প্রকার | আসব |
---|---|
উৎপত্তির দেশ | মেক্সিকো |
উৎপত্তির অঞ্চল | হালিস্কো |
প্রবর্তন | ১৬শ শতাব্দী |
পরিমাণ অনুযায়ী অ্যালকোহল | ৩৮–৫৫% |
প্রমাণ (যুক্তরাষ্ট্র) | ৭৬°–১১০° |
রং | স্বচ্ছ, বাদামী বা সোনালী |
স্বাদ | মিষ্টি, ফলবৎ, মৃত্তিকাবৎ |
উপাদান | নীল আগাভে |
প্রকারভেদ | এক্সেলিয়া |
সংশ্লিষ্ট পণ্য | মেসকাল, বাকোনারা, রাইসিইয়া, পুলকে |
তেকিলা (স্পেনীয়: Tequila) হচ্ছে নীল আগাভে উদ্ভিদের রস গাঁজিয়ে সেটিকে পাতন করে প্রস্তুত একটি অ্যালকোহলীয় পানীয়। প্রথমদিকে এটি মেক্সিকোর হালিস্কো রাজ্যের গুয়াদালাহারার নিকটে তেকিলা নামক শহরে উৎপাদিত হত। নীল আগ্নেয় উঁচু মাটিতেই বিশেষত এই নীল আগাভে জন্মে। বিশ্বজুড়ে তেকিলা একটি জনপ্রিয় অ্যালকোহলীয় পানীয়।
তেকিলার সাথে পুলকে ও মেসকাল নামের আরও দুইটি পানীয়ের সম্পর্ক আছে। আজ থেকে ১ হাজার বছর আগে আসতেক (আজতেক) সভ্যতার লকের কিছু নির্দিষ্ট প্রকারের আগাভে বা মাগেই উদ্ভিদের রস গাঁজিয়ে দুগ্ধবর্ণ, খানিকটা সান্দ্র এক ধরনের হালকা ফেনাবিশিষ্ট পানীয় বানাতো। অন্যদিকে মেসকাল পানীয়টিকে কিছু নির্দিষ্ট প্রকারের আগাভে উদ্ভিদের রান্না করা মজ্জা থেকে প্রস্তুত করা হয়। তেকিলা হল মেসকালের একটি প্রকারভেদ, যা সম্পূর্ণভাবে নীল আগাভে উদ্ভিদ থেকে বানানো হয়। মেক্সিকোর বিদ্যমান আইনে শুধুমাত্র দেশটির কেন্দ্রভাগে অবস্থিত হালিস্কো রাজ্য এবং সীমিতভাবে গুয়ানাহুয়াতু, মিচুয়াকেন, নাইয়ারিত ও তামাউলিপাস অঞ্চলে সরকারের কড়া নজরদারিতে নির্দিষ্ট মানের ভিত্তিতে তেকিলা উৎপাদন করার অনুমতি রয়েছে। [১]
তেকিলা উৎপাদনের জন্য প্রথমে সাত থেকে চৌদ্দ বছর বয়সী আগাভে উদ্ভিদের শাঁসটিকে (যাকে স্থানীয় ভাষায় "পিনিয়া" বলে) বের করে সেটিকে ভাঁপে রান্না করা হয়, এরপর শাঁসটিকে পিষ্ট করলে আগুয়ামিয়েল ("মধুপানি") নামের রস বেরিয়ে আসে। এই আগুয়ামিয়েলকে আখের চিনি ও ইস্টের সাথে মিশিয়ে একাধিক দিন ধরে গাঁজানো হয়। এরপর গাঁজনকৃত রসটি তামার পাত্রে দুই বার পাতন করা হয়, ফলে এটিতে অ্যালকোহলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। প্রস্তুতকৃত তেকিলাতে অবশ্যই ৩৫-৫৫% অ্যালকোহল থাকতে হয়।[২] যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বিক্রির জন্য তেকিলায় কমপক্ষে ৪০% অ্যালকোহল থাকতে হয়। [৩]
২০০৪ সালে মেক্সিকো সরকার গুণমান নিয়ন্ত্রণের দোহাই দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওক কাঠের পিপার পরিবর্তে বোতলজাত করে তেকিলা রপ্তানি করার জন্য এক অধ্যাদেশ জারি করে এবং এই অধ্যাদেশের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মেক্সিকোর বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়। পরে ন্যাফটা সন্মেলনে মার্কিন রাষ্ট্রপতির অনুরোধে মেক্সিকোর রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশটি প্রত্যাহার করে নেন এবং মার্কিন গণমাধ্যম ঐ সন্মেলনকে তেকিলা সন্মেলন নাম দেয় ।
