দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা হল ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের প্রেসিডেন্সি বিভাগের অন্তর্ভুক্ত একটি প্রশাসনিক জেলা। এই জেলার সদর আলিপুরে অবস্থিত। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার উত্তর দিকে কলকাতা ও উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা, পূর্ব দিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র, পশ্চিম দিকে হুগলি নদী ও দক্ষিণ দিকে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। এই জেলাটি আয়তনের দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম ও জনসংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা। জনসংখ্যার নিরিখে ভারতের ৭৩৯টি জেলার মধ্যে এই জেলার স্থান ষষ্ঠ। এই জেলার এক দিকে কলকাতা মহানগরীর একাংশ এবং অপর দিকে সুন্দরবন অঞ্চলের বনাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী গ্রামগুলির অবস্থান।[৩] ১৯৮৬ সালের ১ মার্চ চব্বিশ পরগনা জেলা বিভাজিত করে এই জেলাটি গঠন করা হয়।[৪]
৬ ডিসেম্বর ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করা[৫] সুন্দরবনের কিছু অংশ, যার নামকরণ করা হয়েছে সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান, এই জেলায় অবস্থিত। এই উদ্যানটি একটি জাতীয় উদ্যান, ব্যাঘ্র প্রকল্প ও বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ। এখানকার সজনেখালিতে, লুথিয়ান দ্বীপে ও হ্যালিডে দ্বীপে বর্তমানে আরও তিনটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে। এছাড়া, পাথরপ্রতিমার কাছে ভগবতপুর কুমির প্রকল্প এবং সজনেখালিতে পাখিরালয় রয়েছে। ১৯৮৯ সালে সুন্দরবনের এই ভারতীয় অংশকে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ঘোষণা করা হয়।
বিভিন্ন প্রাচীন সাহিত্যে এই অঞ্চলের উল্লেখ পাওয়া যায়। রামায়ণে আদিকাণ্ডে পূর্ব সমুদ্রতীরে সাগরদ্বীপ বা সমুদ্র আশ্রিত নিম্নবঙ্গের উল্লেখ আছে পাতাল বা রসাতল বলে। মৎস ও বায়ু পুরাণেও কপিল মুনির আশ্রমের ঐ একই অবস্থানের কথা বলা হয়েছে।[৬] রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ ছাড়াও খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতক থেকে খ্রিস্টাব্দ ২য় শতক পর্যন্ত সম্ভবত এই নিম্ন গাঙ্গেয় অঞ্চলের জনবস্তির কিছু পরিচয় পাওয়া যায় গ্রিক ও রোমান লেখকের রচনায়। গ্রিক ও লাতিন সাহিত্যে গঙ্গারিদি বা ঐ সংশ্লিষ্ট যে নামগুলির উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলির মূল ভারতীয় নাম ছিল গঙ্গারিদি, গ্রিক ভাষায় কর্তৃকারকের বহু বচনে যার রূপান্তর হত গঙ্গারিদাই।[৭] এই অঞ্চলের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১ম খ্রিস্টপূর্বের দিওদোরাস সিকুলাসের লেখা বিব্লিওথেকে ইস্তোরিকে গ্রন্থে।[৮] খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে গ্রিক ভুগোলবিদ টলেমির তার গেওগ্রাফিকে উ্যফেগেসিস গ্রন্থে গঙ্গারিডি বা গঙ্গারিদাই নামক একটি অঞ্চলের কথা বলা হয়েছে, যার বিস্তার গঙ্গার নদীমুখের সমগ্র অঞ্চলজুড়ে ছিল।[৯]
এছাড়াও এই অঞ্চলের বিভিন্ন প্রত্নস্থল থেকে প্রস্তর যুগের প্রত্ন নিদর্শন পাওয়া যায়। এগুলি হলো : ডায়মন্ড হারবার অঞ্চলের দেউলপোতা, কুলপি অঞ্চলের হরিনারায়ণপুর, সাগরদ্বীপ, সোনারপুর অঞ্চলের বোড়াল এবং দক্ষিণ গোবিন্দপুর, বারুইপুর অঞ্চলের মল্লিকপুর-হরিহরপুর এবং আটঘরা এবং পাথরপ্রতিমা অঞ্চলের গোবর্ধনপুর। বিভিন্ন প্রত্নস্থল থেকে প্রাপ্ত জনবসতির চিহ্ন, প্রাচীন কূপ, জলাশয়, পাকা গৃহভিত্তি, মঠমন্দিরের ধ্বংসাবশেষ, বিভিন্ন সময়ের মৃৎশিল্প প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষের বসবাসের নিদর্শন।
এই অঞ্চলে প্রথম বসতির প্রমাণ হিসাবে প্রস্তরযুগের মানুষের ব্যবহৃত নানা ধরনের অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া গেছে ডায়মন্ড মহকুমার দেউলপোতা ও হরিনারায়ণপুরে। এ ছাড়াও প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে পরবর্তী বিভিন্ন যুগের বহু পুরাবস্তু এই জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন জৈবিক নমুনা সংগ্রহ করে কার্বন-১৪ পরীক্ষার মাধ্যমে ২৪ পরগনার জঙ্গলের গাছগুলির আবির্ভাবের সময়কাল মোটামুটি খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০ বছরের আভাস দিয়েছেন।[১০] তবে প্রস্তরযুগের পরবর্তী তাম্রাশ্মীয় বা চ্যাল্কোলিথিক যুগের কোন নিদর্শন আবিষ্কৃত হয় নি।[১০]
