থায়াজাইড ( /ˈθaɪəzaɪd/ ) বলতে দুই শ্রেণীর সালফার সংবলিত জৈব অণুর একটি বর্গকে বোঝায়। [১] এদের মধ্যে একটি বর্গ হচ্ছে বেনজোথায়াডিয়াজিন যেটির রাসায়নিক গঠন ডাইইউরেটিকস এর অনুরুপ । [২] ১৯৫০-এর দশকে থায়াজাইড শ্রেণীর ড্রাগগুলো মার্ক অ্যান্ড কো নামক প্রতিষ্ঠানে আবিষ্কার এবং বিকাশ লাভ করেছিল। [৩] এই শ্রেণীর প্রথম অনুমোদিত ওষুধ হলো ক্লোরোথায়াজাইড।যেটি ১৯৫৮ সালে ডায়ুরিল নামক বাণিজ্যিক নামে বাজারজাত করা হয়েছিল। বেশিরভাগ দেশেই থায়াজাইডগুলি কম ব্যয়বহুল এন্টিহাইপারটেনসিভ ড্রাগগুলির প্রতিনিধিত্ব করে । [৪]
থায়াজাইড জৈব অণুগুলি দ্বি-চক্রীয় কাঠামোতে বিন্যস্ত থাকে। যার বলয়টি সালফার এবং নাইট্রোজেন পরমাণু ধারণ করে। [৫]
"থায়াজাইড" এমন একটি ড্রাগ যা থায়াজাইড রিসেপ্টরে কাজ করে। [৬] থায়াজাইড রিসেপ্টর হল সোডিয়াম-ক্লোরাইড পরিবহনকারী রিসেপ্টর যা বৃক্কের দূরবর্তী সংশ্লেষিত নলের মধ্যে লুমেন থেকে সোডিয়াম ক্লোরাইডকে টেনে আনে। থায়াজাইড মূত্রবর্ধক এই রিসেপ্টরকে বাধা দেয়, যার ফলে দেহগহ্বর থেকে সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং জল বেরিয়ে যায় এবং এর ফলে প্রতিদিন উৎপাদিত প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। রাসায়নিক গঠনের দিক দিয়ে থায়াজাইড কিন্তু মূত্রবর্ধক হিসাবে ব্যবহৃত হয় না এমন একটি অণুর উদাহরণ হল মিথাইলক্লোরোআইসোথায়াজোনিনোল। এটি প্রায়শই প্রসাধনী শিল্পে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। [৭]
থায়াজাইডকে মূত্রবর্ধক হিসেবে উচ্চ রক্তচাপ, এডিমা (ফোলা) এবং ক্যালসিয়াম বিপাকের ভারসাম্যহীনতা সম্পর্কিত কিছু শারীরিক অবস্থায় ব্যবহার করা হয়।
বৃদ্ধত্ব, ধূমপান এবং স্থূলত্ব সহ উচ্চ রক্তচাপের অনেকগুলো কারণ রয়েছে। [৮] কখনও কখনও উচ্চ রক্তচাপের কারণ নির্ধারণ করা যায় না। ফলস্বরূপ এগুলোকে অনির্ণেয় উচ্চরক্তচাপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ।ক্ষেত্রবিশেষে প্রাথমিক লক্ষণ ছাড়াই খুব উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ হৃৎপিণ্ড,বৃক্ক এবং চোখের ক্ষতি করে। খাবারে লবণের ব্যবহার কমানো, অনুশীলন বাড়ানো, ওজন হ্রাস এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন রক্তচাপ হ্রাস করতে সহায়তা করে।
১৯৫৮ সালে আবিষ্কারের পর থেকে থায়াজাইড এবং থায়াজাইড-জাতীয় মূত্রবর্ধক ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসার ভিত্তি হিসাবে থায়াজাইড ব্যবহার করা হচ্ছে এবং দেখা গিয়েছে যে বেশিরভাগ রোগীদের জন্য এই ওষুধগুলি কতটা ভাল কাজ করে। [৯] এক্ষেত্রে কম-ডোজের থায়াজাইডগুলির পাশাপাশি এসিই ইনহিবিটার, বিটা ব্লকার, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার সহ অন্যান্য শ্রেণীর মূত্রবর্ধকও ব্যবহার করা হয় । [৮] থায়াজাইড এবং থায়াজাইড জাতীয় মূত্রবর্ধকের ব্যবহার হার্ট অ্যাটাক, হার্টের ব্যর্থতা,স্ট্রোক এমনকি মৃত্যুঝুঁকি হ্রাস করে। [১০]
ওষুধের প্রকার | ওষুধের জাতিবাচক নাম | কম ডোজ
থ্রেশহোল্ড (মিলিগ্রাম / দিন) [৮] |
---|---|---|
থায়াজাইড মূত্রবর্ধক | ক্লোরোথায়াজাইড | ৫০০ |
হাইড্রোক্লোরোথায়াজাইড | ৫০ | |
বেনড্রফ্লুমিথায়াজাইড | ৫ | |
মিথাইক্লোথায়াজাইড | ৫ | |
ট্রাইক্লোরমিথায়াজাইড | ২ | |
