তেহেরিক ই লাব্বাইক পাকিস্তান | |
---|---|
সভাপতি | সা'দ হোসাইন রিজভী |
প্রতিষ্ঠাতা | খাদিম হুসেইন রিজভী |
প্রতিষ্ঠা | ১ আগস্ট ২০১৫ |
নিষিদ্ধ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ |
সদর দপ্তর | লাহোর, পাঞ্জাব |
ভাবাদর্শ | |
রাজনৈতিক অবস্থান | অতি ডানপন্থী[৪] |
ধর্ম | সুন্নী ইসলাম (বিশেষত বেরলভী) |
সিন্ধু সভা | ৩ / ১৬৮
|
নির্বাচনী প্রতীক | |
ক্রেন | |
ওয়েবসাইট | |
tlyp.org[৫] |
তেহেরিক ই লাব্বাইক পাকিস্তান (TLP) (উর্দু: تحریک لبیک پاکستان, বাংলা:"আমিই পাকিস্তান যে নিয়ত এগোয়") হচ্ছে পাকিস্তানের একটি অতি-ডানপন্থী ইসলামী চরমপন্থী রাজনৈতিক দল।[৬][৭][৮][৯] দলটি ২০১৫ সালের আগস্টে খাদিম হুসাইন রিজভী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[১০][১১][১২]
তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তানে ব্লাসফেমি আইনের যেকোনো পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য পরিচিত । এটি দাবি করে যে পাকিস্তানে শরিয়াকে একটি ক্রমশ আইনি ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইসলামিক মৌলিক আইন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা ।[১৩]
দলের অধিকাংশ সদস্যই বেরেলভী আন্দোলনের।[১৪] নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও, টিএলপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি পায়[১৫] এবং করাচি উপ-নির্বাচনে তৃতীয় স্থান অধিকার করে।[১৬]
খাদিম হুসাইন রিজভী ১ আগস্ট ২০১৫ সালে তেহেরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান গঠন করেন।
অক্টোবর ২০১৭ সালে পাকিস্তান সরকার ২০১৭-এর নির্বাচনী আইনের ভাষা বিতর্কিতভাবে পরিবর্তন করেন। সেই আইনের ভাষায় পূর্বে ছিল মুসলিম হিসেবে যারা নির্বাচন করবে তাদেরকে শপথ করে বলতে হবে, হজরত মোহাম্মদ সা: শেষ নবী। কিন্তু নির্বাচনী আইনের ভাষা ছিল, মুসলিম হিসেবে যারা নির্বাচন করবে তাদেরকে ঘোষণা করতে হবে হজরত মোহাম্মদ সা: শেষ নবী।[১৭] শপথ শব্দটির স্থলে ঘোষণা শব্দের প্রতিস্থাপনের দরুণ তেহেরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান নামক রাজনৈতিক দল এবং তার নেতা খাদিম হুসাইন রিজভী এই নতুন ভাষার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী জাহিদ হামিদের পদত্যাগের দাবী করেন।
এই অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে টিএলপি তীব্র প্রতিবাদ শুরু করে, তারা প্রথমে ফাইজবাদ সড়ক নামক সংযোগ স্থলে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়, যা পরবর্তীতে পুরো দেশে ছড়িয়ে পরে। দলটি এই বিক্ষোভ লাগাতার ৩ সপ্তাহ ধরে চলমান রাখে যা পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ সহ কার্যত পুরো দেশকে অচল করে দেয়। এই আন্দোলন ঠেকানোর জন্য পুলিশ নিয়োগ করা হলে অন্তত ৬ জন বিক্ষোভকারী নিহত এবং ২০০ জন আহত হয়। কিন্তু এই আন্দোলন স্তিমিত করতে পুলিশ কার্যত ব্যর্থ হয় কারণ আন্দোলন পুরো দেশেই ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল।[৮]
এই ঘটনার জের ধরে মন্ত্রী জাহিদ হামিদ পদত্যাগ করেন; যা এই দলটির অন্যতম সফল আন্দোলন বলে ধরা হয়।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ঐতিহ্যগতভাবে ধর্মীয় কট্টোরপন্থী দলগুলোর সাথে মিত্রতা বজায় রেখেছে। তার ব্যত্যয় ঘটেনি সেসময়ের অখ্যাত ধর্মীয় রাজনৈতিক দল তেহেরিক ই লাব্বাইক পাকিস্তানের কর্মী সমর্থকদের বিক্ষোভের সময়েও। সহিংস বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য সরকারের তরফ থেকে নির্দেশ দানের পর সেনাবাহিনীকে সেনাবাহিনী তা পালন করে নি। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া প্রধানমন্ত্রী শহীদ খাকান আব্বাসি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহসান ইকবাল ও আইএসআইয়ের মহাপরিচালক নাভিদ মুখতারের সঙ্গে বৈঠক জানিয়ে দিয়েছিলেন, বিক্ষোভকারীদের সরাতে বলপ্রয়োগ তারা করতে চান না। সেনাবাহিনী প্রস্তাব দেয়, সরকারের উচিত সহিংস বিক্ষোভকারীদের সাথে রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা করা। সেনাবাহিনীর সরকারকে প্রদান করা এরূপ নির্দেশনা দেখে কার্যত বিক্ষুব্ধ হয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।[১৮] সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা ইসলামাবাদে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে খামে করে অর্থ বিতরণ করছেন। এই ভিডিওর বরাত দিয়ে বিবিসি অনলাইনে লেখা হয়েছে, পাঞ্জাব রেঞ্জারসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজহার নাভিদ হায়াত এক হাজার রুপি করে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বিতরণ করেন। তিনি বিক্ষোভকারীদের আশ্বস্ত করেন, যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের প্রত্যেককে ছেড়ে দেওয়া হবে, পাশাপাশি এ অর্থ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের জন্য উপহার।[১৮] তাই অনুমান করা হয়, সেনাবাহিনী থেকে পাওয়া সবুজ সংকেতের জেরেই অখ্যাত এই রাজনৈতিক দলটি তৎকালীন সময়ে নির্ভার হয়ে আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিল।
