তাপ-রসায়ন বা তাপরসায়নবিদ্যা হল রাসায়নিক বিক্রিয়া এবং ভৌত পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে জড়িত তাপ শক্তির অধ্যয়ন। একটি বিক্রিয়া শক্তি শোষণ বা বর্জন করতে পারে, এবং একটি দশা পরিবর্তন একই কাজ করতে পারে, যেমন গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাংক। তাপরসায়নবিদ্যা, এই শক্তি পরিবর্তনগুলোর উপর আলোকপাত করে, বিশেষত তার পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে সিস্টেমের শক্তি বিনিময়ের উপর। তাপরসায়ন একটি প্রদত্ত বিক্রিয়ার কোর্স জুড়ে বিক্রিয়ার বিক্রিয়ক এবং বিক্রিয়াজাত পণ্য পরিমাণের জন্য দরকারী। এনট্রপি নির্ধারনের সংমিশ্রণ এর সঙ্গে, একটি বিক্রিয়া স্বতঃস্ফূর্ত বা অস্বতঃস্ফূর্ত, অনুকূল বা প্রতিকূল হবে কিনা তা জানা যায়। তাপহারী বিক্রিয়াগুলি তাপ শোষণ করে, যেখানে তাপউৎপাদী বিক্রিয়াগুলি তাপ বর্জন করে। তাপ-রসায়ন রাসায়নিক বন্ধনের আকারে শক্তির ধারণাকে তাপগতিবিদ্যার ধারনার সাথে জুড়ে দেয়। এই বিষয়টি সাধারণত তাপ ধারণক্ষমতা, জ্বলন তাপ, গঠন তাপ, এনথ্যালপি, বিশৃঙ্খলা-মাত্রা, মুক্ত শক্তি এবং ক্যালরি চলরাশি গুলির পরিমাণ গণনা করে।
তাপ রসায়নবিদ্যা দুটি সাধারণ উক্তির উপর ন্যস্ত, সেই দুটি হল[১]:
১. ল্যাভোসিয়ার এবং ল্যাপলাস এর নীতি (১৭৯০): যেকোনো রূপান্তর এর সঙ্গে জড়িত শক্তির পরিবর্তন, বিপরীত রূপান্তরের সঙ্গে জড়িত শক্তির পরিবর্তনের সমান ও বিপরীত।[২]
২. হেস এর নীতি (১৮৪০): যেকোনো রূপান্তরের সঙ্গে জড়িত শক্তির পরিবর্তন সমান, পদ্ধতিটি এক বা একাধিক ধাপে সম্পূর্ণ করা হোক না কেন।
এই দুটি উক্তি তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র (১৮৪৫) প্রণয়নে সাহায্য করে।
ল্যাভোসিয়ার, ল্যাপলাস এবং হেস এই তিনজন ও আপেক্ষিক তাপ এবং লীনতাপ এর উপর গবেষণা করেছিলেন। যদিও সুপ্ত শক্তির পরিবর্তন উন্নয়নে জোসেফ ব্ল্যাক এর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
১৮৫৮ সালে গুস্তাভ কিরসফ দেখান যে, বিক্রিয়ার তাপের পরিবর্তন বিক্রিয়াজাত পন্য ও বিক্রিয়কের তাপ ধারণক্ষমতার পার্থক্যের সমান: d∆H/dT=∆Cp। এই সমীকরণটির সমাকলন এক তাপমাত্রা থেকে অন্য এক তাপমাত্রায় বিক্রিয়ার তাপ পরিমাপে সাহায্য করে।[৩][৪]
তাপমাপক-যন্ত্রের (কালোরিমেট্রি) সাহায্যে তাপ পরিবর্তন পরিমাপ করা হয়, সাধারণত একটি আবদ্ধ কক্ষ যার মধ্যে পরিবর্তন পরীক্ষা করা হয়। একটি থার্মোমিটার বা থার্মোকাপল ব্যবহার করে চেম্বারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়, এবং তাপমাত্রা ও সময়কে একটি গ্রাফে খসড়া করা হয় যে থেকে মৌলিক পরিমানগুলি গণনা করা যেতে পারে। আধুনিক কালোরিমিটার গুলির সাথে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র যুক্ত থাকে যা সহজেই তথ্য প্রদান করে, একটি উদাহরণ হল ডিফারেনসিয়াল স্ক্যানিং কালোরিমিটার।
তাপ রসায়নবিদ্যায় তাপগতিবিদ্যার বিভিন্ন সংজ্ঞা খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি সিস্টেম হল, এই মহাবিশ্বের নির্দিষ্ট পাঠ যা নিয়ে অধ্যয়ন করা হয়। সিস্টেম এর বাইরে সবকিছু পরিবেশের মধ্যে বিবেচনা করা হয়। একটি সিস্টেম হতে পারে:
একটি সিস্টেম একটি পদ্ধতি অবলম্বন করে যখন এর এক বা একাধিক ধর্মের পরিবর্তন ঘটে। একটি পদ্ধতি অবস্থার পরিবর্তনকে ইঙ্গিত করে। একটি সমতাপীও (একই তাপমাত্রা) পদ্ধতি ঘটে যখন সিস্টেমের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকে। একটি সমচাপীও (চাপ সমান) পদ্ধতি ঘটে যখন সিস্টেমের চাপ অপরিবর্তিত থাকে। একটি পদ্ধতি রুদ্ধতাপীও হবে যখন কোনো তাপের আদানপ্রদান হবে না।