তাওহীদ

হাতের আঙ্গুলের এমন ইশারাকে মুসলিমগণ তাওহীদের চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন।

তাওহীদ (আরবি: توحيد) বলতে ইসলাম ধর্মে এক আল্লাহর ধারণাকে বোঝায়।[] তাওহিদ শব্দের অর্থ একত্ববাদ৷[] এটি শিরকের বিপরীত। ইসলামি পরিভাষায় তাওহীদ হলো সৃষ্টি ও পরিচালনায় আল্লাহকে এক ও অদ্বিতীয় হিসেবে বিশ্বাস করা, সকল ইবাদাত-উপাসনা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য করা, অন্য সবকিছুর উপাসনা ত্যাগ করা, আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ ও সুউচ্চ গুণাবলীকে তার জন্য নির্ধারিত করা এবং দোষ ত্রুটি থেকে আল্লাহকে পবিত্র ও মুক্ত ঘোষণা করা।[][]

তাওহীদের প্রকারভেদ

[সম্পাদনা]

তাওহীদ তিন প্রকার আবার কারও কারও মতে চার প্রকার।

প্রথম তিনটি প্রকার হলো:

  • তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ : একমাত্র স্রষ্টা, রিযিকদাতা, সবকিছুর একমাত্র নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে বিশ্বাস করা।
  • তাওহীদুল ঊলূহিয়্যাহ : শুধুমাত্র আল্লাহর উপাসনা করা,[টীকা ১] তাগুতকে বর্জন করা।
  • তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত: কোরআন ও সহিহ হাদিসে উল্লেখিত আল্লাহর নাম ও গুণাবলীগুলো ব্যাখ্যা, বিকৃতি, ধরণ নির্ধারণ ও সাদৃশ্য প্রদান ছাড়াই বিশ্বাস করা।

চতুর্থ প্রকার যা নজদী সালাফিরা সহ রাজনৈতিক মতাদর্শীয় আলেমগণ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দাবি করে থাকে তা হলো:

  • তাওহীদুল হাকিমিয়্যা: বিধান এবং সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে আল্লাহ এক ও একক। যেমন: চুরি করলে কি শাস্তি, যেনা করলে কি শাস্তি, চুরি ডাকাতি করলে কি শাস্তি, এসবকিছুর বিধান একমাত্র আল্লাহর বর্ণিত আদেশ অনুযায়ী গ্রহণ করা। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, পুঁজিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ এবং জাতীয়তাবাদকে তাওহীদের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া।

কুরআনে উল্লেখ

[সম্পাদনা]

কুরআনের অনেক আয়াতে তাওহীদের ঘোষণা রয়েছে যার মধ্যে কয়েকটি হলো:

"তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব। তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) উপাস্য নেই। তিনি প্রতিটি জিনিসের স্রষ্টা। সুতরাং তোমরা তার উপাসনা করো। আর তিনি প্রতিটি জিনিসের উপর তত্ত্বাবধায়ক।"[কুরআন 6:102]

"আমি প্রত্যেক জাতির কাছে রসূল পাঠিয়েছি (এ নির্দেশ দিয়ে) যে, তোমরা আল্লাহর উপাসনা করো আর তাগুতকে বর্জন করো।..."[কুরআন 16:36]

"আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) উপাস্য নেই; সুন্দর নামসমূহ তারই।"[কুরআন 20:8]

"তিনিই আল্লাহ্, তোমাদের প্রতিপালক। সমস্ত কর্তৃত্ব তারই। আর তোমরা আল্লাহ্-র পরিবর্তে যাদেরকে ডাকো (যাদের কাছে দুআ করো), তারা তো খেজুর আঁটির উপরে পাতলা আবরণেরও (অতি তুচ্ছ কিছুরও) মালিক নয়।"[কুরআন 35:13]

"কোনো কিছুই তার সদৃশ নয়।"[কুরআন ৪২:১১]

"বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তার মুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। আর তার কোনো সমকক্ষও নেই।"[কুরআন ১১২:১–৪]

তাওহীদের বিপরীত ধারণা হলো শিরক। ইসলামে শিরক হলো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উপাসনা করা। সাধারণত বিভিন্ন মূর্তি, পাথর, গাছ, নক্ষত্র, ফেরেশতা, জ্বিন, বস্তু ও জীবের ইবাদত বা উপাসনা করা হয়। এসব উপাস্যকে ভয়-ভীতি, আশা-আকাঙ্খার সাথে ডাকা, বিপদে তাদের কাছে সাহায্য, আশ্রয়, উদ্ধার প্রার্থনা করা, তাদের নাম জবাই করা ইত্যাদি কর্মকাণ্ড শিরকের অন্তর্ভুক্ত।

তাওহিদের গুরুত্ব

[সম্পাদনা]

ইসলামে ঈমানের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান বিষয় হলো তাওহীদ৷[] অর্থাৎ মুমিন বা মুসলিম হতে হলে একজন মানুষকে সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলার একত্ববাদে বিশ্বাস আনতে হবে৷ ইসলামের সকল শিক্ষা ও আদর্শ তাওহিদের উপর প্রতিষ্ঠিত৷ দুনিয়াতে যত নবি-রাসূল এসেছেন সকলেই তাওহিদের দাওয়াত দিয়েছেন৷ তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য নবি-রাসূলগণ আজীবন সংগ্রাম করেছেন৷

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]
  1. ইলাহ্ (আরবি: ﺍﻻﻟﻪ) অর্থ হলো: সম্মান ও বড়ত্বের কারণে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় যার উপাসনা করা হয়। আর ইবাদত বা উপাসনা সেই সব কাজকে বলা হয়, যা কোনো ইলাহ্-র সন্তুষ্টি লাভের আশায় অথবা তার অসন্তুষ্টির ভয়ে করা হয়।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "From the article on Tawhid in Oxford Islamic Studies Online" (ইংরেজি ভাষায়)। Oxfordislamicstudies.com। ২০০৮-০৫-০৬। ২০১০-১১-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৮-২৪ 
  2. "Allah"Encyclopædia Britannica Online (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৫-২৮ 
  3. ড. সালিহ বিন ফাওযান আল ফাওযান। আক্বীদাতুত তাওহীদ। শাইখ মুখলিসুর রহমান মানসুর কর্তৃক অনূদিত। মাকতাবাতুস সুন্নাহ। 
  4. "The Fundamentals of Tawhid (Islamic Monotheism)" (ইংরেজি ভাষায়)। ICRS (Indonesian Consortium of Religious Studies। ২০১০-১০-৩০। ২০১৫-০৬-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১০-২৮ 
  5. D. Gimaret, Tawhid, Encyclopedia of Islam (ইংরেজি ভাষায়)

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]