মেক্সিকো-তেনোচতিৎলান | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
১৩২৫–১৫২১ | |||||||
জাতীয় নৃবিজ্ঞান যাদুঘরে তেনোচতিৎলানের জেলা মন্দিরের নমুনা | |||||||
রাজধানী | তেনোচতিৎলান | ||||||
প্রচলিত ভাষা | নাওয়াতল | ||||||
ধর্ম | মেক্সিকা ধর্ম | ||||||
সরকার | রাজতন্ত্র | ||||||
ঐতিহাসিক যুগ | প্রাক-কলম্বীয় | ||||||
• প্রতিষ্ঠা | ১৩২৫ | ||||||
• বিলুপ্ত | ১৫২১ | ||||||
|
মেক্সিকো-তেনোচতিৎলান (স্পেনীয়: México-Tenochtitlan, স্পেনীয় উচ্চারণ: [ˈmexiko tenotʃˈtitɬan] () প্রাচীন )আজটেক আলতেপেতল (নগর-রাষ্ট্র) ও রাজধানী ছিল। সচরাচর স্থানটি তেনোচতিৎলান (ধ্রুপদী নাওয়াৎল্: Tenōchtitlan [tenoːt͡ʃˈtit͡ɬan]) নামে পরিচিতি পেয়ে আসছে। বর্তমানে এটি মেক্সিকো উপত্যকার টেক্সকোকো হ্রদ এলাকায় অবস্থিত। ২০ জুন, ১৩২৫ তারিখে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পঞ্চদশ শতকে বিস্তৃতভাবে গড়ে উঠা আজটেক সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পায়।[১] পরবর্তীতে ১৫২১ সালে স্পেনীয়রা এটি দখল করে নেয়।
এর স্বর্ণালী সময়ে প্রাক-কলম্বীয় আমেরিকায় সর্ববৃহৎ শহর ছিল। পরবর্তীকালে নতুন স্পেনের সুবেদারী প্রথায় কাবেসেরা হিসেবে পরিচিতি পায়। বর্তমানে তেনোচতিৎলানের ধ্বংসাবশেষ মেক্সিকো সিটির শহরতলীতে দেখতে পাওয়া যায়।
দ্বীপের নাওয়া আলতেপেতলের দুটির একটি হচ্ছে তেনোচতিৎলান। অন্যটি হচ্ছে তাতেলোকো।
প্রচলিত রয়েছে যে, তেনোচতিৎলান নামটি নাওয়াতল টেতল [ˈtetɬ] এবং নোকতলি [ˈnoːtʃtɬi] থেকে এসেছে। কিন্তু, ষোড়শ শতকের পাণ্ডুলিপি যা ব্যানক্রফট সংলাপ নামে পরিচিত, তাতে বলা হয়েছে যে, দ্বিতীয় স্বরবর্ণের অনুপস্থিতি রয়েছে। ফলে, এ শব্দের প্রকৃত উৎপত্তি রহস্য অনিশ্চিত রয়ে গেছে।[২]
পশ্চিম দিকে অগভীর টেক্সকোকো হ্রদ আছে। লাল রেখা বরাবর প্রধান দ্বীপের দক্ষিণাংশ হচ্ছে তেনোচতিৎলান।
তেনোচতিৎলান আনুমানিক ৮ থেকে ১৩.৫ বর্গকিলোমিটার (৩.১ থেকে ৫.২ বর্গমাইল) এলাকা নিয়ে গঠিত। অগভীর টেক্সকোকো হ্রদ-এর পশ্চিমাংশে এর অবস্থান।
স্পেনের বিজয়কালীন মেক্সিকো সিটি তেনোচতিৎলান ও টাতেলোকোর সমন্বয়ে গঠিত ছিল। শহরটি উত্তর থেকে দক্ষিণে, তাতেলোকোর উত্তর সীমান্তের জলাভূমি পর্যন্ত বিস্তৃতি ঘটেছে। ঐসময়ে মূলতঃ পশ্চিমাংশ অদৃশ্য ছিল। বর্তমান আভেনিদা বুকারেলিতে শহরটির সীমানা শেষ হয়।
মেক্সিকান সভ্যতায় তেনোচতিৎলান শহরের রাজধানী ছিল। ১৩২৫ সালে গঠিত এ রাজধানীতে মেক্সিকা জনগোষ্ঠী বসবাস করতো। মেক্সিকা সভ্যতায় রাজ্যের ধর্ম প্রাচীন ভবিষ্যদ্বাণীর মাধ্যমে পূর্ণতা পায়। বিচরণরত উপজাতিরা পূর্ব নির্দিষ্ট একটি বৃহৎ শহরের সন্ধান করতে থাকে যেখানে ক্যাকটাসের শীর্ষে বসে একটি ঈগল সাপ খেয়ে তাদেরকে সঙ্কেত দিচ্ছে।
আজটেক সভ্যতায় টেক্সকোকো হ্রদকে ছোট জলাভূমি সমৃদ্ধ দ্বীপ হিসেবে দেখা হয যা বর্তমানে মেক্সিকার জাতীয় প্রতীক ও মেক্সিকান পতাকায় অমর হয়ে ধরা দিচ্ছে। প্রতিকূল ভূখণ্ডে তারা তাদের শহরে ভবন তৈরি করে, ভাসমান বাগান নামে পরিচিত চিনাপা পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করে শুষ্ক দ্বীপকে বর্ধিত করেছিল।
একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতির উত্তোরণ ঘটতে থাকে এবং মেক্সিকা সভ্যতা মেক্সিকার সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অন্যান্য উপজাতিদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। ছোট প্রাকৃতিক দ্বীপটির বিস্তৃতি ঘটিয়ে তেনোচতিৎলান মেসোআমেরিকায় সর্বাপেক্ষা বৃহৎ ও সর্বাপেক্ষা শক্তিধর শহরে পরিণত হয়। বাণিজ্যিক পথের উত্তোরণ ঘটিয়ে মেক্সিকো উপসাগর, প্রশান্ত মহাসাগর এবং এমনকি ইনকা সাম্রাজ্যের সাথে মালামাল পরিবহনে ব্যবহার করতো।[৩]
টেক্সকোকো হ্রদে প্রলয়ঙ্করী বন্যার পর শহরটি আহুইতোল শাসনামলে পুননির্মিত হয়। একটি পদ্ধতিতে শহরের এ পুনর্নির্মাণ মেসোআমেরিকায় অন্যতম সেরা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থারূপে পরিচিত করে তোলে।
৮ নভেম্বর, ১৫১৯ তারিখে তেনোচতিৎলানে স্পেনীয় দখলদার হার্নান কর্তেস এ শহরে আসেন। এসময় শহরের জনসংখ্যা আনুমানিক ২,০০,০০০ থেকে ৩,০০,০০০ ছিল। অনেক পণ্ডিত মনে করেন যে, ঐ সময়ে তেনোচতিৎলান বিশ্বের অন্যতম সর্বাপেক্ষা বৃহৎ শহর ছিল।[৪] ইউরোপের সাথে তুলনান্তে কেবলমাত্র প্যারিস, ভেনিস এবং কনস্টান্টিনোপল এর চেয়ে এগিয়ে ছিল।[৫] লন্ডনের অষ্টম হেনরির তুলনায় এটি পাঁচগুণ বেশি ছিল। স্পেনীয় রাজাকে লেখা এক চিঠিতে কর্তেস লিখেছিলেন যে, তেনোচতিৎলান সেভিলে অথবা কর্ডোবার চেয়ে বেশি বড়। কর্তেসের লোকেরা নগরের দৃশ্যমালা দেখে বিস্মিত হয়ে যান ও অনেকেই আশ্চর্যান্বিত হয়ে পড়েন যা তারা স্বপ্নেও চিন্তা করতে পারেননি।[৬]
যদিও কিছু জনপ্রিয় উৎসমাফিক জানা যায়, সংখ্যাটি সর্বোচ্চ ৩,৫০,০০০ হতে পারে।[৭] তবে, সাধারণ অনুমান হিসেবে ২,০০,০০০ লোক এখানে ছিল। মেসোআমেরিকান নগর ও শহরের উপর কিছু ব্যাপক শিক্ষানুক্রমিক জরীপের একটিতে বলা হয়েছে, ১৩.৫ বর্গকিলোমিটার (৫.২ বর্গমাইল) আয়তনে ২,১২,৫০০ লোক বসবাস করতো।[৮] এছাড়াও এখানে বলা হয়েছে যে, মকতেজুমা সাম্রাজ্যের মধ্য ও দক্ষিণ মেক্সিকোয় পাঁচ মিলিয়ন অধিবাসী ছিল। পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে উপজাতিদের উপর খবরদারির কারণে রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটানো হয় ও বন্দীদেরকে দেবতাদের নৈবেদ্য হিসেবে উৎসর্গ করা হতো।[৯]
মেক্সিকো সিটির জোকালোয় প্লাজা দে লা কন্সতিতুসিও তেনোচতিৎলানের মূল প্লাজা ও বাজারের পার্শ্বে অবস্থিত। মূল কালজাদাসের অনেক কিছু অদ্যাবধি আধুনিক শহরের রাস্তায় পুরনো আমলকে স্বাক্ষ্য দেয়। আজজটেক ক্যালেন্ডার পাথর এখানে ছিল। পাথরটির ব্যাস ৪ মিটার এবং ওজনে ২০ টনের বেশি ছিল। একসময় এটি বড় পিরামিডের মধ্যস্থলে রাখা ছিল। এ ভাস্কর্যটি ১৪৭০ সালে রাজা আক্সায়াকাতলের আমলে তৈরি করা হয়। এর মাধ্যমেই মেক্সিকাসদের ইতিহাস ও ভবিষ্যতের সমৃদ্ধি লুক্কায়িত ছিল।[১০]
আগস্ট, ১৯৮৭ সালে প্রত্নতত্ত্ববিদরা ১,৭৮৯টি মানুব হাড়ের সম্মিলন মেক্সিকো সিটির পাঁচ মিটার নিচ থেকে উদ্ধার করেন।[১১] এর মাধ্যমে ১৪৮০-এর দশকে অতীত ইতিহাস তুলে ধরা হয়। আজটেক রাজধানীর প্রধান মন্দিরের পাদদেশে এ হাড়গুলো পাওয়া যায়। শিশু, কিশোর, প্রাপ্তবয়স্কদের হাড় থেকে শুরু করে এক তরুণীর পূর্ণাঙ্গ কঙ্কালও এখানে ছিল।[১১]