তাজকিরুল কুরআন হলো কুরআনের উর্দু অনুবাদ ভাষ্য। এটি ১৯৮৫ সালে মাওলানা ওয়াহিদউদ্দিন খান লিখেছেন।[১] কায়রো থেকে ২০০৮ সালে প্রথম আরবি ভাষায় 'আল-তাদকির আল-ক্বওম ফি তাফসির আল-কুরআন আল-হাকিম' নামে প্রকাশিত এই কাজটি হিন্দি ভাষাতেও অনুবাদ করা হয়েছে। এর ইংরেজি সংস্করণটি গুডওয়ার্ড বুকস দ্বারা ২০১১ সালে একইসাথে আরবি পাঠের সাথে কুরআনের অনুবাদ এবং তাফসীরসহ প্রকাশিত হয়।[২]
মাওলানা ওয়াহিদউদ্দিন খান ১৯২৫ সালে ভারতের আজমগড়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি একজন ইসলামিক আধ্যাত্মিক পণ্ডিত ছিলেন যিনি ধ্রুপদী ইসলামী শিক্ষা এবং আধুনিক বিজ্ঞান উভয় ক্ষেত্রেই পারদর্শী ছিলেন। খুব ছোট বয়স থেকেই তার জীবনের লক্ষ্য ছিল বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। যার লক্ষ্যে তিনি কুরআনের শিক্ষার উপর ভিত্তি করে শান্তি ও অহিংসার সম্পূর্ণ আদর্শের বিকাশের জন্য অনেক সময় ব্যায় করেছেন এবং প্রচেষ্টা করেছেন।[৩] মাওলানা ওয়াহিদউদ্দিন খানের কুরআনের ইংরেজি অনুবাদটি সহজ, পরিষ্কার এবং সহজে পাঠযোগ্য হওয়ায় তার কুরআনের অনুবাদ সংস্করণটি ব্যাপকভাবে স্বীকৃত।[৪]
মাওলানার মতে, পবিত্র কুরআন শরীফ ইসলাম ধর্মের কেন্দ্রীয় ধর্মীয় গ্রন্থ, যাকে মুসলমানরা ঈশ্বরের (আরবি: الله, আল্লাহ]' থেকে আগত বলে বিশ্বাস করে।,[৫] তিনি উপলব্ধির স্তরে মানুষের সত্য আবিষ্কারের গুরুত্বের উপর জোর দেন। এর উদ্দেশ্য হল মহান আল্লাহর সৃষ্টি পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করা, অর্থাৎ কেন মহান আল্লাহ এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, পৃথিবীতে তার মানুষের বসতি স্থাপনের উদ্দেশ্য, মৃত্যু-পূর্ব জীবনে মানুষের কাছ থেকে তার কী প্রয়োজন, কীভাবে মানুষ তার জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করবে, মৃত্যু-পরবর্তী সময় কী পুরস্কার বা শাস্তি নিয়ে মানুষ পাবে ইত্যাদি। এইভাবে কুরআন মানুষকে তার জীবনের মধ্য দিয়ে পরবর্তী জীবনে তার সমগ্র যাত্রাপথের পথ দেখায়। পবিত্র কুরআনের মূল বিষয়বস্তু কুরআনের বর্তমান অনুবাদ ও তাফসীরে স্পষ্টভাবে উল্লিখিত। আর তা হলো আলোকিতকরণ, শান্তি এবং মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ। পাঠককে বিশুদ্ধভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক স্তরে মহান আল্লাহকে আবিষ্কার করতে সক্ষম করার জন্য কুরআন তাওয়াসসুম, তাদাব্বুর, এবং তাফাক্কুর এর উপর জোর দেয়। সারা বিশ্বে আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে প্রতিফলন, চিন্তাভাবনা এবং মনন পবিত্র কুরআনের মূল বিষয়বস্তু।