তামিম বিন হাম্মাদ আলে সানি تميم بن حمد بن خليفة آل ثاني | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
কাতারের আমির | |||||||||
রাজত্ব | ২৫ জুন, ২০১৩ – বর্তমান | ||||||||
পূর্বসূরি | হামাদ বিন খলিফা আলে সানি | ||||||||
ডেপুটি আমীর | আব্দুল্লাহ বিন হামাদ আল থানি | ||||||||
প্রধানমন্ত্রী | আব্দুল্লাহ বিন নাসের খালিদ বিন খলিফা বিন আব্দুল আজিজ আলে সানি | ||||||||
জন্ম | দোহা, কাতার | ৩ জুন ১৯৮০||||||||
দাম্পত্য সঙ্গী |
| ||||||||
বংশধর বিস্তারিত |
| ||||||||
| |||||||||
রাজবংশ | আলে সানি | ||||||||
পিতা | হামাদ বিন খলিফা আলে সানি | ||||||||
মাতা | মওজা বিনতে নাসের | ||||||||
ধর্ম | সুন্নি ইসলাম | ||||||||
পেশা | রাজনীতি |
কাতারের আমির (أمير دولة قطر) এর রীতি | |
---|---|
উদ্ধৃতিকরণের রীতি | মাননীয় শেখ — حضرة السمو الشيخ |
কথ্যরীতি | সুমহান আমির — سماحة الشيخ |
বিকল্প রীতি | শেখ — شيخ/ الشيخ |
শেখ তামিম বিন হামাদ আলে সানি (আরবি: تميم بن حمد بن خليفة آل ثاني ; জন্ম : ৩ জুন, ১৯৮০) হলেন কাতারের ৯ম আমির। তিনি কাতারের পূর্ববর্তী আমির হামাদ বিন খলিফার চতুর্থ পুত্র এবং ২০১৩ সালে তার পিতা সিংহাসন ত্যাগ করলে তিনি কাতারের বর্তমান শাসক নির্বাচিত হন। এর আগে ২০০৩ সালে তার বড় ভাই শেখ জসিম বিন হামাদ সিংহাসনের দাবি ত্যাগ করার পর থেকে তামিম বিন হামাদ স্পষ্টভাবে কাতারি সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হয়ে যান।[১]
শেখ তামিম ২০২২ সালে ফিফা বিশ্বকাপের মতো বড় ক্রীড়া মঞ্চ আয়োজনের পাশাপাশি প্যারিসের পারি সাঁ-জেরমাঁ ( পিএসজি) ক্লাবের মালিকানা ক্রয় করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাতারকে অনেক উচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করেছেন। রয়েল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার ২০২২ সালে শেখ তামিমকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম হিসেবে গণ্য করে এবং ২০২৩ সালে তিনি তৃতীয় স্থানে রয়েছেন।[২]
সম্প্রতি একটি রিপোর্টে দাবি করা হয় যে, কাতারের আমির ৪.৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্রয় করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।[৩][৪]
শেখ তামিম বিন হামাদ মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করার মাধ্যমে গোটা মুসলিম বিশ্বে তার কূটনীতিক প্রভাব বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছেন এবং এর মাধ্যমে সৌদি আরবকে ছাপিয়ে কাতার দিন দিন ইসলামি বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।[৫][৬][৭][৮]
এছাড়াও আফগান যুদ্ধে আফগানিস্তান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে শান্তি চুক্তির পেছনে কাতারের আমির বড় ভূমিকা পালন করেছেন বলে জানা যায়। ২০২১ সালে কাতারের মধ্যস্ততায় আফগানিস্তান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে একটি শান্তি চুক্তি সম্পন্ন হয়। ফলে উভয় দেশের মাঝে প্রায় ২০ বছর যাবত চলা যুদ্ধ বন্ধ হয় এবং মার্কিন সেনাবাহিনী আফগানিস্তান ত্যাগ করে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।[৯][১০] মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভাষ্যমতে, শেখ তামিমের সহযোগিতা ব্যতীত এই চুক্তি সম্ভব হতো না।[১১]
তামিম বিন হামাদ ১৯৮০ সালের ৩ জুন কাতারের রাজধানী দোহায় জন্মগ্রহণ করেন।[১২] তিনি শেখ হামাদ বিন খলিফা আল থানির চতুর্থ পুত্র এবং তাঁর দ্বিতীয়া স্ত্রী শেখা মোজা বিনতে নাসেরের দ্বিতীয় পুত্র।[১৩][১৪] শেখ তামিম দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা করার পর গ্রেট ব্রিটেনের ডরসেটে অবস্থিত শেরবোর্ন স্কুল ( ইন্টারন্যাশনাল কলেজ)[১২] এবং হ্যারো স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে তিনি ১৯৯৭ সালে এ- লেভেলে লেখাপড়া শেষ করেন।[১২][১৩] এরপর তিনি রয়্যাল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্স্টে যোগ দেন। ১৯৯৮ সালে তিনি সেখান থেকে স্নাতক হন[১৩]
শেখ তামিম স্যান্ডহার্স্ট মিলিটারি একাডেমি থেকে স্নাতক হওয়ার পর কাতার সশস্ত্র বাহিনীতে দ্বিতীয় লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন লাভ করেন।[১৩] ২০০৩ সালের ৫ আগস্ট তিনি কাতারের সিংহাসনের সুস্পষ্ট উত্তরাধিকারী হন, যখন তার বড় ভাই শেখ জসিম বিন হামাদ তার পক্ষে নিজের দাবি ত্যাগ করেন।[১২][১৩] তারপর থেকেই তিনি শাসনভার গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হতে থাকেন এবং নিরাপত্তা শীর্ষক ও অর্থনীতির পদে কাজ শুরু করেন।[১৪] ২০০৩ সালের ৫ আগস্ট তিনি কাতারের সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার–ইন–চিফ নিযুক্ত হন।[১৩]
কাতারের আন্তর্জাতিক প্রোফাইল বাড়াতে শেখ তামিম খেলাধুলার ব্যাপক প্রচার করেছেন।[১৪] ২০০৫ সালে তিনি কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্টস প্রতিষ্ঠা করেন, যা অন্যান্য বিনিয়োগের মধ্যে প্যারিসের ফুটবল ক্লাব পারি সাঁ-জেরমাঁর (পিএসজি) মালিক। ২০০৬ সালে দোহায় ১৫তম এশিয়ান গেমসের আয়োজক কমিটির সভাপতিত্ব করেন তিনি এবং তার নেতৃত্বে সমস্ত সদস্য দেশ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। সেই বছর মিশরের আল আহরাম পত্রিকা তামিমকে "আরববিশ্বের সেরা ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব" হিসেবে ভোট দেয়।[১৩] তার নির্দেশনায় ২০১৪ সালে কাতার ফিনা সাঁতার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ও ২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের অধিকার জেতে।[১৩]
শেখ তামিম জাতীয় অলিম্পিক কমিটির চেয়ারম্যান।[১৩][১৪][১৫] ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (IOC) ১১৩তম অধিবেশনে তিনি এর সদস্য নির্বাচিত হন।[১৬] তিনি ২০২০ অলিম্পিকের জন্য দোহার পক্ষে বিডের নেতৃত্ব দেন।[১৩] তার নেতৃত্বে কাতার ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজন করে এবং কাতার আয়োজনের প্রস্তুতি হিসেবে অবকাঠামোতে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে বলে অনুমান করা হয়।[১৭]
অলিম্পিক কাউন্সিল অফ এশিয়ার (ওসিএ) মূল্যায়ন কমিটি ২০২০ সালের নভেম্বরে দোহায় তার সফর শেষ করে নিশ্চিত করে যে, তারা শহরটির কাছে এশিয়ান গেমসের জন্য অনেক কিছুর অফার করবে এবং তারা তামিমের অগ্রাধিকার ও সমর্থন নিয়ে সন্তুষ্ট।[১৮][১৯] ওসিএ'র ৩৯ তম সাধারণ অধিবেশনে এর প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-ফাহাদ আল-আহমেদ ঘোষণা করেন যে, দোহা ২০৩০ এশিয়ান গেমস আয়োজন করবে।[২০]
শেখ তামিম কাতার বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের প্রধান। তার নেতৃত্বে তহবিলটি ব্রিটিশ ব্যবসায় বিলিয়ন বিলিয়ন বিনিয়োগ করেছে। এটি বার্কলেস ব্যাংক, সেন্সবারিস ও হ্যার্ডসের বড় শেয়ারের মালিক।[২১] তহবিলটি ইউরোপের চতুর্থ উচ্চতম বিল্ডিং শার্ডের একটি অংশেরও মালিক।[১৪][২২]
