দক্ষিণ কন্নড় | |
---|---|
জেলা | |
কর্ণাটক রাজ্যের মধ্যে দক্ষিণ কন্নড় জেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ১২°৫২′ উত্তর ৭৪°৫৩′ পূর্ব / ১২.৮৭° উত্তর ৭৪.৮৮° পূর্ব | |
দেশ | India |
রাজ্য | কর্ণাটক |
অঞ্চল | তুলু নাড়ু |
সদর | ম্যঙ্গালোর |
মহকুমা | ম্যঙ্গালোর, সুল্লিয়া, পুত্তুর, বেন্তাগান্ডি, মূদাব্রিদি, বান্তোয়াল এবং কাবাডা |
সরকার | |
• ডেপুটি কমিশনার | সিন্ধু বি রূপেশ[২] |
• MP | নলিন কুমার কাটিল[৩] |
আয়তন | |
• মোট | ৪,৫৫৯ বর্গকিমি (১,৭৬০ বর্গমাইল) |
সর্বোচ্চ উচ্চতা | ১,১১৫ মিটার (৩,৬৫৮ ফুট) |
জনসংখ্যা | |
• মোট | ২০,৮৯,৬৪৯[১] |
• জনঘনত্ব | ৪৫৭/বর্গকিমি (১,১৮০/বর্গমাইল) |
ভাষা | |
• সরকারি | কন্নড় |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+5:30) |
ডাক সূচক সংখ্যা | ৫৭৫০xx(ম্যাঙ্গালোর),
৫৭৪২০১(পুত্তুর), ৫৭৪২৩৯(সুল্লিয়া) |
Telephone code | + 91 (0824) |
যানবাহন নিবন্ধন | কে এ-১৯ (Hampankatta, Mangalore south), কে এ-২১ (পুত্তুর, সুলিয়া, বেত্থানগাদি), কে এ-৬২ (সুরাতকল, উত্তর ম্যাঙ্গালোর), কে এ-৭০ (বি সি রোড) |
বিমানবন্দর | ম্যাঙ্গালোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর |
ওয়েবসাইট | www |
দক্ষিণ কন্নড় জেলা ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের পশ্চিমপ্রান্তের একটি জেলা। ম্যাঙ্গালোর শহরটি জেলার সদর দফতর। এটি পূর্ব দিকে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা দ্বারা এবং পশ্চিমে আরব সাগর দ্বারা বেষ্টিত; জেলাটি বর্ষার সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত পায়। জেলাটির উত্তরে উদুপি জেলা (১৯৯৭-য়ের পূর্বে উদুপি জেলাটি এই জেলার একটি অংশ্ ছিল), উত্তর-পূর্বে চিকমাগালুর জেলা, পূর্বে হাসান জেলা, দক্ষিণ-পূর্বে কোডাগু এবং দক্ষিণে কেরালার কাসারগড় জেলা রয়েছে। ভারতের ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে দক্ষিণ কন্নড় জেলার জনসংখ্যা হল ২,০৮৩,৬২৫ জন। দক্ষিণ কন্নড় জেলা কর্ণাটকের দ্বিতীয় প্রধান জেলা রূপে বিবেচিত। এটিই কর্ণাটক রাজ্যের একমাত্র জেলা যেখানে সড়ক পরিবহণ, রেল পরিবহণ, জলপথ পরিবহন এবং আকাশপথ পরিবহণের মতো সমস্ত ধরনের পরিবহণের ব্যবস্থা র্যেছে। এই জেলাটি ভারতীয় ব্যাংকিংয়ের আঁতুড়ঘর হিসাবেও পরিচিত।
দক্ষিণ কন্নড়-এর গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলির মধ্যে রয়েছে ম্যাঙ্গালোর, পুত্তুর, সুলিয়া, বান্টওয়াল, ভিট্টাল, মুদাবিদ্রি, কিনিগি, উপ্পিনাঙ্গাদি, নেল্যাবাদী, কাদবা, বেলথঙ্গাদি, গুরুবায়ঙ্করে, ভেনুর, মুল্কি, ধর্মস্থল, উজির এবং সুব্রামায়্য। জেলাটি নীল সমুদ্রসৈকত, লাল কাদামাটির ছাদ টালি (ম্যাঙ্গালোর টাইলস), কাজুবাদাম এবং এর পণ্য, ব্যাংকিং, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং রান্নার জন্য পরিচিত। কর্ণাটকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ম্যাঙ্গালোর।
