জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় একটি তারা তার সমগ্র জীবনচক্রে যে সকল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় তার ধারাকে তারার বিবর্তন বলা হয়। এই জীবনচক্র হতে পারে শত শত মিলিয়ন বা বিলিয়ন বর্ষ। এই পুরো সময়ে ধীরে ধীরে তারার মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। তারার এই বিবর্তন একটিমাত্র তারা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গবেষণা করা সম্ভব নয়; কারণ এই পরিবর্তনগুলো খুব ধীর প্রক্রিয়া। তাই জ্যোতিৎপদার্থবিজ্ঞানীরা একটির বদলে অনেকগুলো তারার জীবনচক্র পর্যবেক্ষণ করে সমগ্র ধারণাটি নেয়ার চেষ্টা করেন। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ ও অবস্থায় কৃত এই পর্যবেক্ষণগুলো কম্পিউটার মডেলের সাথে সম্মিলিত করে গবেষণা করা হয়।
তারা হল একটি জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড যা গ্যাস এবং ধূলিকণার সমন্বয়ে গঠিত। তারা সৃষ্টি প্রক্রিয়া সম্বন্ধে জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময়ে। ধারণামতে, মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয় একটি মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে। তারা সৃষ্টির পূর্বে মহাকাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে শীতল হাইড্রোজেন, হিলিয়াম এবং অন্যান্য গ্যাসের পরমাণু বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ছিল। এই অবস্থাকে গ্যাসের ধূলিমেঘ বা Dust Cloud বলা হয়। এতে ৭৫% হাইড্রোজেন, ২৪% হিলিয়াম এবং কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন সহ অন্যান্য গ্যাস ১% ছিল। আর এই হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামই ছিল তারা সৃষ্টির প্রাথমিক উপাদান। এছাড়াও এখনও বিভিন্ন নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যবর্তী স্থানে যে পাতলা বাষ্পীয় হাইড্রোজেন মেঘ আছে তা থেকেও তারা সৃষ্টি হতে পারে। এই গ্যাসেসমূহের ঘনত্ব সর্বত্র সমান না হলেও গড়ে প্রতি ঘনমিটার এলাকায় ১০ কোটি পরমাণু থাকে।
পরমাণুসমূহ তড়িৎ নিরপেক্ষ হওয়ায় এদের মধ্যে কোন বৈদ্যুতিক আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল ছিলনা, বরং কেবল মহাকর্ষ বলের প্রভাবে এরা ধীরে ধীরে জমাট বাঁধতে থাকে। দূরত্ব কমে যাওয়ায় এদের স্থিতিশক্তি কমে যায়, আর শক্তির নিত্যতা বজায় রাখার জন্য বৃদ্ধি পায় গতিশক্তি। স্বভাবতই পরমাণুগুলোর মধ্যকার সংঘর্ষের সংখ্যা বেড়ে যায়। সংঘর্ষ আর গতিশক্তির মিলিত প্রভাবে তাপমাত্রাও বেড়ে যায়। ফলে মহাকর্ষ বলের প্রভাবে যখন পরমাণুসমূহ স্বতঃই কেন্দ্রের দিকে আকৃষ্ট হয় তখনই কেন্দ্রের নিকটবর্তী অংশের ঘনত্ব ও তাপমাত্রা উভয়ই অন্যান্য অংশের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির এ পর্যায়ে গ্যাসপিন্ডটি থেকে বিকিরিত শক্তির পরিমাণ বেড়ে যায় এবং এর ফলশ্রুতিতে এ থেকে অবলোহিত আলো নিগর্ত হয়। সঙ্কোচনের ফলে তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে যখন ১০৭ কেলভিনে পৌঁছায় তখনই কেন্দ্রীণ সংযোজন বিক্রিয়া (Nuclear Fusion Reaction) শুরু হয়। অর্থাৎ গ্যাসপিন্ডটির অভ্যন্তরে হইড্রোজেনের আইসোটোপসমূহ মিলিত হয়ে হিলিয়ামে পরিণত হতে শুরু করে। এই বিক্রিয়ার ফলে যে বিপুল পরিমাণ বহির্চাপের সৃষ্টি হয় তা গ্যাসপিন্ডের সঙ্কোচনে বাঁধা দেয়। যখন এই বহির্চাপ এবং সংকোচন বল সমান হয় তখন সুস্থিত অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং একে একটি প্রোটোস্টার (Protostar) বলে চিহ্নিত করা হয়। এসব থেকে নির্গত অবলোহিত আলো থেকেই এদের অবস্থান চিহ্নিত করা যায়।
