তুষার কান্তি চক্রবর্তী | |
---|---|
জন্ম | পশ্চিমবঙ্গ, ভারত | ১০ এপ্রিল ১৯৫৭
জাতীয়তা | ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | |
পরিচিতির কারণ | অপ্রাকৃত অ্যামিনো অ্যাসিড, চক্রীয় পেপটাইড এবং জৈবিকভাবে সক্রিয় প্রাকৃতিক পণ্যগুলির সংশ্লেষণ |
পুরস্কার |
|
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | |
প্রতিষ্ঠানসমূহ |
|
ডক্টরাল উপদেষ্টা |
তুষার কান্তি চক্রবর্তী (জন্ম ১৯৫৭) একজন ভারতীয় জৈব রসায়নবিদ এবং ভারতীয় বিজ্ঞান সংস্থার অধ্যাপক।[১] তিনি কেন্দ্রীয় ঔষধি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এবং ভারতীয় রাসায়নিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রধান বিজ্ঞানী হিসাবে কাজ করেছেন।[২] অভূতপূর্ব ম্যাক্রোচক্রীয় প্রণালী আবিষ্কারের জন্য তিনি পরিচিত।[৩] তিনি ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমি,[৪] ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্স, ইন্ডিয়া,[৫] এবং ভারতীয় বিজ্ঞান একাডেমীর নির্বাচিত ফেলো।[৬] বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য ভারত সরকারের শীর্ষস্থানীয় সংস্থা বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, ২০০২ সালে, তাঁকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে শান্তি স্বরূপ ভটনাগর পুরস্কারে ভূষিত করেছে। এটি একটি সর্বোচ্চ ভারতীয় বিজ্ঞান পুরস্কার। রাসায়নিক বিজ্ঞানে তাঁর অবদানের জন্য তিনি এই পুরস্কারটি পেয়েছিলেন॥[৭]
তুষার কান্তি চক্রবর্তী, ১৯৫৭ সালের ১০ই এপ্রিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ১৯৭৭ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে, (তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে) স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনা (বিএসসি, সাম্মানিক) সম্পন্ন করেছিলেন। তারপরে তিনি স্নাতকোত্তর করার জন্য কানপুরের আইআইটিতে যোগ দেন। সেখানে ১৯৭৯ সালে তাঁর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন হয়েছিল।[৮] আইআইটি কানপুরে তিনি শান্তি স্বরূপ ভটনাগর পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানী শ্রীনিবাসন চন্দ্রশেখরনের নির্দেশনায় ডক্টরাল গবেষণা চালিয়ে যান এবং ১৯৮৪ সালে পিএইচডি অর্জন করেন। তারপরে তিনি পেন্সিল্ভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন, যেখানে তিনি কে সি নিকোলাউয়ের গবেষণাগার থেকে ডক্টরাল পরবর্তী পড়াশোনা করেছিলেন। [৪] তিনি ১৯৮৭ সালে ভারতে ফিরে আসেন এবং ভারতীয় রাসায়নিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে সি-পদমর্যাদার বিজ্ঞানী হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। তিনি দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এই প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, মাঝে শুধু দুটি বিরতি পড়েছিল। প্রথমবারে, ১৯৮৯ সালে, ছয় মাসের জন্য, তিনি বিনিময় পরিদর্শক হিসাবে মস্কোর শেমিয়াকিন-ওভচিনিকভ ইনস্টিটিউট অফ বায়ো অর্গানিক কেমিস্ট্রি তে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয়বারে, ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল এই দুই বছরের জন্য স্ক্রিপস গবেষণা প্রতিষ্ঠানে একজন পরিদর্শক বিজ্ঞানী হিসাবে তিনি গিয়েছিলেন। ভারতীয় রাসায়নিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে, তিনি সি-পদমর্যাদার বিজ্ঞানী থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে জি-পদমর্যাদার প্রধান বিজ্ঞানী হয়ে গিয়েছিলেন। এরপর, ২০১৩ সালে অবসর গ্রহণ করা পর্যন্ত, তিনি কেন্দ্রীয় ঔষধি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক নিযুক্ত হন।