প্রাক-মৌর্যযুগ থেকে কুষাণ, শুঙ্গ, গুপ্তযুগ এবং গুপ্ত-পরবর্তী পাল-সেন যুগের অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংলগ্ন অঞ্চলসমূহ থেকে মিলেছে। উত্তর চব্বিশ পরগনার দেগঙ্গা থানার বেড়াচাঁপার অন্তর্গত প্রত্নস্থল চন্দ্রকেতুগড় এই ঐতিহাসিক রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নগরী এবং রাজধানী ছিল বলে মনে করা হয়। ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ববিদদের উদ্দ্যোগে এই অঞ্চল খনন করে পাওয়া বস্তুসমূহ প্রমাণ করে এই অঞ্চল সরাসরি গুপ্ত সাম্রাজ্যের অংশ না হলে ছিলো যথেষ্ট৷ তবে এই অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত পৌরানিক ব্রাক্ষ্মন্যবাদ সংক্রান্ত পুরাবস্তু থেকে এই অঞ্চলে গুপ্ত সাম্রাজ্যের সাংস্কৃৃতিক প্রভাব সম্বন্ধে ধারণা করা যায়। বিদ্যাধরী নদী সংলগ্ন এই প্রত্নস্থলটির সঙ্গে জলপথে প্রাচীন ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল বিশেষত রোমের বাণিজ্যিক যোগসূত্রের সুনিশ্চিত প্রমাণ মিলেছে।[১১] গৌড় বংশীয় শশাঙ্ক এই অঞ্চলে শাসন কায়েম করতে পারেনি। পাল বংশের রাজা গোপাল দ্বিতীয় এবং বিগ্রহপাল দ্বিতীয়ের সময়কালে এই অংশ পালেদের হাত থেকে চন্দ্র বংশের হাতে চলে যায়। মথুরাপুরের উত্তর জটা গ্রামের জটার দেউল মন্দিরটি ৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে চন্দ্র বংশের রাজা জয়চন্দ্রের দ্বারা নির্মিত। এছাড়াও সেন যুগের বহু দেব-দেবীর মূর্তি জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আবিস্কৃত হয়েছে।
প্রাচীনকাল থেকে ষোড়শ শতক অবধি আদি ভাগিরথীর পারে কালিঘাট, বোড়াল, রাজপুর, মহিনগর, বারুইপুর, জয়নগর, মজিলপুর, ছত্রভোগের মত জনপদ গড়ে উঠেছিল। বিপ্রদাস পিপলাইয়ের মনসাবিজয় থেকে এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম এবং নগরের তালিকা পাওয়া যায়। শ্রী চৈতন্যদেব ভাগিরথীর পার ধরে পুরি যাওয়ার পথে বারুইপুরের কাছে আটসিরাতে এবং সর্বশেষ মথুরাপুরের ছত্রভোগে থেমেছিলেন।
১৫৩৮ সালে পর্তুগীজরা গৌরের শেষ ইলিয়াস শাহি সুলতান গিয়াসুদ্দিন মাহমুদের থেকে সরস্বতী এবং ভাগীরথী-হুগলির সংযোগস্থলে অবস্থিত সাতগাঁওতে বসতি গড়ার অনুমতি পায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গড়িয়ায় পূর্বে বিদ্যাধরী নদীর তীরে তার্দা বন্দরে ১৫৯০ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগীজরা প্রথম ঘাঁটি গাড়ে। এরপর এই সময়ে বাংলায় মুঘলদের বিরুদ্ধে বারো ভুইয়াঁদের মিত্রশক্তি হয়ে ওঠে পর্তুগীজরা এবং নদী তিরবর্তী অঞ্চলে তাদের জলদস্যুতা বজায় রাখতে থাকে। পরবর্তি ১০০ বছর তাদের আধিপত্য বজায় ছিল উত্তর ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন অঞ্চলে। এর ফলে এই অঞ্চলে অনেক সমৃদ্ধশালী জনপদ জনশূন্য হয়ে যায়। ১৭ শতাব্দীর শুরুতে বাংলার বারো ভুঁইয়ার (১১ ভুঁইয়া ও ১ মুঘল সম্রাট) একজন যশোররাজ প্রতাপাদিত্য যশোর, খুলনা, বরিশাল সহ গোটা ২৪ পরগনা জেলার অধিপতি ছিলেন। প্রতাপাদিত্য পর্তুগিজ জলদস্যুদের সঙ্গে বারবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিলেন। তিনি সাগরদ্বীপ, সরসুনা, জগদ্দল প্রভৃতি অঞ্চলে দুর্গ বানিয়ে এদের আটকাবার চেষ্টা করেন ও বিতাড়িত করতে সক্ষম হন৷ ১৮৯০ সালে সুন্দরবন সফরকারী এক ইংরেজ সাহেব রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজপুরীর ধ্বংসাবশেষ দেখতে পান।[১২]
১৬১০ সালে সলকা ও মগরাহাটের যুদ্ধে মুঘল সেনাপতি মান সিংহের হাতে প্রতাপাদিত্য পরাজিত হন। মান সিংহ ছিলেন কামদেব ব্রহ্মচারীর শিষ্য। কামদেবের বংশধর হালিশহরের জায়গিরদার লক্ষীকান্ত মজুমদারকে ১৬১০ সালে সম্রাট জাহাঙ্গীর মাগুরা, পাইকান, আনোয়ারপুর, কলকাতা ইত্যাদি একুশটি অঞ্চলের জমিদারি স্বত্ত্ব দেন। প্রতাপাদিত্য যখন রাজা বসন্ত রায়কে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন তখন থেকে প্রতাপাদিত্যের সংস্রব ত্যাগ করেছিলেন লক্ষ্মীকান্ত। লক্ষ্মীকান্ত মজুমদারের নাতি কেশবচন্দ্র মজুমদার মুর্শিদকুলি খাঁর আমলে বর্তমানের দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও খুলনা অঞ্চলের জমিদার নিযুক্ত হন।
১৭২২ সালে মুর্শিদকুলি খাঁর সময়ে মোগল আমলের শেষ জরিপে ওই পরগনাগুলিকে হুগলি চাকলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পলাশীর যুদ্ধের ছয় মাস পরে ১৭৫৭ সালে ২০শে ডিসেম্বর মীরজাফর ইংরেজদের কলকাতা সহ দক্ষিণে কুলপী পর্যন্ত ২৪টি পরগনাকে কলকাতার জমিদারি বা ২৪ পরগনার জমিদারির নামে ৮৮২ বর্গমাইল এলাকা দান করেছিলেন।[১৩]
১৭৫৯ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি লর্ড ক্লাইভকে এই ২৪টি পরগনা ব্যক্তিগত জায়গীর হিসাবে দেয়। এই সময়ে সুন্দরবনের এক বিস্তৃত অংশ ২৪ পরগনার মধ্যে ছিল না। ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম জঙ্গল কেটে সুন্দরবন অঞ্চলে বসতি ও চাষ শুরু হয়। ১৭৭৪ সালে লর্ড ক্লাইভের মৃত্যুর পর এই অঞ্চলটি আবার কোম্পানির হাতে চলে আসে। লর্ড কর্নওয়ালিস ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বলবৎ করার পর পরগনা ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
