ঈশ্বরের সেবক থিওটোনিয়াস অমল গাঙ্গুলী ডি.ফিল, সি.এস.সি. | |
---|---|
ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশ | |
গির্জা | রোমান ক্যাথলিক গির্জা |
প্রধান ধর্মযাজক | ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশ |
স্থাপিত | ২৩ নভেম্বর ১৯৬৭ |
মেয়াদ শেষ | ২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭ |
অন্যান্য পদ | ঢাকার অক্সিলারি বিশপ(১৯৬০-১৯৬৭) অলিভার টাইটুলার বিশপ(১৯৬০-১৯৬৫) ঢাকার কোঅ্যাজুটর আর্চবিশপ(১৯৬৫-১৯৬৭) দ্রিজিপাড়ার টাইটুলার আর্চবিশপ(১৯৬৫-১৯৬৭) খুলনার অ্যাপোস্টলিক অ্যাডমিনিসট্রেটর(১৯৬৯-১৯৭০) |
আদেশ | |
বিন্যাস | ৬ জুন ১৯৪৬ |
পবিত্রকরণ | ৭ অক্টোবর ১৯৬০ গ্রেগরিও পিয়েত্রো অ্যাগাগিয়ানিয়ান দ্বারা |
মর্যাদাক্রম | বিশপ |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম নাম | থিওটোনিয়াস অমল গাঙ্গুলী |
জন্ম | হাসনাবাদ, পূর্ব বাংলা, ব্রিটিশ ভারত | ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯২০
মৃত্যু | ২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭ ঢাকা, বাংলাদেশ | (বয়স ৫৭)
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
গোষ্ঠীনাম | রোমান ক্যাথলিক |
বাসস্থান | ঢাকা, বাংলাদেশ |
মাতাপিতা | নিকোলাস কমল(পিতা), রোমানা কমলা গাঙ্গুলী(মাতা) |
পূর্ববর্তী পদ | পাকিস্তান ক্যাথলিক বিশপস' কনফারেন্সের প্রেসিডেন্ট(১৯৭১-১৯৭৩), ক্যাথলিক বিশপস' কনফারেন্স অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট(১৯৭৩-১৯৭৭) |
শিক্ষা | ডক্টর অব ফিলোসফি |
প্রাক্তন ছাত্র | নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র |
নীতিবাক্য | ইংরেজি: I Come To You With Joyful Heart |
আর্চবিশপ থিওটোনিয়াস অমল গাঙ্গুলী ( ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯২০ - ২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭) [১], সিএসসি (আর্চবিশপ টি এ গাঙ্গুলী নামে অধিক পরিচিত) বাঙালি ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের মধ্যে প্রথম আর্চবিশপ ছিলেন। ২০০৬ সালে ভ্যাটিকান থেকে পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট তাকে ‘ঈশ্বরের সেবক’ উপাধি প্রদান করেন।[১]
অমল ১৯২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার হাসনাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম নিকোলাস কমল গাঙ্গুলী ও মাতার নাম রোমানা কমলা গাঙ্গুলী। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।
১৯৪০ সালে অমল ঢাকার নবাবগঞ্জের বান্দুরা হলিক্রশ হাই স্কুল থেকে তৎকালীন প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ফাদার হওয়ার জন্য বিহারের রাঁচি সেমিনারিতে যোগদান করেন। তিনি ১৯৪৬ সালে ৬ জুন ধর্মযাজক হন। ১৯৪৭ সালের ১৭ই আগস্ট উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। সেখান থেকে দর্শনে বিএ ও এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।[২] ১৯৫১ সালে দর্শনে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি মহর্ষি পতঞ্জলির যোগ বিষয়ের উপর গবেষণা করেন। ‘পুরুষ ও প্রকৃতি: পতঞ্জলি, সংখ্যা ও যোগ- এর আলোকে একটি দার্শনিক মূল্যায়ন’ ছিল তার অভিসন্দর্ভের বিষয়। তিনি বাংলা, ইংরেজি ভাষা ছাড়াও লাতিন, ফরাসি, জার্মান, ইতালীয়, উর্দু, হিন্দি ও সংস্কৃত ভাষায় দক্ষ ছিলেন।
অমল ছিলেন প্রথম পিএইচডি ডিগ্রিধারী বাঙালি খ্রিস্টান। ১৯৪৬ সালের ৬ জুন রাঁচির সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রালে ধর্মপ্রদেশীয় যাজক পদে অভিষিক্ত হন।[৩] এরপর ১৯৫২ সাল থেকে তিনি ঢাকার নটর ডেম কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালে কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। নটর ডেম কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ জেমস মার্টিনের মৃত্যুর পর ১৯৬০ সালের ২১ মার্চ কলেজটির প্রথম বাঙালি অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হন। কিন্তু কিছু কাল পরেই ঢাকা ধর্মমহাপ্রদেশের আর্চবিশপ লরেন্স লিও গ্রেনারের সহকারী নিযুক্ত হওয়ায় সে বছরেরই ৩ সেপ্টেম্বর অধ্যক্ষের পদ ছেড়ে দেন।
১৯৬৭ সালে তিনি বাংলাদেশের খ্রিস্টান প্রধান ‘আর্চবিশপ’ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি আর্চবিশপ লরেন্স লিও গ্রেনার, সিএসসি’র স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত আমৃত্যু এ দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে তিনি বুদ্ধিজীবীদের তালিকায় ছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি খ্রিস্টানদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য। তিনি নিজের জীবন বিপন্ন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পায়ে হেঁটে, সাইকেলে চেপে টাকা পয়সা ও খাবার পৌঁছে দিয়েছেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
১৯৭২ সালে ২ ফেব্রুয়ারি আর্চবিশপ টি এ গাঙ্গুলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের ক্যাথলিক ও প্রটেস্টান্ট মন্ডলীর ছয়জন নেতা সদ্য স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাঁর অফিসে সাক্ষাৎ করেন এবং এদেশের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য বিশ লক্ষ[২] টাকার একটি চেক এবং এদেশের উপর ঈশ্বরের আশির্বাদের প্রতীকস্বরূপ একটি স্বর্ণের ক্রুশ ও তাঁর গলার চেইন প্রদান করেন।
অমলের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সংঘ ও সমিতি। ঢাকা খ্রিস্টান ছাত্র কল্যাণ সংঘ প্রতি বছর তাঁর নামে বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। ২০১৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগে “দি আর্চবিশপ টি এ গাঙ্গুলী লাইব্রেরী” স্থাপিত হয়। একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে তাকে সাধু শ্রেণিভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। তার স্মৃতিকে অমর করে রাখতে ঢাকার নটর ডেম কলেজের একটি ভবনের নামকরণ করা হয়েছে "আর্চবিশপ গাঙ্গুলী ভবন"।
১৯৭৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান তার শোক বাণীতে বলেন, “প্রখ্যাত ক্যাথলিক নেতা আর্চবিশপ টি এ গাঙ্গুলীর দুঃখজনক মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে ব্যথিত। বাংলাদেশ ও তার জনগণের জন্য তাঁর অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার চোখে দেখা হয়ে থাকে।” রমনা আর্চবিশপ প্রাঙ্গণে তাকে সমাহিত করা হয়।[৩] তার মৃত্যুর পর আর্চবিশপ মাইকেল তার স্থলাভিষিক্ত হন।