আলুপাস সাম্রাজ্য (ಅಲುಪಾಸ್) খ্রিস্টীয় ৮ম থেকে চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যে দক্ষিণ কন্নড় অঞ্চল শাসন করেছিল। ১৮৬০ সালের আগে দক্ষিণ কন্নড় কানারা নামক একটি জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল যা মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে একক প্রশাসনের অধীনে ছিল। ১৮৬০ সালে, ব্রিটিশরা এই অঞ্চলটি দক্ষিণ কানারা এবং উত্তর কানারায় বিভক্ত করেছিল; উত্তর কানারা অংশটি বোম্বে প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত করা হলেও, দক্ষিণ কানারা প্রদেশটি মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির অধীনে রয়ে গিয়েছিল। কুন্ডাপুর তালুককে আগে উত্তর কানারায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল তবে পরে তাকে দক্ষিণ কানারার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে দক্ষিণ কন্নড় জেলার জনসংখ্যা ২,০৮৯,৬৪৯ জন[৪], যা প্রায় উত্তর মেসিডোনিয়া রাষ্ট্রের জনসংখ্যার সমান[৫]। জনসংখ্যার বিচারে এই জেলাটি ভারতে মোট ৬৪০টি জেলার মধ্যে ২২০তম স্থান অধিকার করে। এই জেলার জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৫৭ জন (১১৮০ জন/বর্গ মাইল)। ২০০১-২০১১ এর দশকে এর জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ছিল ৯.৮%। দক্ষিণ কন্নড়ের ১০০০ জন পুরুষ প্রতি ১০১৮ জন মহিলা এবং সাক্ষরতার হার ৮৮.৬২%। জনসংখ্যার ৭.১% তফসিলী জাতি এবং ৩.৯% তফসিলী উপজাতি অন্তর্ভুক্ত।কর্ণাটকের জেলাগুলির মধ্যে মাথাপিছু আয়[৬] এবং মানব উন্নয়ন সূচকের[৭] ভিত্তিতে দ্বিতীয় এবং সাক্ষরতার বিচারে তৃতীয় স্থান অধিকার করে এই জেলাটি[৮]।
বছর | জন. | ±% |
---|---|---|
১৯০১ | ৪,৮৫,৩০৪ | — |
১৯১১ | ৫,১৬,০৫১ | +৬.৩% |
১৯২১ | ৫,৪৬,১৪৬ | +৫.৮% |
১৯৩১ | ৫,৯৬,৪০০ | +৯.২% |
১৯৪১ | ৬,৬৬,২২২ | +১১.৭% |
১৯৫১ | ৭,৫৫,১০০ | +১৩.৩% |
১৯৬১ | ৯,১৫,০৩৯ | +২১.২% |
১৯৭১ | ১১,৬৩,৬৬৮ | +২৭.২% |
১৯৮১ | ১৪,২৮,০২৮ | +২২.৭% |
১৯৯১ | ১৬,৫৬,১৬৫ | +১৬% |
২০০১ | ১৮,৯৭,৭৩০ | +১৪.৬% |
২০১১ | ২০,৮৯,৬৪৯ | +১০.১% |
জেলাটি পশ্চিমে আরব সাগর এবং পূর্বে পশ্চিম ঘাট নিয়ে গঠিত। মাটি বেশিরভাগ ল্যাটেরাইট প্রকারের, উচ্চ লোহা এবং অ্যালুমিনিয়াম আকরিক মিশ্রিত[৯]।