১৮২২ থেকে ১৮২৩ সালের মধ্যে বসতি ও চাষের জন্য সুন্দরবনকে লট ও প্লটে ভাগ করা হয়। নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে ১৮৫৫ সালের মহাকুমার ধারণাকে নিয়ে আসা হয় ও সমগ্র জেলাকে আটটি মহাকুমায় ভাগ করা হয়। নতুন মহাকুমার সৃষ্টি বা অদলবদলও এরপরে ঘটে। ১৮৭১ সালে কলকাতা ২৪ পরগনা জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভারতের রাজধানীতে পরিণত হয়।[৭]
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার আগে পূর্ব পাকিস্তান হবার পর যশোর জেলার বনগাঁ চব্বিশ পরগনা জেলার মধ্যে চলে আসে এবং সুন্দরবনের বৃহত্তম অংশ খুলনা ও বাখরগঞ্জের মধ্যে চলে আসে। ১৯৮৩ সালে ডঃ অশোক মিত্রের প্রসাসনিক সংস্কার কমিটি এই জেলাকে বিভাজনের সুপারিশ করে। ১৯৮৬ সালে ১লা মার্চ জেলাটিকে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা নামে দুটি জেলায় ভাগ করা হয়। দুটি জেলাই প্রেসিডেন্সি বিভাগের অন্তর্ভুক্ত।[১৪]
এই জেলাটি ২২° ১২' ১৩" ও ২২° ৪৬' ৫৫" উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৭° ৫৮' ৪৫" ও ৮৮° ২২' ১০" পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত এবং এর মোট আয়তন ৯,৯৬০ বর্গ কিলোমিটার।[১৫]
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমির দক্ষিণাঞ্চলের গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের অংশ যা বঙ্গীয় অববাহিকার সমুদ্র প্রান্তিক অঞ্চলে অবস্থিত।[১৬] এই অঞ্চল কোয়াটার্নারি অবকল্পের পলি দ্বারা গঠিত। এই পলির নিচে অন্ত্য ক্রেটেশাস থেকে প্লাইস্টোসিন যুগের অবক্ষেপ পাওয়া যায়। এর থেকে অবনমিত খাদে পলি সঞ্চয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।[১৭] এই অবক্ষেপে সমোন্নত ভাঁজ দেখা যায় এবং এর তলনতি পূর্ব-দক্ষিণপূর্ব বরাবর।[১৮]
বঙ্গীয় অববাহিকার উৎপত্তি হয়েছে ভারতীয় এবং ইউরেশীয় ভূগাঠনিক পাতের সংঘর্ষের ফলে। ইয়োসিন উপযুগের শেষাংশে এই সংঘর্ষ শুরু হয় এবং টেথিস সাগরের বিলুপ্তি এবং হিমালয় পর্বতের সৃষ্টির মধ্য দিয়ে এই অববাহিকার জন্ম হয়।[১৯] এর ফলে হিমালয়জাত নদীগুলিরও উৎপত্তি হতে থাকে। বঙ্গোপসাগর সৃষ্টি হয় এর পরে।[২০]
উত্তর ২৪টি পরগনা ও দক্ষিণ ২৪টি পরগনা জেলার প্রায় পুরোটাই পলিগঠিত সমভূমি, উত্তর থেকে দক্ষিণে সামান্য ঢালু। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা দুটি স্বতন্ত্র প্রাকৃতিক অঞ্চলে বিভক্ত। কলকাতা এবং উত্তর চব্বিশ পরগনার সীমানা জেলার উত্তর অংশটি সামুদ্রিক-নদীমাতৃক বদ্বীপের অংশ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার দক্ষিণাংশ এবং উত্তর ২৪ পরগনার দক্ষিণ পূর্বাংশ সুন্দরবন সক্রিয় বদ্বীপ অঞ্চলের অন্তর্গত। এখানে বদ্বীপ গঠনের কাজ এখনোও চলছে। সমুদ্রতল থেকে এই অঞ্চলের গড় উচ্চতা মাত্র ৩-৪ মিটার হওয়ায় এর অনেকটাই সমুদ্রজলের জোয়ারে ঢেকে যায়। সুন্দরবন অঞ্চলটি পশ্চিমবঙ্গের ১০২ টি ছোটো দ্বীপ নিয়ে গঠিত যার মধ্যে ৪৮টি দ্বীপে মানুষের বসতি রয়েছে। এই অঞ্চল এর মাটি লবণাক্ত ও কাদা প্রকৃতির এবং শ্বাসমূল ও ঠেসমূলযুক্ত ম্যানগ্রোভ অরণ্য গড়ে উঠেছে। এই কর্দমাক্ত সিক্ত বনাঞ্চল "বাদাবন" নামে পরিচিত। গরাণ, গেঁওয়া, সুঁদরি, গর্জন, হেতাঁল, গোলপাতা, কেওড়া, ধোন্দল, পশুর, বাইন, কাদড়া, ওড়া, আমুড়, হদো, বেলাসুন্দরী, গিলে, বাকঝাকা ইত্যাদি সুন্দরবনের গাছপালা। এছাড়া, শিঙ্গড়া, ভাদাল, গড়ে, খলসী, হিঙ্গে, গোলদাদ, হোগলা ইত্যাদি আগাছা এবং নানাবিধ বনৌষধি পাওয়া যায়।[২১]
১৮৩০ সালে ড্যাম্পিয়ার ও হজেস নামে দুই জন সার্ভে অফিসার সুন্দরবনের ব-দ্বীপ অঞ্চলের উত্তর সীমা নির্ধারণ করেন। এই রেখার নাম হয় ড্যাম্পিয়ার-হজেস রেখা।
দক্ষিণ ২৪টি পরগনা জেলার নদীগুলির মধ্যে হুগলি, বিদ্যাধরী, পিয়ালী, মাতলা, ইছামতী ও যমুনা প্রধান। হুগলি নদী এই জেলার পশ্চিম সীমানা ঘেঁষে প্রবাহিত। বাকি নদীগুলি গঙ্গা ও পদ্মার শাখা নদী।
১৯২৩ সালে বারুইপুরের দুই মাইল উত্তরপশ্চিমে অবস্থিত গোবিন্দপুর গ্রামে দ্বাদশ শতাব্দীর সেন রাজা লক্ষ্মণসেনের একটি তাম্রশাসন পাওয়া যায় (খাড়ি গ্রাম দ্রষ্টব্য)। এই তাম্রশাসন থেকে লক্ষ্মণসেন কর্তৃক গ্রামটি দান করার কথা জানা গিয়েছে। এই গ্রামেরই হেদোপুকুর নামে পরিচিত একটি পুরনো পুকুরের পাড়ে কারুকার্য শোভিত ইটের একটি স্তুপ দেখা যায়। গোবিন্দপুরের মাইলখানেক দক্ষিণে বেড়াল-বৈকুণ্ঠপুর গ্রামে প্রাচীন এক দুর্গের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। আরও দক্ষিণে কল্যাণপুর গ্রামে একটি জীর্ণ প্রাচীন মন্দিরে একটি শিবলিঙ্গ রয়েছে, যাঁকে রায়মঙ্গল কাব্যের ‘কল্যাণমাধব’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
