তিব্বত তার ভৌগোলিক এবং জলবায়ু পরিস্থিতির বদৌলতে একটি স্বতন্ত্র সংস্কৃতির বিকাশ সাধন করেছে। প্রতিবেশী চীন, ভারত এবং নেপালের সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার পরেও, হিমালয় অঞ্চলের প্রত্যন্ততা এবং দুর্গমতা দেশটির স্থানীয় সাংস্কৃতিক প্রভাবকসমূহ সংরক্ষণ করেছে এবং এর স্বতন্ত্র সংস্কৃতির বিকাশকে উদ্দীপিত করেছে।
সপ্তম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিব্বতীয় বৌদ্ধধর্ম তিব্বতি সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ শক্তিশালী প্রভাব রেখে চলেছে। মূলত ভারত, নেপাল এবং চীন থেকে আগত বৌদ্ধ ধর্মপ্রচারকরা ভারত ও চীনের চারুকলা ও সামাজিক রীতিনীতি এই ভূখণ্ডে চালু করেছিলেন। তিব্বতের শিল্প, সাহিত্য ও সংগীত সবর্যাতেই প্রচলিত বৌদ্ধ বিশ্বাসের উপাদান রয়েছে এবং বোন্ ধর্মের ঐতিহ্য ও স্থানীয় বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই ভূখণ্ডে বৌদ্ধ ধর্ম নিজেই একটি অনন্য রূপ গ্রহণ করেছে।
জ্যোতির্বিজ্ঞান, জ্যোতিষশাস্ত্র এবং চিকিৎসা সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি রচনা সংস্কৃত এবং শাস্ত্রীয় চীনা ভাষা থেকে অনুবাদ করা হয়েছিল। সভ্যতার সাধারণ সরঞ্জামর্যা চীন থেকে এসেছে, বহির্দেশে থেকে অর্জন করা বিভিন্ন জিনিস এবং দক্ষতার মধ্যে অন্যতম হল মাখন, পনির, যব দ্বারা প্রস্তুতকৃত বিয়ার, মৃৎশিল্প, জলকল এবং মাখন চা নামের জাতীয় পানীয় তৈরী করা।
তিব্বতের নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এবং জলবায়ু পরিস্থিতি যাজকবাদের উপর নির্ভরতা প্রণোদিত করার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী অঞ্চলর্যা থেকে একটি পৃথক রান্নার বিকাশ সাধনকে উৎসাহিত করেছে যা এই উচ্চতায় মানুষের দেহের চাহিদার সাথে খাপ খায়।
তিব্বতি ভাষা ৫ লক্ষ বর্গমাইল বিস্তৃতির তিব্বতি-জনবহুল অঞ্চলের সমস্ত অংশে বিভিন্ন উপভাষায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর মধ্যে কয়েকটি উপভাষা চীনা ভাষার মতো সুরভুক্ত, আবার কিছু উপভাষা অ-সুরভুক্ত হয়ে থাকে। ঐতিহাসিকভাবে তিব্বতকে তিনটি সাংস্কৃতিক প্রদেশে বিভক্ত করা হয়েছিল যার নাম ইউ-সাং, খাম এবং আমদো ছিল। এই তিনটি প্রদেশের প্রত্যেকটিই তিব্বতি ভাষার নিজস্ব স্বতন্ত্র উপভাষা তৈরি করেছে। সর্বাধিক বিস্তৃত পরিসরে ব্যবহৃত উপভাষাটি হলো লাসা উপভাষা, যাকে প্রমিত তিব্বতি ভাষা নামেও ডাকা হয়, যা মধ্য তিব্বত এবং নির্বাসনে থাকা অধিকাংশ তিব্বতিদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। খাম-এ খামস তিব্বতীয় উপভাষা এবং আমদো-তে আমদো তিব্বতীয় উপভাষা ব্যবহৃত হয়। তিব্বতের উপভাষার্যা তিব্বতীয় ভাষা সমূহের অন্তর্ভুক্ত যা তিব্বতী-বর্মণ ভাষা সমূহের বিশেষ একটি অংশ। আধুনিক তিব্বতি ভাষার উদ্ভব হয়েছে আদি তিব্বতি ভাষা এবং শাস্ত্রীয় তিব্বতি ভাষা থেকে, যা ছিল লিখন পদ্ধতির আদর্শরূপ। ভুটানের দাপ্তরিক ভাষা জংখাও তিব্বতি ভাষার সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত।
তিব্বতি শিল্পকলা নিগূঢ়ভাবে ধর্মীয় প্রকৃতির শিল্পকলা, বলা চলে একধরনের ধর্মীয় শিল্পকলা। তিব্বতের শিল্পকলা চিত্রাঙ্কন, দেয়ালচিত্র, প্রতিমা, আচারানুষ্ঠানিক বিভিন্ন জিনিস, মুদ্রা, গহনা এবং আসবাবপত্র সহ আরো বিভিন্ন ধারায় ব্যাপক আকারে বিস্তৃত হয়ে রয়েছে।
খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকে বৌদ্ধ ধর্মের মহাযান শাখা একটি পৃথক শাস্ত্র-ধারা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বোধিসত্ত্বদের ভূমিকার উপর গুরুত্ব আরোপ করার পাশাপাশি সে সকল করুনাময় ব্যক্তি ও বিষয়াদির উপর গুরুত্বারোপ করে যারা অন্যদেরকে সাহায্য করার লক্ষ্যে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ভুলে গিয়ে নির্বাণে আত্মনিয়োগ করেন। সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন বোধিসত্বগণ মূর্তিকলার বিষয়বস্তু ছিলেন। বৌদ্ধ ধর্মের মহাযান শাখার থেকে উদ্ভব হওয়ার দরুন তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্ম এই ঐতিহ্য পরম্পরাগতভাবে লাভ করেছিল।
তিব্বতি শিল্পকলায় উপস্থাপিত সাধারণ একজন বোধিসত্ত্ব হলেন অবলোকিতেশ্বর, যাকে প্রায়শই চার হাত বা হাজারো হাত সংবলিত দেবতা হিসেবে চিত্রিত করে দুই চোখের মাঝে কপালে অতিরিক্ত একটি চোখ সংযুক্ত করে সর্বদর্শনা করুনাময় দেবরূপে উপস্থাপন করা হয়; এটা বিশ্বাস করে যে, তিনি পূজারীদের সকল প্রার্থনা শোনেন। দালাই লামাকে উক্ত দেবতার পুনর্জন্ম লাভ করা প্রতিরূপ হিসেবে বিশ্বাস করা হয়।
অধিকাংশ আদর্শ তিব্বতি বৌদ্ধ শিল্পকলা তান্ত্রিক চর্চার অংশ হিসেবে দেখতে পাওয়া যায়। তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্মের একটি বিস্ময়কর দিক হলো হিংস্র দেব-দেবীর সাধারণ উপস্থাপন ও বর্ণন, যা প্রায়শই রাগান্বিত রূপে, অগ্নিবৃত্তে বা মৃতের মাথার খুলি সংবলিত আকৃতিতে চিত্রিত করা হয়। চিত্রগুলো ধর্মপালদের (রক্ষক) প্রতিনিধিত্ব করে, তাদের যেমন ভয়ানক আগ্রাসী রূপ রয়েছে তেমন আবার সরল করুনাময় রূপও রয়েছে। তাদের ক্রোধ ধর্মের সুরক্ষা নিশ্চিতে তাদের উৎসর্গের পাশাপাশি স্বতন্ত্র তান্ত্রিক চর্চার অবক্ষয় বা ভাঙ্গন রোধ নিশ্চিতের প্রতিনিধিত্ব করে।
