ফিকহ (ইসলামি আইনশাস্ত্র) |
---|
এর একটি ধারাবাহিক অংশ |
ইসলামিক স্টাডিজ |
তাকাফুল (আরবি: التكافل) হচ্ছে ইসলামী শরীয়াহ সম্মত সমবায়ভিত্তিক এক ধরনের ঝুঁকি বণ্টন পদ্ধতি বা প্রচেষ্টা, যেখানে একজনের প্রয়োজনে অন্যজন শরীক হয় অর্থাৎ সদস্যগণ কিংবা অংশগ্রহণকারীগণ দলবদ্ধভাবে এ কথায় সম্মত হন যে, তাদের নিজেদের যে কোন নির্দিষ্ট ভবিষ্যৎ সমস্যা বা সম্ভব্য দুর্ঘটনায় লোকসান বা ক্ষতির বিপরীতে বিপদ লাঘবের জন্য তারা সবাই নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা করবে এবং যদি কারো ক্ষতি হয় তবে উক্ত জমা থেকে তার ক্ষতিপূরণ করা হবে। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে তাকাফুল বা ইসলামী বীমা প্রচলিত বীমা ব্যবস্থার বিপরীত হিসেবে বিবেচিত হয়। তাকাফুল মূলত পারস্পরিক সুরক্ষার জন্য একে অপরের সম্ভব্য ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা সরূপ।[১]
যেমনঃ- বেঙ্গল ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স, এটি একটি পুর্ণাঙ্গ তাকাফুল বীমা কারক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান টি বেঙ্গল গ্রুপের মালিকানাধীন বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান। এরকম আরো কয়েকটি তাকাফুল বীমা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে রয়েছে।
প্রচলিত বীমা ব্যবস্থা মুসলিম সমাজের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলামী শরীয়াহ বিশেষজ্ঞগণ বা মুসলমান পণ্ডিতগণ সর্বসম্মত অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে প্রচলিত বীমা ব্যবস্থা শরীয়াহ সম্মত নয়। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছেন যে প্রচলিত বীমা ব্যবস্থায় ঘারার (অনিশ্চয়তা), মাইসির (জুয়া), রিবা (সুদ)-সহ আরও কিছু উপাদান বিদ্যমান, যা ইসলামী শরীয়াহ পরিপন্থী। যাহোক, ইসলামে আকস্মিক দুর্যোগ মোকাবেলা ও পরিবারের জন্যে নিরাপদ ভবিষ্যৎ তৈরীর তাগিদ রয়েছে। এ বিষয়ে ইসলামের শেষ নবী মুহাম্মাদ বলেছেন:[২]
যেহেতু, সুদনির্ভর প্রচলিত বীমা ব্যবস্থা মুসলমানদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয় এবং ভবিষ্যৎ আকস্মিক দুর্ঘটনা ও দুর্যোগ মোকাবেলা করার স্বার্থে সুরক্ষা ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ ইসলামে রয়েছে। সেহেতু, মুসলমান পণ্ডিতগণ একটি ইসলামী শরীয়াহ সম্মত কার্যকর ঝুঁকি ব্যবস্থপনা পদ্ধতি প্রণয়নের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চিন্তা-ভাবনা, গবেষণা ও পর্যালোচনা করেন আসছিলেন। এজন্য পণ্ডিতগণ গবেষণা ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজন করেছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সম্মেলনগুলো হচ্ছে: ১৯৬১ সালে দামেস্ক সম্মেলন, ১৯৬৫ সালে কায়রো সম্মেলন, ১৯৭৫ সালে মরোক্কো ও লিবিয়া সম্মেলন এবং ১৯৭৬ সালে মক্কায় অনুষ্ঠিত সম্মেলন। সর্বশেষ, ১৯৮০ সালে মক্কায় অনুষ্ঠিত ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে ইসলামী বীমা চালু করার প্রস্তাব গৃহীত হয়। উক্ত সম্মেলনে ওআইসিভুক্ত সদস্য দেশসমূহ সর্বসম্মতভাবে ইসলামী বীমা চালুর পক্ষে মত দেন।[২] প্রথম দেশ হিসেবে ১৯৭৯ সালে সুদান ইসলামী বীমার কার্যক্রম শুরু করে।[৩] পরবর্তীতে, ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে অন্যান্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশসমুহ যেমন: দুবাই, সৌদি আরব, বাহরাইন এবং জর্ডানে ইসলামী বীমা ব্যবস্থার প্রচলন ঘটে। উক্ত প্রচলিত ইসলামী বীমা ব্যবস্থা তাকাফুল নামেই অধিক প্রসিদ্ধি লাভ করে।[৪]
তাকাফুলের মূল নীতি হচ্ছে “একে অপরের দায় বা ঝুঁকি বহন কর”। এই উদ্দেশ্যেই তাকাফুল পরিচালিত হয়। তাকাফুল বা ইসলামী বীমার নীতিসমূহ হচ্ছে:[৫]
ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার অঙ্গসংগঠন আন্তর্জাতিক ইসলামিক ফিকহ একাডেমি ১৯৮৫ সালে তাদের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রচলিত বাণিজ্যিক বীমাসমূহকে হারাম বা নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে এবং সেই সাথে তাকাফুলকে সহযোগিতা, ঝুঁকি ভাগাভাগি এবং পারস্পরিক সহায়তার লক্ষ্যে শরীয়াহ সম্মত পদ্ধতি হিসাবে অনুমোদন দেয়।[৭]
ইসলামী পন্ডিতগণ কুরআন এবং হাদীসের আলোকে তাকফুল বা ইসলামী বীমাকে সমর্থন করছেন। যেমন:
কুরআন: ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ কুরআনের সূরা আল-মায়িদাহের ২য় আয়াতে সৎ কাজ ও পারস্পরিক সহযোগিতা সম্পর্কে বলা হয়েছে:
'সৎ কাজ করতে ও সংযমী হতে তোমরা পারস্পরকে সাহায্য কর। তবে পাপ ও শত্রুতার ব্যাপারে তোমরা একে অপরকে সাহায্য করনা।'[৮]
হাদীস: ইসলামের বিভিন্ন হাদিসেও তাকফুল বা ইসলামী বীমাকে সমর্থন করা হয়েছে:
'আল্লাহ্ তার বান্দাকে ততক্ষণ সাহায্য করবেন যতক্ষণ বান্দা তার অন্য ভাইকে সাহায্য করবে।' (সহীহ মুসলিম)[৯]
মুসলমান পণ্ডিতগণ তাকাফুল বাস্তবায়নের জন্য শরীয়াহ সম্মত কিছু মডেল প্রণয়ন করেছেন। মুলত এসব মডেল অনুসরণ করেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ইসলামী বীমা কোম্পানিগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। নিচে এর কয়েকটি মডেল উল্লেখ করা হল-[৪]