তুগরা (উসমানীয় তুর্কি: طغرا tuğrâ) উসমানীয় সুলতানদের ক্যালিগ্রাফিক মনোগ্রাম, সিল বা স্বাক্ষর যা বিভিন্ন সরকারি দলিল ও চিঠিতে ব্যবহার হত। এছাড়াও শাসনামলে মুদ্রায় তা অঙ্কিত থাকত। গুরুত্বপূর্ণ দলিলের জন্য সুন্দর কারুকাজ করা তুগরা তৈরী করা হত। এসব নিদর্শন উসমানীয় যুগের শিল্পের চিহ্ন।
সুলতানের শাসনের শুরুতে তুগরার নকশা প্রণয়ন করা হত। দরবারের ক্যালিগ্রাফার বা নিশানচি লিখিত দলিলে তা অঙ্কন করতেন। প্রথম তুগরা প্রথম ওরহানের সময় ব্যবহার হয়। প্রথম সুলাইমানের সময় তা ধ্রুপদি রূপ লাভ করে।[১]
প্রাচীন মিশরের কারটুশ ও ব্রিটিশ রাজার রয়েল সাইফারের মত তুগরা কাজ করত। প্রত্যেক উসমানীয় সুলতান তাদের নিজস্ব তুগরা ব্যবহার করতেন।
তুগরার নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর বাম দিকে দুইটি প্যাচ, মাঝখানে তিনটি উলম্ব রেখা ও ডানদিকে দুইটি বর্ধিত রেখা থাকে। মূল লেখা নিচে লেখা হয়। এর প্রত্যেকটি উপাদানের আলাদা অর্থ রয়েছে। এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে সহজেই তুগরা শনাক্ত করা যায়।
নিচের অংশে সুলতানের নাম লেখা থাকে, একে সেরে বলা হয়। যুগের উপর নির্ভর করে এই নাম সরল হতে পারে যেমন "ওরহান, উসমানের পুত্র" এভাবে। ১৩২৬ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম তুগরায় এভাবে লেখা ছিল। পরের দিকে সম্মানসূচক পদবি ও দোয়া তুগরায় যোগ করা হয়।
বামদিকের প্যাচগুলোকে বলা হয় বেয়জে। আরবি "বাইদা" অর্থাৎ ডিম থেকে এই নাম এসেছে। তুগরা নকশার কিছু ব্যাখ্যা অনুযায়ী বেয়জেগুলো দ্বারা সুলতানের দেখা দুটি সাগরকে নির্দেশ করে। এর মধ্যে বাইরের বড় প্যাচটি ভূমধ্যসাগর ও ভেতরের ছোট প্যাচটি কৃষ্ণসাগরের নির্দেশক।
উলম্ব রেখাগুলোকে বলা হয় তুগ বা পতাকাদন্ড। এই তুগগুলো স্বাধীনতা নির্দেশ করে। তুগের উপর দিয়ে অতিক্রম করা ইংরেজি S আকারের লাইনকে বলা জুলফে। তুগের শীর্ষসহ এগুলো দ্বারা পূর্ব থেকে পশ্চিমে বয়ে যাওয়া বাতাস নির্দেশ করে যা উসমানীয়দের উসমানীয়দের অগ্রযাত্রার নির্দেশক।
ডানদিকের বর্ধিত রেখাকে হানসের বলা হয় যা দ্বারা শক্তি ও ক্ষমতার প্রতীক তলোয়ার বোঝানো হয়।
তুগরা মূলত উসমানীয় সুলতানদের ক্ষেত্রে দেখা গেলেও অন্যান্য তুর্কি রাজ্য যেমন কাজান খানাত প্রভৃতিতে কখনো কখনো এর ব্যবহার হত। পরবর্তীতে রাশিয়ার তাতাররা তুগরা ব্যবহার করত।
মুঘল সাম্রাজ্য তার ক্যালিগ্রাফিক প্রতীকের ব্যবহারের কারণে পরিচিত ছিল। মুঘল তুগরাগুলো বৃত্তাকার হত এবং এর শীর্ষেও তিনটি রেখা থাকত।