বারুইপুরের পাঁচ মাইল দক্ষিণপশ্চিমে কুলদিয়া গ্রামে ১ ফুট ১০ ইঞ্চি লম্বা ও ১ ফুট চওড়া একটি সুন্দর সূর্যমূর্তি এবং সেই সঙ্গে বেলেপাথরের নৃসিংহের একটি ভাস্কর্য আবিষ্কৃত হয়েছে। জয়নগর থানার অন্তর্গত দক্ষিণ বারাসাত গ্রামে বিষ্ণু ও নৃসিংহের একাধিক মূর্তি, বিষ্ণুচক্র ও স্তম্ভ ইত্যাদি পাওয়া গিয়েছে। এখানকার সেনপাড়ায় পুকুর খননের সময় মাথায় নিখুঁত বহুগুণাবিশিষ্ট সর্পছত্রযুক্ত জৈন তীর্থংকর পার্শ্বনাথের এক নগ্নমূর্তি আবিষ্কৃত হয়। দক্ষিণ বারাসাতের দুই মাইল দক্ষিণে বড়ুক্ষেত্র বা বহড়ু গ্রামেও ছয় ফুট উচ্চতার একটি সূর্যমূর্তি পাওয়া গিয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসীরা এই বিগ্রহ লৌকিক দেবতা পঞ্চানন রূপে পূজা করে। ময়দা গ্রামে পুকুর খননের সময় দেড় ফুট উচ্চতার এক নৃত্যরত গণেশের মূর্তি পাওয়া গিয়েছে।
জয়নগরেও সূর্যমূর্তি পাওয়া গিয়েছে। মথুরাপুরে পাওয়া গিয়েছে ভূমিস্পর্শমুদ্রা-যুক্ত একটি ভাঙা বুদ্ধমূর্তি ও একটি সূর্যমূর্তি। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে মথুরাপুরের দুই মাইল দক্ষিণপশ্চিমে ঘটেশ্বর গ্রামে পুকুর খননের সময় তিনটি জৈন মূর্তি পাওয়া গিয়েছিল। এগুলির মধ্যে একটি মূর্তি কুসংস্কারবশত গ্রামবাসীরা জলে বিসর্জন দেয়, একটি বেদখল হয়ে যায় এবং তৃতীয় মূর্তিটিকে মজিলপুরের কালিদাস দত্ত নিজের সংগ্রহে এনে রাখেন। কাঁটাবেনিয়া গ্রামেও বিষ্ণু, বাসুদেব ও গণেশের মূর্তি, মন্দিরের দ্বারফলক, পাথরের বড়ো বড়ো স্তম্ভ এবং পার্শ্বনাথের একটি বড়ো মূর্তি অক্ষত অবস্থায় আবিষ্কৃত হয়েছে। পার্শ্বনাথের মূর্তিটি বর্তমানে স্থানীয় বিশালাক্ষী মন্দিরে গ্রামদেবতা পঞ্চানন রূপে পূজিত হয়।
জয়নগরের তিন মাইল দক্ষিণে উত্তরপাড়া গ্রামের জমিদারদের এক পুরনো কাছারি বাড়ির কাছে পুকুর সংস্কারের সময় তিনটি সুন্দর বিষ্ণুমূর্তি ও একটি দশভূজা দুর্গামূর্তি পাওয়া যায়। এগুলি জমিদারেরা তাঁদের উত্তরপাড়া লাইব্রেরিতে নিয়ে যান। ছত্রভোগে আবিষ্কৃত হয়েছে কুবের, বিষ্ণু ও দশভূজা দুর্গার মূর্তি এবং ব্রোঞ্জের গণেশ ও নৃসিংহ মূর্তি। আটঘড়া থেকে তাম্রমুদ্রা, মাটির পাত্রের টুকরো, পোড়ামাটির মেষ, যক্ষিণীমূর্তি, সিলমোহর, তৈজসপত্র ও পাথরের বিষ্ণুমূর্তি ইত্যাদি আবিষ্কৃত হয়েছে।
১৮৬০-এর দশকে মথুরাপুর থানার ১১৬ নং লটে পুরনো আদিগঙ্গার খাতে গভীর জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করার সময় ‘জটার দেউল’ নামে একটি পুরাকীর্তি আবিষ্কৃত হয়। একটি মতে, এখানে ‘জটাধারী’ নামে একটি শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত ছিল; আবার অন্য মতে, এখানে বড়ো বড়ো ‘জটাধারী বাঘ’ ঘুরে বেড়াত। অধিকাংশ প্রত্নতত্ত্ববিদের মতে, জটার দেউলের স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে ওডিশার দেউল স্থাপত্যশৈলীর মিল রয়েছে এবং সেই দিক থেকে ও অন্যান্য আবিষ্কৃত নিদর্শন পর্যালোচনা করে তাঁরা এটির নির্মাণকাল আনুমানিক দ্বাদশ শতাব্দী বলে মনে করেন।
১৯১৮ সালে জঙ্গল পরিষ্কার করার সময় জটার দেউলের ছয় মাইল দূরে দেউলবাড়ি নামক স্থানে (লট নং ১২২) এই ধরনের আরও একটি পুরাকীর্তির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল। যদিও বর্তমানে এটি বিলুপ্ত। এই স্থানের আধমাইল পূর্বে কম-বেশি এক বিঘা পর্যন্ত বিস্তৃত একটি অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ দেখা গিয়েছিল। ১৯২১-২২ সালে জটার দেউলের বারো-তেরো মাইল দক্ষিণপশ্চিমে জগদ্দল গাঙের কাছে বনশ্যামনগরে আরও একটি মন্দিরের অবশেষের হদিশ পাওয়া গিয়েছিল। মাটি খোঁড়ার সময় এখানে ইটের ঘর, প্রচুর ইট, মৃৎপাত্রের টুকরো ও মানুষের অস্থি-কঙ্কাল ইত্যাদি পাওয়া যায়।
বনশ্যামপুরের আট মাইল উত্তরপশ্চিমে (লট নং ১১৪) এই সময় জঙ্গলের মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় ইটের স্তুপ খুঁড়ে নিচে একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। গর্ভগৃহ ছাড়া এই মন্দিরের আর কোন অংশের চিহ্ন ছিল না। খননকালে চারটি বিষ্ণুমূর্তি (একটি ৪ ফুট, দু’টি ৩ ফুট ৪ ইঞ্চি এবং আরেকটি ৩ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা) এবং ৩ ফুট ১ ইঞ্চি লম্বা একটি দশভূজ নটরাজমূর্তি পাওয়া যায়। নটরাজমূর্তিটির গলায় আজানুলম্বিত একটি মালা ও মালার নিচে দশটি ঝোলানো নরমুণ্ড দেখা যায়। এছাড়া পাথরপ্রতিমা, রাক্ষসখালি প্রভৃতি অঞ্চলেও অষ্টধাতুর বুদ্ধমূর্তি, পাথর ও পোড়ামাটির অন্যান্য মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে।[২২]
