তাইনান সিটি 臺南市 Tâi-lâm | |
---|---|
বিশেষ পৌরসভা | |
ব্যুত্পত্তি: ফিনিন: Táinán; আক্ষরিক: "Taiwan south" | |
ডাকনাম: ফিনিক্স শহর (鳳凰城),[১] The Prefecture City (府城), Nanying (南瀛) | |
দেশ | প্রজাতন্ত্রী চীন (তাইওয়ান) |
জিল্যান্ডিয়া দুর্গের অধীনে গঠিত | ১৬২৪ |
তুংনিং রাজ্যের রাজধানী | ১৬৬১ |
তাইনান অধ্যক্ষতা | ১৮৯৫ |
প্রাদেশিক শহরের মর্যাদা | ২৫ অক্টোবর ১৯৪৫ |
বিশেষ নগর এলাকায় উন্নীতকরণ ও তাইনান কাউন্টির সাথে একত্রিতকরণ | ২৫ ডিসেম্বর ২০১০ |
আসন | আনপিং, জিনিং[২] |
জেলা | |
সরকার | |
• শাসক | |
• মেয়র | হুয়াং ওয়েই-চের (ডিপিপি) |
আয়তন[৩][৪] | |
• বিশেষ পৌরসভা | ২,১৯১.৬৫ বর্গকিমি (৮৪৬.২০ বর্গমাইল) |
• পৌর এলাকা | ২৫৯ বর্গকিমি (১০০ বর্গমাইল) |
এলাকার ক্রম | ২২-এর মধ্যে ৭ |
জনসংখ্যা (মার্চ ২০২৩)[৫] | |
• বিশেষ পৌরসভা | ১৮,৫৬,৬৪২ |
• ক্রম | ২২-এর মধ্যে ৬ |
• জনঘনত্ব | ৮৫০/বর্গকিমি (২,২০০/বর্গমাইল) |
• পৌর এলাকা[৬] | ১,২০,০৫,০০০ |
• পৌর এলাকার জনঘনত্ব | ৪৬,০০০/বর্গকিমি (১,২০,০০০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | জাতীয় মান সময় (ইউটিসি+8) |
পোস্টাল কোড | ৭০০–৭৪৫ |
এলাকা কোড | (০)৬ |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | TW-TNN |
পাখি | Pheasant-tailed jacana |
ফুল | Phalaenopsis |
গাছ | কৃষ্ণচূড়া |
ওয়েবসাইট | www |
তাইনান শহর | |||||||||||||||||||||||||
চীনা নাম | |||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
ঐতিহ্যবাহী চীনা | 臺南市 | ||||||||||||||||||||||||
সরলীকৃত চীনা | 台南市 | ||||||||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||||||||
জাপানি নাম | |||||||||||||||||||||||||
কাঞ্জি | 台南市 | ||||||||||||||||||||||||
কানা | たいなんし | ||||||||||||||||||||||||
কিউজিতাই | 臺南市 | ||||||||||||||||||||||||
|
তাইনান তাইওয়ান প্রণালীর পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত দক্ষিণ তাইওয়ানের একটি বিশেষ পৌরসভা। এটি তাইওয়ান দ্বীপ অঞ্চলের প্রাচীনতম শহর এবং কোজিঙ্গা ও পরবর্তীকালে ছিং রাজবংশের সময়ে তাইওয়ানের রাজধানী হিসেবে এর ২০০ বছরের অধিক সময়ের ইতিহাসের জন্য "রাজধানী শহর" নামে পরিচিত। তাইনানের প্রত্যাবর্তন, পুনঃসংজ্ঞায়ন ও পুনঃনবায়নের ইতিহাসের জন্য শহরটিকে "ফিনিক্স শহর" বলেও ডাকা হয়ে থাকে।[৭] গ্লোবালাইজেশন অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড সিটিজ রিসার্চ নেটওয়ার্ক তাইনান শহরটিকে "সক্ষম" স্তরের বৈশ্বিক শহর হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করেছে।[৮]
তাইওয়ান দ্বীপে ওলন্দাজ রাজত্বকালে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (ভিওসি) শাসন ও বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে জিল্যান্ডিয়া দুর্গ নামে তাইওয়ানের প্রাচীনতম নগর এলাকা হিসেবে তাইনান শহর প্রতিষ্ঠা করে। ১৬৬১ সালে কোজিঙ্গারা ওলন্দাজ ঔপনিবেশিকদের পরাজিত করার পর ১৬৮৩ সাল পর্যন্ত তাইনান তুংনিং রাজ্যের রাজধানী ছিল এবং পরবর্তীকালে ১৮৮৭ সাল পর্যন্ত ছিং রাজবংশের অধীনে তাইওয়ান অধ্যক্ষতার রাজধানী ছিল। তাইনান ১৯৪৫ সালে প্রজাতন্ত্রী চীন তাইওয়ানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত জাপানি ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। প্রজাতন্ত্রী চীন তাইওয়ানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এটি তাইওয়ান প্রদেশ কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ প্রাদেশিক শহর হয়ে ওঠে। এটি ২০১০ সালে নিকটবর্তী তাইনান কাউন্টির সাথে একত্রিত হয়ে দেশটির নতুন বিশেষ নগর এলাকা তাইনান শহরে রূপান্তরিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাইওয়ান প্রদেশের অধীনে ছিল।
