তেরতালি বা তেরা তালি হল ভারতের মধ্যপ্রদেশ[১] ও রাজস্থান[২] রাজ্যের একটি জনপ্রিয় লোকনৃত্য। প্রধানত কামার উপজাতির লোকেরা প্রাচীনকাল থেকে এই লোকনৃত্যের ধারাকে ঐতিহ্যগতভাবে বহন করে চলেছে।[৩] এটি বিভিন্ন ধরনের নৃত্যকলার সমাবেশে গঠিত একটি বিশিষ্ট আচার। সাধারণত দুই বা তিনজন মহিলা এই নৃত্যে অংশগ্রহণ করে। এই নর্তকীরা মাটিতে বসে তাদের নৃত্য উপস্থাপন করেন। নর্তকীদের শরীরের বিভিন্ন অংশে মঞ্জিরা বা ছোট ধাতব করতালের ন্যায় বাদ্যযন্ত্র বাঁধা থাকে। তাদের মাথা টুপি বা পেথা দিয়ে ঢাকা। মাঝে মাঝে বিশেষ কৌশলে দুই দাঁতের পাটির মধ্যে একটি ছোট তরবারি বা ধারালো ছোড়া কামড়ে ধরে রেখে তারা নৃত্য পরিবেশন করেন। পরিবেশনার সময় তাদের মাথায় একটি শোভাময় পাত্র স্থাপিত করা হয়। মাথার উপর সেই পাত্রের ভারসাম্য বজায় রেখে নর্তকীদের সম্পূর্ণ নৃত্য উপস্থাপনা পরিবেশন করতে হয়।[৪]
তেরতালিকে মধ্য ভারতের রাজ্যের প্রাচীনতম লোকনৃত্যের একটি বলে মনে করা হয়।[১] কামার উপজাতি মধ্যপ্রদেশের একটি ক্ষুদ্র সম্প্রদায়। তারা তাদের অনন্য আচার-অনুষ্ঠানের সাথে তেরতালি লোকনৃত্য উপস্থাপন করে।[১] প্রধানত কামার গোষ্ঠীর মহিলারা তেরতালি বা তেরা তালি লোকনৃত্য পরিবেশন করে।[২] ২ থেকে ৩ জন মহিলা নৃত্যশিল্পী মেঝেতে বসে তাদের উপস্থাপনা শুরু করেন। নর্তকীরা তাদের হাতের সাথে বাধা মঞ্জিরা দিয়ে তাদের পায়ে গিঁট দিয়ে বাধা মঞ্জিরার উপর আঘাত করে নিখুঁত সুর তৈরি করে। নর্তকরা দাঁতের মধ্যে একটি ছোট তরবারি চেপে ধরে, মাথায় স্থিত মাটির পাত্রের ভারসাম্য বজায় রেখে, তীক্ষ্ণ হাত ও পায়ের নড়াচড়ার সাথে তাদের নৃত্য উপস্থাপনা পরিবেশন করেন।[১] নৃত্য পরিবেশনার সময় স্থানীয় লোকগান গাওয়া হয় এবং বাজনা হিসাবে ঢোল বাজানো হয়। নৃত্যকালে নর্তকীদের হস্ত সঞ্চালন বাদ্যেযন্ত্রের তাল, ছন্দ এবং গানের সুরের সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়[১] এবং এইভাবেই এই অনন্য নৃত্যশৈলীকে স্বমহিমায় দর্শকদের সম্মুখে উপস্থাপিত করা হয়।