তীব্র শ্বাসকষ্টমূলক রোগলক্ষণসমষ্টি | |
---|---|
প্রতিশব্দ | Respiratory distress syndrome (RDS), adult respiratory distress syndrome, shock lung |
তীব্র শ্বাসকষ্টমূলক রোগলক্ষণসমষ্টিতে (এআরডিএস) আক্রান্ত একজন রোগীর বুকের রঞ্জনরশ্মি চিত্র। | |
বিশেষত্ব | নিবিড় পরিচর্যামূলক চিকিৎসাবিজ্ঞান |
লক্ষণ | স্বল্প দৈর্ঘ্যের শ্বাস নেওয়া, দ্রুত শ্বাস নেওয়া, ত্বকের রং নীলচে হয়ে যাওয়া[১] |
রোগের সূত্রপাত | এক সপ্তাহের মধ্যে[১] |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | PaO2/FiO2 অনুপাত ৩০০ মিলিমিটার মার্কারি চাপের নিচে হলে[১] |
পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয় | হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া[১] |
আরোগ্যসম্ভাবনা | মৃত্যুর সম্ভাবনা ৩৫% থেকে ৫০%[১] |
সংঘটনের হার | প্রতি বছর ৩০ লক্ষ[১] |
তীব্র শ্বাসকষ্টমূলক রোগলক্ষণসমষ্টি বলতে এক ধরনের সঙ্কটজনক শ্বাসযন্ত্রীয় (ফুসফুসীয়) বিকলাবস্থাকে বোঝায়, যা ফুসফুসের প্রায় সর্বত্র জুড়ে দ্রুততার সাথে প্রদাহের সূত্রপাতের কারণে সৃষ্ট হয়।[১] একে ইংরেজিতে অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম (ইংরেজি: Acute respiratory distress syndrome) বা সংক্ষেপে এআরডিএস (ARDS) বলা হয়। এই রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, দ্রুত শ্বাস নেওয়া, এবং ত্বকের রং নীলচে হয়ে যাওয়া। প্রায়ক্ষেত্রেই এই রোগ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের জীবনের মান অনেকাংশে হ্রাস পায়।
তীব্র শ্বাসকষ্টমূলক রোগলক্ষণসমষ্টিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাব্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে জীবাণুদূষণ, অগ্ন্যাশয় প্রদাহ, মারাত্মক আঘাত, ফুসফুস প্রদাহ (নিউমোনিয়া), এবং ফুসফুসীয় অভিশ্বসন।[১] শরীরের বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ স্বাভাবিক কার্যপ্রক্রিয়া ব্যহত হওয়া ফুসফুসের এই প্রাণঘাতী জটিলতা সৃষ্টির জন্য দায়ী। এই কার্যপ্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে রয়েছে, ফুসফুসের অভ্যন্তরে থাকা অতিক্ষুদ্র বায়ুস্থলীগুলির প্রাচীরের কোষগুলোর গণহারে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, ফুসফুসীয় পৃষ্ঠতল সক্রিয়কারকের অকার্যকারিতা, শরীরের অনাক্রম্যতন্ত্র অতিমাত্রায় সক্রিয় হওয়া, এবং শরীরের রক্ত জমাট বাঁধার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অকার্যকারিতা।[২] শরীরের অতিগুরুত্বপূর্ণ এসব অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে অস্বাভাবিকতার ফলে ফুসফুসের অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড আদান-প্রদানের ক্ষমতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। উদ্বুদ্ধ অক্সিজেনের অনুপাত (PaO2/FiO2 অনুপাত) ৩০০ মিলিমিটার মার্কারি চাপের (mmHg) নিচে থাকলে এবং একই সাথে ধনাত্মক প্রান্তীয় নিঃশ্বসন চাপ বা পিইইপি-র মাত্রা ৫ সেন্টিমিটার পানি চাপের (cmH2O) বেশি হলে রোগী তীব্র শ্বাসকষ্টমূলক রোগলক্ষণসমষ্টিতে (এআরডিএস-এ) আক্রান্ত হিসেবে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। তবে এই মাত্রা নির্ণয়ের সময় রোগীর যদি হৃৎপিণ্ড সংক্রান্ত সমস্যার কারণে ফুসফুসীয় জলসঞ্চয় বা শোথ সৃষ্টি হয় তবে সেই সংক্রান্ত চাপকে বিবেচনায় এনে তা হিসাব থেকে অবশ্যই বাদ দিতে হবে।[৩]
বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ৩০ লক্ষেরও বেশি মানুষ তীব্র শ্বাসকষ্টমূলক রোগলক্ষণসমষ্টিতে বা এআরডিএস-এ আক্রান্ত হয়।[১] সর্বপ্রথম ১৯৬৭ সালে এই শারীরিক জটিলতার কথা বর্ণনা করা হয়। বর্ণনার প্রথম দিকে সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নবজাতকের শ্বাসকষ্টমূলক রোগলক্ষণসমষ্টি (ইনফ্যান্ট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম Infant Respiratory Distress Syndorme) থেকে এটিকে আলাদা করতে এর নাম প্রাপ্তবয়স্ক শ্বাসকষ্টমূলক রোগলক্ষণসমষ্টি (অ্যাডাল্ট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম Adult Respiratory Distress Syndorme) রাখা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে আন্তর্জাতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে "অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম"-কে সবচেয়ে প্রযোজ্য ইংরেজি পরিভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়, কারণ সকল বয়সের ব্যক্তিই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।[৪] শিশুদের ক্ষেত্রে এবং রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে এই রোগ নির্ণয়ের জন্য অবস্থানভেদে বিভিন্ন রকম মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়।[৩]
তীব্র শ্বাসকষ্টমূলক রোগলক্ষণসমষ্টিতে আক্রান্তদের সামগ্রিক ফলাফল খুব ভালো নয়। এই রোগে মৃত্যুবরণের হার প্রায় ৪০%।[৫]
শ্রেণীবিন্যাস | |
---|---|
বহিঃস্থ তথ্যসংস্থান |