২০০৯সালে পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুসারে, তুর্কমেনিস্তানের ৯৩.১% ব্যক্তি মুসলিম।[১] ঐতিহ্যগতভাবে, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান এবং আফগানিস্তানের লোকেরা সুন্নি মুসলিম হয়। শিয়া মুসলিমদের সংখ্যা তুর্কমেনিস্তানে বেশি নয়। শিয়া মুসলিমরা আজারবাইজান এবং কুর্দি জাতিকে অনুসরণ করে। বেশিরভাগ তুর্কিলোক নিজেদেরকে মুসলিম হিসেবে পরিচিতি দেয় এবং ইসলামকে তাদের সংস্কৃতির অংশ বলে মনে করে।
মুসলিম বিজয়ের সময় তুর্কমেনিস্তানে ইসলামের আগমন ঘটে, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় রাশিদুন খিলাফত উমর ইবনুল খাত্তাব এবং উসমান ইবন আফ্ফান দ্বারা যা সংঘটিত হয়েছিল।
তুর্কি লোকদের মাঝে একটি পবিত্র জাতি রয়েছে যাকে "ওবলাত" বলা হয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন ওবলাত হলো পূর্ব পুরুষদের করা সুফিবাদ। তাদের ধর্ম মতে, প্রতিটি জাতি হলো একজন খুলাফায়ে রাশেদীনের মাধ্যমে নবী মুহাম্মদের উপর অবহিত। তাদের এই বিশ্বাস ও ওবলাতের বিভিন্ন আধ্যাত্মিক প্রদর্শনের জন্য তুর্কি লোকেরা ওবলাতদের পবিত্র বলে গণ্য করে। আঠারো এবং উনিশ শতকে, ওবলাত জাতি তুর্কমেনিস্তানেে ছোট ছোট দলে ছড়িয়ে পড়ে। তারা বিভিন্ন আয়োজনে অংশ নিত ও আশীর্বাদ করত এবং তারা বিভিন্ন জাতির মাঝে সালিশ হিসেবে কাজ করত। ওবলাতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে কিছু কর্তৃপক্ষ রয়েছে। অনেক তুর্কিলোক যাদের মাঝে আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে, তাদের পূর্বপুরুষ ওবলাত মনে করা হয় এবং এটি বিশেষ কিছু নয়।
সোভিয়েত যুগে, সকল ধর্মীয় বিশ্বাসকে কুসংস্কার এবং অতীতের ঘটনা দ্বারা বিভিন্ন দল আক্রমণ চালায়। বেশিরভাগ ধর্মীয় বিদ্যালয় ও শিক্ষাব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং একটি বিশাল সংখ্যক মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কেন্দ্রীয় এশিয়ায় ইসলাম প্রচারের জন্য তাশখন্দকে সদর দপ্তর করে একটি প্রশাসনিক মুসলিম বোর্ড গঠন করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, মুসলিম বোর্ডটি ইসলাম প্রচারের একটি যন্ত্র হিসেবে কাজ করে। নাস্তিকতা ধর্মীয় উন্নয়নে বাধা তৈরি করে এবং তুর্কি লোকদের আন্তর্জাতিক মুসলিম সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে। কিছু ধর্মীয় নীতি, যেমন মুসলিম দাফন এবং পুরুষদের সুন্নতে খৎনা সোভিয়েত যুগেও পালন করা হত, কিন্তু গ্রাম্য এলাকায় ধর্মীয় বিশ্বাস, জ্ঞান এবং নীতি লোক রীতি হিসেবে স্থির ছিল, যা ইসলামের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ছিল না।
বর্তমান সরকার ইসলামকে বিশেষ গঠনে পর্যালোচনা করে, যা সোভিয়েত সময় থেকে নেয়া। তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানের মুসলিম ধর্মীয় বোর্ড মিলে মাভারান্নাহর মুসলিম ধর্মীয় বোর্ড গঠন করেছে। মাভারান্নাহর বোর্ডটি তাশকেন্তে গঠিত এবং তুর্কমেনিস্তানে ধর্মীয় নেতারা এটিতে অবদান রাখে।
বেশিরভাগ তুর্কি লোক নিয়মিত মসজিদে যায় না এবং তাদের আনুগত্য সবার সামনে প্রকাশ করে না। কিন্তু কিছু ইতিহ্য যেমন, বিয়ে, দাফন ও কিছু জাতীয় কাজ তারা সকলের সামনে করে।[২] যদিও, ১৯৯০ সাল থেকে, সোভিয়েত আইনে কিছু ইতিহ্যগত বস্তু ফিরিয়ে আনার কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি সাপারমুরাত নিয়াজব সরকারি স্কুলগুলোতে ইসলামের প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। আরও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সৌদি আরব, কুয়েত এবং তুরস্কের সাহায্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। আরবি ভাষায় কুরআন, হাদিস ও ইসলামী ইতিহাসের সাহায্যে স্কুল ও মসজিদে ইসলামের শিক্ষা প্রধান করা হয়। তুর্কমেনিস্তানের সরকার ধর্মীয় নিরপেক্ষ এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতা দিয়ে থাকে, যা ১৯৯১ সালের আইনে উল্লেখ করা হয়েছ। উপরন্তু, যিনি ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে থাকেন তাকে নিয়োগ করা বা বরখাস্ত করার অধিকার সরকারের রয়েছে। স্বাধীনতার পর, তুর্কমেনিস্তানে ইসলামী নেতৃত্বের অগ্রগতি হয়েছে, কিন্তু বেশিরভাগ অংশ এখনো সরকারের আওতায়।
অপরদিকে, কিছু মুসলিম নেতৃবিন্দ সরকারের এই ধর্ম নিরপেক্ষতাকে বিরোধ করে। বিশেষ করে সরকার যে সাম্যবাদী দল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে তার বিপক্ষে এই নেতারা কাজ করছে। সরকারি আওতার বাইরে কিছু নেতা ও শিক্ষক জনগণের ইসলামিক জ্ঞান বৃদ্ধি এবং সমাজে ইসলামের অবদানকে বৃদ্ধি করতে কাজ করছেন।