আগাভে উদ্ভিদ থেকে আগাভে পিনাস সংগ্রহ করা হয় (৭/৮ বছর বয়সী)। এই আগাভে উদ্ভিদের চাষ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ফসল তোলা সবই পুরোনো ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হয়, কোনও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় না। বেশি রোদের আলোর জন্য আগাভে উদ্ভিদ পশ্চিমমুখী করে রোপন করা হয়। এই আগাভে প্রথমে মাটির গর্তে পোড়ানো হয় পরে এটি পানির সাথে মিশিয়ে কলে পেষা হয়। এভাবে প্রথম এবং দ্বিতীয়বার মণ্ড থেকে নির্যাস পাতন করা হয় । প্রথমে ওককাঠের পিপায় পরে মরিচারোধী ইস্পাতের পিপায় রেখে দেওয়া হয় ।
সাধারণত তেকিলা ব্লাংকো (সাদা) এবং তেকিলা দোরাদো (সোনালী) --- এই দুই ধরনের তেকিলা বাজারে পাওয়া যায়। এর মধ্যে যে সব মার্কা বেশি পরিচিত সেগুলির মধ্যে আছে তেকিলা সানরাইজ, ক্যাকটাস, বর্ডার ক্রসিং, ক্যালিফোর্নিয়া স্কাই, ডিভাইন প্লেজার, দি এক্সপ্লোরার, গালফ অব মেক্সিকো, লা বোম্বা, মাফিয়া, নিউ ইয়র্ক স্কাই লাইন ।
পানকারীরা তেকিলায় চুমুক দেয়ার আগে স্পেনীয় ভাষায় "সালুদ" (অর্থাৎ "স্বাস্থ্য") বলেন।
বাজারের হোসে কুয়েরবো (José Cuervo) নামের তেকিলা একটি নামী মার্কা।
তেকিলা দিয়ে বানানো প্রায় প্রতিটি পানীয়ের সাথে ট্রিপলসেক নামে একটা মিষ্টি কড়া মদ যোগ করা হয়। ট্রিপলসেকের মুল উপাদান হল আখ।
মেক্সিকান সরকার তেকিলার জন্য যে সব উপাদান অনুমোদন দিয়েছে তার মধ্যে শূককীট নেই, কিন্তু সাধারণ শ্রেণীর তেকিলা যা হালিস্কো রাজ্যের অন্যান্য শহরে তৈরি হয়, সেখানে প্রতি বোতলে একটা করে শূককীট দেয়া হয়। আগাভে উদ্ভিদে এক ধরনের শূককীট পাওয়া যায় যা তেকিলা প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় মেল্টেড হয় এবং অনেকে মনে করে এইসব শূককীটের জন্যই তেকিলার স্বাদ অনেক বেশি। আসল আগাভে শূককীট দেখতে উজ্জ্বল প্রবাল বর্ণের, কিন্তু বোতলে দেয়ার কিছুদিন পর গোলাপী বর্ণ ধারণ করে। আবার কেউ কেউ সাদা শূককীট ব্যবহার করে। এই শূককীটকে ডুবো তেলে ভেজে ঝাল সালসা দিয়ে খাওয়া হয়।
মারগারিতা একটি তেকিলার সুরামিশ্রণ। এটি দুই ভাবে বানানো হয়; একটি বরফসহ সাধারণ প্রকার এবং অন্যটি যন্ত্রে তৈরী হিমায়িত মারগারিতা যা সাধারণত মেক্সিকান পানশালায় তৈরী হয়। পানশালায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের মানুষদের জন্য সঙ্গে লবণ দিয়ে তৈরী করে দেয়া হয়।