খ্রিস্টান পাকিস্তানি নারী আসিয়া বিবির বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা হওয়া এবং তার জেরে আট বছর ধরে কারারুদ্ধ থাকার পর, ৩১ অক্টোবর ২০১৮ সালে তার বেকসুর খালাস হবার পর[১৯] তেহেরিক ই লাব্বাইকের সমস্ত সদস্যরা পুরো পাকিস্তানেই বিক্ষোভ, রাস্তাঘাট বন্ধ এবং বিভিন্ন অবকাঠামোতে ভাঙচুর চালাতে থাকে।[২০][২১] দলটির সহপ্রতিষ্ঠাতা মুহম্মদ আফজাল কাদরী; উচ্চ বিচারালয়ের যে ৩ জন বিচারক বিবির আপীল শুনানী করেন, তাদের উদ্দেশ্যে উষ্কানীমুলক বক্তব্যে বলেন, "প্রধান বিচারপতি এবং অন্য যে দুইজন আপীল শুনানী করেছেন, তাদের মরে যাওয়া উচিত... হয় তাদের নিরাপত্তা প্রহরী অথবা তাদের গাড়ি চালক অথবা রান্নার বাবুর্চির উচিত তাদের হত্যা করা।"[২২]
২ নভেম্বর ২০১৮ সালে, ইমরান খানের নের্তৃত্বে পাকিস্তান সরকার তেহেরিক এ লাব্বাইক দলটির সাথে একটি সমঝোতায় আসে। দলটির সাথে প্রশাসনের চুক্তি হয় আসিয়া বিবিকে দেশত্যাগ করতে দেওয়া হবে না, পাশাপাশি তেহেরিক ই লাব্বাইক দলটির যেসব কর্মী বিক্ষোভ করায় আটক হয়েছে, তাদের মুক্তি দেওয়া হবে।[২৩][২৪][২৫][২৫][২৬] এই সমঝোতার অংশ হিসেবে অবিলম্বে আসিয়া নওরীনকে পাকিস্তানের "নো ফ্লাই লিস্ট" বা দেশটি থেকে বহির্গমনে বাধা প্রয়োগের দাবীও করা হয়।[২৪] তেহরিক-ই-লাব্বাইকের চাপের মুখে পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ আসিয়া নওরীনকে উচ্চ আদালত কর্তৃক নির্দোষ সাব্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত মুক্তির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।[২৭]
তেহেরিক-ই-লাব্বাইকের সাথে সরকারের এই চুক্তির ফলে পাকিস্তান সরকারের উপর অভিযোগ উত্থিত হয় যে, প্রশাসন উগ্রপন্থীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।[২৮] পাকিস্তানি তথ্য প্রতিমন্ত্রী ফায়াদ চৌধুরী এই অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় জানান, "আমাদের হাতে দুইটি সুযোগ ছিল, হয় বলপ্রয়োগ করতে হত, এখন বলপ্রয়োগ করলে যদি মানুষ মারা যেত, একটা রাষ্ট্র কখনোই তা চাইবে না। এজন্যই আমরা সমঝোতা করতে চাইছি, আর সমঝোতায় কিছু নিতে হলে কিছু দিতে হবে"[২৮] আসিয়া নওরীনের আইনজীবী সাইফ-উল-মুলুক সরকার ও ইসলামীদের এই সমঝোতাকে "বেদনাদায়ক" বলে মন্তব্য করেন। "দেশের উচ্চ আদালতের রায়কেও তারা বাস্তবায়ন হতে দিচ্ছে না" বলে তিনি তার বক্তব্যে বলেন।[২৯] নিজের জীবন বিপন্ন বুঝতে পেরে মুলুক ইউরোপে পলায়ন করেন এবং বলেন, "আসিয়া বিবির হয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে হলে আমাকে বেঁচে থাকতে হবে।"[২৯] ব্রিটিশ পাকিস্তানি খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এই ঘটনায় বলেন, "ইমরান খানের আমলে দেশটি মৌলবাদীতার গুহায় ঢুকায় পড়তে দেখে আমি মোটেও বিস্মিত হইনি।"[৩০] ইমরান খানের সাবেক স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথ একইভাবে বলেন, "পিটিআই নেতৃত্বাধীন সরকার আসিয়া বিবির মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিয়ে কট্টরপন্থীদের দাবি মেনে নিয়ে তাদের গুহায় প্রবেশ করেছে। এখন আর নয়া পাকিস্তান নিয়ে আমাদের কোনো আশা নেই।"[৩১]
৭ নভেম্বর ২০১৮ সালে, আসিয়া বিবি মুলতানে অবস্থিত নারীর জন্য বিশেষায়িত জেল থেকে মুক্তি পান, এরপর তিনি বিশেষ বিমানে করে নেদারল্যাণ্ডের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান।[৩২] তেহেরিক-ই-লাব্বাইকের একজন নেতা হাফিজ শাহবাজ আত্তারী এই খবর শুনার পর দলটির সদস্যদের ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিণ্ডিতে আশিয়া বিবির দেশত্যাগ ঠেকাতে বিক্ষোভ করতে বলেন।[৩২]
Under the terms of the deal made on Friday night, prime minister Imran Khan’s administration said it would begin legal proceedings to place Asia Bibi on the “exit control list” (ECL). ... “I am not surprised that Imran Khan’s regime has caved in to extremists,” said Wilson Chowdhry, chair of the British Pakistani Christian Association.