জেলার প্রধান নদীসমূহ হল নেত্রবতী, কুমারধারা, গুরুপুরা (ফাল্গুনি), শাম্ভবী, নন্দিনী বা পাভঞ্জে এবং পয়স্বিনী; যারা সবাই আরব সাগরে গিয়ে মিশেছে[১০]। উপ্পিনাঙ্গাদিতে, নেত্রবতী ও কুমারধারা নদী মিলিত হয় এবং বর্ষার সময়ে এই মোহনাটি নয়নাভিরাম রূপ ধারণ করে[১১]। ম্যাঙ্গালোরের নিকটে, নেত্রবতী এবং গুরুপুরা নদীগুলির সমন্বয়ে একটি মোহনা তৈরি হয়েছে যা আরব সাগরে মিশে গেছে।[১২]
দক্ষিণ কন্নড়-এ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সমাজের প্রতিটি স্তরে পৌঁছেছে[১৩][১৪]। চিকিতসা বিজ্ঞান, প্রকৌশল, ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার বিজ্ঞান, নার্সিং, হোটেল এবং ক্যাটারিং, আইন ও ব্যবস্থাপনার কোর্স সরবরাহকারী অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই জেলায় রয়েছে[১৫]
দক্ষিণ কন্নড জেলাতেই অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি কর্ণাটক (এনআইটিকে) সুরাতকল[১৬]। কাঁকনাদির কাছে ইয়েক্কুরে মৎস্যবিজ্ঞান কলেজটি অবস্থিত[১৭]। ম্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাঙ্গালোরের নিকটে কোনাজে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়[১৮]। দক্ষিণ কন্নড়, উদুপী এবং কোডাগু জেলাগুলির মহাবিদ্যালয়গুলি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ।[১৯]
যক্ষগণ এই জেলার জনপ্রিয় লোকশিল্প।[২০] তুলু নাড়ুতে প্রচন্ড ধুমধামের সাথে সমগ্র রাত্রি ব্যাপী নৃত্য ও নাটকের অভিনয় অনুষ্ঠান হল এই যক্ষগণ[২১][২২]। পিলিভিশা (আক্ষরিক অর্থে বাঘের নৃত্য) এই অঞ্চলে লোক নাচের এক অনন্য রূপ, যা যুবা ও বৃদ্ধ সকলকেই আকর্ষণ করে; মূলত বিজয়াদশমী বা দশেরা ও কৃষ্ণজন্মাষ্টমীর সময় পরিবেশন করা হয়।[২৩] কারাডি ভেশ (আক্ষরিক অর্থে, ভাল্লুক নাচ) হ'ল বিজয়াদশমী বা দশেরার সময় পরিবেশিত করা আর একটি জনপ্রিয় নৃত্য[২৪][২৫]। দক্ষিণ কন্নড়ের অধিবাসীরা বিশু, ইউগাদি (উগাদি), কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী, গণেশ চতুর্থী, নবরত্রি (দশর), দীপাবলি, আতি হুনিমে ইত্যাদি ধর্মীয় উতসব পালন করে থাকেন।[২৬][২৭]
দক্ষিণ কন্নড় জেলাতে নিম্নলিখিত ঐতিহাসিক স্থানগুলি বিখ্যাত:[১০][২৮]
অন্যান্য শহর, রাজ্য এবং দেশগুলিতে বসবাসকারী প্রবাসীদের মাধ্যমে অর্থের আগমনের কারণে কৃষি এখন আর এই জেলার প্রধান জীবিকা নয়, যদিও ৩০ বছর আগেও তা দক্ষিণ কন্নড়ার লোকদের একটি প্রধান পেশা ছিল[৩০][৩০]। এই জেলাটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক উপসাগরীয় (মধ্য প্রাচ্য) দেশ এবং ভারতের অন্যান্য রাজ্যে কাজ করে। ম্যঙ্গালোর শহরটির আশেপাশে খামার এবং কৃষিক্ষেত্রগুলি আবাসিক প্লট এবং বাণিজ্যিক (শপিং) কমপ্লেক্সে রূপান্তরিত করা হয়েছে[৩১]। উদ্যানতত্ত্ব, যদিও কিছুটা অগ্রগতি করেছে এবং ফল বাগিচা উন্নতির জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে[৩২]। দক্ষিণ কন্নড় জেলার প্রধান ফসল হ'ল ধান, নারকেল, সুপারি, গোলমরিচ, কাজু এবং কোকো। বছরে সাধারণত তিনবার ধানের চাষ হয়, কার্তিক বা ইয়েনেল (মে-অক্টোবর), সুগি (অক্টোবর থেকে জানুয়ারী) এবং কোলাকে (জানুয়ারি থেকে এপ্রিল)[৩৩]। সুগির মৌসুমে বিউলি ডালও কিছু অঞ্চলে চাষ করা হয়[৩৪]। কর্ণাটক মিল্ক ফেডারেশনের ময়ঙ্গালোরের কুলশেখরে একটি দুধ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র রয়েছে। এই কেন্দ্রটি জেলার কৃষকদের মালিকানাধীন গবাদি পশু থেকে প্রাপ্ত দুধ প্রক্রিয়াজাত করে
এই জেলার খাদ্যরীতির মধ্যে রয়েছে প্রধানত তুলুভা সম্প্রদায়ের খাদ্যরীতি এবং কোঙ্কনি সম্প্রদায়ের খাদ্যরীতি। কিছু জনপ্রিয় তুলুভা সম্প্রদায়ের খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে কোরি রট্টি (ম্যাঙ্গালোর ধরনের মুর্গির ঝোল আর চিঁড়ের রুটি), বাঙ্গুরে পুলিমংছি (সিলভার-গ্রে ম্যাকারেলস বা পমফ্রেট মাছের টক ঝাল), বিজা-মনোলি উপকারি, নীর দোসা, বুথাই গ্যাসি এবং কদুবু [৩৫]। উপকূলীয় কর্ণাটকে, ময়ঙ্গালোরিয়ান মাছের ঝাল একটি জনপ্রিয় খাবার[৩৬]। কোঙ্কানি সম্প্রদায়ের বিশেষত্বগুলির মধ্যে রয়েছে ডালি থোয়, বিবে-উপকারি (কাজু ভিত্তিক), ভাল ভাল, অব্নাস আম্বে সাসম, কাদগি চকো, পাগিলা পোদি, মালপুরী, প্যাট্রোড এবং চন গাশি[৩৭]। ম্যঙ্গালোর বাজি, যা গোলিবাজে নামে পরিচিত একটি জনপ্রিয় মুখরোচক খাবার। এটি ময়দা, দই, চালের আটা, কাটা পেঁয়াজ, ধনিয়া পাতা, নারকেল, জিরা, কাঁচা লঙ্কা ও লবণ দিয়ে তৈরি একটি জনপ্রিয় জলখাবার[৩৮]।
এই অঞ্চলের আর একটি প্রচলিত খাদ্যরীতি হল তুলু নিরামিষ খাদ্য্রীতি, যা উদুপি খাবার হিসাবেও পরিচিত[৩৯]। এটি রাজ্য এবং উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে পরিচিত এবং কর্ণাটকের অন্যান্য রাজ্যেও উদুপি রীতি হিসেবে প্রসিদ্ধ। উপকূলীয় জেলা হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষের প্রধান খাদ্য হিসাবে রয়েছে ভাত এবং মাছ[৪০]। ময়ঙ্গালোরিয়ান ক্যাথলিকদের সান্না-ডুকরা মাস ("সান্না" অর্থ ইডলি টডি বা খামির সাথে ভরা এবং "দুকরা মাশ" অর্থ শুয়োরের মাংস), শুয়োরের বাফাত, সর্পোটেল এবং মুসলমানদের মাটন বিরিয়ানি সুপরিচিত খাবার[৪১][৪২]। হাপ্পালা, সান্দেজ এবং পুলি মুঞ্চির মতো আচারগুলি ম্যাঙ্গালোরে খাদ্যরীতির বিশেষত্ব[৪৩]।
.
উদুপি জেলা সহ জেলাটি "ভারতীয় ব্যাংকের আঁতুড়ঘর" নামে পরিচিত[৪৪]। কানাড়া ব্যাংক, কর্পোরেশন ব্যাংক, সিন্ডিকেট ব্যাংক, বিজয়া ব্যাংক ইত্যাদি জাতীয়করণিত ব্যাংকগুলি এবং কর্ণাটক ব্যাঙ্কের মতো বেসরকারী ব্যাঙ্কগুলির যাত্রা শুরু হয়েছিল এই দুটি জেলা থেকে[৪৫]।