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা অতীতের সাতগাঁ বা সপ্তগ্রাম বৃহদাঞ্চলের একটি অংশ। চব্বিশ পরগনা তৈরি হওয়ার আগে দক্ষিণবঙ্গের এই অঞ্চল সেন বংশের সময়কালে বাংলাদেশ রাঢ়, বাগড়ী, বরেন্দ্র, বঙ্গ ও মিথিলা বিভাগে বিভক্ত ছিল। এইগুলির মধ্যে বঙ্গ বিভাগ লক্ষনৌতি, সাতগাঁ বা সপ্তগ্রাম এবং সোনারগাঁ অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। আকবরের সময়ে বাংলার প্রথম জরিপে বাংলাকে ১৯টি সরকারে এবং ৫৩টি মহলে ভাগ করা হয়। এগুলির মধ্যে সপ্তগ্রামের সরকারের বিস্তৃতি ছিল উত্তরে পলাশী, পূর্বে কপোতাক্ষ, দক্ষিণে সাগরদ্বীপের হাতিয়ারগড় এবং পশ্চিমে হুগলি নদী পর্যন্ত। ১৭২২ সালে মুর্শিদকুলী খাঁয়ের সময়ে এই পরগনাগুলিকে চাকলা হুগলীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৮৬১ সালে সমগ্র জেলাকে ৮টি মহকুমায় ভাগ করা হয়। এই মহকুমাগুলি হলো ১) আলিপুর, ২) ডায়মন্ড হারবার, ৩) বারাসাত, ৪) ব্যারাকপুর, ৫) দম দম, ৬) বারুইপুর, ৭) বসিরহাট এবং ৮) সাতক্ষিরা।[২৩] ১৯৮৬ সালে চব্বিশ পরগনাকে উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় বিভক্ত করা হয়।[৭]
বর্তমানে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা পাঁচটি মহকুমায় বিভক্ত: আলিপুর সদর, বারুইপুর, ডায়মন্ড হারবার, ক্যানিং ও কাকদ্বীপ।[২৪]
এই জেলার সদর আলিপুরে অবস্থিত। জেলায় মোট ৩৩টি থানা, ২৯টি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, ৭টি পুরসভা ও ৩১২টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে।[২৪][২৫] দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার অন্তর্গত সুন্দরবন অঞ্চল তেরোটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক জুড়ে অবস্থিত: সাগর, নামখানা, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, কুলতলি, মথুরাপুর ১, মথুরাপুর ২, জয়নগর ১, জয়নগর ২, ক্যানিং, ক্যানিং ২, বাসন্তী ও গোসাবা।[২৫] জেলায় মোট ৩৭টি দ্বীপ আছে।[২৫]
পৌরসভা এলাকাগুলি ছাড়া দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার প্রত্যেকটি মহকুমার অন্তর্গত সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকগুলি আবার গ্রামীণ অঞ্চল ও জনগণনা নগরে বিভক্ত। জেলায় মোট ১১৮টি নগরাঞ্চল রয়েছে: সাতটি পুরসভা ও ১১১টি জনগণনা নগর।[২৫][২৬]
মহকুমা | সদর | আয়তন বর্গ কিমি |
জনসংখ্যা (২০১১) |
ব্লকের সংখ্যা |
পুরসভার সংখ্যা |
জনগণনা নগরের সংখ্যা |
নগরাঞ্চলীয় জনসংখ্যা % (২০১১) |
গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা |
গ্রামের সংখ্যা |
গ্রামীণ জনসংখ্যা % (২০১১) |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
আলিপুর সদর | আলিপুর | ৪২৭.৪৩ | ১৪,৯০,৩৪২ | ৫ | ৩ | ৩৬ | ৫৯.৮৫ | ৪৩ | ২৪৩ | ৪০.১৫ |
বারুইপুর | বারুইপুর | ১,৩৫৫.৪৪ | ২৩,৯৬,৬৪৩ | ৭ | ৩ | ৩০ | ৩১.০৫ | ৮০ | ৪৮২ | ৬৮.৯৫ |
ক্যানিং | ক্যানিং | ১,১০৩.৭৩ | ১১,৪০,৫৬২ | ৪ | ০ | ১০ | ১২.৩৭ | ৪৬ | ২২৮ | ৮৭.৬৩ |
ডায়মন্ড হারবার | ডায়মন্ড হারবার | ১,২৬৪.৬৮ | ২১,২৫,৭৫৮ | ৯ | ১ | ৩৫ | ১৪.৬১ | ৯৯ | ৮৩৯ | ৮৫.৩৯ |
কাকদ্বীপ | কাকদ্বীপ | ১,৩৮৯.৯৩ | ১,০০৮,৬৫৩ | ৪ | ০ | ০ | ০ | ৪২ | ২০২ | ১০০ |
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা | আলিপুর | ৯,৯৬০.০০ | ৮১,৬১,৯৬১ | ২৯ | ৭ | ১১১ | ২৫.৫৮ | ৩১০ | ১৯৯৪ | ৭৪.৪২[২৭] |
আলিপুর সদর মহকুমার অন্তর্গত এলাকাগুলি হল:[২৪]
কাকদ্বীপ মহকুমা নিম্নলিখিত অঞ্চলগুলি নিয়ে গঠিত:[২৪]
ক্যানিং মহকুমা নিম্নলিখিত অঞ্চলগুলি নিয়ে গঠিত:[২৪]
ডায়মন্ড হারবার মহকুমা নিম্নলিখিত অঞ্চলগুলি নিয়ে গঠিত:[২৪]
বারুইপুর মহকুমা নিম্নলিখিত অঞ্চলগুলি নিয়ে গঠিত:[২৪]
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার মোট জনসংখ্যা ৮,১৬১,৯৬১,[৩] যা হন্ডুরাস রাষ্ট্র[২৯] অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় সমান।[৩০] ভারতের মোট ৬৪০টি জেলার মধ্যে জনসংখ্যার নিরিখে এই জেলার স্থান ষষ্ঠ।[৩] জেলার জনঘনত্ব ৮১৯ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার (২,১২০ জন/বর্গমাইল)।[৩] ২০০১-২০১১ দশকে এই জেলার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১৮.০৫ শতাংশ।[৩] দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার লিঙ্গানুপাতের হার হল প্রতি ১০০০ পুরুষে ৯৪৯ জন মহিলা[৩] এবং সাক্ষরতার হার ৭৮.৫৭ শতাংশ।[৩]
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার নিম্নলিখিত পুরসভা ও জনগণনা নগরগুলি ২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী কলকাতা মহানগরীয় অঞ্চলের অন্তর্গত (পুরসভা ও জনগণনা নগরগুলি বন্ধনীর মধ্যে যথাক্রমে "পু." ও "জ. ন." হিসাবে উল্লিখিত): জোকা (জ. ন.), চটা কালিকাপুর (জ. ন.), গন্যে গঙ্গাধরপুর (জ. ন.), রামেশ্বরপুর (জ. ন.), অসুতি (জ. ন.), হাঁসপুকুরিয়া (জ. ন.), কালুয়া (জ. ন.), রামচন্দ্রপুর (জ. ন.), সামালি (জ. ন.), মহেশতলা (পু.), উত্তর রায়পুর (জ. ন.), বলরামপুর (জ. ন.), বুইটা (জ. ন.), বেনজানহারি আচারিয়াল (জ. ন.), অভিরামপুর (জ. ন.), নিশ্চিন্তপুর (জ. ন.), বিড়লাপুর (জ. ন.), চক কাশীপুর (জ. ন.), চক আলমপুর (জ. ন.), বোওয়ালি (জ. ন.), দক্ষিণ রায়পুর (জ. ন.), পোয়ালি (জ. ন.), পূজালি (পু.), বজবজ (পু.), দৌলতপুর (জ. ন.), ভাসা (জ. ন.), বিষ্ণুপুর (জ. ন.), কন্যানগর (জ. ন.), নহাজারি (জ. ন.), নাদাভাঙা (জ. ন.), কঙ্গনবেড়িয়া (জ. ন.), বোড়া গগনগোহালিয়া (জ. ন.), চন্দনদহ (জ. ন.), বড়কালিকাপুর (জ. ন.), পাথরবেড়িয়া (জ. ন.), রামকৃষ্ণপুর (জ. ন.), আমতলা (জ. ন.), কৃপারামপুর (জ. ন.), চক এনায়েতনগর (জ. ন.), মরিচা (জ. ন.), ভাঙর রঘুনাথপুর (জ. ন.), গোবিন্দপুর (জ. ন.), রাধানগর (জ. ন.), দাংগা (জ. ন.), রামচন্দ্রপুর (জ. ন.), বিদ্যাধরপুর (জ. ন.), কালিকাপুর (জ. ন.), চক বেড়িয়া (জ. ন.), সাহেবপুর (জ. ন.), রাজপুর সোনারপুর (পু.), পেটুয়া (জ. ন.), গড়িয়া (জ. ন.), পাঁচঘড়া (জ. ন.), মল্লিকপুর (জ. ন.), হরিহরপুর (জ. ন.), চম্পাহাটি (জ. ন.), সোলগোহালিয়া (জ. ন.), নারিদানা (জ. ন.), সালিপুর (জ. ন.), খোদার বাজার (জ. ন.), কোমারহাট (জ. ন.), বারুইপুর (পু.), রায়নগর (জ. ন.), কালিকাপুর বারাসাত (জ. ন.), বহড়ু (জ. ন.), উত্তরপারাঞ্জি (জ. ন.), আলিপুর (জ. ন.), উত্তর দুর্গাপুর (জ. ন.) ও জয়নগর মজিলপুর (পু.).[৩১]
২০০১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার মোট জনংখ্যার ৯৭.৯ শতাংশের মাতৃভাষা বাংলা; ১.৫ শতাংশের মাতৃভাষা হিন্দি, ০.৩ শতাংশের মাতৃভাষা উর্দু এবং ওড়িয়া ও তেলুগু-ভাষী লোকের সংখ্যা ০.১ শতাংশ করে।[৩৪]
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় ১৯৬১ সালে হিন্দু জনসংখ্যার হার ছিল ৭৬.০ শতাংশ; ২০১১ সালে তা কমে হয় ৬৩.২ শতাংশ। একই সময়কালে জেলার মুসলমান জনসংখ্যার হার ২৩.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে হয় ৩৫.৬ শতাংশ। ২০১১ সালে জেলায় খ্রিস্টান জনসংখ্যার হার ছিল ০.৮ শতাংশ।[৩৫]
২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় সাক্ষরতার হার ৭৭.৫১ শতাংশ। আলিপুর সদর মহকুমায় সাক্ষরতার হার ৮১.১৪ শতাংশ, বারুইপুর মহকুমায় ৭৭.৪৫ শতাংশ, ক্যানিং মহকুমায় ৭০.৯৮ শতাংশ, ডায়মন্ড হারবার মহকুমায় ৭৬.২৬ শতাংশ এবং কাকদ্বীপ মহকুমায় সাক্ষরতার হার ৮২.০৪ শতাংশ।[৩৬]
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার উল্লেখযোগ্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি হল ডায়মন্ড হারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়,[৩৭] নেওটিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (সরিষা)[৩৮] ও ডায়মন্ড হারবার সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।[৩৯]
নিচের সারণিতে ২০১৩-১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার শিক্ষাব্যবস্থার একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরা হল (তথ্যপরিসংখ্যান সংখ্যায় প্রদত্ত হয়েছে):[৩৬]
মহকুমা | প্রাথমিক বিদ্যালয় |
মধ্য বিদ্যালয় |
উচ্চ বিদ্যালয় |
উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় |
সাধারণ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় |
প্রযুক্তি / পেশাকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান |
অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান | ছাত্রছাত্রী | শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান | ছাত্রছাত্রী | শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান | ছাত্রছাত্রী | শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান | ছাত্রছাত্রী | শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান | ছাত্রছাত্রী | শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান | ছাত্রছাত্রী | শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান | ছাত্রছাত্রী | |
আলিপুর সদর | ৫৩১ | ৫৩,৭১৯ | ৩৪ | ৪,৪৫৫ | ৫০ | ১৬,৪৭১ | ৯১ | ৬৬,৮১৩ | ৫ | ৮,১২২ | ৬ | ৩,০৯৪ | ১,৩৭৯ | ৫৩,৪২৯ |
বারুইপুর | ৮৮৩ | ১৩২,৬৪৯ | ৬৫ | ৮,৯৫৪ | ৫০ | ২৬,৪৪৩ | ১২৮ | ১২৯,১৯৫ | ৮ | ২৭,৬৫৭ | ৭ | ৬,৭৩৫ | ৩,১১৬ | ১৩৮,৫০৭ |
ক্যানিং | ৫৩২ | ৮১,৬৯৭ | ৫৯ | ৯,১৮১ | ২৯ | ১০,৫১৫ | ৫৫ | ৫৭,৯২১ | ৪ | ৫,৪৯০ | ১ | অজ্ঞাত | ২,১০৫ | ৯৬,৬২২ |
ডায়মন্ড হারবার | ১,২১২ | ১১৬,৪০৭ | ৬১ | ৬,৬৮০ | ৯৮ | ৩৮,৪৭০ | ১৪৫ | ১১৩,১৪৭ | ৭ | ২০,০৬১ | ৫ | ১,৭৭৪ | ৩,১৪০ | ১৩৭,৩৭৮ |
কাকদ্বীপ | ৫৯৮ | ৫৩,০৫৮ | ৪৫ | ৫,৬৫৪ | ৪৮ | ২০,৩৮৩ | ৮২ | ৫৬,১৯২ | ৩ | ৫,৪২০ | ১ | ১০০ | ১,৮৪৪ | ৭৮,৮৯৭ |
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা* | ৩,৭৫৬ | ৪৩৭,৫৩০ | ২৬৪ | ৩৪,৯২৪ | ২৭৫ | ১১৮,২৮২ | ৫০১ | ৪২৩,২৬৮ | ২৭ | ৬৬,৭৫০ | ২০ | ১১,৭০৩ | ১১,৫৮৪ | ৫০৪,৮৩৩ |
* দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার যে অংশগুলি কলকাতা পৌরসংস্থার অন্তর্ভুক্ত সেখানকার তথ্য সংযোজিত হয়নি।
নিচের সারণিতে (সকল তথ্য সংখ্যায় দেওয়া হল) ২০১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সকল হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রে লভ্য চিকিৎসা পরিষেবার বিবরণ দেওয়া হল:[৪০]
