ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর ইতিহাস দ্বীপগুলিতে আমেরিকার আদিবাসীদের দ্বারা বিশেষ করে ক্যারিবস দ্বীপ এবং আরাওয়াক মানুষদের বসতি স্থাপন করার মধ্যে দিয়ে শুরু। দুটি দ্বীপই ক্রিস্টোফার কলম্বাস তাঁর তৃতীয় অভিযানে ১৪৯৮ সালে পরিদর্শন করেছিলেন এবং স্পেনের নামে বসতি দাবি করেছিলেন। ১৭৯৭ সাল অবধি ত্রিনিদাদ স্প্যানিশদের হাতে রয়ে গেলেও ফরাসী উপনিবেশের সময়েই বেশিরভাগ স্থায়ী বসবাস গড়ে উছেছিল। টোবাগো ব্রিটিশ, ফরাসী, ডাচ এবং করল্যান্ডারদের মধ্যে হাত বদল হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় প্যারিসের সন্ধি (১৮১৪) এর পরে তা ব্রিটিশদের হাতে চলে আসে। ১৮৮৯ সালে দ্বীপ দুটিকে একক মুকুট কলোনীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।[১] ত্রিনিদাদ ও টোবাগো ১৯৬২ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে এবং ১৯৭৬ সালে সেখানে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
ত্রিনিদাদ এ মানুষের বসতি স্থাপন কমপক্ষে ৭,০০০ বছর পূর্বের। মনে করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দে অর্টোইরয়েড নামে পরিচিত আদি জনজাতি দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পূর্ব অংশ থেকে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে বসতি স্থাপন করেছিল। উনিশটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে যার বেশিরভাগ দক্ষিণ ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে অবস্থিত। এর মধ্যে রয়েছে ৭,০০০ বছরের পুরানো বানওয়ারি ট্রেস ক্ষেত্রটি। এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে পূর্ব ক্যারিবীয়দের মধ্যে প্রাচীনতম মানব বসতি। এই প্রত্নতাত্ত্বিক জনসংখ্যা ছিল প্রাক-সিরামিক সময়ের এবং প্রায় ২০০ খ্রিস্টপূর্ব অবধি এই অঞ্চলে তারা আধিপত্য বিস্তার করেছিল।[২]
আড়াইশো খ্রিস্টপূর্বাব্দে ক্যারিবিয়ার প্রথম সিরামিক-ব্যবহারকারী মানুষ সালাডয়েডরা ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে প্রবেশ করেছিল। এদের খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২১০০ সালের প্রথম দিকের প্রমাণগুলি ভেনিজুয়েলা এর অরিনোকো নদীর তীরে পাওয়া গিয়েছে। মনে করা হয় ত্রিনিদাদ ও টোবাগো থেকে তারা উত্তর দিকে ক্যারিবিয়ানের অবশিষ্ট দ্বীপে প্রবেশ করেছিল। ত্রিনিদাদ ও টোবাগো-তে সাঁইত্রিশটি সালাডয়েড ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সে গুলি পুরো দ্বীপের মধ্যেই ছড়িয়ে রয়েছে।[২]
২৫০ খ্রিস্টাব্দের পরে তৃতীয় দল ব্যারানকয়েড লোকেরা ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে সমুদ্রের দিকে অরিনোকো নদীতে পাড়ি জমানোর পরে বসতি স্থাপন করেছিল। প্রাচীনতম ব্যারানকয়েড বসতির বন্দোবস্তটি দক্ষিণ উপকূলে এরিন-এ ছিল বলে মনে করা হয়। [২]
৬৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে অরিনোকো বরাবর ব্যারানকয়েড সম্প্রদায়ের পতনের পরে আরাকুইনয়েড নামে একটি নতুন দল নদীর তীর বরাবর ছড়িয়ে পড়েছিল। এই গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক নিদর্শনগুলি কেবলমাত্র আংশিকভাবে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো এবং উত্তর-পূর্ব ভেনিজুয়েলার সংলগ্ন অঞ্চলে পাওয়া গিয়েছে এবং তার ফলে এই অঞ্চলগুলিতে এই সংস্কৃতিটিকে বলা হয় গায়াবাইটয়েড। [২]
১৩০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে একটি নতুন গোষ্ঠী ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে বসতি স্থাপন করে এবং নতুন সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য প্রবর্তন করে যা মূলত গায়াবাইটয়েড সংস্কৃতিকে সরিয়ে দিয়ে নিজেই তার অবস্থান কায়েম করেছিল। মায়োড সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসাবে অভিহিত হওয়া এই সংস্কৃতিটির প্রতিনিধিত্ব করে ত্রিনিদাদ এবং টোবাগোতে উপস্থিত আদি উপজাতিগুলি যারা ইউরোপীয় আগমনের সময়ে সেখানেই অবস্থান করত। তাদের পৃথক ধরনের মৃৎশিল্প এবং নিদর্শনগুলি ১৮০০ অবধি বেঁচে ছিল। কিন্তু এই সময়ের পরে তারা মূলত ত্রিনিদাদ এবং টোবাগো সমাজের মূলধারায় মিশে যায়। এর মধ্যে নেপোয়া এবং সুপোয়া (যারা সম্ভবত আরাওয়াক ভাষার কথা বলত) এবং ইয়াও (যারা সম্ভবত ক্যারিবস ভাষী ছিল) জনগোষ্ঠীও ছিল। তাদের সাধারণত আরাওয়াক এবং ক্যারিবস বলা হয়। এরা এনকোমিএন্ডা পদ্ধতির অধীনে স্পেনীয় উপনিবেশকারীদের প্রভাব দ্বারা অন্তর্হিত হয়ে যায়। এই ব্যবস্থার অধীনে আসলে দাসত্বেরই অন্য একটি রূপ চালু ছিল। যেখানে আমেরিন্ডিয়ানদের (আমেরিকার আদিবাসী) স্প্যানিশ "সুরক্ষা"-র নাম করে এবং খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরকরণের বিনিময়ে তাদেরকে স্প্যানিশীয়দের জন্য কাজ করতে বাধ্য করা হত। বেঁচে থাকা লোকদের প্রথমে মিশনস এর মাধ্যমে কপুচিন ফ্রিয়ার্স অর্ডার দ্বারা সংগঠিত করা হয়েছিল এবং তারপরে তারা ধীরে ধীরে সেখানে একীভূত হয়ে যায়। [২]