তারা রানী শ্রীবাস্তব | |
---|---|
জন্ম | |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পরিচিতির কারণ | মহাত্মা গান্ধীর ভারত ছাড় আন্দোলন |
দাম্পত্য সঙ্গী | ফুলেন্দু বাবু |
তারা রানী শ্রীবাস্তব ছিলেন ভারতবর্ষের বিহারে জন্ম নেওয়া এক স্বাধীনতা সংগ্রামী যিনি মহাত্মা গান্ধীর ভারত ছাড় আন্দোলনে অংশ নেবার জন্য সুপরিচিত।[১][২] তিনি এবং তার স্বামী ফুলেন্দু বাবু বিহার প্রদেশের সারন জেলায় বাস করতেন।[৩] ১৯৪২ সালে তিনি এবং তার স্বামী বিহারের সিওয়ানে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনের দিকে এগিয়ে যাওয়া এক মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। ঐ মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে তার স্বামী গুলিবিদ্ধ হন ও দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। নিজের জীবনসঙ্গীর মৃত্যুর পরও থেমে থাকেন নি এই মহীয়সী নারী। ভারতের স্বাধীনতা লাভ করার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে গিয়েছেন ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে।
তারা রানী শ্রীবাস্তব বিহার প্রদেশের রাজধানী পাটনার নিকটবর্তী সারন জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।[২] ফুলেন্দু বাবুর সাথে অল্পবয়সেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।[৩]
নিজের এলাকার নারীদের স্বাধীনতা সংগ্রামে যুক্ত করতে তারা রানীর অবদান ছিল অনস্বীকার্য।[৪] তার প্রচেষ্টায়, তার এলাকার বহু নারী, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি এমন সময়ে ভারতীয় নারীদের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে শামিল করেছিলেন, যখন ভারতীয় নারীদের ঘরের বাইরে পা ফেলাকে সমাজ বাঁকা চোখে দেখত। সামাজিক দৃষ্টিকে গ্রাহ্য না করে, দেশমাতৃকার টানে, তারা রানীর ডাকে, ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেমেছিলেন বহু নারী।
১৯৪২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখে মহাত্মা গান্ধীর ডাকে তিনি এবং তার স্বামীর নেতৃত্বে বিহারের সিওয়ানে অবস্থিত একটি পুলিশ স্টেশনে ভারতের তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলনের জন্য একটি মিছিল বের হয়, যা ছিল সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর 'চূড়ান্ত অবমাননা'।[৪][৫] সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর তাঁবেদার পুলিশ বাহিনী, মিছিলের জনতাকে নিবৃত্ত করতে মিছিলে অংশগ্রহণকারী জনতার ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, পুলিশ জনতার ওপর গুলি চালায়। ফলে বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী গুলিবিদ্ধ ও আহত হন, যাঁদের মধ্যে, তার স্বামী ফুলেন্দু বাবুও ছিলেন। স্বামী গুলিবিদ্ধ হবার পরও, তারা রানী তার শাড়ির পাড় দিয়ে ফুলেন্দু বাবুর ক্ষতস্থান বেঁধে দিয়ে, পুলিশ স্টেশন অভিমুখে যাওয়া জনতাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান, যেখানে তিনি ভারতের পতাকা উত্তোলনের চেষ্টা করেছিলেন। ফিরে আসার পর, তিনি আবিষ্কার করেন যে, তার স্বামী পুলিশের গুলিতে শহিদ হয়েছেন।[৫] ১৯৪২ সালের আগস্ট মাসের ১৫ তারিখে তার স্বামী ফুলেন্দু বাবুর দেশের প্রতি আত্মত্যাগের স্মরণে সারন জেলার ছাপরায় এক প্রার্থনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।
স্বামীকে হারানোর পর ভেঙে না পড়ে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পূর্বপর্যন্ত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়ে গিয়েছেন তিনি।[১][৫] ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।