মহকুমা | স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ | অন্যান্য রাজ্য সরকারি বিভাগ |
স্থানীয় সংস্থা |
কেন্দ্রীয় সরকারি বিভাগ/ পিএসইউ |
এনজিও / বেসরকারি নার্সিং হোম |
মোট | মোট শয্যাসংখ্যা |
মোট চিকিৎসকের সংখ্যা |
অন্তর্বিভাগীয় রোগী |
বহির্বিভাগীয় রোগী | |||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
হাসপাতাল |
গ্রামীণ হাসপাতাল |
ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র |
প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র | ||||||||||
আলিপুর সদর | - | ৩ | ৩ | ৭ | ১ | ৩ | - | ৪৮ | ৬৫ | ১,১৫৯ | ১৯৯ | ৩৩,৪৯৮ | ৬৩৩,২৩৩ |
বারুইপুর | ১ | ৬ | ১ | ১৮ | - | ২ | - | ৬৬ | ৯৪ | ১,০৪৫ | ২০১ | ৪৮,১১৪ | ১,২৬৬,২৪৪ |
ক্যানিং | ১ | ৩ | ১ | ৬ | - | - | - | ১৫ | ২৬ | ৩৫১ | ৪৯ | ২২,৪৬৭ | ৬৬৬,৩৭৭ |
ডায়মন্ড হারবার মহকুমা | ১ | ৬ | ৩ | ১৭ | - | - | - | ৬৮ | ৯৫ | ১০৭৭ | ১৬৯ | ৬৫,০৫১ | ১,৩২৫,৫৩৫ |
কাকদ্বীপ | ১ | ৩ | ১ | ১১ | - | - | - | ২০ | ৩৬ | ৪৫৮ | ৭৩ | ২৮,৭০৭ | ৪০৫,৫০১ |
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা | ৪ | ২১ | ৯ | ৫৯ | ১ | ৫ | - | ২১৭ | ৩১৬ | ৪,০৯০ | ৬৯১ | ১৯৭,৮৩৭ | ৪,৩৯৭,৮৯০ |
দ্র: জেলাওয়াড়ি তথ্যের মধ্যে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার যে অংশগুলি কলকাতা পৌরসংস্থার অন্তর্গত সেখানকার তথ্য সংযোজিত হয়নি। চিকিৎসকদের সংখ্যা বেসরকারি বাদে দেখানো হয়েছে।
২০০৫ সালে একটি গ্রামীণ গৃহস্থালী সমীক্ষায় জানা যায়, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার মোট জনসংখ্যার ৩৪.১১ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে, যা রাজ্য ও জাতীয় দারিদ্র্য অনুপাতের অনেক উপরে। উল্লেখ্য, সুন্দরবনের জনবসতি এলাকায় অবস্থিত তেরোটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের নথিবদ্ধ দারিদ্র্য অনুপাত নিম্ন দারিদ্র্যসীমায় অবস্থানকারী জনসংখ্যার ৩০ শতাংশের উপরে এবং আটটি ব্লকের ক্ষেত্রে এই হার ৪০ শতাংশের উপরে।[৪১]
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা অনুন্নত অঞ্চলের তালিকাভুক্ত। এই জেলাটি অনুন্নত অঞ্চল অনুদান তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্য লাভ করে। ভারত সরকার সৃষ্ট এই তহবিল গঠনের উদ্দেশ্য ছিল উন্নয়নের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ। ২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী, দেশের মোট ২৭২টি জেলা এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত, যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের এগারোটি জেলা রয়েছে।[৪২][৪৩]
মৎস্যচাষ সমগ্র দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার জীবিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ২০০১ সালের হিসাব অনুযায়ী, সাড়ে চার লক্ষেরও বেশি লোক এই জেলায় মৎস্যচাষের সঙ্গে যুক্ত। এদের মধ্যে ২.৫৭ লক্ষ মানুষের বাস সুন্দরবন বসতি অঞ্চলের তেরোটি ব্লকে।[৪৪]
১৯৯১ সালের জনগণনার ভিত্তিতে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলাকে বত্রিশটি বিধানসভা কেন্দ্রে বিভক্ত করা হয়:
গোসাবা, বাসন্তী, কুলতলি, ক্যানিং পশ্চিম, সোনারপুর, বিষ্ণুপূর্ব পূর্ব, মগরাহাট পূর্ব, মন্দিরবাজার ও কুলপি বিধানসভা কেন্দ্রগুলি ছিল তফসিলি জাতি-তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্গত একটি বিধানসভা কেন্দ্র এবং গোসাবা, বাসন্তী, কুলতলি, জয়নগর, ক্যানিং পশ্চিম ও ক্যানিং পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে গঠিত জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রটিও তফসিলি জাতি-তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র গঠিত হয়েছিল বারুপুর, বিষ্ণুপুর পূর্ব, কবিতীর্থ, যাদবপুর, বেহালা পশ্চিম, বেহালা পূর্ব ও মগরাহাট পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে। বিষ্ণুপুর পশ্চিম, গার্ডেনরিচ, মহেশতলা, বজবজ, সাতগাছিয়া, ফলতা ও ডায়মন্ড হারবার বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে গঠিত হয়েছিল ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রটি। মগরাহাট পূর্ব, মন্দিরবাজার, মথুরাপুর, কুলপি, পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ ও সাগর বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে গঠিত হয় মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্র। এই কেন্দ্রটিও তফসিলি জাতি-তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত হয়। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্গত ছয়টি বিধানসভা কেন্দ্র-সহ ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্রটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে। কলকাতা জেলার অন্তর্গত অন্য তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র এবং আলিপুর, ঢাকুরিয়া, টালিগঞ্জ ও সোনারপুর বিধানসভা কেন্দ্রগুলি ছিল কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত।