হিমালয়ের অঞ্চলের আদি প্রকৃতিপূজারী ধর্ম বোন্ ধর্ম হিসাবে পরিচিত। তিব্বতি শিল্পকলায় স্থানীয় রক্ষক দেবদেবীদের সর্বদেবীয় একটি মন্দিরের অবদান রয়েছে। তিব্বতি মন্দিরর্যাতে, যা ল্যাখাং নামে পরিচিত, গৌতম বুদ্ধ বা পদ্মসম্বাভের মূর্তির্যা প্রায়শই অঞ্চলটির রক্ষক দেবতার মূর্তির্যার সাথে জুড়ে দেওয়া হয় যা প্রায়শই রাগান্বিত বা অন্ধকার রূপে দেখা যায়। এই দেবদেবীরা একসময় স্থানীয় নাগরিকদের ক্ষতি ও অসুস্থতার জন্ম দিয়েছিল কিন্তু পদ্মসম্বাবাদের আগমনের পরে এই নেতিবাচক শক্তির্যা বশীভূত হয়েছে এবং সেজন্য এখন বাধ্যতামূলকভাবে বৌদ্ধধর্মের সেবা করতে হবে।
তিব্বতি মাদুর তৈরি করা তিব্বতীয়দের ঐতিহ্যের একটি প্রাচীন শিল্পকলা ও কারুকলা অংশ। এই মাদুরর্যা মূলত তিব্বতের পার্বত্য অঞ্চলের ভেড়ার বিশুদ্ধ উল থেকে তৈরি করা হয়। তিব্বতিরা ঘরোয়াভাবে ব্যবহারের জন্য মেঝে থেকে শুরু করে দেয়ালে ঝুলন্ত অবস্থায় এমনকি ঘোড়ার জিন পড়ানো সহ প্রায় সকল জায়গায় তিব্বতি মাদুর ব্যবহার করে থাকে। ঐতিহ্যগতভাবে সর্বোৎকৃষ্ট তিব্বতি মাদুরগুলো গ্যান্তসেতে তৈরী হয়, এটি একটি শহর যা এর প্রস্তুতকৃত মাদুরর্যার জন্য সুপরিচিত।
তিব্বতি মাদুর তৈরির প্রক্রিয়াটির প্রায় সকল অংশ হাতে সম্পন্ন করা হয় বলে প্রক্রিয়াটি অন্যন্য। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি প্রবর্তনের সাথে সাথে করিগরি জ্ঞান ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হওয়ার পাশাপাশি হাতে প্রস্তুতকরণে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে গালিচা তৈরির প্রক্রিয়ার্যার কয়েকটি বিষয় যন্ত্র দ্বারা সম্পন্ন হয়। উপরন্তু, কিছু নতুন সমাপক কাজ যন্ত্রের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছিল।
তিব্বতি মাদুরর্যা কেবল তিব্বতেই নয়, নেপালেও বড় রকমের ব্যবসার বিষয়, যেখানে তিব্বতি অভিবাসীরা তাদের সাথে তিব্বতি মাদুর তৈরির জ্ঞান বহন করে নিয়ে আসে। বর্তমানে নেপালে তিব্বতি মাদুরের ব্যবসা দেশের বৃহত্তম শিল্পর্যার মধ্যে অন্যতম এবং বহুসংখ্যক মাদুর রফতানিকারক রয়েছে।
থাঙ্কা, যা হলো নেপালি এবং কাশ্মীরি চিত্রকলার সাথে চীনা ঝুলন্ত উল্লম্ব লেখনীর একটি সমন্বয়পন্থী শিল্প, একাদশ শতাব্দী থেকে এখন পর্যন্তও টিকে রয়েছে। তুলো বা লিনেনের উপর আয়তক্ষেত্রাকার এবং জটিল বিন্যাসে এর্যা আঁকা হয়, সাধারণত ঐতিহ্যবাহী বাণী যা দেব-দেবী, বিখ্যাত সন্ন্যাসী এবং অন্যান্য ধর্মীয়, জ্যোতিষশাস্ত্রীয়, এবং ধর্মতত্ত্বের বিষয়র্যা এবং কখনও কখনও মন্ডলর্যাকেও চিত্রিত করে তুলে ধরে। চিত্রটি যে নষ্ট না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য, চিত্রটি বর্ণিল রেশমি কাপড় দ্বারা বাধাই করে গুটিয়ে রেখে সংরক্ষণ করা হয়। থাঙ্কা শব্দের অর্থ "কোনো কিছু গোটানো" এবং এটি বোঝায় যে থাঙ্কার্যা সহজেই পরিবহনের জন্য গুটিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
থাঙ্কার পাশাপাশি, মন্দিরের দেয়ালে তিব্বতি বৌদ্ধ প্রাচীরের চিত্রর্যা দেয়ালচিত্র হিসেবে পাওয়া যায় এবং এর পাশাপাশি আসবাবপত্র সহ আরো অনেক বস্তুতে আলঙ্কারিক চিত্রকলা দেখতে পাওয়া যায়।
তিব্বতীয় সাহিত্যের একটি সমৃদ্ধ প্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে যার মধ্যে মহাকাব্য, কবিতা, ছোট গল্প, নাচের স্ক্রিপ্ট, মুকাভিনয়, নাটক এবং আরো বিভিন্ন বিষয় রয়েছে যা একটি স্বতন্ত্র কর্মযজ্ঞে বৃহৎ পরিসরে বিস্তৃত হয়েছে, যার কয়েকটি পাশ্চাত্য ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে। তিব্বতীয় সাহিত্যের সুদীর্ঘ ১৩০০ বছরেরও বেশি সময়কালের ঐতিহাসিক বিস্তৃতি রয়েছে।[১] তিব্বতের বাইরে তিব্বতীয় সাহিত্যের সর্বাধিক পরিচিত বিষয় হলো মহাকাব্যর্যা - এর মধ্যে বিশেষভাবে বিখ্যাত হলো রাজা গেসারের মহাকাব্য।
তিব্বতীয় স্থাপত্যে চীনা এবং ভারতীয় প্রভাব রয়েছে এবং এটি গভীরভাবে বৌদ্ধ ধর্মের অস্তিত্বের প্রতিফলন ঘটায়। দুটি হরিণ বা ড্রাগন চিত্রিত প্রার্থনা-চক্র প্রায় প্রতিটি তিব্বতি গোম্পায় দেখা যায়। স্তূপর্যার নকশার্যা বিভিন্ন রকম হতে পারে; যেমন খাম অঞ্চলের স্তুপগুলোর গোলাকার দেয়াল থেকে শুরু করে লাদাখের স্তুপগুলোতে চতুষ্কোনাকৃতির দেয়াল পর্যন্তও দেখতে পাওয়া যায়।
তিব্বতীয় স্থাপত্যকলার সর্বাধিক লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্যটি হল বহুসংখ্যক বাড়ি এবং মঠ উঁচুস্থানে দক্ষিণে মুখোমুখি, রৌদ্রজ্জ্বল বেশি পাওয়া যায় এমন স্থানে নির্মাণ করা হয় এবং তা প্রায়শই পাথর, কাঠ, সিমেন্ট এবং মাটির মিশ্রণে তৈরি হয়। ঘরের ভিতর দিক সর্বদা আলোকিত ও উষ্ণ রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রয়োজনীয় জ্বালানি তিব্বতে সহজলভ্য না হওয়ায় তাপ সুদীর্ঘক্ষন সংরক্ষণের জন্য বেশ পুরু স্তরের ছাদ রাখা হয় এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যের আলো যেন ঘরের ভিতরে ঢুকতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য বহুসংখ্যক জানালা রাখা হয়। তিব্বতের পার্বত্য অঞ্চলে ঘন ঘন সংঘঠিত ভূমিকম্পের বিরুদ্ধে সতর্কতা হিসাবে দেয়ালর্যা সাধারণত ঘরের ভিতর দিকে ১০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঢালু রাখা হয়।