তামিম আরো বেশ কয়েকটি পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে:
২০১৩ সালের ৫ জুন তামিমের পিতা শেখ হামাদ বিন খলিফা নিজের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও সহযোগীদের সাথে একটি বৈঠকে কাতারের আমির হিসাবে পদত্যাগ করে নিজের জায়গায় ছেলে তামিমকে স্থলাভিষিক্ত করার পরিকল্পনা প্রকাশ করেন।[২৫][২৬] তারপর টেলিভিশনে সম্প্রচারিত একটি ভাষণের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের কার্যক্রম সম্পন্ন হলে শেখ তামিম কাতারের আমির নির্বাচিত হন।[২৭] এর মাধ্যমে আলে সানি পরিবারের তিনজন কাতারি শাসকের পর তিনিই প্রথম শাসক হন , যিনি কোনো অভ্যুত্থান ছাড়াই সিংহাসনে আরোহণ করেন।[২৮] দি ইকোনমিস্টের মতে, সিংহাসনের ভাগে তার আগের ভাইবোনের প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে, 'একজন খুব বেশি খেলেছেন এবং অন্যজন খুব বেশি প্রার্থনা করেছিলেন (তার বড় ভাই)'।[২৯] পরিবারের সদস্যরা দেশের অনেক শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হওয়ায় ক্ষমতার উত্তরণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।[৩০]
আলে সানি পরিবারের একটি ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক সূত্র মতে, শেখ তামিমের একটি শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব রয়েছে, যা তাকে "শাসক পরিবারের মধ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে" সহায়তা করেছে।[৩১] তার ভাই শেখ জসিম পদত্যাগ করার পর ২০০৩ সালের ৫ আগস্টে তিনি ক্রাউন প্রিন্স নিযুক্ত হন।[৩২] বিবিসি কর্তৃক উদ্ধৃত এক রিপোর্টে কূটনীতিকরা যুক্তি দেন যে, দীর্ঘ ৮ বছর ধরে যুবরাজের দায়িত্ব পালন করা জসিম তার রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রসারিত করার আশা করেছিলেন। কিন্তু এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কারণ তিনি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। ২০০৩ সালে শেখ জসিম যুবরাজের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। কাতার নিউজ এজেন্সির মতে, জসিম নিজের পিতাকে একটি চিঠি পাঠিান এবং এতে বলা হয় যে, "পদত্যাগ করা ও উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করার এটিই উপযুক্ত সময়"।[৩৩] চিঠিতে জসিম আরো বলেন, "আমি চাইনি, যেমনটি আমি আপনাকে শুরু থেকেই বলেছি যে, ক্রাউন প্রিন্স হিসাবে আমাকে নিয়োগ করা হোক এবং এও উল্লেখ করেন যে, শুধুমাত্র "সংবেদনশীল পরিস্থিতির" কারণে তিনি ১৯৯৬ সালের অক্টোবর এই পদটি গ্রহণ করেন।[৩৪] স্ট্র্যাটফোরের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৩ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় সামরিক বাহিনী বা গোয়েন্দা পুলিশদের মধ্যে জসিমের কোনো মিত্র ছিল না এবং এর ফলে হামাদের ডিক্রি বাতিল করার খুব কম সম্ভাবনা ছিল। তবে এসব কেবল ধারণামূলক প্রতিবেদন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কারণ শেখ জসিম ক্ষমতায় আরোহণের বিন্দুমাত্র চেষ্টা বা আগ্রহ প্রকাশ করেননি।[৩৫]
তামিম কাতারে একটি কর্তৃত্ববাদী শাসন শাসন করেন বলে পশ্চিমারা অভিযোগ করে।[৩৬] কারণ তিনি সমস্ত নির্বাহী ও আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাখেন এবং দেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধসহ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয় না।[৩৭] কাতারের নাগরিকদের সীমিত রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার রয়েছে।[৩৭] কাতারে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই বলেও অভিযোগ করা হয়।[৩৮] কিন্তু আল জাজিরার মতো আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সরাসরি কাতারের অর্থায়ন ও নির্দেশনায় চলে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জান কিউলেন (দোহা সেন্টার ফর মিডিয়া ফ্রিডমের পরিচালক) একটি সাক্ষাৎকারে বলেন যে, কাতার সরকার প্রচারিত তথ্যের ক্রমবর্ধমান স্বাধীনতা ও মান বৃদ্ধির জন্য নীতি বাস্তবায়ন করেছে।[৩৯] ২০১৬ সালে তামিমের সরকার সমালোচনামূলক প্রতিবেদন করার পরে দোহা নিউজকে নিষিদ্ধ করা হয়।[৪০]
পিতার শাসনের বিপরীত, যিনি কাতারের আন্তর্জাতিক প্রোফাইলকে সর্বদা অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন, গার্হস্থ্য বিষয়ে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এখন পর্যন্ত তামিমের সরকারে দেখা যায়। ক্ষমতায় আসার পর তামিমের প্রথম পদক্ষেপগুলির মধ্যে একটি ছিল, বেশ কয়েকটি সমান্তরাল প্রতিষ্ঠানকে বিচ্ছিন্ন করে আমলাতন্ত্রকে প্রবাহিত করা। এর উল্লেখ্যযোগ্য উদাহরণ হল: কাতার ন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি প্রোগ্রাম, যাকে অর্থনীতি ও কৃষি মন্ত্রণালয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তিনি কাতার ফাউন্ডেশন এবং কাতার মিউজিয়াম অথরিটিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বাজেটও হ্রাস করেন।[৪১][৪২]
তার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই সরকার রাজধানীর চারপাশে রাস্তা প্রসারিত করে এবং একটি নতুন মেট্রো সিস্টেম তৈরি করে। সেই সঙ্গে একটি নতুন বিমানবন্দর নির্মাণও সম্পন্ন করে।[৪৩] দক্ষতা ও শৃঙ্খলা বৃদ্ধির জন্য কাতারি প্রশাসনে একটি নতুন সংস্কার চালু করা হয়।[১] তদুপরি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ একজন অ-রাজকীয় ব্যক্তির (খালিদ আল-আত্তিয়া) কাছে চলে যায়। মেধাতন্ত্রের দিক থেকে এটি একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ছিল। কারণ পূর্ববর্তী প্রশাসনে প্রধানমন্ত্রী (ঐতিহ্যগতভাবে একজন রাজকীয় হতেন) পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দ্বিগুণ ক্ষমতার অধিকারী হতেন।[৪৪]
আরব বসন্ত থেকে উদ্ভূত কিছু স্থানীয় কাতারি সমস্যা মোকাবেলায় পরিচালিত কিছু উদ্যোগের কৃতিত্ব শেখ তামিমকে দেওয়া হয়। তখন তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, সরকার দেশের জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির সাথে কাজ করা সংস্থাগুলির বিক্রিত খাদ্যদ্রব্যের দাম কমানোর জন্য একটি নির্দেশনা প্রতিষ্ঠা করবেন এবং প্রত্যাশিত সামাজিক ভাতা ও পেনশন বৃদ্ধির জন্যও বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।[৪৫]
২০১৩ সালের ২৬ জুন অনুষ্ঠিত জাতির উদ্দেশে তার উদ্বোধনী ভাষণ অনুসারে, শেখ তামিম হাইড্রোকার্বন থেকে সরে গিয়ে দেশের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে থাকবেন।[৪৬]
২০১৪ সালে তামিম নতুন সাইবার ক্রাইম আইন পাস করেন। যার ব্যাপারে বলা হয় যে, এটি উপসাগরীয় রাজ্যগুলির মধ্যে এই অঞ্চলের রাজপরিবারগুলিকে অনলাইন অবমাননা করাকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করবে।[৪৭] সাইবার ক্রাইম আইনটি মিথ্যা খবর এবং সেইসাথে দেশের "সামাজিক মূল্যবোধ" বা "সাধারণ শৃঙ্খলা" লঙ্ঘন করে এমন আধুনিক সামগ্রীর বিস্তার নিষিদ্ধ করে। এছাড়া আইনটি আক্রমণাত্মক বিষয়বস্তু প্রকাশে উদ্বুদ্ধ করা, সহায়তা ও সুবিধা প্রদান করাকে বেআইনি করে তোলে। কাতার ভিন্নমতকে দমন করার জন্য কর্তৃত্ববাদী শাসনের উদ্দেশ্যে আইনটি তৈরি করে বলে সমালোচনা করা হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আইনটিকে 'কাতারে সকলের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য একটি বড় ধাক্কা' বলে অভিহিত করে। তবে অন্য সমালোচকরা পরামর্শ দেন যে, নতুন আইনটি নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষাকারী দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করবে।[৪৮]
২০১৩ সালের জুনে শেখ তামিম তার নতুন মন্ত্রিসভা উন্মোচন করেন এবং এতে খালিদ বিন মুহাম্মদ আল আতিয়াহকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনোনীত করা হয়।[৪৯] শেখ তামিম ২০১৩ সালে হেসা আল জাবেরকে কাতারের প্রথম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। তিনি ছিলেন মন্ত্রিসভায় নাম লেখানো তৃতীয় মহিলা মন্ত্রী।[৫০]
২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে তামিম তার মন্ত্রিসভায় অতিরিক্ত পরিবর্তন করেন। এতে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান বিন জসিম আল সানির নাম ঘোষণা করেন এবং পূর্ববর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রী খালিদ বিন মোহাম্মদ আল আতিয়াহকে প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর পদে স্থানান্তর করেন।[৫১][৫২] তিনি যোগাযোগ ও পরিবহন, সংস্কৃতি, যুব ও ক্রীড়াসহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়কে একীভূত করেন। মন্ত্রিপরিষদ পরিবর্তনের পেছনে কারণ হিসেবে সাংবাদিকরা বেশ কিছু বিষয়ের জল্পনা করেন। কেউ কেউ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, পুনর্গঠনটি হয়তো একটি অর্থনৈতিক পদক্ষেপ ছিল ; যার অর্থ হলো এমন একটি সময়ে দেশের অর্থ সাশ্রয় করা, যখন গ্যাসের দরপতন দেশটিকে তার কর্মশক্তি কমাতে বাধ্য করেছে বা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে এমনটি করা হতে পারে।[৫৩]
ইউরেশিয়া গ্রুপ একটি প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দিয়েছে যে, মন্ত্রিসভা পরিবর্তনের লক্ষ্য ছিল সরকারী কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি করা, যা রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে না।[৫৪] অন্যদের মতে নিয়োগগুলি দেখায় যে, শেখ তামিম একটি নতুন তরুণ প্রজন্মের মন্ত্রিসভা গঠন করে এর মাধ্যমে সরকারকে নিজের করার চেষ্টা করছেন, যারা তার বাবার চেয়ে তার প্রতি অধিক অনুগত।[৫৫] ২০২১ সালের আগস্টে তামিম কাতারের পরামর্শক পরিষদে প্রথমবারের মতো আইনসভা নির্বাচনের জন্য একটি ডিক্রি জারি করেন,[৫৬] যা ২০২১ সালের ২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছিল।[৫৭][৫৮] নির্বাচনে ভোটাভুটি নিয়ে বিতর্কের পর[৫৯][৬০] শেখ তামিম সমান নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দেন[৬১] এবং আইনি সংশোধনের আদেশ দেন।[৬২]
২০১৭ সালে শেখ তামিম কর্তৃক শ্রমিকদের অধিকার রক্ষাকারী দুটি আইন প্রণয়িত হয়, যার মধ্যে সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা ও বার্ষিক ছুটির অধিকার অন্তর্ভুক্ত ছিল[৬৩] পরের বছর ২০১৮ সালে শেখ তামিম ১৩ নং আইন পাস করেন, যা দেশের প্রায় ৯৫% অভিবাসী কর্মীদের জন্য প্রস্থান ভিসা বাতিল করে। অবশিষ্ট ৫% কর্মী, যার সংখ্যা প্রায় ১৭৪,০০০ জন, এখনো তাদের সবাইকে নিয়োগকর্তা দেশ থেকে প্রস্থান করার জন্য অনুমতি প্রয়োজন৷ কাতারের শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার জন্য আরো কিছু করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করার সময় অ্যামনেস্টির স্টিফেন ককবার্ন দাবি করেন যে, আমির "শোষণমূলক পৃষ্ঠপোষকব্যবস্থার মৌলিক সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি পূরণ করার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন।[৬৪]
২০১৭ সালের নভেম্বরে কাতার ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা কাজের অবস্থা এবং শ্রম অধিকারের উন্নতির জন্য একটি প্রযুক্তিগত সহযোগিতা কার্যক্রম শুরু করে।[৬৫][৬৬]প্রোগ্রামটি বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য সংস্থাটি ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল[৬৭] কাতারে তার প্রথম প্রকল্প অফিস খোলে।[৬৮]
২০২০ সালের ৩০ আগস্ট ২০২০ সালের ১৯ নং আইন গ্রহণের পর অভিবাসী শ্রমিকরা তাদের নিয়োগকর্তার কাছ থেকে অনাপত্তি শংসাপত্র (এনওসি) না নিয়েই তাদের চুক্তি শেষ হওয়ার আগে চাকরি পরিবর্তন করতে পারে। এই নতুন আইন বছরের শুরুতে প্রস্থান পারমিটের প্রয়োজনীয়তা অপসারণের সাথে সাথে কার্যকরভাবে "কেফালা" সিস্টেমকে ভেঙে দেয় এবং কাতারি শ্রম বাজারের জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করে।[৬৯]
২০২১ সালের মার্চ মাসে কাতার অতিরিক্তভাবে সমস্ত শ্রমিকদের জন্য ১,০০০ রিয়ালের (২৭৫ মার্কিন ডলার) একটি মাসিক ন্যূনতম মজুরি কার্যকর করে। এটি এ অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসাবে কাতার বাস্তবায়ন করে।[৭০][৭১]
২০২১ সালের ২৮ জুলাই শেখ তামিম কাতারে প্রথম আইনসভা (শুরা কাউন্সিল) নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য ২০২১ সালের ৬ নম্বর আইন এবং উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদে (জিসিসি) পঞ্চম স্বাক্ষর করেন। আইনটি ২০০৩ সালে একটি সাংবিধানিক গণভোটে প্রথম অনুমোদিত হয়েছিল কিন্তু কখনই প্রয়োগ করা হয়নি।[৭২][৭৩] শুরা কাউন্সিলের ৪৫টি আসনের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ (৩০ আসন) নির্বাচিত হয়, যখন আমির কাউন্সিলের অবশিষ্ট ১৫ জন সদস্যের এই সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এবং তার মন্ত্রিসভাকে প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র নীতি রাষ্ট্রের সমালোচনামূলক সমস্যাসহ অন্য নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতা প্রদান করে।[৭৪]