২০০৮ সালে সীমানা-পুনর্নির্ধারন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ও লোকসভা কেন্দ্রগুলির সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়। এই সময় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলাকে একত্রিশটি বিধানসভা কেন্দ্রে বিভক্ত করা হয়। বারুইপুর পূর্ব, বাসন্তী, ক্যানিং পশ্চিম, গোসাবা, কুলতলি, জয়নগর, মগরাহাট পূর্ব ও মন্দিরবাজার বিধানসভা কেন্দ্রগুলি তফসিলি জাতি-তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়।[৪৫][৪৬]
জয়নগর লোকসভা কেন্দ্র |
মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্র |
ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্র | যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র |
কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্র | |||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
বিধানসভা কেন্দ্র |
নং | বিধানসভা কেন্দ্র |
নং | বিধানসভা কেন্দ্র |
নং | বিধানসভা কেন্দ্র |
নং | বিধানসভা কেন্দ্র |
নং |
গোসাবা (ত.জা.) | ১২৭ | পাথরপ্রতিমা | ১৩০ | ডায়মন্ড হারবার | ১৪৩ | বারুইপুর পূর্ব (ত.জা.) | ১৩৭ | কসবা | ১৪৯ |
বাসন্তী (ত.জা.) | ১২৮ | কাকদ্বীপ | ১৩১ | ফলতা | 144 | বারুইপুর পশ্চিম | ১৪০ | বেহালা পূর্ব | ১৫৩ |
কুলতলি (ত.জা.) | ১২৯ | সাগর | ১৩২ | সাতগাছিয়া | ১৪৫ | সোনারপুর দক্ষিণ | ১৪৭ | বেহালা পশ্চিম | ১৫৪ |
জয়নগর (ত.জা.) | ১৩৬ | কুলপি | ১৩৩ | বিষ্ণুপুর (ত.জা.) | ১৪৬ | ভাঙড় | ১৪৮ | ||
ক্যানিং পশ্চিম (ত.জা.) | ১৩৮ | রায়দিঘি | ১৩৪ | মহেশতলা | ১৫৫ | যাদবপুর | ১৫০ | ||
ক্যানিং পূর্ব | ১৩৯ | মন্দিরবাজার (ত.জা.) | ১৩৫ | বজবজ | ১৫৬ | সোনারপুর উত্তর | ১৫১ | ||
মগরাহাট পূর্ব (ত.জা.) | ১৪১ | মগরাহাট পশ্চিম | ১৪২ | মেটিয়াবুরুজ | ১৫৭ | টালিগঞ্জ | ১৫২ |
গঙ্গাসাগর বা সাগর দ্বীপের ইতিহাস বহু প্রাচীন। বাল্মীকি রামায়ণে রসাতলে কপিল মুনির আশ্রম বলে উল্লেখ আছে।এই অন্চলই পাতাল বা রসাতল।পাতঞ্জলী ও পানিণী যে কালকবনের উল্লেখ করেছেন তা সুন্দরবন বলে অনেকে মনে করেন। কপিল মুনি সাংখ্য দর্শন প্রণেতা।আধুনিক বিশ্বেও এর আলোচনা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলার মতো দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলাতেও অসংখ্য মেলা আয়োজিত হয়। এগুলির মধ্যে প্রধান মেলাগুলি হল: গঙ্গাসাগর মেলা, জয়নগরের দোল উৎসবের মেলা, মজিলপুরের ধন্বন্তরির বেশের মেলা, বড়িশার চণ্ডীমেলা ও আছিপুরের চীনা মন্দিরের মেলা।
প্রতি বছর মকর সংক্রান্তি (পৌষ সংক্রান্তি) উপলক্ষ্যে সাগর দ্বীপের দক্ষিণে গঙ্গাসাগরের কপিল মুনি মন্দিরে পূজা ও মেলা আয়োজিত হয়। সারা ভারত থেকে সাধুসন্ন্যাসী ও তীর্থযাত্রীরা এই মেলা উপলক্ষ্যে গঙ্গাসাগরে আসেন এবং সাগরসঙ্গমে (গঙ্গা নদীর মোহনা) স্নান করেন। বর্তমান কপিল মুনি মন্দিরটি নির্মিত হয় ১৮৯৯ সালে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং রামকৃষ্ণ মিশন ও ভারত সেবাশ্রম সংঘের মতো ধর্মীয় সংস্থাগুলি তীর্থযাত্রীদের সহযোগিতা করে থাকে। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে গঙ্গাসাগরে তিন দিন স্নানের বিধি রয়েছে। সংক্রান্তির আগের দিন "বাউনি", সংক্রান্তির স্নান এবং পরদিন অর্থাৎ পয়লা মাঘ উত্তরায়ণ স্নান। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, উত্তরায়নের দিন গঙ্গার পুত্র ভীষ্ম দেহত্যাগ করেছিলেন। মেলাও এই তিন দিনই চলে। মেলায় চাল, ডাল, চিড়ে, মুড়ি, তরিতরকারি, নানা রকম খাদ্যদ্রব্য, কাঠের জিনিস, পাথরের বাসনপত্র, লোহার জিনিসপত্র ইত্যাদি বিক্রি হয়।[৪৭]
প্রতি বছর দোল পূর্ণিমায় জয়নগরে দুর্গাপুর গ্রামের আরাধ্য দেবতা শ্যামসুন্দরের মন্দিরে পক্ষকাল ব্যাপী উৎসব ও মেলা আয়োজিত হয়। কথিত আছে, ষোড়শ শতাব্দীতে সুন্দরবন অঞ্চলের তদনীন্তন শাসক প্রতাপাদিত্য রায়ের আত্মীয় বসন্ত রায় আদিগঙ্গার তীরে খাড়ি ছত্রভোগের জঙ্গলের মধ্যে এক বৈষ্ণব মন্দিরে রাধাবল্লভ, মদনমোহন ও শ্যামসুন্দর নামে তিনটি কৃষ্ণবিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। একবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে জলস্ফীতি ও ভূমিকম্পের ফলে এই স্থান সম্পূর্ণ জনশূন্য হয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে দক্ষিণ বিষ্ণুপুর থেকে এক তান্ত্রিক জঙ্গলে এসে মূর্তিগুলি দেখতে পান এবং সেগুলিকে উদ্ধার করে জয়নগরের জমিদারকে প্রদান করেন। তারপর থেকেই এই দোল উৎসব ও মেলার সূচনা হয়।[৪৮]
Honduras 8,143,564
Virginia 8,001,024
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |