তিওয়ানাকু সভ্যতা

তিওয়ানাকু
তিওয়ানাকু পুরোহিতের মূর্তি
Map showing location in Bolivia
Map showing location in Bolivia
বলিভিয়ায় অবস্থান
বিকল্প নামতিয়াউয়ানাকো, তিয়াউয়ানাকু
অবস্থানতিওয়ানাকু পৌরএলাকা, বলিভিয়া
ধরনবসতি
ইতিহাস
সংস্কৃতিতিওয়ানাকু
স্থান নোটসমূহ
অবস্থাঐতিহাসিক ধ্বংসস্তূপ
প্রাতিষ্ঠানিক নামTiwanaku: Spiritual and Political Centre of the Tiwanaku Culture
ধরনCultural
মানদণ্ডiii, iv
মনোনীত2000 (24th session)
সূত্র নং567
RegionLatin America and the Caribbean

তিওয়ানাকু সভ্যতা (স্পেনীয় - Tiahuanaco বা Tiahuanacu) হল প্রাক্‌-কলম্বীয় আমেরিকার এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতা। দক্ষিণ আমেরিকার বলিভিয়ার পশ্চিমাংশে এর বিকাশ ঘটেছিল। ঐতিহাসিকদের মতে এরা ছিল ইনকাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পূর্বসূরী। তিতিকাকা হ্রদ তীরবর্তী এই সভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে বলিভিয়ার রাজধানী লা পাজ থেকে পশ্চিমে দেসাখুয়াদেহো যাওয়ার রাস্তায় লা পাজ থেকে ৭২ কিলোমিটার দূরে তিওয়ানাকু নামক স্থানে। আন্দিজ পর্বতের সুউচ্চ আলতিপ্লানো উচ্চভূমিতে অবস্থিত এই অঞ্চল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১২৬০০ ফুট বা ৪০০০ মিটার উঁচু। ১৫৪৯ খ্রিষ্টাব্দে স্পেনীয় বিজেতা (কনকিস্তাদোর) পেদ্রো সিয়েজা দে লেওন ইনকাদের শক্তিকেন্দ্র কুলিয়াসুয়ু খুঁজে বের করতে গিয়ে ঘটনাচক্রে তিওয়ানাকুতে এই সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করে ফেলেন।[] মনে করা হয় এই শহরই ছিল এই সভ্যতার প্রশাসনিক প্রধান শহর। অন্তত পাঁচশো বছর এই শহরকে কেন্দ্র করে এই সভ্যতার শাসনব্যবস্থা বজায় ছিল বলে মনে করা হয়। ২০০০ সাল থেকে এই শহর ইউনেস্কো দ্বারা বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।[]

প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিওয়ানাকু শহর সংলগ্ন অঞ্চলে সুপ্রাচীন সময় থেকেই মানুষের বসতি স্থাপিত হয়েছিল। প্রথম দিকে এটি ছিল একটি ছোট্ট কৃষিভিত্তিক গ্রাম।[] কিন্তু ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৩০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এই অঞ্চল একটি উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় কেন্দ্রে পরিণত হয়। এরপর তাকে কেন্দ্র করেই একটি শক্তিশালী রাজ্যের বিস্তার ঘটে, তিওয়ানাকু যার প্রশাসনিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। ৬০০ - ৯০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এই সভ্যতা তার বিকাশের চূড়ান্ত স্তরে পৌঁছয় বলে মনে করা হয়।[] এইসময় বর্তমান বলিভিয়ার পশ্চিম অংশ থেকে এই সভ্যতা পশ্চিমে দক্ষিণ পেরু, উত্তর চিলি, ও উত্তর-পশ্চিম আর্জেন্তিনাতেও ছড়িয়ে পড়ে।

মূলত কৃষিকে ভিত্তি করেই এই সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। চাষের জন্য এরা তিতিকাকা হ্রদ সংলগ্ন নিচু জমির মধ্যে কিছু অংশ উঁচু করে কৃষিজমি তৈরি করে। এই উঁচু জমিগুলোর মাঝখানে কিছুটা জল বাঁধাই থেকে যায়। তার ফলে জমি যে জল পায়, তাতে দেখা গেছে এই ধরনের জমি অতি উচ্চ ফলনশীলে পরিণত হয়। আবার এই জলে একই সাথে মাছও চাষ করা যায়। আবার চারদিকের নিচু থেকে যাওয়া ডোবা জমি যাতায়াতের জন্য জলপথ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।[] এই সভ্যতার স্থাপত্য শিল্পও সত্যিই চোখে পড়ারই মতো। তিওয়ানাকু শহরে নানা পর্যায়ে অসংখ্য নির্মাণকার্য চলেছিল। এদের মধ্যে বেশ কটির ধ্বংসস্তূপ আমাদের সময় পর্যন্ত টিকে রয়েছে। এদের মধ্যে প্রধান হল একটি পিরামিড - আকাপানা, বারো ফুট উঁচু একটি সূর্যতোরণ, একটি তিনশো ফুট লম্বা বড় বড় দরজাসহ পাথরের পাঁচিল ঘেরা উঠোন - কালাসাসায়া, প্রভৃতি।[]

একাদশ শতাব্দী নাগাদ এই সভ্যতার পতনের সূচনা ঘটে। দ্বাদশ শতাব্দীর প্রথম অর্ধেই তাদের শাসন ভেঙে পড়ে। তবে ধর্মীয় ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে তাদের শহরগুলির ধ্বংসাবশেষ আজও ইনকা-পূর্ব আন্দীয় সভ্যতাগুলির উৎকর্ষের জাজ্জ্বল্যমান নিদর্শন হিসেবেই দাঁড়িয়ে রয়েছে।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Kolata, Alan L. The Tiwanaku: Portrait of an Andean Civilization. Wiley-Blackwell, 1993. আইএসবিএন ৯৭৮-১-৫৫৭৮৬-১৮৩-২.
  2. "Tiwanaku: Spiritual and Political Centre of the Tiwanaku Culture". World Heritage List. UNESCO. সংগৃহীত ২ আগস্ট, ২০১৫।
  3. Fagan, Brian M. The Seventy Great Mysteries of the Ancient World: Unlocking the Secrets of Past Civilizations, New York: Thames & Hudson, 2001.
  4. সুমিতা দাস: কলম্বাস-পূর্ব আমেরিকা: মুছে দেওয়া সভ্যতার ইতিহাস. কোলকাতা, পিপলস বুক সোসাইটি, ২০১৪। আইএসবিএন ৮১-৮৫৩৮৩-৬২-৬. পৃঃ - ৮৮ - ৯০।