তাওহাকি প্যাটারা (ইংরেজি: Tawhaki Patera) হল বৃহস্পতির প্রাকৃতিক উপগ্রহ আইয়োর একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। আইয়োর অগ্রণী গোলার্ধে ৩°১৯′ উত্তর ৭৬°১১′ পশ্চিম / ৩.৩২° উত্তর ৭৬.১৮° পশ্চিম[১] স্থানাংকে পশ্চিম মিডিয়া রিজিওতে বিষুবীয় সমভূমি অঞ্চলে এটি অবস্থিত। তাওহাকি হল একটি আইয়োনীয় প্যাটারা অর্থাৎ ক্যালডেরার অনুরূপ এক শ্রেণির আগ্নেয়গিরি জ্বালামুখ। এটির প্রস্থ ৪৯.৮ কিলোমিটার (৩০.৯ মা) এবং গভীরতা ৫৫০ মিটার (১,৮০০ ফু)।[১][২]
১৯৭৯ সালের মার্চ মাসে ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে নিম্ন রেজোলিউশন চিত্রে একটি অন্ধকার বিন্দুর আকারে তাওহাকি প্যাটারা প্রথম দৃষ্ট হয়েছিল। যদিও ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসের আগে তাওহাকিতে আগ্নেয় সক্রিয়তা পর্যবেক্ষিত হয়নি। এই সময় আইয়ো যখন গ্যালিলিও মহাকাশযানের ক্যামেরা কর্তৃক বৃহস্পতির ছায়া আইয়ো দৃষ্ট হয় তখন প্রায়-অবলোহিত তরঙ্গদৈর্ঘ্যে একটি উজ্জ্বল তাপীয় হটস্পট পর্যবেক্ষণ করা হয়।[৩] ১৯৯৭ সালের নভেম্বর মাসে গ্যালিলিও মহাকাশযানের একাদশতম পরিক্রমণের সময় আইয়ো যখন গ্রহণে ছিল তখন তাওহাকিকে একটি হটস্পট হিসেবেও পর্যবেক্ষণ করা হয়। ১৯৯৮ সালের মে মাসে তাওহাকিতে অগ্ন্যুৎপাতের উচ্চ তাপমাত্রার পর্যায়টি সমাপ্ত হয়ে যায়।[৪] এই বিলম্ব তাওহাকিতে সক্রিয়তার কোনও প্রকৃত পরিবর্তনের ফলে ঘটেছিল নাকি ভয়েজার তথ্য ও গ্যালিলিও-র নিয়ার-ইনফ্রারেড ম্যাপিং স্পেকট্রোমিটার (এনআইএমএস) যন্ত্রের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের নিম্ন রেজোলিউশনের ফলেই আপাত দৃষ্টিতে এই ধরনের বিলম্ব ধরা পড়েছে তা অনিশ্চিত।[৩]
যে ক’টি আগ্নেয়গিরিকে ১৯৯৯ সালের ২ অগস্টে ৯৯০৮এ বিস্ফোরক অগ্ন্যুৎপাতের জন্য দায়ী বলে সন্দেহ করা হয় তাওহাকি প্যাটারা তার মধ্যে অন্যতম। এই অগ্ন্যুৎপাতটি ছিল আইয়োর বুকে পর্যবেক্ষিত সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী অগ্ন্যুৎপাতগুলির অন্যতম।[৫] যদিও পৃথিবী-ভিত্তিক পর্যবেক্ষণের নিম্ন রেজোলিউশন অগ্ন্যুৎপাতের উৎস আগ্নেয়গিরিটিকে চিহ্নিত করা অসম্ভব করে তুলেছে। শুধু এইটুকুই জানা গিয়েছে যে সেটি আইয়োর অগ্রণী গোলার্ধে উত্তরপশ্চিম মিডিয়া রিজিওতে অবস্থিত।[৬] এনআইএমএস যন্ত্রটি অগ্ন্যুৎপাতের এক মাস আগে ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে গ্যালিলিও-র ২১তম পরিক্রমণের সময় তাওহাকিতে এক থেকে পাঁচ মাইক্রোমিটারের মধ্যে একটি তাপীয় হটস্পট শনাক্ত করেছিল।[৫] ১৯৯৯ সালের ২৬ নভেম্বর আইয়ো অতিক্রমণের সময় প্রতি পিক্সেলে ২৬০ মিটারে গ্যালিলিও কর্তৃক তাওহাকি প্যাটারার দক্ষিণার্ধটির আলোকচিত্র গৃহীত হয়। এটিই ছিল এই আগ্নেয়গিরির সর্বোচ্চ রেজোলিউশন চিত্র।[৪] এই ছবিটি এবং ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে কৃত পর্যবেক্ষণের ফলে প্রাপ্ত রঙিন আলোকচিত্রে দেখা যায় যে তাওহাকির পৃষ্ঠভাগে এক ধরনের অন্ধকারতম পদার্থের অস্তিত্ব রয়েছে। যা ইঙ্গিত করে যে তাওহাকিতে শীতলায়িত লাভা অত্যন্ত নবীন এবং এটি গ্যালিলিও অভিযানের সময় দৃষ্ট সক্রিয়তার অনুরূপ।[২] দক্ষিণপূর্ব দিকে তাওহাকি ভ্যালিস নামে একটি লাভা প্রণালীও পাওয়া যায়। এই প্রণালীটি সম্ভবত তাওহাকি প্যাটারার পূর্বকালীন সক্রিয়তার সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু এই অঞ্চলের ছবিগুলিতে আগ্নেয়গিরির উত্তরার্ধ ও প্রণালীটির মধ্যে একটি বিভাজন দেখা যায়। এর ফলে আগ্নেয়গিরি-সম্বন্ধীয় দু’টি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে কোনও সম্পর্ক স্থাপন করা যায়নি।[৭] ২০০১ সালের অগস্ট মাসে এনআইএমএস যন্ত্রটি আবার তাওহাকি প্যাটারায় একটি নিচু স্তরের সক্রিয়তা পর্যবেক্ষণ করে।[৮]
২০০০ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন কর্তৃক আগ্নেয়গিরিটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাওরি বজ্রপাতের দেবতা তাওহাকির নামে নামাঙ্কিত করা হয়।[১] গ্যালিলিও ইমেজিং টিম ‘হিনে-ই-টাপেকা প্যাটারা’ নামটির প্রস্তাব রেখেছিল, কিন্তু ‘তাওহাকি প্যাটারা’ নামটিই শেষ পর্যন্ত নির্বাচিত হয়।[৯]