তাইনানকে ঐতিহাসিকভাবে তাইওয়ানের অন্যতম প্রাচীন শহর হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এর পূর্বনাম তায়োউয়ান থেকে "তাইওয়ান" নামের উৎপত্তি বলে দাবী করা হয়। এর লোক সংস্কৃতি বিশেষ করে বিখ্যাত স্থানীয় খাবার ও ঐতিহ্যবাহী রন্ধনশৈলি, রক্ষণশীল তাওবাদী রীতিনীতি এবং শিশুর জন্ম থেকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন বিদ্যমান স্থানীয় রীতিনীতির জন্য এটি তাইওয়ানের অন্যতম সাংস্কৃতিক রাজধানী। ১৬৬৫ সালে এই শহরে প্রথম কনফুসীয় বিদ্যালয়-উপসনালয় স্থাপিত হয়েছিল।[৯] প্রাচীন শহরের পূর্ব ও দক্ষিণের ফটকের ভগ্নাবশেষ এবং অন্যান্য অসংখ্য ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ এখনও রয়ে গেছে। তাইনানে তাইওয়ানের অন্য যে কোন শহরের তুলনায় অধিক বৌদ্ধ ও তাওবাদী উপসনালয় রয়েছে।
জুওঝেন জেলায় প্রত্নতাত্বিক খননকার্য থেকে জানা যায় তাইনান অঞ্চল কমপক্ষে ২০,০০০ থেকে ৩১,০০০ বছর পূর্ব থেকে জনবসতিপূর্ণ ছিল। আদিবাসী সিরায়া উপজাতি ১৬শ শতাব্দীতে এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। সিনকান উপ-উপজাতির সাকাম সম্প্রদায় বর্তমান শহর এলাকায় জনবসতি গড়ে তোলে।[১০] সোয়েলাং, মাত্তাউ ও বাক্লোয়াং-সহ অন্যান্য সিরায়ান উপ-উপজাতি পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাস করত।
১৬শ শতাব্দীর শেষভাগে চীনা বণিক ও মৎস্যজীবীরা দ্বীপটির পশ্চিম উপকূলে বেশ কিছু ঘাঁটি তৈরি করে, বিশেষ করে তাইকাং অন্তর্বর্তী বালুতটে ও সাকাম গ্রামের (বর্তমান ফোর্ট প্রোভিনশিয়া) খাড়িতে। চীনারা বালুতটের নাম তাইওয়ান (আধুনিক আনপিং) গ্রহণ করে।[১০][১১][১২] ইউরোপীয়দের আগমনের সময়ে চীনা ও জাপানি বণিক ও মৎস্যজীবীদের ব্যাপক প্রভাব ছিল।[১১][১৩]
প্রারম্ভিক ডাচ উপনিবেশবাদীরা মাকাও এবং পেঙ্গু দ্বীপ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিল। ১৬২২ সালের জুলাই মাসে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির টেক্সটাইল ব্যবসায়ী কর্নেলিস রেয়ারজ বাণিজ্য ঘাটি তৈরি করার জন্য উপযুক্ত জায়গার সন্ধানে তাইওয়ানে রওনা হন। ১৬২৪ সালে তিনি বালুকাময় উপদ্বীপে 'অরেঞ্জ' নামে একটি ছোট দুর্গ প্রতিষ্ঠা করেন, যাকে তারা তাইউয়ান (আধুনিক দিনের আনপিং) বলে। এরপর দুর্গটি সম্প্রসারণ করা হয় এবং ফোর্ট জিল্যান্ডিয়া নামে নামকরণ করা হয়। দুর্গটি প্রাথমিকভাবে তাদের স্পেনীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের আক্রমণ করার ঘাঁটি এবং চীন ও ইন্দোনেশিয়ার বাটাভিয়া মধ্যে বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছিল। পরে ঘাঁটিটি চীন, জাপান এবং ইউরোপের মধ্যে ওলন্দাজ বাণিজ্যের কেন্দ্রে পরিণত হয়।[১১][১৩] পিটার নুইটসের (১৬২৭-২৯) গভর্নরশিপের সময় ওলন্দাজ ও জাপানি বণিকদের মধ্যে বৈরিতা দেখা দেয়, যার ফলে এক পর্যায়ে জাপানি ব্যবসায়ী হামাদা ইয়াহি নুইটসকে জিম্মি করে।[১২][১৩]