[৮] অবসর গ্রহণের পরে, তিনি ২০১৪ সাল থেকে ভারতীয় বিজ্ঞান সংস্থায় অধ্যাপক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।[২]
চক্রবর্তীর গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল অপ্রাকৃত অ্যামিনো অ্যাসিড, চক্রীয় পেপটাইড এবং জৈবিকভাবে সক্রিয় প্রাকৃতিক উপাদানগুলির নকশাকরণ এবং সংশ্লেষণ।[৯] নতুন অ্যামাইড-সংযোগযুক্ত আণবিক পদার্থের উদ্ভাবনের জন্য তাঁকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। এগুলি হল শর্করাভিত্তিক অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ক্যান্সারবিরোধী যৌগ, এর মধ্যে আছে অ্যাম্ফিডাইনোলয়েড, এপোথিলোন, ক্রোকাসিন এবং ক্লাভোসোলাইড। তিনি গ্লাইকোপেপটাইড জীবাণু-প্রতিরোধী (ভ্যানকোমাইসিন এবং টিকোপ্ল্যানিন) এবং শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার ক্রিয়াকলাপে বাধক (এফকে ৫০৬, র্যাপামাইসিন, স্টেভাসটেলিন এবং এন্টাসকমিসিন) সংশ্লেষ করেছিলেন।[৪] তিনি সহকর্মী-পর্যালোচিত বেশ কয়েকটি নিবন্ধের মাধ্যমে তাঁর গবেষণাগুলি প্রকাশ করেছিলেন।[১০] বিজ্ঞানের নিবন্ধগুলির একটি অনলাইন আধার, রিসার্চগেট, এর মধ্যে ২৪৩টি তাদের তালিকাভুক্ত করেছে।[১১] তিনি গবেষণারত বিভিন্ন ডক্টরাল ছাত্রদেরও পরামর্শ দিয়েছেন।[৪]
১৯৯১ সালে চক্রবর্তী দুটি পুরস্কার পেয়েছিলেন, একটি হল অন্ধ্র প্রদেশের একাডেমি অফ সায়েন্সেসের পক্ষ থেকে এবং দ্বিতীয়টি বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিলের (সিএসআইআর) পক্ষ থেকে তরুণ বিজ্ঞানী পুরস্কার।[২] আবার, ২০০২ সালে, সিএসআইআর তাঁকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে শান্তি স্বরূপ ভটনাগর পুরস্কারে ভূষিত করেছিল, এটি অন্যতম শীর্ষ ভারতীয় বিজ্ঞান পুরস্কার।[১২] এর মধ্যেই, ১৯৯৯ সালে, তিনি ভারতীয় রসায়ন সমিতির ডঃ বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছিলেন। ২০০২ সালে তিনি আরও একটি পুরস্কার পেয়েছিলেন, কেমিক্যাল রিসার্চ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার ব্রোঞ্জ পদক।[১৩] তিনি ২০০৫ সালে অন্ধ্র প্রদেশ বিজ্ঞানী পুরস্কার এবং ইনোসেন্টিভ চ্যাম্পিয়ন পদক পেয়েছিলেন। ২০০৬ সালে তিনি নাসি-রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী পুরস্কার পেয়েছিলেন এবং এর তিন বছর পরে, তিনি মধ্য প্রদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পরিষদের পক্ষ থেকে বিজ্ঞানে জওহরলাল নেহেরু জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন।[২] তিনি ২০০০ সালে ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্স, ইন্ডিয়া দ্বারা তাদের ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন।[৫] ২০০৩ সালে তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান একাডেমির এবং [৬] ২০০৭ সালে ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমীর ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ২০০৮ সালের জে. সি. বোস জাতীয় ফেলোশিপের প্রাপক ছিলেন।[৪]