নির্বাচিত শুরা কাউন্সিলের সদস্যদের আইনের খসড়া, রাষ্ট্রীয় বাজেট অনুমোদন, প্রধান বিষয় নিয়ে বিতর্ক ও ক্ষমতাসীন আমীরকে পরামর্শ দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়। এই আইনটি আন্তর্জাতিক অধিকার গোষ্ঠীগুলির দ্বারা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল। কারণ এতে কাতারি নাগরিক ও অন্য গোষ্ঠীগুলিকে বাদ দেওয়া হয়েছিল৷ ২০২১ সালের ২ অক্টোবর কাতারে প্রথম বারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে ৬৩.৫ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির রেকর্ড রয়েছে।[৭৫] কিন্তু ভোটাধিকার বঞ্চিত কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী এর প্রতিবাদ করেছিল।[৭৬][৭৭] কাতারি কর্মকর্তারা এই নির্বাচনকে "পরীক্ষা" নামে ট্যাগ করেন।[৭৮]
তরুণ আমিরের ক্ষমতা গ্রহণকে তৎকালীন বিশ্বের সব বড় বড় নেতা স্বাগত জানান, যারা আশা করেছিলেন যে, শেখ তামিম নিজের বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে কল্যাণমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন এবং সিরিয়ার সংকট ও দারফুর চুক্তিসহ গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিষয়ে কাতারের ভূমিকা বাড়াবেন।[৭৯]
বিশ্লেষকরা বলেন যে, শেখকে জাতীয় অবকাঠামোতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেওয়া উচিত, যা সম্প্রতি শুরু হয়েছে। যদিও অনেকে তামিমকে তার বাবার চেয়ে বেশি ধার্মিক বলে মনে করেন; বেশিরভাগ বিশ্লেষক আশা করেন যে, তিনি তার বাবার আমলের ব্যাপকভাবে বাস্তববাদী অভ্যাস বজায় রাখবেন–( তা হলো) ইসলামকে যখন প্রয়োজন ব্যাপক ব্যবহার করা তবে কঠোরভাবে ইসলামবিরোধী বিষয়াদি বাস্তবায়ন না করা; যেমন: অ্যালকোহল নিষিদ্ধ করা।[৮০] শেখ তামিমের নেতৃত্বে কাতার ধর্ম, বিশ্বাস ও বর্ণের ভিত্তিতে ঘৃণ্য বক্তব্যের নিন্দা করেছে।[৮১]
জাতির উদ্দেশে প্রচারিত উদ্বোধনী বক্তৃতায় তামিম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি এই অঞ্চলে কাতারের জন্য কেন্দ্রীয় ভূমিকা চালিয়ে যাবেন;[৮২] কিন্তু বিদেশী বিষয়ে "নির্দেশ নেবেন না"। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, তার উপসাগরীয় প্রতিবেশীদের সাথে সংহতকরণের ক্ষেত্রে তিনি সর্বোচ্চ স্তরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবেন।[৮৩]
প্রকৃতপক্ষে তার দায়িত্বে থাকা প্রথম মাসগুলিতে তিনি উপসাগরকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ২০১৩ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র কয়েক মাস পরে শেখ তামিম উপসাগরীয় অঞ্চলে একটি আঞ্চলিক সফর করেন। এমনকি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার আগে তিনি ২০১২ সালের ডিসেম্বরে মানামায় অনুষ্ঠিত বার্ষিক উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) শীর্ষ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বাবার প্রতিনিধিত্ব করেন এবং সেই সাথে ২০১৩ সালের মার্চে দোহাতে আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান।[৮৪]
একটি সরকারি নিরাপত্তামূলক পদে কাজ করে তিনি কাতারের প্রতিবেশী এবং প্রায়শই বিতর্কিত প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবের সাথে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক প্রচার করেন।[৮৫] তামিম সৌদি আরবের সাথে কাতারের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে অনুৎপাদনশীল বলে মনে করেন এবং যেমনটি, এখন পর্যন্ত একটি সমন্বিত সিরীয় বিরোধী দল গড়ে তোলার ব্যর্থ প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে হয়েছে।[৮৬] তা সত্ত্বেও তামিম সিরীয় বিরোধীদের সমর্থন করার জন্য জিসিসির মধ্যে কাজ করেছিলেন।[৮৭]
ইসলামপন্থা ও উপসাগরীয় বংশানুক্রমিক শাসকদের নিরঙ্কুশ শাসনের বিরোধিতাকারী সংগঠনগুলির জন্য কাতারের সমর্থন জিসিসি দেশগুলির সাথে কাতারের উত্তেজনাকে উস্কে দেয়।[৮৮] ২০১৪ সালের মার্চে সৌদি আরব, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত কাতার থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করে নেয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে এ সিদ্ধান্তটি ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে জিসিসির অভ্যন্তরীণ নীতিতে হস্তক্ষেপ না করার চুক্তি অনুমোদন করতে কাতারের কথিত অস্বীকৃতির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল।[৮৯] কিছু বিশ্লেষক মনে করেন যে , কূটনৈতিক সঙ্কটটি আরব দেশগুলির সাথে কাতারের দীর্ঘ সময়ের অবনতিশীল সম্পর্কের অংশ ছিল, যারা আরব বসন্ত বিদ্রোহের সময় ইসলামপন্থীদের সমর্থন করার অভিযোগে কাতারকে তিরস্কার করেছিল এবং নতুন মিশরীয় সামরিক সরকারকে সমর্থন করেছিল।[৯০]
কাতার তিউনিসিয়াতে নির্বাচিত আননাহদা পার্টি এবং ইয়েমেন ও মরক্কোর দলগুলোকে ঋণ ও বিনিয়োগের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করেছে।[৯১][৯২]
২০১৪-২০১৭ সময়কালে কাতার সন্ত্রাসবাদবিরোধী ও ইসলামপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির প্রতি তার সমর্থনের ইতি টানবে বলে মনে করা হয়েছিল ; ফলস্বরূপ তারা মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করতে সম্মত হয়েছিল এবং ব্রাদারহুডের অনাগরিক সদস্যকে তার অঞ্চল থেকে বহিষ্কার করেছিল এবং উপসাগরীয় অঞ্চলের সাথে সম্পর্ক নষ্ট না করার খাতিরে জিসিসি দেশগুলোর কোনো ব্যক্তিকে আশ্রয় দেবে না।[৯৩]
২০১৪ সাল থেকে কাতারে কোনো সন্ত্রাসমূলক ঘটনা ঘটেনি। ২০১৯ সালে কাতার সরকার নতুন করে সন্ত্রাস দমন আইন চূড়ান্ত করে, যা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শাস্তি বাড়িয়ে দেয় এবং যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে তাদের আইনি বিচার করতে সক্ষমতা দেয়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে উভয় আইন কার্যকর হয়। ২০২২ সালের এপ্রিলে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদনে বলা হয় যে, কাতার ২০২২ সালে ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য কাতারের প্রস্তুতি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণসহ দেশটির ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যান্টি-টেররিজম অ্যাসিসট্যান্সের (ATA) প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে কাতারি নিরাপত্তাকর্মীদের অংশগ্রহণের জন্য অর্থ প্রদানের জন্য জাতীয় তহবিল ব্যবহার করে।[৯৪]
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে তামিম সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মিশর দ্বারা ৪৩ মাস যাবত কাতারের আকাশ, স্থলপথ এবং সমুদ্র অবরোধ অবসানের একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এরপর দেশগুলো কাতারের জন্য তাদের স্থল সীমান্ত ও আকাশপথ পুনরায় খুলে দেয়।[৯৫]
২০২২ সালের ২৭ মার্চ কাতার রাজ্য ও জাতিসংঘের সন্ত্রাস দমন অফিসের (UNOCT) মধ্যে ৪র্থ উচ্চস্তরের কৌশলগত সংলাপে প্রকাশ করা হয়েছিল যে, কাতার জাতিসংঘের ট্রাস্ট ফান্ডের মোট ৩৫ জন দাতার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম অবদানকারী।[৯৬]
