তেহ তারিক

তেহ তারিক
ধরনপানীয়
উৎপত্তিস্থলমালয়েশিয়া []
অঞ্চল বা রাজ্যমালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং ব্রুনাই
প্রস্তুতকারীমালয় উপদ্বীপের ভারতীয়-মুসলিম অভিবাসীদের দ্বারা।[][]
পরিবেশনগরম গরম

তেহ তারিক (আক্ষরিক অর্থে "চুমুক চা") হচ্ছে এক ধরনের দুধ চা পানীয়, যা সাধারণত রেস্টুরেন্ট, বহিঃস্থ দোকান এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের কপি টিয়ামগুলোতে পাওয়া যায়।[] এই পানীয় এর নামের উৎপত্তি হয়েছে একে প্রস্তুত করার সময় "ঢালা" প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। একে কালো চা এবং হয় ঘনীভূত দুধ থেকে বা গাঢ় দুধ থেকে প্রস্তুত করা হয়। মালয়েশিয়া এই পানীয়কে তাদের দেশের জাতীয় পানীয় হিসেবে গ্রহণ করেছে।[]

উৎপত্তিস্থল

[সম্পাদনা]
সিঙ্গাপুরের জালান কায়ুতে অবস্থিত একটি দোকানে রুটি-পরটা এবং তেহ তারিক

তেহ তারিকের উৎপত্তি হিসেবে জানা যায় যে মালয় উপদ্বীপের ভারতীয়-মুসলিম অভিবাসীদের দ্বারা এটির প্রচলনের কথা, যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাবার বাগানের প্রবেশ পথে পানীয় দোকান খুলে সেখানকার শ্রমিকদের পানীয় পরিবেশন করত।[] ঔপনিবেশিক কাল থেকে, তেহ তারিক মালয়েশীয়-ভারতীয় রন্ধনশৈলী হিসেবে ব্রিটিশ মালয় এবং সিঙ্গাপুরের কিছু লোকেদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে আসছে। ঐতিহ্যগতভাবে, তেহ তারিককে দেখা যায় যে রুটি চানাইয়ের সাথে পরিবেশন করা হয়ে আসছে, যা মালয়েশিয়ানদের দ্বারা আজো জনপ্রিয় নাশতা হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।

তেহ তারিকের প্রস্তুতিতে লোক-টানার ক্ষমতার একটি উপাদান বিদ্যমান। মালয়েশিয়ায়, একটি উৎসব হয়ে থাকে যেখানে তেহ তারিক প্রস্তুতকারীরা একটি প্রতিযোগিতা এবং ক্রিয়াকলাপে তাদের নৈপুণ্য দেখাতে জড়ো হন। মালয়েশিয়ার সরকারি মন্ত্রীর দ্বারা নাসি লেমাকের সাথে তেহ তারিককেও মালয়েশিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাদ্য ও পানীয়ের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

প্রস্তুতপ্রণালী

[সম্পাদনা]

এর মিশ্রণকে দুটি পাত্রের মধ্যে নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে সামনে পিছনে বারবার ঢালা হয়, যাতে এর উপর ঘন ফেনিল দেখায়। এই প্রক্রিয়া চাকে ঠাণ্ডা করে অনুকূল পানযোগ্য তাপমাত্রায় নিয়ে আসে, এবং চাকে ঘনীভূত দুধের সাথে পরিপূর্ণভাবে মিশে যেতে সাহায্য করে। এই চাকে উৎকৃষ্ট আস্বাদন এনে দিতেও এটা করা হয়। এর স্বাদের উন্নয়নের জন্য এটাকে প্রায়শই বোতলজাত টডির সাথে তুলনা করা হয়।

স্থানীয় এবং আঞ্চলিক উৎসের চা থেকে তৈরি তেহ তারিক উৎকৃষ্ট গ্রেডের হয় না। সাধারণ সিলনীজ প্রজাতির থেকে তীব্র সুগন্ধযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও, এর স্বাদ বরং কটু হয়ে থাকে এবং সাধারণত অন্যান্য উৎকৃষ্ট চায়ের মতো এতে সামান্য ক্রিম বা টাটকা দুধে তেমন একটা ভাল হয় না। সেই কারণে ঘনীভূত দুধ বা গাঢ় দুধের সাথে ব্যবহার করে ঘন দুধের ক্রীমি স্বাদের দ্বারা সুসামঞ্জস্যতার মাধ্যমে এর অতিরিক্ত আস্বাদন ক্ষমতা নিশ্চিত করা হয়।

প্রকারভেদ

[সম্পাদনা]
  • তেহ-সি দ্বারা বুঝানো হয় যে চা'টি মিষ্টিহীন গাড় দুধ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, ঐতিহ্যবাহী তেহ তারিক চায়ের মতো নয়, যা মিষ্টি ঘনীভূত দুধ দ্বারা তৈরি করা হয়। যদিও বিক্রেতারা তেহ-সি এর মধ্যে চিনি যোগ করতে পারেন যদি বিশেষভাবে না চাওয়া হয়। শুন্যের (০) মালয় শব্দ, কসং, দ্বারা নির্দেশ করা হয় যে এই পানকারী চান না তার পানীয় মিষ্টি স্বাদের হোক।
  • তেহ আইস নির্দেশ করে যে ক্লাসে পরিবেশন করা ঐতিহ্যবাহী তেহ তারিকের সাথে বরফের টুকরা রয়েছে।
  • তেহ-ও বুঝায় যে কোন রকমের সম্পূর্ণরূপে অতিরিক্ত দুগ্ধ ছাড়া একই জাতের চা। তেহ-সির মতো, সাধারণত চিনি যোগ করা হয় শুধুমাত্র যখন তেহ-ও কসং নির্দেশ করা হয় যেখানে আবার চিনি মিশানোর দরকার নেই।
  • তেহ হাকিয়া, আদা চা যা বিভিন্ন কফির দোকানেও পাওয়া যায়।
  • তেহ তারিক কুরাং মানিস, অনুবাদ করলে হতে পারে "কম চিনির তেহ তারিক"
  • চাম (‘মিশ্রণ’ এর চীনা শব্দ) হচ্ছে চা এবং কফির একধরনের সংমিশ্রন।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]
  • থাই চা, থাইল্যান্ডের একই রকমের একটি পানীয় যা বিদেশেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে
  • হংকং-স্টাইলের দুধ চা

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Bonny Tan (২০১৩)। "Teh tarik"National Library Board। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০১৬ 
  2. Su-Lyn Tan (২০০৩)। Malaysia & Singapore। Lonely Planet। পৃষ্ঠা 158–। আইএসবিএন 978-1-74059-370-0 
  3. "Lipton urges Malaysians to take pride in teh tarik, our national beverage"New Sabah Times। ৭ সেপ্টেম্বর ২০১২। ২ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ নভেম্বর ২০১৩