তুর্কমেনিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী | |
---|---|
![]() তুর্কমেনিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর প্রতীক | |
প্রতিষ্ঠাকাল | ২৭ জানুয়ারি ১৯৯২ |
সার্ভিস শাখা | শাখাসমূহ![]() ![]() ![]() স্বাধীন দল সীমান্ত বাহিনী অভ্যন্তরীণ বাহিনী ন্যাশনাল গার্ড |
প্রধান কার্যালয় | আশখাবাদ[১] |
নেতৃত্ব | |
সুপ্রিম কমান্ডার-ইন-চিফ | ![]() |
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী | লেফটেন্যান্ট জেনারেল বেগেঞ্চ গুন্দোগদিয়েভ |
চিফ অব দ্যা জেনারেল স্টাফ | কর্নেল আকমুরাদ আনামেদভ |
লোকবল | |
সেনাবাহিনীর বয়স | ১৮[২] |
বাধ্যতামূলকভাবে সৈন্যদলে নিয়োগ | ২৪ মাস (২০১২) |
সক্রিয় কর্মিবৃন্দ | ৩৬,৫০০ (৩৩,০০০ সেনাবাহিনী, ৩,০০০ বিমান বাহিনী, ৫০০ জন নৌবাহিনী) |
সংরক্ষিত কর্মিবৃন্দ | ১,০৮,০০০ (পুর্বের তথ্য)[৩] |
ব্যয় | |
বাজেট | ৮০০ মিলিয়ন ডলার (২০১৮) |
শতকরা জিডিপি | ৩.৬% [২] |
উদ্যোগ | |
বৈদেশিক সরবরাহকারী | ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() |
তুর্কমেনিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী (তুর্কমেনীয়: Türkmenistanyň Ýaragly Güýçleri ; অনানুষ্ঠানিকভাবে তুর্কমেন ন্যাশনাল আর্মি, তুর্কমেনীয়: Türkmenistanyň Milli goşun নামে পরিচিত) হলো তুর্কমেনিস্তানের জাতীয় সামরিক বাহিনী। এটি স্থল বাহিনী, বিমান বাহিনী এবং বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী, নৌবাহিনী এবং অন্যান্য স্বাধীন বাহিনী (বর্ডার ট্রুপস, ইন্টারনাল ট্রুপস এবং ন্যাশনাল গার্ড ইত্যাদি) নিয়ে গঠিত।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর, সোভিয়েত সশস্ত্র বাহিনীর তুর্কেস্তান মিলিটারি ডিস্ট্রিক্টের উল্লেখযোগ্য বিভাগ তুর্কমেনের মাটিতে থেকে যায়, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি মোটর রাইফেল বিভাগ ছিল। জুন ১৯৯২ সালে, নতুন রাশিয়ান সরকার তুর্কমেনিস্তানের সাথে একটি দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তিতে নতুন তুর্কমেন সরকারকে তার নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী তৈরি করতে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু শর্ত দেওয়া হয় যে তাদের যৌথ কমান্ডের অধীনে রাখা হবে। [৬]
চুক্তিতে বলা হয়েছিল যে, রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা সীমান্ত সেনা এবং বিমান বাহিনী এবং বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলি ছাড়াও, সমগ্র সশস্ত্র বাহিনী যৌথ কমান্ডের অধীনে থাকবে, যা ধীরে ধীরে দশ বছরের মধ্যে তুর্কমেনিস্তানের একক কমান্ডে চলে যাবে।
সেন্টার ফর অ্যানালাইসিস অফ স্ট্র্যাটেজিস অ্যান্ড টেকনোলজিসের মস্কো ডিফেন্স ব্রিফ বলেছে যে ১৯৯২-৯৩ সালে তুর্কমেনিস্তান প্রাক্তন ৫২তম সোভিয়েত সেনাবাহিনীর উপর ভিত্তি করে একটি ছোট জাতীয় সশস্ত্র বাহিনী তৈরি করার চেষ্টা করেছিল। তবে এ প্রচেষ্টা রাশিয়ার সমর্থনের উপর নির্ভরশীল ছিল। প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে, ৩০০টি সংগঠন ও ইউনিটের মধ্যে, ২০০টি তুর্কমেনিস্তানের কমান্ডে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল, ৭০টি রাশিয়ার এখতিয়ারের অধীনে ছিল এবং ৩০টি প্রত্যাহার বা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছিল। [৭]
১৯৯৪ সালে, তুর্কমেনিস্তানের চিফ অফ স্টাফ এবং প্রথম প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী ছিলেন মেজর জেনারেল আন্নামুরাত সোলতানভ, তিনি কিউবা এবং আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৯৩ সালের একটি দ্বিপাক্ষিক সামরিক সহযোগিতা চুক্তির অধীনে, প্রায় ২,০০০ রুশ অফিসার চুক্তির ভিত্তিতে তুর্কমেনিস্তানে কাজ করেছিল। এছাড়া সীমান্ত বাহিনীতে ১৯৯৫ সালে প্রায় ৫,০০০ সেনা যৌথ রাশিয়ান এবং তুর্কমেনিস্তানি কমান্ডের অধীনে ছিল। ১৯৯৬ সালের মাঝামাঝি প্রায় ১১,০০০ রাশিয়ান সৈন্য তুর্কমেনিস্তান ত্যাগ করেন।' [৮]