২০২২ সালের মে'তে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর ইউরোপে তার প্রথম সফরের সময় আমির স্পেন[৯৭][৯৮] ও জার্মানিসহ[৯৯][১০০] বেশ কয়েকটি দেশের সাথে শক্তি ও বিনিয়োগ প্রকল্পে স্বাক্ষর করেন এবং প্রথমবারের মত ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভায় বক্তৃতা করেন।[১০১][১০২]
শেখ তামিম ভারত সরকারের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ তিনি ভারত সফর করেন এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেছিলেন যে, সরকার ভারতীয় অর্থনীতিকে বিশ্বাস করে, তাই ভারতে তারা বিনিয়োগ করবে।[১০৩] শেষবার শেখ তামিম ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর দেখা করেন। তখন নিউইয়র্কে জাতিসংঘে কাতারের স্থায়ী মিশনের বাসভবনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনের ফাঁকে তারা সাক্ষাৎ করেন।[১০৪] বৈঠকের সময় আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং সহযোগিতার বিভিন্ন দিক, বিশেষ করে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের স্বার্থে তাদের উন্নয়নের উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়।[১০৪]
কোভিড ১৯ এর সংকটের সময় ২০২০ সালের ২৬ মে শেখ তামিম নরেন্দ্র মোদির সাথে ফোনে কথা বলেন। তিনি বলেন যে, তিনি কাতারে বসবাসকারী ভারতীয় সম্প্রদায়ের অবদানের প্রশংসা করেছেন। বিশেষ করে বর্তমান পরিস্থিতিতে কাতারের স্বাস্থ্যসেবা খাতে যারা কাজ করছেন, তাদের বিশাল অবদানের জন্য তিনি প্রশংসা করেন। এর পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কোভিড ১৯ মহামারী চলাকালীন কাতারে ভারতীয় নাগরিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য আমিরের নেওয়া ব্যক্তিগত যত্নের উষ্ণ প্রশংসা করেন।[১০৫][১০৬]
২০২১ সালের ৭ এপ্রিল তামিম ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোদির সাথে টেলিফোনে কথোপকথন করেন এবং কোভিড ১৯ মহামারী মোকাবেলার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন এবং শেখ তামিম অবিলম্বে ভারতে জরুরি চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর নির্দেশ দেন।[১০৭][১০৮][১০৯]
মুসলিম ব্রাদারহুড সরকারের আমলে কাতার মিশরে ঋণ ও সাহায্যে প্রচুর বিনিয়োগ করেছিল।[৮৪] ২০১৩ সালের আগস্টে কাতার ইখওয়ান ও সামরিকবাহিনীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় মধ্যস্থতার জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন একটি প্রচেষ্টায় যোগ দেয় এবং[৪৫] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার প্রথম সফরে জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতার সময় শেখ তামিম পুনর্ব্যক্ত করেন যে, কাতার মিশরে হস্তক্ষেপ করবে না। যদিও তিনি ২০১৩ সালের অভ্যুত্থানের পরে মিশরে যা ঘটেছিল, তিনি তার নিন্দা করেছিলেন।[১১০] প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসি পদ থেকে অপসারিত হওয়ার পর থেকে নতুন সরকার আর্থিক সাহায্যের জন্য কাতারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।[৯০]
মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি কাতার সরকারের অব্যাহত সমর্থনের ফলে ২০১৪ সালে দোহা, রিয়াদ, মানামা ও এবং আবুধাবীর মধ্যে কূটনৈতিক ফাটল দেখা দেয়, যার পরিণতিতে সেই বছরের মার্চ মাসে তিন দেশের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।[১১১] কাতার ক্রমাগত মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি সমর্থন প্রদানের অভিযোগ অস্বীকার করে[১১২] ২০১৭ সালে কাতারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "মিশরে যখন মুসলিম ব্রাদারহুড ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল, তখন কেউ কেউ এটিকে কাতারি সমর্থনের সাথে যুক্ত করেছিল। যদিও কাতার প্রদত্ত সহায়তা কর্মসূচির প্রায় ৭০% এসাম শারাফের সামরিক শাসনের যুগে ছিল।[১১৩] ২০১৬ সালের জুনে মিশরের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ মুরসিকে কাতারের কাছে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা প্রেরণের ভুয়া অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।[১১৪][১১৫]
২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি কাতার ও মিশর পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু করতে সম্মত হয়।[১১৬] ২০২১ সালের মার্চে মিশর সফরকালীন কাতারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান বিন জসিম আলে সানি মিশরের রাষ্ট্রপতি আব্দুল ফাত্তাহ আলসিসির কাছে শেখ তামিমের আমন্ত্রণ হস্তান্তর করেছিলেন।[১১৭] শেখ তামিম ২০২১ সালের জুলাইয়ে মিশরে কাতারের রাষ্ট্রদূতের নাম ঘোষণা করেন[১১৮] এবং ২৮ আগস্ট বাগদাদে আলসিসির সাথে দেখা করেন।[১১৯] ২০২২ সালের ২৪ জুন তামিম কায়রোতে আল সিসির সাথে দেখা করেছিলেন। ২০২২ সালের মার্চ মাসে কাতার ও মিশর ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করার পর তারা উভয়ের কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করেন।[১২০][১২১]
কাতার মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন করে বলেও দাবি করা হয়েছে।[৯২] এছাড়া কাতার মুরসির ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টিকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে বলেও অভিযোগ রয়েছে এবং ইখওয়াানবিরোধীরা অভিযোগ করে যে, কাতারের অর্থায়নের মাধ্যমে মুরসির সংকীর্ণ নির্বাচনে বিজয় অর্জিত হয়েছিল।[১২২] মুরসি নির্বাচিত পর কাতার মিশরে মোট ৫.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবদান রেখেছে[১২২] এবং কাতার বারবার অস্বীকার করেছে যে, এটি মুসলিম ব্রাদারহুড সরকারকে সমর্থন করে নয় এবং এও বলে যে, "শাসক গোষ্ঠীর আদর্শ যাই হোক না কেন ; কাতার নির্বাচিত বৈধ সরকারকে সমর্থন করে, যতক্ষণ এটি তার জনগণের সমৃদ্ধি এবং কল্যাণে কাজ করে।"[১২৩] তামিম নিজেও বারবার অস্বীকার করেছেন যে, কাতার চরমপন্থীদের সমর্থন করে।[১২৪]
এমন গুজব রয়েছে যে, কাতার সিরিয়ার ব্রাদারহুডকে এ অঞ্চলে তার লক্ষ্যগুলি সরবরাহ করার জন্য একটি প্রাকৃতিক ইসলামি মিত্র হিসাবে দেখে।[৯২] এফটির একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে, কাতার সিরিয়ার বিদ্রোহীদের ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সাহায্য হিসেবে দিয়েছে এবং এটিও বলা হয়েছে যে, কাতারি সরকারের কাছের লোকেরা" দাবি করেছে যে, আসল পরিমাণ ৩ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।[১২৫] তদুপরি এমন গুজব রয়েছে যে, কাতার তার অর্থায়ন ব্যবহার করছে বিদ্রোহীদের মধ্যে একটি আনুগত্য নেটওয়ার্ক তৈরি করতে এবং আসাদ-পরবর্তী সিরিয়ায় কাতারের প্রভাবমঞ্চ তৈরি করার জন্য। তবে এসব গুজবের কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি এবং তা অপ্রমাণিত।[১২৫]
