থার্মোফ্লাস্ক বা ডিওয়ার ফ্লাস্ক এক ধরনের সংরক্ষণকারী পাত্র যা কোনো বস্তুকে একই উষ্ণতায় অনেক্ষণ রেখে দিতে চাইলে ব্যবহার করা হয়। এই ফ্লাস্ক এ ঠান্ডা পানীয় থাকলে যেমন অনেক্ষণ ঠান্ডা থাকে, তেমনই গরম জল রাখলে সেই জল অনেক্ষণ গরম থাকে। ১৮৯২ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার জেমস ডিওয়ার এই পাত্র উদ্ভাবন করেন।
এটি দুই দেয়াল বিশিষ্ট একটি কাচের পাত্র। ভেতরের দেয়ালের বাইরের তলে এবং বাইরের দেয়ালের ভেতরের তলে রুপাের প্রলেপ দেওয়া থাকে। ফলে দেয়াল দুটি চকচকে হয়। দেয়ালদুটির মাঝখানে যতদূর সম্ভব কম ভরের বায়ু রাখা হয়। ফ্লাস্কটির মুখ একটি কুপরিবাহী পদার্থের (যেমন- কর্ক বা পলিথিন) তৈরি ছিপি দিয়ে বন্ধ করা হয়। যাতে সহজে না ভাঙে তার জন্য পাত্রটিকে স্প্রিং এর উপর বসিয়ে একটি ধাতব বা প্লাস্টিকের পাত্রের মধ্যে রাখা হয়। এই পাত্র ও কাচের পাত্রের মাঝের অংশ ফেল্ট, তুলাে, গ্লাসউল ইত্যাদি কুপরিবাহী পদার্থ দিয়ে ভরতি থাকে।
পাত্রের কাচ তাপের কুপরিবাহী। পাত্রটির খােলা মুখের ছিপিও তাপের কুপরিবাহী। পাত্রটির কাচ দিয়ে তৈরি অংশটির চারপাশ কুপরিবাহী পদার্থ দিয়ে ঘেরা। ফলে পরিবহনের সাহায্যে তাপ সঞ্চালন ব্যাহত হয়। আবার দুই দেয়ালের মাঝখান প্রায় বায়ুশূন্য থাকায় পরিবহন ও পরিচলন পদ্ধতিতে পাত্রটির বাইরের তাপ ভেতরে এবং ভেতরের তাপ বাইরে যেতে পারে না। বিকিরণ প্রক্রিয়ায় বাইরের থেকে তাপ ভেতরে। প্রবেশ করার সময় প্রথম দেওয়াল দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যায়। ভেতর থেকে বাইরে যাবার সময় দুই দেয়ালের চকচকে পৃষ্ঠের জন্য পাত্রের ভেতর থেকে তাপ প্রতিফলিত হয়ে পাত্রের মধ্যেই ফিরে যায়। তাপের বিকিরণ অনেক কম হয়। এখানে তাপের এই আচরণ আলাের প্রতিফলন ধর্মের মতাে। এভাবে তাপ সঞ্চালনের সমস্ত প্রক্রিয়াই ব্যাহত হয়। ফলে অনেকক্ষণ ধরে ফ্লাস্কে শীতল বস্তু শীতল ও উষ্ণ বস্তু উষ্ণ থাকে।