থায়াজাইড জাতীয় মূত্রবর্ধক | ক্লোরথালিডোন | ৫০ |
ইন্ডাপামাইড | ৫ |
থায়াজাইডগুলো নেফ্রোজেনিক ডায়াবেটিস ইনসিপিডাসযুক্ত ব্যক্তিদের প্রস্রাবের প্রবাহকে কমাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। [১১] এছাড়া থায়াজাইডগুলি কেন্দ্রীয় ডায়াবেটিস ইনসিপিডাসযুক্ত শিশুদের হাইপোনাট্রেমিয়া (রক্তে সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকা) চিকিৎসার ক্ষেত্রেও কার্যকর হতে পারে। [১২]
হাইপারক্যালসিইউরিয়ার(উচ্চ প্রস্রাব ক্যালসিয়াম মাত্রা) জন্য সংঘটিত বৃক্কে পাথর এবং পিত্তথলিতে পাথর রোগে থায়াজাইড ব্যবহার করা হয় । থাইজাইডগুলি মূত্রে ক্যালসিয়ামের পরিমাণকে হ্রাস করে এবং বৃক্কের দূরবর্তী নলগুলিতে ক্যালসিয়ামের গ্রহণ বাড়িয়ে তোলে। থায়াজাইড পটাশিয়াম সাইট্রেটের সাথে সমন্বয় করে দেহে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং অক্সালেট ও সোডিয়ামের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে । [১৩] থায়াজাইড জাতীয় মূত্রবর্ধক ইন্ডাপামাইডের উচ্চ-ডোজ অনির্ণেয় হাইপারক্যালসিনুরিয়া (অজানা কারণে উচ্চ প্রস্রাবের ক্যালসিয়াম) এর চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। [১৪]
হাইপোক্যালসেমিয়া (রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কম থাকা) বিভিন্ন পরিস্থিতিতে হতে পারে যা দৈনিক খাবারে ক্যালসিয়ামের শোষণকে হ্রাস করে এবং ফলস্বরূপ দেহ থেকে ক্যালসিয়ামের নির্গমন বৃদ্ধি করে। দেহে ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য তখনই রক্ষা হবে যখন মলত্যাগের মাধ্যমে ক্যালসিয়ামের নির্গমন হ্রাস পায় এবং খাওয়া স্থির থাকে যাতে শরীরের মধ্যে ক্যালসিয়াম বজায় থাকে। [১৫] উচ্চ মাত্রার সঞ্চিত ক্যালসিয়াম হাড়ের খনিজ ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। হাড়ের খনিজ ঘনত্ব কম থাকা অস্টিওপরোসিসযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে হাড়ের ভাঙ্গনের অন্যতম কারণ । একটি গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে থায়াজাইডগুলি অস্টিওব্লাস্টের ঘনত্ব এবং হাড়ের খনিজ গঠনকে সরাসরি বাড়িয়ে দেয় যা অস্টিওপরোসিসের গতিকে আরও ধীর করে দেয়। [১৬]
ব্রোমিন জাতীয় নেশাদ্রবের গ্রহণে সৃষ্ট নেশাকে থায়াজাইড বা লুপ মূত্রবর্ধক জাতীয় ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে। [১৭]
থায়াজাইডগুলি একই ধরনের পরিবাহকগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করার কারণে ইউরিক অ্যাসিডের নির্গমন হ্রাস করে এবং তাই রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ায়।তাই এগুলি গেঁটেবাত বা হাইপারিউরিসেমিয়া রোগীদের সতর্কতার সাথে পরামর্শ দেওয়া হয়। [১৮][১৯]
দেহে থায়াজাইডের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতি ইনসুলিন প্রতিরোধের বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত যার কারণে হাইপারগ্লাইসেমিয়া হতে পারে । [২০]
রক্তের ক্যালসিয়াম সংরক্ষণের সময় থায়াজাইড রক্তের পটাশিয়াম হ্রাস করে।
থায়াজাইডগুলি অমরার রক্তসঞ্চালন হ্রাস করতে পারে এবং ভ্রূণের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে তাই গর্ভাবস্থায় এর ব্যবহার এড়ানো উচিত। [১৯][২১]