কিছু দেশ ও আঞ্চলিক বিশ্লেষকরা দাবি করেছেন যে, কাতার এই অঞ্চলের চারপাশে ইসলামপন্থী দলগুলির বর্ণালীকে সমর্থন করেছে।[৯২] বিশেষ করে ২০০১ সালে আরব বসন্তের অভ্যুত্থানের শুরু থেকে কাতার কূটনৈতিক ও চিকিৎসা উদ্যোগে ইসলামপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠীকে সতর্কতা প্রদান করেছে।[৪৪] এমনও দাবি করা হয়েছে যে, কাতার-ভিত্তিক সর্বআরব স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরা বিভিন্ন ইসলামপন্থী দলের বিবরণ এবং কাতার সমর্থিত কারণগুলি প্রচার করেছে, যার ফলে জাতীয় নির্বাচনে এই দলগুলি কিছু নির্বাচনী সাফল্যে পেয়েছে।[৪৪] যাহোক আল জাজিরা ব্যাখ্যা করে যে, " তারা চাপের মধ্যে ছিল, কারণ এটি সমস্ত আরব চ্যানেলের মধ্যে সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ, স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ"।[১২৬] চ্যানেলটি পূর্বে একটি টক শো প্রচার করেছিল "আল-শরিয়া ওয়া আল-হায়াহ" (শরিয়াহ এবং জীবন) নামে, যেখানে ব্রাদারহুডপন্থী প্রয়াত মিশরীয় আলেম ইউসুফ কারযাভী আলেচনা করতেন।[১২৭]
বিশ্লেষকদের দাবি, কাতার এবং সৌদি আরব উভয়ই সিরিয়া ও লিবিয়ায় স্নায়ুযুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে।[৯০] তামিম বিশেষ করে তালেবান নেতাদের মধ্যস্থতায় ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাদর সাথে তিনি নিজের বাবার সরকারের অধীনে যোগাযোগ শুরু করেছিলেন এবং যুক্তরাষ্ট্র দোহায় তালেবানের একটি কার্যালয় স্থাপনের অনুরোধ জানিয়েছিল। ২০১৩ সালের জুনে তালেবান একটি দীর্ঘমেয়াদী আফগান শান্তি চুক্তির মধ্যস্থতা করার দীর্ঘস্থায়ী প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে দোহায় তাদের প্রথম অফিসিয়াল বিদেশী অফিস খোলে।[১২৮] ২০১৫ সালের জুনে কাতার একটি তালেবান গোষ্ঠী কর্তৃক ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে আফগানিস্তানে অপহৃত চার তাজিকিস্তানি সৈন্যকে মুক্ত করার প্রচেষ্টায় সফলভাবে মধ্যস্থতা করে।[১২৯]
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভাষ্যমতে, কাতারি আমির শেখ তামিমের সহযোগিতা ব্যতীত আফগান ও মার্কিন শান্তি চুক্তি সম্ভব হতো না।[২]
২০১২ সালে সিরিয়ায় রক্তপাত বন্ধ করার জন্য আরব দেশগুলোর প্রতি সামরিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানায় কাতার।[১৩০] তখন বিশ্লেষকরা আশা করেছিলেন যে, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বিদ্রোহীদের প্রতি কাতারের সমর্থন কমানোর জন্য তিনি অবিলম্বে চাপের মধ্যে পড়বেন; কারণ তামিম আগে বিদ্রোহীদের সমর্থন করেছিলেন।,[৮৫][১৩১] প্রকৃতপক্ষে, শেখ তামিম দায়িত্ব নেওয়ার পরে সিরীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলিকে সশস্ত্র করার ক্ষেত্রে পশ্চিম শক্তিগুলোর বিরক্তকর প্রতিক্রিয়ায় এক ধাপ পিছিয়ে গিয়েছিলেন এবং সেখানে এলোমেলোভাবে তার সমর্থন পরিচালিত হয়েছিল।[৯২]
যাহোক, কাতার সিরিয়ার বিরোধী দলগুলিকে সমর্থন প্রদান অব্যাহত রেখেছে এবং ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘে দেয়া একটি বক্তৃতায় তামিম ঘোষণা করেন যে, কাতার ন্যায়বিচার অর্জনের প্রচেষ্টা সমর্থন করে যাবে এবং নৃশংসতা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের জবাবদিহিতামূলক আটকে রাখবে।[১৩২] সম্প্রতি শেখ তামিম কর্তৃক প্রচারিত সৌদি আরব ও তুরস্কের সাথে যৌথ উদ্যোগের অধীনে কাতার সিরীয় বিদ্রোহীদের নতুন অস্ত্র সরবরাহ করে এবং সিরিয়ায় একটি নতুন বিরোধীজোট গঠন করেছে যা "বিজয়ের সেনাবাহিনী" (جيش الفتح) নামে পরিচিত।[১৩৩]
২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে সিরিয়ার জাতীয় জোটের প্রধান খালেদ খোজা এবং তার প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠকের সময় শেখ তামিম সিরিয়ার জনগণের জন্যে ন্যায়বিচার এবং তাদের স্বাধীনতার দাবির প্রতি তার দেশের সমর্থন পুনর্নবীকরণ করেন।[১৩৪] সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী আর-রহমান লিজিয়ন কাতার সমর্থিত।[১৩৫] ২০১৭ সাল থেকে কাতার-সমর্থিত আর-রহমান লিজিয়ন সৌদি আরব-সমর্থিত জাইশ আল-ইসলাম বিদ্রোহী জোটের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।[১৩৬]
২০২২ সালের অক্টোবর মাসে তামিম কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে দেখা করেন এবং তিনি বলেছিলেন যে, কাতার ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের জন্য তিনি "গর্বিত"।[১৩৭]
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শেখ তামিম তুরস্কে একটি সরকারী সফরের সময় তুরস্কের সাথে একটি সামরিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির লক্ষ্য ছিল সামরিক প্রশিক্ষণ এবং প্রতিরক্ষা শিল্পে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এবং কাতারে তুর্কি সশস্ত্র বাহিনী ও তুরস্কে কাতার সামরিক বাহিনী মোতায়েনের অনুমতি দেওয়া।[১৩৮]
২০১৫ সালের ২রা ডিসেম্বর তামিম প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের সাথে বেশ কয়েকটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। তখন শিক্ষা, সামুদ্রিক পরিবহন এবং গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে চিঠিপত্র চুক্তিতে সমবায় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।[১৩৯] সেই সাথে দীর্ঘ মেয়াদে কাতার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস ক্রয় করার জন্য তুরস্ক একটি চুক্তিতে পৌঁছয়।[১৪০] দুই নেতা কাতারে তুর্কি সামরিক ঘাঁটি তৈরির পরিকল্পনা ঘোষণা করেন, যা পারস্য উপসাগরে তুরস্কের জন্য প্রথম কোনো ঘাঁটি হবে।[১৪১][১৪২]
২০১৮ সালের আগস্ট মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তুরস্কের কূটনৈতিক অচলাবস্থার মধ্যে মুদ্রা সংকটের সময় কাতার তুরস্কে ১৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়। ২০১৮ সালের ১৫ আগস্ট কাতারের আমির তামিম আঙ্কারায় রাষ্ট্রপতি এরদোগানের সাথে দেখা করার পর বিনিয়োগ প্যাকেজটি ঘোষণা করা হয়েছিল।[১৪৩][১৪৪]
২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বরে শেখ তামিম দোহায় রাষ্ট্রীয় সফরের জন্য রাষ্ট্রপতি এরদোগানকে স্বাগত জানান। দুই দিনের সফরে তারা সংস্কৃতি, অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত পনেরটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এছাড়া দেশগুলোর মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে বেশ কিছু সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।[১৪৫] শেখ তামিম এবং প্রেসিডেন্ট এরদোগান কাতার এবং তুরস্কের মধ্যে ১৫ বিলিয়ন ডলারের মুদ্রা বিনিময় চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে সম্মত হয়েছেন।[১৪৬]
২০১৪ সালের অক্টোবরে শেখ তামিম যুক্তরাজ্যে তার প্রথম সরকারী সফরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সাথে দেখা করেন। কাতার ও যুক্তরাজ্য পারস্পরিক বিনিয়োগের সুযোগ অন্বেষণ করার জন্য একটি কাতারি–ব্রিটিশ অর্থনৈতিক ফোরামের প্রত্যাশা করেছিল।[১৪৭] এই বৈঠকের সময় দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকাটি তামিমের সাথে ইসলামি জিহাদিদের কাতারের অর্থায়ন করা বিষয়ে আলোচনা করার জন্য ক্যামেরনকে অনুরোধ করার জন্য একটি প্রচারণা চালায়। কনজারভেটিভ এমপি স্টিফেন বার্কলে কাতারের সাথে ব্রিটেনের লেনদেনে স্বচ্ছতার জন্য বারবার আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, ক্যামেরনের পক্ষে জিহাদি অর্থায়নের বিষয়টি তামিমের সামনে উত্থাপন করা "অত্যাবশ্যক" ছিল। তিনি বলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আমিরের সঙ্গে যে বৈঠক করছেন, আমি তাকে স্বাগত জানাই। "এই আলোচনার অংশ হিসেবে সিরিয়া ও ইরাকে বিদ্রোহী সুন্নি উপজাতিদের কাতারের অর্থায়ন করার বিষয়টি উত্থাপন করা অপরিহার্য।"[১৪৮]
২০১৮ সালের জুলাইয়ে শেখ তামিম এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে কাতার ও যুক্তরাজ্য সরকারের মধ্যে একটি অভিপ্রায় পত্রে স্বাক্ষর করেন। উভয় দেশ সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত তথ্য এবং গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করা, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সম্পর্কিত আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা এবং বিমানবন্দর ও বিমান চলাচলসহ পরিবহন সেক্টরের নিরাপত্তা এবং আর্থিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সম্মত হন।[১৪৯][১৫০][১৫১]
কাতারের আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি মধ্যপ্রাচ্যে রয়্যাল এয়ার ফোর্সের অপারেশনাল সদর দপ্তর এবং এটি আরএএফ এর ৮৩ নং এক্সপিডিশনারি এয়ার গ্রুপের হোস্ট। গ্রুপটি চারটি এক্সপিডিশনারী এয়ার উইংকে কমান্ড ও কন্ট্রোল প্রদান করে, যা অপারেশন কিপিয়ন ও অপারেশন শেডারকে সমর্থন করে।[১৫২]
যুক্তরাজ্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের ( এলএনজি) স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদী গ্যাস চুক্তির জন্য কাতারের দিকে তাকিয়ে আছে যুক্তরাজ্য সরকার[১৫৩] এবং প্রধানমন্ত্রী জনসন ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে তামিমের কাছে এই ব্যাপারে সাহায্য চেয়েছিলেন।[১৫৪][১৫৫]
শেখ তামিম এবং স্ত্রী শেখা জাওয়াহের ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু ও রাষ্ট্রীয় শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন[১৫৬]
শেখ তামিম ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে দুইবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের সাথে দেখা করেছিলেন। পরবর্তী বৈঠকে তারা কাতারের কাছে রাফাল জেট বিক্রির চুক্তিতে সই করেন।[১৫৭][১৫৮] এছাড়া তামিম ২০১৭ সালে দুইবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সাথেও দেখা করেছিলেন।[১৫৯][১৬০][১৬১] পরবর্তী বৈঠকে তারা ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যের বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন।[১৬২] ২০১৮ সালের বৈঠক চলাকালীন তামিম উপসাগরীয় সংকটে কাতারকে সমর্থন করার জন্য ম্যাক্রোঁকে ধন্যবাদ জানান।[১৬৩][১৬৪] ২০২১ সালে আবার দেখা করেন।[১৬৫][১৬৬][১৬৭]
২০১৪ সালের জুলাই মাসে তামিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি নবায়ন করেন এবং আল উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে কম্বাইন্ড এয়ার অপারেশন সেন্টারে (CAOC) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কাতারি সহযোগিতা নিশ্চিত করেন।[১৬৮]
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাথে দেখা করার পর[১৬৯] তামিম একটি সম্পাদকীয় লিখেছিলেন যে, সাম্প্রতিক কয়েকটি বছরে আঞ্চলিক অস্থিরতা সত্ত্বেও মার্কিন– কাতারি কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরো গভীর হয়েছে" এবং মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা বিষয়ে উভয় দেশ পরস্পরে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।[১৭০]
তামিম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই তার ব্যক্তিগত বন্ধু ছিলেন এবং ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তিনি বেশ কয়েকবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন। ওয়াশিংটন ডিসির হোয়াইট হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও করেছেন।
২০১৭ সালের জুলাইয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কাতার সন্ত্রাসবাদের অর্থায়নের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে। কাতার এই অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সন্ত্রাসে অর্থায়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য নির্বাহী প্রোগ্রামে স্বাক্ষর করে।[১৭১] একই বছর তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছিলেন যে, "কাতারের আমির আর্থিক সহায়তা বন্ধ করাসহ তার দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদী ( মধ্যপ্রাচ্যের বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও হামাস) উপাদানগুলিকে বিতাড়িত করার ক্ষেত্রে অগ্রগতি করেছেন"।[১৭২]
২০১৯ সালের জুলাই শেখ তামিম রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে দেখা করতে এবং সর্বশেষ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান।[১৭৩] হোয়াইট হাউসে তামিমকে স্বাগত জানানোর জন্য একটি রাষ্ট্রীয় নৈশভোজের আয়োজন করা হয় এবং এতে রবার্ট ক্রাফ্ট এবং ক্রিস্টিন লাগার্ড উপস্থিত ছিলেন।[১৭৪] এতে কাতার বোয়িং, গাল্ফস্ট্রিম, রেথিয়ন ও শেভরন ফিলিপস কেমিক্যালসহ বড় বড় মার্কিন কোম্পানিগুলির সাথে ব্যবসা করতে সম্মত হওয়ায় উভয় দেশের মধ্যে একটি বর্ধিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বৈঠকটি শেষ হয়।[১৭৫]
২০২১ সালের ২০ই আগস্ট তামিম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে টেলিফোনে আলাপ করেন এবং আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাবাহিনী প্রত্যাহারে কাতারের সমর্থনের জন্য বাইডেন তামিমকে ধন্যবাদ জানান।[১৭৬] বাইডেনের মতে, "কাতারের প্রাথমিক সহায়তা ছাড়া এয়ারলিফ্টগুলি সম্ভব হত না"।[১৭৭][১৭৮] শেখ তামিম 31 জানুয়ারী 2022-এ ওয়াশিংটন, ডিসি সফরে হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বিডেনের সাথে দেখা করেন[১৭৯] বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনিই উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের প্রথম নেতা যিনি হোয়াইট হাউসে যান।[১৮০] তারা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, বৈশ্বিক শক্তি সরবরাহের স্থিতিশীলতা,[১৮১] আফগানিস্তানের পরিস্থিতি[১৮২] এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি নিয়ে আলোচনা করেন।[১৮৩] বাইডেন কাতারকে একটি "ভাল বন্ধু এবং নির্ভরযোগ্য এবং সক্ষম অংশীদার" বলে অভিহিত করেছেন এবং কাতারকে একটি প্রধান ন্যাটো মিত্র হিসাবে ঘোষণা করেছেন।[১৮৪][১৮৫]