তুর্কমেনিস্তানের সামরিক বাহিনীকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমস্ত প্রাক্তন প্রজাতন্ত্রের মধ্যে সবচেয়ে নিরপেক্ষ বলে মনে করা হয়। দেশের সামরিক বাহিনী ১৯৯২ সালের মে মাসে তাসখন্দ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। [৯] ১৯৯৪ সালে তুর্কমেনিস্তানের প্রথম সামরিক মতবাদ নিরপেক্ষতা কার্যকর করার জন্য গৃহীত হয়েছিল। [১০] ১৯৯৬ সালের আফগান যুদ্ধের ক্ষেত্রেও তুর্কমেনিস্তান নিরপেক্ষ নীতির উপর জোর দিয়েছিল। এটি তালেবান এবং আফগান সরকার উভয়ের সাথেই সমান সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। [১১] ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর, মার্কিন সমর্থিত জোট সৈন্যরা তুর্কমেন ভূখণ্ডে অবস্থান নিতে পারে নি। সে সময় তুর্কমেন রাষ্ট্রপতি সাপারমুরাত নিয়াজভ জার্মান সরকারকে বিমান সংরক্ষণের জন্য একটি ঘাঁটি প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন, এই যুক্তিতে যে দেশটি নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করতে চায়।
জেনস ইনফরমেশন গ্রুপ ২০০৯ সালে বলেছিল যে "তুর্কমেনিস্তানের সামরিক বাহিনী, মধ্য এশিয়ার মান অনুযায়ীও, দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণ এবং কম অর্থায়নের স্বীকার।" [১২]
প্রথম মেয়াদে অভিষিক্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরে, রাষ্ট্রপতি গুরবাঙ্গুলী বার্দিমুহামেদভ দেশের দ্বিতীয় সামরিক মতবাদ ঘোষণা করেন। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নিরপেক্ষতা নীতির ঘোষণা দেন এবং বলেন যে আফগানিস্তানের সাথে সীমান্ত একটি "জাতীয় নিরাপত্তা অগ্রাধিকার" হবে। ২০১৬ সালে, প্রেসিডেন্ট বারদিমুহামেদভ একটি নতুন সামরিক মতবাদ গ্রহণ করেছিলেন। [১৩] নভেম্বর ২০১৮ সালে, রাষ্ট্রপতি বারদিমুহামেদভ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা পরিষদের একটি অধিবেশনে এটি পুনর্ব্যক্ত করেন। [১৪]
তুর্কমেনিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় হল সশস্ত্র বাহিনীর একটি সরকারি সংস্থা যা তুর্কমেনিস্তানে প্রতিরক্ষা নীতি বাস্তবায়নের নির্বাহী সংস্থা। এটি রুশ সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তায় ১৯৯২ সালের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটির মূল কর্মচারীদের বেশিরভাগই ছিলেন তুর্কমেন এসএসআর কমিউনিস্ট পার্টির অবসরপ্রাপ্ত সোভিয়েত কর্মকর্তা।
তুর্কমেন সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অফ দ্য জেনারেল স্টাফ হলেন সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ পদমর্যাদার সামরিক কর্মকর্তা, তিনি সামরিক বাহিনীর অপারেশনাল কমান্ড এবং এর তিনটি প্রধান শাখা পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত।
তুর্কমেনিস্তানের আঞ্চলিক সশস্ত্র বাহিনীকে ৫টি অঞ্চলে দেশের প্রশাসনিক বিভাগ অনুসারে ৫টি সামরিক অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে:[১৫][১৬]
প্রতিটি সামরিক জেলায় জেলা সামরিক কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণ সংস্থা, সামরিক ইউনিট, পৃথক সামরিক ইউনিট এবং সাবইউনিট, এট্রাপদের সামরিক কমিশনার এবং এট্রাপ অধিকার সহ শহরগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তুর্কমেনিস্তানের টেরিটোরিয়াল ডিফেন্স ট্রুপস আঞ্চলিক স্তরেও কাজ করে।
তুর্কমেন স্থল বাহিনী সোভিয়েত সশস্ত্র বাহিনী তুর্কেস্তান মিলিটারি ডিস্ট্রিক্ট থেকে বিভিন্ন মোটর রাইফেল ডিভিশনের উত্তরাধিকারসূত্রে পায়। এটি এই শাখার ভিত্তি তৈরি করতে সহায়তা করেছে। তাদের মধ্যে কিজিল-আরভাত এ ৫৮ তম মোটর রাইফেল ডিভিশন অন্তর্ভুক্ত ছিল। [১৭] বর্তমানে স্থলবাহিনীর মধ্যে ২য়, ৩য়, ১১তম এবং ২২তম মোটর রাইফেল ডিভিশন রয়েছে। [১৮] ১১ তম মোটর রাইফেল ডিভিশন "সুলতান সানজার" হল প্রাক্তন সোভিয়েত ৮৮ তম মোটর রাইফেল ডিভিশন, যার সদর দপ্তর কুশকা/সেরহেতাবাতে।