১১৭ মিটার উচ্চতা এবং প্রস্থে ৩৬০ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট পোতালা প্রাসাদটিকে ১৯৯৪ সালে বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসাবে চিহ্নিত করা হয় এবং ২০০১ সালে নোরবুলিংকা অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা তিব্বতীয় স্থাপত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসাবে বিবেচিত হয়।[২] দালাই লামাদের তৎকালীন এই বাসভবনে তেরটি তলায় এক হাজারেরও বেশি কক্ষ রয়েছে এবং বুদ্ধের মূর্তি সহ প্রাক্তন দালাই লামাদের প্রতিকৃতিও রয়েছে। এটি বহিঃস্থ শ্বেত-প্রাসাদ (যা প্রশাসনিক মহল হিসাবে কাজ করে) এবং অভ্যন্তরীণ লৌহিত-ভবন (যেখানে লামাদের সমাবেশ কক্ষ, প্রার্থনা কক্ষ, ১০,০০০ টি মঠ এবং বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থের বিশাল গ্রন্থাগার রয়েছে) নামক দুটি অংশে বিভক্ত।
অতীতে ঐতিহ্যবাহী খাম স্থাপত্যকলা ক্যাংডিংয়ের বেশিরভাগ আবাসে দেখা যেত। খাম স্থাপত্যরীতিতে তৈরী করা ঘরর্যা মূলত প্রশস্ত এবং ঐ অঞ্চলের পরিবেশের সাথে বেশ মানানসই ছিল। ক্যাংডিংয়ের অধিকাংশ বাড়ির ন্যায় তাদের মেঝে এবং ছাদ কাঠ নির্মিত ছিল। তবে আধুনিক ক্যাংডিং শহর পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় অতীতের কাঠের স্থাপত্যকলা বর্তমান ক্যাংডিংয়ে খুব একটা চোখে পড়ে না। কাঠ নির্মিত উল্লম্ব স্তম্ভর্যা অনুভূমিক থামর্যাকে ধরে রাখে ছাদের ভার বহন করে করে। যদিও ঐ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে গাছ কেটে কাঠ সংগ্রহ করা হতো, তারপরও বসতবাড়ি নির্মাণের জন্য কাঠ আমদানি করা হতো এবং প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হতো। বনভূমি দ্বারা ঘেরা খামের গার্জে তিব্বতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটি ঢালাওভাবে কাঠের অলঙ্করণে সজ্জিত বিভিন্ন ধরনের নির্মাণশৈলীতে নির্মিত কাঠের সুন্দর বাড়ির্যার জন্য পরিচিত। বাড়ির অভ্যন্তরভাগ সাধারণত কাঠের নকশা দিয়ে সুসজ্জিত থাকে এবং খাস-কামরা বিভিন্ন ধরনের অলংকরণে সজ্জিত থাকে। যদিও ভালভাবে নির্মিত ঘরর্যাতে বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করা হয়, যার মূল দিক হলো দক্ষতাপূর্ণ তক্ষণ যা খুবই আকর্ষণীয়। তক্ষণশিল্পের এই দক্ষতাটি বাবার কাছ থেকে পুত্রের দিকে ধাবিত হয় এবং সে অঞ্চলে প্রচুর তক্ষক রয়েছে। তবে কংক্রিটের কাঠামোর্যার ক্রমবর্ধমান ব্যবহার ঐতিহ্যবাহী তিব্বতীয় তক্ষণশিল্পের জন্য হুমকি স্বরূপ। কেউ কেউ কংক্রিটের বর্ধিত ব্যবহারকে তিব্বতে চিনের প্রভাবের স্বেচ্ছায় অনুপ্রবেশ হিসাবে বিবেচনা করে। গাবা পৌরসভায়, যেখানে খুব কম সংখ্যক হান চাইনিজ রয়েছে, প্রায় সমস্ত কাঠামোই ঐতিহ্যগত রীতিতে তৈরী।[৩]
বিংশ শতাব্দীতে তিব্বতে সংঘটিত ঘটনার্যা তিব্বতীয় মঠ সংক্রান্ত স্থাপত্যশৈলীর ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছিল।
ত্রয়োদশ দালাই লামার আমলে ১৯১৪ সালে চীনাদের সাথে বৈঠকে বসতে বাধ্য করার জন্য টেঙ্গিলিং মঠটি ভেঙে ফেলা হয়েছিল।[৪] প্রাক্তন রাজপ্রতিনিধি রেতিংয়ের পক্ষাবলম্বন করার কারণে রাজপ্রতিনিধি তকত্রর আমলে ১৯৪৭ সালে সেরা মঠটি ছোট কামান দ্বারা বোমাবর্ষণের শিকার হয় এবং তিব্বতি সেনাবাহিনী কর্তৃক আক্রমণের শিকার হয়।[৫]
এটি লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে সেরা মঠটি কোনওভাবেই ধ্বংস হয়নি তবে কেবল আংশিকভাবে লুটের শিকার হয়েছিল। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় সবচেয়ে বড় ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছিল। চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ফলস্বরূপ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ধ্বংসযজ্ঞ দ্বারা এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এই দুই এর দরুনই বৌদ্ধ বিহারর্যার পতন বা ক্ষতি হয়েছে।
যে সমস্ত মঠর্যা টিকে ছিল সেগুলো ১৯৮০ এর দশকের শুরুর দিক থেকে পুনরুদ্ধার শুরু করে তিব্বতিরা। বর্তমানে এটি একটি আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা হয়ে উঠেছে। কীভাবে পূর্বাঞ্চলের মালভূমিতে অবশিষ্ট থাকা মঠর্যা পুনরুদ্ধার এবং সংরক্ষণ করবেন তা বিশেষজ্ঞরা তিব্বতীদের শিখিয়ে দিচ্ছেন।[৬]
কুম্বুম মঠের মতো অন্যান্য মঠগুলো বরাবরই চীনের রাজনীতি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে আসছে। ১৯৬৭ সালে সিমবিলিং মঠ সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়, যদিও পরবর্তীতে এর কিছু অংশ পুনরুদ্ধার করা হয়।
তাশি ল্যূনপো মঠটি মঙ্গোলীয় স্থাপত্য কলার প্রভাব প্রদর্শন করে। ত্রাদ্রুক মন্দিরটি তিব্বতের প্রাচীনতম মন্দিরগুলোর মধ্যে অন্যতম, এটি বলা হয়ে থাকে যে সপ্তম শতাব্দীতে তিব্বতীয় সাম্রাজ্যের সোনৎসেন গ্যাম্পোর রাজত্বকালে প্রথম নির্মিত হয়েছিল। জোখ্যাং মঠটিও মূলত সোনৎসেন গ্যাম্পোর অধীনে নির্মিত হয়েছিল। জোখ্যাং মন্দিরটি তিব্বতের টিউবো আমলে নির্মিত হওয়া টিকে থাকা ভবনগুলোর মধ্যে সর্বাধিক জাঁকজমকপূর্ণ ভবন এবং তিব্বতের সর্ব-প্রাচীন বেসামরিক ভবন। এটি তিব্বত, নেপাল, ভারত এবং চীনের তাং রাজবংশের স্থাপত্য শৈলীর সমন্বয় ঘটিয়েছে এবং কয়েক হাজার বছর ধরে তিব্বতীয় ধর্মীয় স্থাপত্যের নিদর্শন হয়ে উঠেছে। সুরফু মঠটি ১১৫৯ সালে প্রথম কর্মপা লামা দ্যুসুম খ্যেনপা (১১১০-১১৯৩) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তিনি ক্ষেত্রটি পরিদর্শন করার পরে এবং স্থানীয় রক্ষক, ধর্মপাল এবং লোক-বোধির কাছে নৈবেদ্য দিয়ে সেখানে একটি আসন প্রতিষ্ঠার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।[৭] ১১৮৯ সালে তিনি ক্ষেত্রটি পুনঃদর্শন করেছিলেন এবং সেখানে তিনি তার মূল আসনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১০০০ জন সন্ন্যাসীর ধারণ ক্ষমতায় উন্নীত করতে মঠটির আয়তন বৃদ্ধি করা হয়েছিল। সোসোং গংবা একটি ছোট মঠ যা চৌদ্দ শতকের কাছাকাছি কোনো এক সময়ে নির্মিত। ১৪১৮ সালে পালচো মঠটি প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা তার কুম্বুমের জন্য সুপরিচিত যেখানে চারটি তলায় মোট ১০৮ টি প্রার্থনা কক্ষ রয়েছে। ১৫০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চোকরগিয়েল মঠে দ্বিতীয় দালাই লামা একদা ৫০০ সন্ন্যাসীর বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, কিন্তু সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় তা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল।
রামোচে মন্দির লাসার একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্দির। নির্মিত মূল ভবনটি তাং রাজবংশের স্থাপত্যশৈলীর দ্বারা দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত হয়েছিল কারণ এটি হান চীনা স্থপতিদের দ্বারা ৭ম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে প্রথম নির্মিত হয়েছিল। রাজকন্যা ওয়েনচেং এই প্রকল্পের দায়িত্বে নেন এবং তার স্বদেশের প্রতি দুর্বলতা প্রদর্শনের জন্য পূর্বে দিকে মুখ করে মন্দিরটি তৈরি করার নির্দেশ দিলেন।
তিব্বতি তাদের পোশাকে পরিধানে রক্ষণশীল সাধারণত রক্ষণশীল ধাঁচের হয়ে থাকে এবং কেউ কেউ পশ্চিমা পোশাক পরতে শুরু করলেও ঐতিহ্যবাহী পোশাক-শৈলী এখনও প্রচুর পরিমাণে সমগ্র দেশজুড়ে দেখতে পাওয়া যায়। মহিলারা একটি ব্লাউজের উপর গাঢ় রঙের মোড়ানো পোশাক পরে এবং রঙিন ডোরাযুক্ত, উল দ্বারা বোনা পাংডেন নামক একধরনের এপ্রোন পরিধান করে থাকে, যা বোঝায় উক্ত পোশাক পরিহিত মহিলা অবিবাহিতা। পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই গ্রীষ্মের মাসর্যাতে লম্বা হাতার পোশাক পরিধান করে থাকেন।
১৯৫৫ সালে প্রকাশিত টিবেটান মার্চেস বইয়ে আঁদ্রে মিগো তিব্বতি পোশাক-পরিচ্ছদ যেমনটা বর্ণ করেছেন তা নিম্নরূপ;
লামা ও মাথা কামানো এমন কিছু সাধারণ মানুষ ব্যতীত তিব্বতিরা তাদের চুল লম্বা রাখে বা মাথার চারপাশে একটি বেণী অবস্থায় সজ্জিত করে এবং একটি জটিল নকশার ছোট বেণী দিয়ে শোভিত করে রাখে যার ফলে পুরো বিষয়টিকে একরকম মুকুটের মতো দেখায়। তারা প্রায়শই পশুর লোমের তৈরী একটি বিশাল টুপি পরে থাকে, যার আকারটি নির্ভর করে কে জেলায় থাকে তার উপর; কখনও কখনও এর শিখরে এক ধরনের চতুষ্কোনাকৃতির ফলক সংযুক্ত থাকে, যেখান থেকে ঝালর সদৃশ্য বস্তু ঝুলে থাকে। তাদের টুপিগুলি উড়ে যাওয়া থেকে রোধ করার জন্য, তারা এগুলি তাদের মাথাতে বিনুনি দ্বারা সংযুক্ত করে রাখে যা আমি কেবলই বর্ণনা করেছি , আর এই ক্ষেত্রে বিনুনি অবশ্যই অনাবদ্ধ কুণ্ডলীর হতে হবে। তাদের বাম কানে তারা হয় প্রবাল নতুবা ফিরোজা পাথরে খচিত বিশাল দুল পরে থাকেন। তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ জটিল ধারার নয়। এতে সাধারণত একটি চুবা থাকে, যা হলো এক ধরনের বৃহৎ আলখেল্লা এবং এর সুদীর্ঘ চওড়া হাতা প্রায় মাটি ছুঁইছুঁই অবস্থায় থাকে। এটি একটি উলের কোমড়বন্ধনী দ্বারা কোমরের চতুর্দিকে আবদ্ধ করা থাকে, যাতে এর স্কার্টগুলি কেবল হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছায় এবং এর উপরের ভাঁজগুলি পরিহিতার বুকে চারদিকে একটি বিশালাকার বৃত্তাকার পকেট তৈরি করে। এটিকে অ্যাম্পা বলা হয় এবং এতে বিভিন্ন ধরনের প্রচুর পরিমাণ জিনিস সংযুক্ত করা হয় - একটি খাবার বাটি, এক ব্যাগ স্যাম্পা এবং অন্যান্য আরও অনেক ছোট-খাটো প্রয়োজনীয় জিনিস থাকে। অধিকাংশ চুবা উলের তৈরি, তা হয় সিকাঙে পাকানো ধূসর রঙের উলের অথবা লাসার জাঁকজমকপূর্ণ, উষ্ণ, নরম দিয়ে তৈরী করা হয়ে থাকে, যা সাধারণত গাঢ় লাল রঙের হয়। অন্যদিকে যাযাবররা সাধারণত ভেড়ার চামড়া দ্বারা প্রস্তুতকৃত চুবা পরে থাকেন, যা হাত দিয়ে সেলাই করা হয় এবং মাখন সহযোগে শক্তপোক্তভাবে তাম্রবর্ণের করে শুকানো হয়, আর পশমি দিকটি ভিতরের দিকে রাখা হয়। শহরে বসবাসকারী তিব্বতি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মূলত সমৃদ্ধ ব্যবসায়ী, এই পোশাকটি সুতির জাঙ্গিয়া এবং এর নিচে সুতি বা সিল্কের দীর্গ হাতাআলা জামার সহযোগে পরিধান করে আরো পরিপূর্ণ করেন তোলেন, তবে যাযাবর সাধারণত সাধারণত এর নিচে কিছুই পরেন না, যদিও শীতকালে তারা কখনও কখনও ভেড়ার চামড়া জাঙ্গিয়া এর নিচে পরে থাকেন। তিব্বতিরা তাদের বুকের উপর দিয়ে খুব কমই তাদের চুবাকে খুলে রাখে। ডান কাঁধ এবং বাহু প্রায় সর্বদা উন্মুক্ত থেকে যায় এবং তারা যখন দীর্ঘপথ পাড়ি দেয় বা কর্মরত থাকে তখন পোশাকের পুরো উপরের অংশটি নিচে নামিয়া রাখা হয় যাতে এটি কোমর বন্ধনী দ্বারা কোমরের সাথে আবদ্ধ থাকে। এর ফলে তাদের কোমরের উপরের অংশ উলঙ্গ অবস্থায় থাকে এবং এটির নিচে স্কার্ট পরে আছে বলে মনে হয়, যা খুবই অদ্ভুত লাগে দেখতে। তারা শীতের জমে যাওয়ার মতো ঠান্ডা হওয়ার রূঢ়তা খুব কমই টের পান, হিমশীতল বাতাসে তার নগ্ন বুকে ধীরে ধীরে ক্লান্তভাবে টেনে নিয়েও চলাচল করতে সক্ষম। তাদের সুউচ্চ বুট জোড়ার অভ্যন্তরে তাদের পাগুলিও খালি থাকে। এগুলিতে কাঁচা, পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকানো হয় নি এমন চামড়ার নরম তল রয়েছে; বুটের ঢিলা-ধরনের পা গুলো, যা লাল, কালো বা সবুজ রঙের হতে পারে, এর উপরে প্রায় এক ধরনের পশমী ফিতে রয়েছে যা হাঁটুতে উপরের অংশের অন্য পোশাকের সাথে উলের উপাদানটির খুব উজ্জ্বল বর্ণের ফালা দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।
— আঁদ্রে মিগো (১৯৫৩), টিবেটান মার্চেস[৮]
তিব্বতের রন্ধনপ্রণালী তার প্রতিবেশী দেশসমূহের তুলনায় বেশ স্বতন্ত্র। তিব্বতের ফসল অবশ্যই উচ্চ উচ্চতায় ফলন-সক্ষম হতে হবে, যদিও তিব্বতের কয়েকটি অঞ্চল ধান, কমলা, লেবু এবং কলা জাতীয় ফসল উৎপাদন করার জন্য জন্য যথেষ্ট পরিমাণ নিম্নে রয়েছে।[৯] তিব্বতের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফসল হল যব। ভাজা যব থেকে প্রস্তুতকৃত আটা-ময়দা, যাকে সাম্পা বলা হয়, এটি তিব্বতের প্রধান খাদ্য। এটি বেশিরভাগ সময় দেশটির জাতীয় পানীয় মাখন চায়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয়। মাখন চা এই উচ্চ উচ্চতায় বসবাস করা জনগণের দৈহিক চাহিদা পূরণে সম্পূর্ণ সক্ষম, কারণ এতে মাখন (তথা আমিষ ও স্নেহ), দুধ (আমিষ, স্নেহ এবং ক্যালসিয়াম), লবণ এবং চা রয়েছে। তিব্বতি রন্ধনপ্রণালীতে বিভিন্ন ধরনের খাবার রয়েছে। সবচেয়ে বিখ্যাত হল মোমোস (তিব্বতি ডাম্পলিং)। বালেপ হল এক ধরনের তিব্বতি রুটি যা সকালের নাস্তায় এবং মধ্যাহ্নভোজনে খাওয়া হয়। তিব্বতে আরও অনেক ধরনের বালেপ রুটি এবং ভাজা পিঠা পাওয়া যায়। থুকপা হল এক ধরনের ঝোলা নুডলস্। এর ঝোলে বিভিন্ন ধরনের, আকারের সবজি ও মাংস মিশ্রিত থাকে। খাবার হস্ত সহযোগে খাওয়া হয় এমন অন্যান্য হিমালয় অঞ্চলের রন্ধনপ্রণালীর বিপরীতে তিব্বতি খাবারর্যা বাঁশের সরু কাঠির সাথে প্রথাগতভাবে পরিবেশন করা হয়। তিব্বতিরাও স্যুপ খাওয়ার জন্য ছোট বাটি ব্যবহার করে এবং ধনী ব্যক্তিরা স্বর্ণ ও রৌপ্যের বাটি ব্যবহার করেন বলে জানা যায়।[১০] ঐরকম উচ্চতায় যেহেতু কেবল কয়েকটি ফসল জন্মায়, তাই তিব্বতি রন্ধনপ্রণালীর্যার অনেক সামগ্রী আমদানি করা হয়, যেমন চা, চাল এবং অন্যান্য। মাংসের পদর্যা চমরী গাই, ছাগল বা খাসির মাংস প্রায়শই শুকিয়ে অথবা মশলা দিয়ে আলু সহযোগে রান্না করে পরিবেশন করা হয়। তিব্বতিরা কখনই কুকুরের মাংস এবং কেবল বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে মাছ খেত না কারণ কুকুরকে গৃহপালিত প্রাণী ও পাহারাদার হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং মাছ বৌদ্ধ ধর্মের আটটি আধ্যাত্মিক প্রতীকসমূহের মধ্যে একটি।
সরিষা তিব্বতে চাষ করা হয়, আর তাই তিব্বতি রন্ধনপ্রণালীতে এর জোরালো প্রভাব রয়েছে। চমরী গাইয়ের দুধ হতে প্রস্তুতকৃত দই, মাখন এবং পনির প্রায়শই খাওয়া হয়, এবং ভালভাবে প্রস্তুতকৃত দই মর্যাদার বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়।
তিব্বতের বড় বড় শহরর্যাতে আজকাল অনেক রেস্তোঁরা সিচুয়ান রন্ধনপ্রণালীর চাইনিজ খাবার পরিবেশন করে থাকে। পাশ্চাত্য দেশ সমূহ থেকে আমদানি করা খাবারের পাশাপাশি মিশ্র-ধারার খাবার, যেমন চমরী গাইয়ের ভাজা মাংস এবং চিপসও বেশ জনপ্রিয়। তা সত্ত্বেও, বহু সংখ্যক ছোট দোকান শহুরে ও গ্রাম্য ধারার ঐতিহ্যগত বিভিন্ন তিব্বতি পদ পরিবেশন করে থাকে।
জেসমিন চা এবং চমরী গাইয়ের দুধের মাখন হতে প্রস্তুতকৃত মাখন চা তিব্বতে পান করা হয়। অ্যালকোহোল জাতীয় পানীয়ের মধ্যে অন্যতম হলো:
তিব্বতিরা ঐতিহ্যগতভাবে তাদের পরিবারের বয়োঃবৃদ্ধ সদস্যদেরকে শ্রদ্ধা করে।[১১]
তিব্বতিরা বহুভর্তৃকত্ব প্রথা ব্যাপক পরিসরে অনুসরণ করত।[১২] ১৯৪০-এর দশকে তিব্বতে নিজের অতিবাহিত জীবন সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অস্ট্রিয়ার লেখক হাইনরিখ হেরার তিব্বতি যাযাবরদের দ্বারা অনুসৃত বহুভর্তৃকত্ব প্রথার কথা উল্লেখ করেছিলেন: "আমরা যাযাবরদের মধ্যে বহুভর্তৃকত্ব প্রথার প্রচলন দেখতে পেয়ে অবাক হয়েছি। যখন বেশিরভাগ ভাই একই স্ত্রীকে ভাগাভাগি করে বসবাস করে, তখন বড় ভাই সবসময়ই বাড়ির কর্তা হিসেবে ন্যস্ত থাকে এবং স্ত্রীর উপর অন্যদের তখনই অধিকার থাকে যখন বড়ভাই দূরে থাকে বা অন্য কোথাও আত্মসুখে নিজেকে নিয়োজিত রাখে।"[৪]
হেরার একটি বিশেষ ক্ষেত্র প্রসঙ্গে বহুপত্নীকত্ব প্রথার কথাও উল্লেখ করেছেন: "একজন ব্যক্তি এমন একটি বাড়ির বেশ কয়েকটি কন্যাকে বিয়ে করেন যেখানে কোনও পুত্র সন্তান এবং উত্তরাধিকারী নেই। এই ব্যবস্থার ফলে পরিবারের সম্পদ বিভিন্ন জন্যে বন্টিত হওয়ার হাত থেকে রেহাই পায়।"[১৩]
তিব্বত ক্যালেন্ডার হলো চান্দ্র-সৌর ক্যালেন্ডার, অর্থাৎ, তিব্বতি বছর ১২ বা ১৩টি চন্দ্র মাসের সমন্বয়ে গঠিত, প্রতিটি মাসের সূচনা এবং সমাপ্তি অমাবস্যা দিয়ে শেষ হয়। একটি ত্রয়োদশ মাস গড়পড়তা প্রতি তিন বছরে যোগ করা হয়, যাতে তিব্বতি বছর সৌর বছরের সমতুল্য হয়। মাস সমূহের কোনও নাম নেই, তবে চতুর্থ মাস ব্যতীত বুদ্ধের জন্ম ও জ্ঞানার্জন উদযাপনকারী সাকা দাওয়া নামে চতুর্থ মাসটি বৌদ্ধপূর্ণিমা ও গৌতম বুদ্ধের জন্ম দিবস হিসেবে পালন করা হয়, আর বাদবাকি অন্যান্য সব মাস তাদের সংখ্যা দ্বারা উল্লেখ করা হয়।[১৪]
তিব্বতি নববর্ষের উৎসবকে লোসার নামে ডাকা হয়।
প্রতিটি বছর একটি প্রাণী ও একটি উপাদানের সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকে। প্রাণীর পর্যায়ক্রমটি হলো যথাক্রমে:
খরগোশ | ড্রাগন | সাপ | ঘোড়া | ছাগল | বানর | মোরগ | কুকুর | শূকর | ইঁদুর | ষাঁড় | বাঘ |
এবং উপাদানের পর্যায়ক্রমটি হলো যথাক্রমে:
অগ্নি | মৃৎ | লৌহ | জল | কাষ্ঠ |
প্রতিটি উপাদান পরপর দু'বছরের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়, প্রথমে তার পুরুষ রূপে , তারপরে স্ত্রী রূপে। উদাহরণস্বরূপ, একটি পুরুষ মৃৎ-ড্রাগন বর্ষের পরে একটি স্ত্রী মৃৎ-সাপ বর্ষ আগত হয়, আর এরপরে আসে একটি পুরুষ লৌহ-ঘোড়া বর্ষ। লিঙ্গ বাদ দেওয়া যেতে পারে, কারণ এটি প্রাণী থেকে অনুমান করা যেতে পারে যে বর্ষটি কোন লিঙ্গের।
উপাদান-প্রাণী সংবলিত এই বর্ষীয় বিন্যাস পদ্ধতি ৬০ বছরের চক্রে আবর্তিত হয়, যার সূচনা হয় স্ত্রী অগ্নি-খরগোশ বর্ষের মাধ্যমে। বৃহৎ এই চক্রীয় বিন্যাস সংখ্যাযুক্ত। প্রথম চক্রটি ১০২৭ সালে শুরু হয়েছিল। অতএব, এই হিসাব অনুযায়ী ২০১৮ সাল মোটামুটি ১৭ তম চক্রের পুরুষ মৃৎ-কুকুর বর্ষের সাথে মিলসম্পন্ন এবং ২০১৯ সাল মোটামুটি ১৭ তম চক্রের স্ত্রী মৃৎ-শূকর বর্ষের সাথে মিলসম্পন্ন।
বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্রের নামে সপ্তাহের দিনগুলোর নামকরণ করা হয়েছে।
দিন | তিব্বতি (ওয়াইলি) | বাংলা | জ্যোতিষ্ক |
---|---|---|---|
রবিবার | གཟའ་ཉི་མ་ (গ্জা' ন্যি মা) | যা ন্যিমা | সূর্য |
সোমবার | གཟའ་ཟླ་བ་ (গ্জা' য্লা বা) | যা দাভা | চন্দ্র |
মঙ্গলবার | གཟའ་མིག་དམར་ (গ্জা' মিগ্ দ্মার) | যা মিকমার | মঙ্গল |
বুধবার | གཟའ་ལྷག་པ་ (গ্জা' ল্যাক পা) | যা ল্যাকপা | বুধ |
বৃহস্পতিবার | གཟའ་ཕུར་པུ་ (গ্জা' ফুর বু) | যা পুর্পু | বৃহস্পতি |
শুক্রবার | གཟའ་པ་སངས་ (গ্জা' পা স্যাংস্) | যা পাস্যাং | শুক্র |
শনিবার | གཟའ་སྤེན་པ་ (গ্জা' স্পেন পা) | যা পেন্পা | শনি |
তিব্বতে রবিবার, সোমবার ও বুধবারে জন্মানো মানুষদের ব্যক্তিগত নাম হিসেবে সাধারণত যথাক্রমে ন্যিমা (সূর্য), দাভা (চন্দ্র) ও ল্যাকপা (বুধ) নাম সমূহ রাখা হয়।
খদক হলো তিব্বতের এক ধরনের ঐতিহ্যগত কাপড় খণ্ড বিশেষ যা বিভিন্ন আচারানুষ্ঠানে প্রদান করা হয়। এটি শুভকামনা, মহত্ব ও অনুকম্পার প্রতীক। এটি সাধারণত রেশম দ্বারা তৈরী করা হয় এবং সাধারণত সাদা রংয়ের হয়ে থাকে যা দাতার হৃদয়ের শুদ্ধতার প্রতীক বহন করে। শুদ্ধতা খদকের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কাউকে অপরিচ্ছন্ন-নোংরা খদক প্রদান করা অভদ্রতা এমনকি রূঢ়তা হিসেবে বিবেচিত হয়।
খাতা একটি বহুমুখী উপহার। এটি বিবাহ, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, জন্মদিন, সহ যে কোনও উৎসব অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণকর্তার হাতে তুলে দেয়া যায়, এমনকি স্নাতকোত্তর সমাবর্তনের পাশাপাশি অতিথি আগমন ও প্রস্থানকালেও দেয়া যায়। খদক প্রদানের সময় তিব্বতিরা সাধারণত "তাশি দেলেক" (অর্থাৎ শুভকামনা) বলে শুভকামনা জানায়।[১৫]
নবজাতকের জন্মের সময় ঐতিহ্যগতভাবে দেয়া হয় এমন একটি উপহার হলো পাহাড়ি ছাগলের মূর্তি, যেমনটা অগাস্ট হারমান ফ্র্যাঙ্ক কর্তৃক নিম্নে বর্ণিত হয়েছে:
"খালাৎসেতে আমাদের খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারক কয়েক সপ্তাহ আগে বাবা হয়েছিলেন এবং গ্রামের লোকেরা তাকে এবং তাঁর স্ত্রীর কাছে আটা-ময়দার মণ্ড দ্বারা নির্মিত একটি আইবেক্স মূর্তি উপহার দিয়েছিল। তিনি আমাকে আটা-ময়দা এবং মাখন দিয়ে তৈরি মূর্তিগুলোর একটি দিয়েছিলেন, এবং আমাকে বলেছিলেন যে সন্তানের জন্ম উপলক্ষে আটা-ময়দা দ্বারা প্রস্তুতকৃত আইবেক্স মূর্তি উপহার দেওয়ার বিষয়টি তিব্বত এবং লাদাখের একটি রীতি। এটি বেশ আকর্ষণীয় তথ্য। কারণ আমি প্রায়শই এটা ভেবে অবাক হতাম যে লাদাখের প্রাক-বৌদ্ধ অঞ্চলে আইবেক্সের এতর্যা শিলা চিত্রকলা কেন ছিল? এখন এটি দেখে মনে হচ্ছে যে তারা সম্ভবত সন্তানের জন্মের পরে ধন্যবাদ জ্ঞাপন স্বরূপ আইবেক্সের মূর্তি উপহার স্বরূপ প্রদান করে থাকে। যেমনটা আমি আমার পূর্ববর্তী নিবন্ধে দেখানোর চেষ্টা করেছি, লোকেরা বৌদ্ধ ধর্ম আগমনের পূর্বকালের উপাসনালয়ে বিশেষত বাচ্চাদের জন্য আশীর্বাদ লাভের প্রার্থনা করতে যেত।"[১৬]
তিব্বতের সংগীতে সমগ্র হিমালয় অঞ্চলের ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটে। যা মূলত তিব্বত কেন্দ্রিক হলেও ভারত, ভুটান ও নেপাল সহ পৃথিবীজুড়ে যে সকল স্থানে তিব্বতি জনসমষ্টি রয়েছে সেখানে সুপরিচিত। শীর্ষস্থানীয় তিব্বতি সংগীত মূলত ধর্মীয় সংগীত, যা তিব্বতি সংস্কৃতিতে তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্মের সুপ্রতিষ্ঠিত প্রভাবের প্রতিফলন ঘটায়।
তিব্বতি বা সংস্কৃত ভাষায় ভজন প্রায়শই ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে তিব্বতি সঙ্গীতের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করা হয়। এই ভজনর্যা জটিল, প্রায়শই পবিত্র গ্রন্থর্যার আবৃত্তির নামান্তর যা বিভিন্ন উৎসব উদযাপনে জপাকারে গাওয়া হয়। ইয়্যাংভজন, ধরাবাধা সময় বাইরে গিয়ে দলের তালে ও পুনরাবৃত্তি নিম্ন সুরের সহিত গাওয়া হয়। অন্যান্য ধারার্যার মধ্যে রয়েছে তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের বিভিন্ন শাখার ভজন, যেমন জনপ্রিয় গেলুগ শাখার শাস্ত্রীয় সংগীত এবং ন্যিংমা, শাক্য এবং কাগ্যু শাখার প্রচলিত ভাবপ্রবণ সংগীত।
ধর্ম নিরপেক্ষ তিব্বতি সংগীত ১৪ তম দালাই লামা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত তিব্বতি ইনস্টিটিউট অফ পারফর্মিং আর্টসের মতো সংস্থার্যার দ্বারা উন্নীত হয়েছে। তায়েশি এবং ন্যাংমার মতো নাচের সংগীত সহ অন্যান্য ধারায় শাখান্বিত হওয়ার আগে এই সংগঠনটি ল্যামোর মতো গীতিনাট্যের ধারায় বিশেষায়িত হয়েছিল। তিব্বতের শহুরে অঞ্চলের কারাওকে বারর্যাতে ন্যাংমা বিশেষভাবে জনপ্রিয়। জনপ্রিয় ধারার সংগীতের আর এক রূপ হল ধ্রুপদী গার ধারা, যা আচার ও অনুষ্ঠানর্যাতে সঞ্চালিত হয়। স্বরযন্ত্রের কম্পন এবং উচ্চ তীক্ষ্ণতা বৈশিষ্ট্যযুক্ত লু হল এক ধরনের গান যা সাধারণত যাযাবর গোষ্ঠীর লোকেরা গেয়ে থাকে। এছাড়াও মহাকাব্য বর্ণনাকরি চারণ-কবিও রয়েছে যারা তিব্বতের জাতীয় নায়ক গেসার-এর বিবিধ বিষয়ে গান গেয়ে থাকেন।
চীনের জনপ্রিয় ধারার সংগীতে তিব্বত বেশ ভালোভাবে উপস্থাপিত হয়। তিব্বতি গায়করা বিশেষত তাদের শক্তিশালী কণ্ঠ সক্ষমতার জন্য সুপরিচিত, যার কারণস্বরূপ অধিকাংশ ব্যক্তিবর্গ অতি উচ্চতায় তিব্বতি মালভূমির অবস্থানের বিষয়টি করে থাকেন। সেতেন দোলমা ১৯৬০-এর দশকে "দুনিয়াটা লাল" নামক নাচ ও গানের সমন্বিত পার্ফমেন্সের দরুন ব্যাপক সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। কেলসাং মেতোক হলো একজন বিখ্যাত গায়ক যিনি চীনা এবং পশ্চিমা জনপ্রিয় ধারার সাথে ঐতিহ্যগত তিব্বতি সংগীতের সমন্বয় সাধন করেন। পূর্বা র্গ্যাল হাওন্যানআর-এর ২০০৬ সালের আসরে বিজয়ী হয়েছিলেন, যা হলো আমেরিকান আইডলের চীনা সংস্করণ। ২০০৬ সালে তিনি শেরহুড হু পরিচালিত প্রিন্স অব দি হিমালায়াস চলচ্চিত্রে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন, যা শেক্সপিয়ারের লেখা হ্যামলেট নামক বিয়োগান্তক নাটকটি অবলম্বন করে তৈরী করা হয়েছে, যার পটভূমিতে রয়েছে প্রাচীন তিব্বত এবং এর সকল অভিনয়শিল্পী তিব্বতি।
তিব্বতের সংগীত পশ্চিমা সংগীতের নির্দিষ্ট কিছু ধারাকে প্রভাবিত করেছে; যেমন নিউ-এইজ, ফিলিপ গ্ল্যাস, হেনরি আইখহাইম সহ অন্যান্য আরো অনেক সুরকার তাদের সংগীতে তিব্বতি উপাদান ও বিষয়বস্তু ব্যবহার করার জন্য বেশ সুপরিচিত। তিব্বতি সংগীত সংবলিত মিশ্র ধারার প্রথম কোনো পশ্চিমা সংগীত ছিল ১৯৭১ সালে তৈরী হওয়া টিবেটান বেলস্। গ্ল্যাসের প্রস্তুতকৃত কুন্ডুন গানটির হাত ধরে তিব্বতি সংগীতকে পশ্চিমা দুনিয়ায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বিদেশী ধারার জনপ্রিয় সংগীত তিব্বতের গন্ডির মধ্যে বড় রকমের প্রভাব ফেলেছে। ভারতীয় চলচ্চিত্রের গান ও গজল তিব্বতে বেশ জনপ্রিয়। একইভাবে আমেরিকার রক এন্ড রোল ধারাটিও তিব্বতে বেশ জনপ্রিয় যা তিব্বতে র্যাংজেন শোনুর মতো বিখ্যাত গায়কদের অবতারণা করেছে। ১৯৮০-এর দশকে কিছু আইন শিথিল করার পর থেকে তিব্বতি পপ সংগীত ইয়াডং কাউন্টির আনুকূল্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, যার অন্তর্ভুক্ত কিছু শিল্পী ও দল যেমন জাম্পা সেরিং, ৩ সদস্য বিশিষ্ট গায়ক দল এ.জে.এই.এ., ৪ সদস্য বিশিষ্ট দল গাও ইউয়ান হং, ৫ সদস্য বিশিষ্ট দল গাও ইউয়ান ফেং এবং দেচেন শাক-দাগসের অন্যতম সুপরিচিতর পাশাপাশি রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত ন্যাংমা দলটির গানের কথা গুলোও সুপরিচিত। গাও-ইউয়ান হং তিব্বতি ভাষার বিভিন্ন শব্দ বিশেষভাবে তাদের র্যাপ সংগীতে সংযুক্ত করে তুলে ধরেছে।