কাতার 2020 সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তালেবানের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তির ঐতিহাসিক স্বাক্ষরের আয়োজন করেছিল যা আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিল।[১৮৬] 2020 সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া, কাতার দেশে কয়েক দশক ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে আফগান সরকার এবং তালেবানদের মধ্যে শান্তি আলোচনার আয়োজন করেছে।[১৮৭]
২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে রয়টার্সের একটি তদন্তে জানা যায় যে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষে কাজ করা মার্কিন সরকারের প্রাক্তন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের একটি দল শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানিসহ তার সহকর্মী, কূটনীতিক এবং বিদেশী নেতাদের আইফোন হ্যাক করেছে।[১৮৮] ২০১৬ থেকে কার্যক্রম শুরু করা গুপ্তচরবৃত্তির টুল (কোড নাম 'K4RM4) সংযুক্ত আরব আমিরাতকে আমিরাতি সরকার এবং এর মতাদর্শের সম্ভাব্য সমালোচক বা হুমকি হিসেবে চিহ্নিত শত শত ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম করে।[১৮৮]
'প্রজেক্ট রেভেন' নামে পরিচিত টুলটি ব্যবহার করা হ্যাকিং ইউনিটটি আবুধাবিতে অবস্থিত এবং স্থানীয় নিরাপত্তা আধিকারিক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের গোয়েন্দা পরিষেবাগুলির জন্য কাজ করা সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা অপারেটিভদের সমন্বয়ে গঠিত ছিল। প্রাক্তন-প্রকল্প রেভেন অপারেটিভরা বর্ণনা করেছেন যে, কীভাবে কর্মা একটি স্বয়ংক্রিয় টার্গেটিং সিস্টেমে নম্বর বা ইমেল ঠিকানা আপলোড করার মাধ্যমে শেখ তামিমের আইফোনের অ্যাক্সেস দূর থেকে লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল। রয়টার্সের বর্ণনা মতে, শেখ তামিমের ভাইয়ের ফোনসহ বেশ কয়েকজন সহযোগীর ফোনও হ্যাক করেছে প্রজেক্ট রেভেন দল।[১৮৯] তবে বর্তমান উভয় দেশের মাঝে কূটনৈতিক দূরত্ব কমে এসেছে এবং উভয় দেশই সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে আগ্রহী হয়েছে।[১৯০]
১৯৯৬ সালে কাতার ইসরায়েলের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করে এবং এটি আরব উপদ্বীপের সকল জাতির মধ্যে প্রথম পদক্ষেপ। ইসরায়েলের সাথে তার ব্যবসায়িক সম্পর্ক আজো বহাল আছে।[১৯১] এক্ষেত্রে অনেক বিশ্লেষক অভিমত দিয়েছেন যে, কাতার মূলত অবরুদ্ধ গাজা ও পশ্চিম তীরে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাতে ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। কারণ ইসরায়েলের অনুমতি ব্যতীত কোনো ত্রাণ ফিলিস্তিনে পৌঁছতে পারে না। ২০২১ সালের মে মাসে রিপোর্ট করা হয়েছিল যে, কাতার ১০ বছরের মধ্যে ইসরায়েলের অনুমোদন নিয়ে গাজা এবং পশ্চিম তীরে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি সহায়তা দিয়েছে।
২০২১ সালে কাতার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক চুক্তিতে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকে এবং[১৯২] এতে বলা হয়েছিল যে, ইসরায়েল যখন আরব শান্তি উদ্যোগে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে, কেবল তখনই তারা কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে।[১৯৩] ২০২২ সালে কিছু ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তাকে গোপনে কাতারের আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে পাঠানো হয়েছিল, যা মধ্যপ্রাচ্যে সমস্ত মার্কিন বাহিনীর সদর দফতরের অপারেটিং সদর দফতর বা একটি নিরাপত্তা রদবদলের অংশ হিসাবে সেন্টকম নামেও পরিচিত।[১৯৪] ২০২২ সালের ১০ জুন ফিফা ঘোষণা করেছিল যে, বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট চলাকালীন ইসরায়েলি নাগরিকদের কাতারে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।[১৯৫]
তার সাথে পরিচিত হয়েছেন অথবা সাক্ষাৎ করেছেন এমন সবাই শেখ তামিমকে বন্ধুত্বপূর্ণ, আত্মবিশ্বাসী ও খোলামেলা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাকে বুদ্ধিমান, সতর্ক ও রক্ষণশীল হিসাবেও বর্ণনা করা হয়।[৮০] তিনি একজন বাস্তববাদী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সসহ পশ্চিমের সাথে তার "চমৎকার সম্পর্ক" রয়েছে বলে মনে করা হয়।[১৪][৮০] শেখ তামিমকে সবার সাথে মিলে চলা এবং নিজেদের স্বার্থ ছিনিয়ে আনা ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আশা করেছিলেন যে, তামিম তার পিতার চেয়ে অধিক রক্ষণশীল এবং ঝুঁকি-বিমুখ হবেন।[৮৫] কারণ তামিম ইসলামপন্থী ইখওয়ানসহ মুসলিম দেশগুলির ইসলামি দল ও জোটগুলির খুবই কাছাকাছি।[১৯৬] ইসলামি ঐতিহ্যগত মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি জাতীয় পরিচয় রক্ষা করা তামিমের প্রথম অগ্রাধিকার বলে তিনি উল্লেখ করেন।[৮০]
২০০৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তার মোট তেরো জন সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে। তিন স্ত্রী থেকে সাত ছেলে ও ছয় মেয়ে।
শেখ তামিম বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক খেলায় অংশ নেন। তাকে একবার ব্যাডমিন্টন খেলাবস্থায় চিত্রায়িত করা হয়েছিল এবং মিশরের প্রাক্তন সামরিক প্রধান মুহাম্মদ হুসেন তানতাভির সাথে বোলিং খেলতে দেখা গিয়েছিল।[১৯৮] ইতিহাস ও মুসলিম জাতির ঐতিহ্যের প্রতি তার দৃঢ় আগ্রহ ও আস্থা রয়েছে।[১৪] আরবি ছাড়াও তিনি ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় পারদর্শী।[৮০]
২০১৭ সালে কাতারের কূটনৈতিক সংকট শুরু হওয়ার পর কাতারের একটি জাতীয়তাবাদী প্রতীক হিসেবে বিজ্ঞাপনদাতা আহমেদ আল-মাহেদের কর্তৃক তামিম আল-মাজদ ( তামিম দ্য গ্লোরিয়াস) শিরোনামে শেখ তামিমের একটি স্কেচ প্রকাশ করা হয়।[১৯৯][২০০]
In the capital Doha, Qatari Emir Sheikh Tamim bin Hamad Al-Thani’s face is everywhere, thanks to a silhouette of the ruler’s profile and the slogan “Tamim al-majd” — Arabic for “Tamim the Glorious” — on bumpers, shop windows, concrete walls and mobile phone cases.
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
|ওয়েবসাইট=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)