এখনও বিভিন্ন নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যবর্তী হাইড্রোজেন গ্যাসের মেঘ থেকে ভ্রুণ তারা সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে প্রথমেই গ্যাসের এই মেঘ কোন কোন স্থানে অধিক পুঞ্জীভূত হয়ে যায়। আর এ থেকে একই প্রক্রিয়ায় ভ্রুণ তারার সৃষ্টি হয়। উদাহরণ হিসেবে কালপুরুষ মন্ডলের কোমরের তরবারীর মধ্যে থিটা অরিয়নিস নামক তারার চারদিকে বিরাজমান নীহারিকাটির উল্লেখ করা যায়। এই নীহারিকায় তারা সৃষ্টির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
প্রকৃতপক্ষে সৃষ্টির আদিতে এরকম ধ্বংসোন্মুখ জ্বলন্ত গ্যাসপিন্ড থেকে মোটেই একটিমাত্র তারা উৎপন্ন হতোনা। বরং শত শত তারা সৃষ্টি হতো এবং এদের সমন্বয়ে একটি নক্ষত্রপুঞ্জ সৃষ্টি হতো। বয়স যতই বাড়তে থাকতো ততই নক্ষত্রপুঞ্জের আকার এবং এর তারাগুলোর মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকতো এবং একসময় তারাগুলো পৃথক হয়ে যেতো। এভাবেই জন্ম হতো স্বাধীন তারার। বিজ্ঞানীদের ধারণামতে সূর্য নামক মাঝারি ধরনের এই তারাটি আজ থেকে ৫০০ কোটি বছর পূর্বে এভাবেই অস্তিত্ব লাভ করেছিল।
জন্মের পর একটি ভ্রুণ তারার বিবর্তন তার ভরের উপর নির্ভরশীল। পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেখা গেছে যে সমস্ত ভ্রুণ তারার ভর সূর্যের ভরের চেয়ে এক দশমাংশ কম তাদের কেন্দ্রে সৃষ্ট তাপের পরিমাণ কেন্দ্রীন বিক্রিয়া শুরু করার মত যথেষ্ট হয়না। কেবল চাপজনিত তাপের কারণে সেটিকে উজ্জ্বল দেখায় এবং পৃষ্ঠটান ধর্মের কারণে তা গোলাকার রূপ লাভ করে। তখন একে ধূসর বর্ণের দেখায়। একে ধূসর বামন তারা বলা হয়। উজ্জ্বলতা কম থাকায় এদের সহজে দেখা না গেলেও ছায়াপথের অধিকাংশ ভরের জন্যই এরা দায়ী। সৃষ্টির পর দীর্ঘকাল এরা অপরিবর্তিত অবস্থায় থাকে।
যেসকল তারার ভর সূর্যের ভরের কাছাকাছি বা তা থেকে বেশি তাদেরকে প্রধান ধারার তারা বলা হয়। এদের বিবর্তন কয়েক প্রকারে হয়ে থাকে।
তারা ভ্রুনটির কেন্দ্রের তাপমাত্রা ১০৭ কেলভিন হলে কেন্দ্রীন বিক্রিয়া শুরু হয়। উচ্চ তাপমাত্রা এবং ঘনত্বের কারণে প্রোটনসমূহের গতিবেগ বৃদ্ধি পায় নিউক্লিয় বিভব বাঁধা অতিক্রম করার ফলে এতে কেন্দ্রীন সংযোজন বিক্রিয়া শুরু হয়। পরমাণুর নিউক্লিয়াসে সংঘটিত সকল বিক্রিয়াকেই কেন্দ্রীন বিক্রিয়া বলা হয় এবং দুটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে পরস্পরের সংস্পর্শে আনতে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয় তা-ই হল নিউক্লিয় বিভব বাঁধা। বিজ্ঞানী হ্যান্স বেথে কর্তৃক ১৯৩৮ সালে Energy Production is Stars শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধ হতে জানা যায় এই কেন্দ্রীন বিক্রিয়া দুই প্রকারেরঃ প্রোটন-প্রোটন চক্র এবং কার্বন-কার্বন চক্র।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |