সাদা তারাবিন্দু (puple) যুক্ত একটি বড় চক্ষুবিন্দু (ocelli) বর্তমান এবং আর্দ্র -ঋতুরূপে উক্ত চক্ষুবিন্দু শুষ্ক-ঋতুরূপ অপেক্ষা অনেক বেশি সুস্পষ্ট। কোনো কোনো নমুনায় উক্ত চক্ষুবিন্দুটির উপরদিকে খানিকটা ঢিবির মতো উঁচু (swelled) ও সেই উঁচু অংশে একটি ক্ষুদ্র তারাবিন্দু চোখে পড়ে এবং চক্ষুবিন্দুটির খানিক উপরে অনুরূপ একটি ক্ষুদ্র চক্ষুবিন্দু নজরে আসে। একটি অস্পষ্ট কালচে বাদামি আঁকাবাঁকা পোস্ট-ডিসকাল রেখা কোস্টার নিচ থেকে টরনাসের উপরে ১বি নং শিরা অবধি বিস্তৃত। সরু কালো টার্মিনাল ও সাব-টার্মিনাল রেখা সমান্তরালভাবে বিস্তৃত।
পিছনের ডানা সাধারণত দাগ-ছোপহীন, তবে নিম্নতলের চক্ষুবিন্দুগুলি কখনো কখনো খুবই অস্পষ্টভাবে উপরিতলে দৃশ্যমান। পোস্ট-ডিসকাল রেখা সামনের ডানার অনুরূপ। টার্মেন খাঁজকাটা ও ঢেউখেলানো এবং টার্মিনাল ও সাব-টার্মিনাল রেখা সমান্তরাল ভাবে অনুরূপ খাঁজকাটা ও ঢেউখেলানো। পুরুষ প্রকারে পিছনের ডানার গোড়ায় (base) কোস্টার নিচে লম্বা ফ্যাকাশে বাদামি দাগ (brand) দেখা যায়। উভয় ডানার প্বার্শ-রোয়া বা সিলিয়া ফ্যাকাশে বাদামি।
ডানার নিম্নতল: কালচে বাদামি বা ফ্যাকাশে বাদামি। পুরুষ প্রকারে সামনের ডানায় ডরসামের ঠিক উপরে গোড়া (base) থেকে সাদা ডিসকাল বন্ধনী পর্যন্ত বিস্তৃত লম্বা সাদাটে বাদামি দাগ(brand) বর্তমান। সামনের ও পিছনের উভয় ডানা জুড়ে লম্বা সরু ও সাদা ডিসকাল বন্ধনী বিদ্যমান ।সামনের ডানায়) হলুদ বলয়াবৃত ও সাদা তারাবিন্দু (puple) যুক্ত দুটি চক্ষুবিন্দু দেখা যায় যাদের মধ্যে উপরেরটি ছোট ও নিচেরটি বৃহদাকার। চক্ষুবিন্দু দুটির বাইরের অর্ধ বেষ্টন করে একটি পুরু,সাদা পোস্ট-ডিসকাল রেখা এবং ফ্যাকাশে সাদা বা হলদেটে সাদা আঁকাবাঁকা টার্মিনাল ও সাব-টার্মিনাল পুরু রেখা চোখে পড়ে।[৯]
পিছনের ডানায় ছোট বড় এক সারি অনুরূপ চক্ষুবিন্দু (সরলরৈখিক নয়) ও তাদের বহি-প্রান্ত বেষ্টন করে সামনের ডানার অনুরূপ পুরু পোস্ট-ডিসকাল রেখা কোস্টা থেকে টরনাস পর্যন্ত বক্রভাবে বিস্তৃত। টার্মিনাল ও সাব-টার্মিনাল রেখা সামনের ডানার অনুরূপ, তবে অধিক ঢেউ খেলানো ও মধ্যভাগে খাঁজযুক্ত।
শুস্ক-ঋতুরূপে চক্ষুবিন্দুগুলি খুব অস্পষ্ট হয়ে যায় বা ক্ষুদ্র বিন্দুর আকার ধারণ করে এবং পুরুষ প্রকারে পিছনের ডানার উপরিতলে ও সামনের ডানার নিম্নতলের দাগদুটি (brand) বিলুপ্ত হয়। শুস্ক-ঋতুরূপে সামনের ডানার শীর্ষ তীক্ষ্ণ ও টার্মেন সোজা। আর্দ্র- ঋতুরূপে সামনের ডানার শীর্ষ ও টার্মেন অধিক গোলাকৃতি।
স্ত্রী ও পুরুষ প্রকার প্রায় অনুরূপ। শুঙ্গ সাদায় -কালোয় ডোরাকাটা এবং শীর্ষভাগ কমলা-হলুদ। মাথা, বক্ষদেশ ও উদর উপরিতলে কালচে বাদামি বা কালচে খয়েরি এবং নিম্নতলে ফ্যাকাশে বাদামি।
সুলভ দর্শন এই প্রজাতি অন্যান্য বুশব্রাউন প্রজাতির ন্যায় ধীর, দুর্বল ও অসংলগ্ন (irregular) উড়ানবিশিষ্ট। এরা ভূমির কাছাকাছি নিচ দিয়ে ডানা ঝাঁকি দিয়ে ওড়ে (jerky flight); দীর্ঘক্ষণ একজায়গায় বসে থাকতে দেখা যায় ও বিরক্ত করলে সামান্য দুরত্ব উড়েই দ্রুত পছন্দসই জায়গায় বসে পড়ে। উত্তর-পূর্ব ভারতে এদের বিচরণ বেশ কম দেখা গেলেও, ভারতের অনত্র উপযুক্ত পরিবেশে এদের প্রাচুর্য চোখে পড়ে। এই প্রজাতি সমতল ও পার্বত্য অঞ্চলে ঘন জঙ্গল, ঘন ঝোপঝাড় যুক্ত ছায়াচ্ছন্ন পরিবেশ বিশেষ পছন্দ করে। সাধারণত সকালের প্রথম ভাগ, বিকালের শেষভাগ ও সন্ধ্যার দিকে এদের সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়। মেঘলা দিনে এরা প্রায় সারাদিনই বেশি সক্রিয় থাকে।[১০] এরা ঘন জঙ্গলে, ঘন ঝোপঝাড়ে গাছের পাতায়, ডালে, মাটিতে পড়ে থাকা শুকনো পাতায়, জঙ্গলের পথে মাটিতে অবস্থান করে। গাছের পাতায়, পশু-পাখির বিষ্ঠায়, পচা ফলের উপর, ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে মাটি ও পাথরের ভিজে ছোপে বসে এদের খাদ্যরস আহরণ করতে প্রায়শই দেখা যায়। জঙ্গলের ঘাসজমিতেও এই প্রজাতির দেখা মেলে, তবে ফুলে বসতে কদাচিৎ দেখা যায়। পাহাড়ি জঙ্গল ও জঙ্গল সংলগ্ন ঘন ঝোপঝাড় পূর্ণ এলাকায় ১৫০০ মি, উচ্চতা পর্যন্ত প্রায় সারা বছরই এদের বিচরণ চোখে পড়ে।[১১]