দক্ষিণ এশিয়া অর্থাৎ, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান রাষ্ট্রের জন-ভাষাতাত্ত্বিক উপাদান বৈচিত্র্যমণ্ডিত। এই জনসংখ্যার অধিকাংশ দুটি প্রধান গোষ্ঠীতে বিভক্ত: দ্রাবিড় ও ইন্দো-আর্য জাতিগোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীগুলি আবার একাধিক উপগোষ্ঠী, জাতি ও উপজাতিতে বিভক্ত। ইন্দো-আর্য জাতিগোষ্ঠী পাকিস্তান, উত্তর ভারত, নেপাল, মধ্য ও দক্ষিণ শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের প্রধান জনগোষ্ঠী। অন্যদিকে দ্রাবিড়েরা দক্ষিণ ভারত এবং উত্তর ও পূর্ব শ্রীলঙ্কার প্রধান জনগোষ্ঠী। ইরানি জনগোষ্ঠী ও ইন্দো-আর্য জনগোষ্ঠীর একটি যৌথ শাখা ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠীর মানুষরা দক্ষিণ এশীয় জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। এদের একটি বৃহৎ অংশ পাকিস্তানের বালুচিস্তান, উত্তরপশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন উপজাতি অঞ্চলে ঘনসন্নিবিষ্ট হয়ে বাস করে। ডার্ডিক জাতি ইন্দো-আর্য গোষ্ঠীতে সংখ্যালঘু। তারা ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠীর অংশ বিবেচিত হয়।[১] কখনও কখনও আবার তাদের ইন্দো-আর্য শাখায় বহিরাগতও বিবেচনা করা হয়।[২] এরা পাকিস্তানের উত্তরাংশ ও উত্তরপশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এবং ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে বাস করে।
যেসব সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলি এই দুই প্রধান গোষ্ঠীর আওতায় পড়ে না তারা প্রধানত অস্ট্রো-এশিয়াটিক ও টিবেটো-বার্মান ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত। আন্দামানি (সেন্টিনেল, ওঙ্গে, জারোয়া, ও গ্রেট আন্দামানি) ও মধ্য নেপালের কুসুন্দা [৩] , শ্রীলঙ্কার ভেড্ডা, মধ্যভারতের কাল্টো (নিহালি) উপজাতির মানুষেরা বিচ্ছিন্ন ভাষায় কথা বলে। এদের সংখ্যা ৫০০০ জনের মতো। পাকিস্তানের হুঞ্জা উপত্যকার জনগোষ্ঠীও স্বতন্ত্র। তারা বুরুশাস্কি নামে একটি বিচ্ছিন্ন ভাষায় কথা বলে।
দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিতেও বৈচিত্র্য দেখা যায়। তাদের সংস্কৃতি বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার উত্তর পশ্চিম অঞ্চল (যেখানে তুর্কি ও ইরানি জাতির প্রভাব বেশি) এবং সীমান্ত ও বন্দর অঞ্চল যেখানে বহিরাগতদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান বেশি হয় সেই সব অঞ্চলের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম জন-ভাষাগোষ্ঠী গোষ্ঠী হল ইন্দো-আর্য গোষ্ঠী; এদের সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ কোটি। দেশীয় ভাষায় সবচেয়ে বড় উপগোষ্ঠী হল হিন্দি ভাষাগোষ্ঠী; এদের সংখ্যা ৩০ কোটিরও বেশি।