তিব্বতি লোকজ অপেরা (আচে) ল্যামো "(বোন) দেবী" নামে পরিচিত, এটি নৃত্য, ভজন এবং গানের সংমিশ্রনে গঠিত হয়েছে। চিত্রনাট্যটি বৌদ্ধ ধর্মীয় গল্প এবং তিব্বতের ইতিহাস অবলম্বনে প্রস্তুত করা হয়েছে। চৌদ্দ শতকে থ্যাং তং গ্যালপো কর্তৃক ল্যামো প্রতিষ্ঠিত হয়, যিনি ছিলেন একাধারে একজন লামা এবং গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক বাস্তু-প্রকৌশলী। তিব্বতে পরিবহন ব্যবস্থার সুবিধা বৃদ্ধি করার জন্য তহবিল সংগ্রহ করার লক্ষ্যে গিয়ালপো এবং সাতজন নিয়োগপ্রাপ্ত মেয়ে প্রথম মঞ্চায়নের আয়োজন করে। ঐতিহ্য অব্যাহত থাকে, এবং লিংকা ও শোটনের মতো বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে ল্যামো মঞ্চায়িত হয়ে থাকে।
গীতিনাট্যটি সাধারণত একটি নাটক, যা খোলা মঞ্চে মঞ্চায়ন হয়, যেখানে নাচ, গান এবং ভোজনের সমন্বয় দেখা যায়। রঙিন মুখোশর্যা কখনও কখনও কোনও নির্দিষ্ট চরিত্র চরিত্রায়িত করার জন্য পরিধান করা হয়, যেখানে লাল রং রাজার প্রতীক বোঝায় এবং হলুদ রং দেবদেবতা ও লামাগণকে বোঝায়।
মঞ্চায়ন শুরু হয় মঞ্চ শুদ্ধ করা এবং আশীর্বাদের মাধ্যমে। এরপরে একজন কথক গল্পটির সংক্ষিপ্তসার গানের মাধ্যমে গেয়ে শোনান, অতঃপর মঞ্চায়ন শুরু হয়। নাটকের মঞ্চায়নের শেষে আরও একটি আধ্যাত্মিক আশীর্বাদ পরিচালিত হয়।
তিব্বতীয় উৎসব যেমন লোসার, শোটন, স্নান উৎসব সহ আরও অনেক উৎসব দেশজ ধর্মে গভীরভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং এর মধ্যে বিশেষ কিছু বিদেশী প্রভাবও রয়েছে। তিব্বতীয় উৎসবর্যা বিনোদনের একটি উচ্চ-মানের উৎস এবং ইয়াক রেসিংয়ের মতো আরো বিভিন্ন ধরনের খেলা এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিব্বতিরা এই উৎসবর্যাকে তাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে বিবেচনা করে এবং প্রায় প্রতিটি উৎসবে তারা অংশগ্রহণ করেন।
তিব্বতি পতাকার ইমোজি অনুমোদন ও উন্মোচন করার জন্য ২০১০ দশ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করা হাজার হাজার জাতিগত তিব্বতি ফেইসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম-কে আহ্বান জানিয়ে আসছে। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল তারা যে আঞ্চলিক এবং সাংস্কৃতিক তিব্বত এর অংশ এই চেতনা অনলাইন মাধ্যমে জাগ্রত করা এবং মূল-ভূখণ্ডের গন্ডির বাইরে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান জুড়ে তিব্বতি সংস্কৃতিকে তুলে ধরা ও এর প্রতিনিধিত্ব করে এর পরিচিতি বিস্তার ঘটানো।
যাইহোক, ২০১৯ সালের আগস্ট মাসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইমোজি উপ-কমিটি এবং ইউনিকোডের আলোচনা দলের (ইউনিকোডের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি অনুযায়ী জানা যায় যে, তিব্বতি পতাকার ইমোজি উন্মোচনের বিষয়ে জোরালো প্রস্তাব রয়েছে) প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ইউনিকোড কর্তৃক তিব্বতি পতাকার ইমোজি অনুমোদন ও ঘটনাক্রমিক উন্মোচন করার প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে এবং এখন অবধিও স্থগিত রয়েছে। সম্ভবত, চীনের মূল-ভূখণ্ডের লাখ লাখ নাগরিকের কঠোর বিরোধিতা এবং যদি ইউনিকোড একতরফাভাবে তিব্বতি পতাকার ইমোজি উন্মোচন করে তাহলে কোম্পানির উপর ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম-এ কর্মরত চীনের মূল ভূখণ্ডের সদস্যবৃন্দ ও চীনের সরকার কর্তৃক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্মতির দরুন এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে (চীন যতক্ষণ পর্যন্ত না তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে এবং এ অঞ্চলে বসবাস করা তিব্বতিদের অধিকার ও স্বাধীনতা প্রসঙ্গে সমর্থন করে)।
তা সত্ত্বেও, বিশ্বজুড়ে তিব্বতিরা এগিয়ে চলেছে। ২০১৯ সালে হংকংয়ের চলমান আন্দোলনর্যা যা ২০১৯ সালের জুন থেকে এখন পর্যন্ত চলছে এবং এরপরে চীনের মূল ভূখণ্ড কর্তৃক প্রধান প্রধান মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে হস্তক্ষেপের আলোকে, তিব্বতিরা ইউনিকোডকে কমপক্ষে আরও এক বছরের জন্য সময়সীমা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে বা আহ্বান জানাচ্ছে, যাতে তিব্বতীয় পতাকা ইমোজি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া এবং প্রকাশের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার আগে সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মে এবং ইউনিকোড পরিচালিত কর্মকান্ডে চীনের মূল ভূখণ্ডের প্রভাব দূরীকরণে নিশ্চিত হওয়া যায়। তিব্বতি পতাকা ইমোজি আর্থ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে ইমোজি-১৩.০, ১৪.০ সংস্করণ বা তার পরে প্রকাশিত হতে পারে।
|তারিখ=
(সাহায্য)
|তারিখ=
(সাহায্য)
|তারিখ=
(সাহায্য)
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)