কোজিঙ্গা (ঝেং চেংগং নামেও পরিচিত) ছিলেন একজন মিং অনুগত এবং ক্ষয়প্রাপ্ত রাজবংশের পরবর্তী সম্রাটদের নৌবাহিনীর মিং সৈন্যদের প্রধান সেনাপতি। ১৬৬১ সালে কোজিঙ্গা তাইওয়ানে ওলন্দাজ ঔপনিবেশিকদের আক্রমণ করেন। নয় মাস অবরোধের পর তাইওয়ানের ওলন্দাজ গভর্নর ফ্রেডেরিক কোয়েট ১৬৬২ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি কোজিঙ্গার কাছে ফোর্ট জিল্যান্ডিয়া সমর্পণ করেন।[১১] এর ফলে কার্যকরভাবে তাইওয়ানের উপর ৩৮ বছরের ওলন্দাজ শাসনের অবসান ঘটে। তখন কোজিঙ্গা মিং রাজবংশকে পুনরুদ্ধার করতে চেয়েছিলেন এমন অনুগতদের জন্য তাইওয়ানকে একটি সামরিক ঘাঁটিতে রূপান্তরিত করার জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন।
১৬৮১ সালে ঝেং জিং-এর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারের জন্য লড়াই শুরু হয়েছিল। এই দ্বন্দ্বের ফলে উপস্থাপিত সুবিধা গ্রহণ করে ছিং নৌ কমান্ডার শি লাং ১৬৮৩ সালের ১৭ই জুলাই পেঙ্গুর যুদ্ধে তুংনিং নৌবহরকে পরাজিত করেন। দুই দিন পরে ছিং সৈন্যরা তুংনিং-এ অবতরণ করে এবং সামান্য প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। ঝেং পরিবারের দুই দশকের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৬৮৪ সালে ফুজিয়ান প্রদেশের অংশ হিসেবে রাজ্যটি ছিং সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।[১৩] সেখানে বর্তমান সময়ের তাইনানে অধ্যক্ষ আসন তাইওয়ানফু[১৪] নিয়ে তাইওয়ান অধ্যক্ষতা প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৮৫ সালে চীনারা প্রথম চীনা-জাপানি যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার ফলে তাইওয়ান এবং পেঙ্গু দ্বীপ শিমোনোসেকি চুক্তির মাধ্যমে জাপানের কাছে হস্তান্তরিত হয়। ১৮৯৫ সালের মে মাসে আগত জাপানি দখলদারিত্ব রোধ করার প্রয়াসে তাইনানে ফরমোসা প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়। ১৮৯৫ সালের অক্টোবরে জাপানি সেনাবাহিনী তাইনানে পৌঁছায়। লিউ ইয়ংফু ও অন্যান্য প্রজাতন্ত্রী নেতারা শহর ছেড়ে পালিয়ে যান। একজন স্কটিশ ধর্মপ্রচারক টমাস বার্কলেকে স্থানীয় অভিজাত এবং বিদেশী বণিকরা শহরে জাপানিদের প্রবেশের বিষয়ে আলোচনার জন্য বাছাই করেন। ফলস্বরূপ, তারা বিনা প্রতিরোধে তাইনান দখল করে নেয়। জাপানি শাসনের অধীনে, তাইনান প্রাথমিকভাবে তাইনান কেনের অধীনে পরিচালিত হয়।[১০] ১৯০৪ সালে প্রায় ৫০,০০০ জনসংখ্যার তাইনান ছিল তাইওয়ানের সবচেয়ে জনবহুল শহর।[১৫]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৫ সালের ২৫শে অক্টোবর প্রজাতন্ত্রী চীন তাইওয়ান দখল করে। ১৯৪৬ সালে তাইওয়ান প্রদেশের অধীনে তাইনান শহর ও তাইনান কাউন্টি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পৃথক স্থানীয় সত্তা হয়ে ওঠে। ১৯৪৭ সালে ২৮শে ফেব্রুয়ারি ঘটনার ফলে তাইনানে নাগরিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল। আরওসি সেনাবাহিনী ১১ই মার্চ আদিবাসী জাপানি ও শিক্ষিত আইনজীবী এবং শহরের নগরপাল হিসেবে জনপ্রিয় প্রার্থী তাং দে-ঝাংকে এই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে গ্রেফতার করে।
তাইনান শহর একটি বিশেষ পৌরসভা, যা তাইওয়ানের স্থানীয় সরকার আইনের অধীনের সর্বোচ্চ স্তরের স্থানীয় সরকার।
১৯৯৬ সালে গণভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সূত্রপাতের পর থেকে অধিকাংশ শহরবাসী একাধিকবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর জন্য ভোট দিয়েছেন।
নানটো শহর ব্যতীত তাইওয়ানের বাকি সব শহর ও কাউন্টির মত অধিকাংশ তাইনান শহরবাসী বিজয়ী রাষ্ট্রপতি লি তেং-হুই ও উপ রাষ্ট্রপতি লিয়েন চান-কে ভোট দেন।