এ বাহিনীর যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ২,০০০, ট্যাঙ্কের সংখ্যা প্রায় ৭০০ এবং আর্টিলারি পিসেসের সংখ্যা প্রায় ৫৬০। [১৯] তুর্কমেন স্থল বাহিনীর সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে ৭০২টি টি-৭২ ট্যাংক,[২০] এবং ১০টি টি-৯০ ট্যাংক, যা ২০০৯ সালে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলারে ক্রয় করা হয়েছিল। [২১][২২]
২০১২ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ বলেছিল যে তুর্কমেন বিমানবাহিনীর প্রায় ৩,০০০ জন সদস্য রয়েছে এবং ৯৪টি যুদ্ধ বিমান রয়েছে। [২৩] এটির মোট বিমানের সংখ্যা প্রায় ১২০টি। [১৯] এতে বলা হয়েছে, এ বাহিনীর দুই ধরনের প্রায় ২৪টি ফাইটার/গ্রাউন্ড অ্যাটাক স্কোয়াড্রন রয়েছে।
তুর্কমেন নৌ বাহিনী বর্তমানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দ্বারা পরিচালিত হয়। এটি প্রায় ৭০০ জন সেনা সদস্য এবং ষোলটি টহল বোট নিয়ে গঠিত। [২৪] কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিস, ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের উদ্ধৃতি দিয়ে, ছয়টি টহল নৌযানের তথ্য জানিয়েছে। [১৯]
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ২০০৭ সালে রিপোর্ট করেছিল যে তুর্কমেনিস্তান একটি নৌবাহিনী গঠন করতে চায়। শুরুতে এটির একটি ইউএসসিজি পয়েন্ট ক্লাস কাটার এবং পাঁচটি কালকান-শ্রেণির টহল জাহাজ সহ তুর্কমেনিবাশিতে একটি ছোট ঘাঁটি ছিল। [২০]
দেশটি ২০০১ সালে চারটি মিসাইল বোট ক্রয় করে [১৯]
২০১২ সালে, তুর্কমেনিস্তান ক্যাস্পিয়ান সাগরে তার প্রথম নৌ মহড়ার ঘোষণা দেয় যা সেপ্টেম্বরের শুরুতে আয়োজন করা হয়েছিল। মহড়াটিকে হাজার-২০১২ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছিল (হাজার ক্যাস্পিয়ান সাগরের তুর্কি নাম), এই কৌশলগত অনুশীলনটি সমুদ্রের একটি বিতর্কিত অংশে প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র নিয়ে আজারবাইজানের সাথে কিছুটা উত্তেজনার পরে করা হয়েছিল। [২৫]
স্পেশাল টাস্ক ফোর্স "তুর্কমেন এডারমেন" (বাংলায় সাহসী তুর্কমেন) হল একটি যৌথ সামরিক ইউনিট যা সশস্ত্র বাহিনী এবং জাতীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যেমন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, রাজ্য সীমান্ত পরিষেবা এবং জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রনালয় থেকে তৈরি। [২৬]
প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিস ( তুর্কমেনীয়: Prezidentiniň howpsuzlyk gullugy) রাষ্ট্রপতির সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে নিয়োজিত।
এটি ১৯৯০ সালের নভেম্বরে প্রতিষ্ঠিত, এটি তুর্কমেনিস্তানের রাষ্ট্রপতির একটি সরাসরি রিপোর্টিং সংস্থা এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অংশ নয়। [২৭] বিদেশী দেশগুলিতে রাষ্ট্রীয় সফরের সময়, পরিষেবাটি রাষ্ট্রপতির সুরক্ষার জন্য কমপক্ষে ১০ জন সদস্য সরবরাহ করে। [২৮] এ বাহিনী বর্তমানে ২,০০০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত। [২৯]
তুর্কমেনিস্তানের স্টেট বর্ডার সার্ভিস হল দেশটির সরকারের একটি জনসেবা বিভাগ এবং এটি তুর্কমেনিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত। পরিষেবাটির প্রধান কাজগুলির হলো দেশের জাতীয় সীমান্ত রক্ষা করা, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ এবং মাদক পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা, অবৈধ অভিবাসন এবং মানব পাচারকে দমন করা এবং কাস্পিয়ান সাগরে তেল ও গ্যাস প্ল্যাটফর্ম এবং পাইপলাইনগুলি রক্ষা করা। এ পরিষেবার প্রধান কমনওয়েলথ অফ ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেটস (সিআইএস) এর বর্ডার গার্ড কমান্ডার কাউন্সিলের সদস্য। [৩০]
অভ্যন্তরীণ সৈন্যরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এটি আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের পরিপ্রেক্ষিতে স্থিতাবস্থা কার্যকর করার জন্য কাজ করে। এটি তুর্কমেন ন্যাশনাল পুলিশকে তার দৈনন্দিন কাজকর্মে সাহায্য করে। [৩১]