তিব্বতের শিক্ষাব্যবস্থা গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। তিব্বতীয়দের শিক্ষাব্যবস্থায় চীনের সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। প্রাথমিক ও উচ্চতর শিক্ষা এখানে বাধ্যতামূলক, এবং এরপরে মূলত পক্ষপাতমূলক নীতিই ভোকেশনাল বা উচ্চতর শিক্ষার প্রতি তিব্বতীয়দের অধিক আকৃষ্ট করে থাকে।
৮৬০ সি.ই.র দিকে যখন তিব্বতে প্রথম মনাস্টেরি স্থাপিত হয়, তখন থেকেই এক ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সেখানে চালু হয়। তবে মাত্র ১৩% তিব্বতীয়ই সেখানে বাস করত (মেয়েদের জন্য শতকরা অনুপাতটা আরো কম ছিল) এবং অনেকে সাধারণ কর্মজীবী হিসেবে জীবনযাপন করত; যাদের অধিকাংশই কেবলমাত্র প্রার্থনাবই পড়তে পারত। মনাস্টেরির বাইরে দুটি বিদ্যালয় ছিল: সে লাপত্রা - ছেলেদের যাজকীয় কাজকর্মের প্রশিক্ষণ দিত, এবং সিখাং - সরকারি দায়িত্ব পালনের উপযুক্ত করে তোলবার জন্য প্রশিক্ষণ দিত। দুটি বিদ্যালয়ই লাসায় অবস্থিত ছিল।
বিংশ শতকে তিব্বতের সরকার বিদেশিদের, মূলত ব্রিটিশদের সাধারণ স্কুল চালু করবার অনুমতি দেয়। তারা অবশ্য পাদ্রী এবং অভিজাতবর্গদের কাছ থেকে বাধার সম্মুখীন হয়, কারণ অভিযোগকারীদের ধারণা ছিল এ ধরনের স্কুল "তিব্বতের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য"র ভিত্তি নড়বড়ে করে দেবে।[১] ইংল্যান্ডে সন্তানদের পড়াতে পারার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অনেকে পিতামাতাই দূরত্বের কথা ভেবে আর সন্তানদের পাঠাননি।
চীনা নথি অনুযায়ী ১৯৫১ সালে সাক্ষরতার হার ছিল ৯০%। ১৭ দফা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর তিব্বতের শিক্ষাবিস্তৃতিতে চীনের সাহায্যকামনা করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যাপক বিস্তৃত হয়েছে। ১৯৯৯ সালে চীনের পশ্চিমা উন্নয়ন প্রকল্প গৃহীত হওয়ার পর প্রায় ২০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয় এবং ফলশ্রুতিতে ৮৫% থেকে ২০১০ সালে স্কুলগুলোতে বাচ্চাদের নাম অন্তর্ভুক্তির হার ৯৮.৮% এ উন্নীত হয়।[২] অধিকাংশ ক্লাসই তিব্বতীয় ভাষায় নেওয়া হয়, তবে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়ন চীনা ভাষাতেই নেওয়া হয়। তিব্বতীয়দের জন্য প্রাইমারি থেকে কলেজ পর্যন্ত সম্পূর্ণ শিক্ষার ব্যয়ভার কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক ভর্তুকি হিসেবে দেওয়া হয়।[৩]
তিব্বত মুক্ত করো আন্দোলনসহ আরো বেশকিছু মানবাধিকার সংস্থা এই শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেছে, এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা তিব্বতীয় সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।[৪] স্থানীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির উপর জোর না দিয়ে মান্দারিন ভাষা শেখানোর বিরুদ্ধে নানা প্রতিবাদও হয়েছে।[৫] চীনা সরকার পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলে যে এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা চালু হবার পর তিব্বতের অর্থনৈতিক জীবনব্যবস্থার অনেক উন্নতি ঘটেছে।[৬]
১৯৮৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকার দ্বিতীয় জাতীয় কর্মজীবী সম্মেলনের আয়োজন করে, এবং ঐ একই বছর তিব্বত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।[৩] ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিব্বতে ৬টি উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল। ১৯৮০ সালে জাতীয় উচ্চতর শিক্ষা প্রবেশিকা পরীক্ষা চালু করা হলে প্রথম বছর এ অঞ্চল থেকে মাত্র ১০% তিব্বতীয় কোটা পূরণ করতে পারে, যদিও তারাই এই অঞ্চলের জনসংখ্যার ৯৭% ছিল। ১৯৮৪ সালে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিগত পরিবর্তনের ফলে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গৃহীত হয়। ২০০৮ সালে জাতীয় কলেজ প্রবেশিকা পরীক্ষাতে (ন্যাশনাল কলেজ এন্ট্রান্স এক্সামিনেশন বা এনসিইই) অংশ্রগ্রহণকারী জাতিগত তিব্বতীয়দের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪২৪৮-এ, যার ১০২১১ জন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ লাভ করে। এর ফলে জাতিগত তিব্বতীয়দের শতকরা অনুপাত দাঁড়ায় ৬০%-এ।[৭]
টেমপ্লেট:গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের শিক্ষাব্যবস্থা টেমপ্লেট:তিব্বত সম্পর্কিত বিষয়সমূহ