দক্ষিণরায় হলেন বাংলাদেশ ও ভারতের সুন্দরবন অঞ্চলে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে পূজিত এক লোকদেবতা। তাঁকে পশু ও দানবদের নিয়ন্ত্রক বা বাঘের রাজা মনে করা হয়। সুন্দরবনের অধিবাসীরা দক্ষিণরায়কে সুন্দরবনের ভাটি অঞ্চলের অধিপতি মনে করেন।[১][২][৩] অপর এক লোকদেবী বনবিবি ও পীর বড়খাঁ গাজীর সাথে দক্ষিণ রায়ের বিরোধের কথা সুন্দরবনের লোককাহিনী, সংস্কৃতি, পালাগানের অঙ্গ।
স্থানীয় কিংবদন্তি অনুসারে, দক্ষিণরায়ের রাজত্বের সীমা দক্ষিণে কাকদ্বীপ, উত্তরে ভাগীরথী নদী, পশ্চিমে ঘাটাল ও পূর্বে বাকলা জেলা। প্রত্যেক অমাবস্যায় দক্ষিণরায় মন্দিরে পশুবলি হয়। লোকবিশ্বাস অনুসারে দক্ষিণরায় গানবাজনা পছন্দ করেন। তাই স্থানীয় লোকেরা রাতে তার মন্দিরে নাচগানের আসর বসান। দক্ষিণ রায়ের বার্ষিক পূজা উপলক্ষে গায়েনরা পালাক্রমে কবি কৃষ্ণরাম দাস রচিত রায়মঙ্গল পরিবেশন করে এবং বাউল্যা, মউল্যা, মলঙ্গি প্রভৃতি শ্রমজীবী মানুষেরা হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে এ গান ভক্তিভরে শ্রবণ করেন[৪]। সুন্দরবনের অধিবাসীরা ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে মাছধরা, কাষ্ঠ বা মধু আহরণের মতো কোনো কাজে যাওয়ার আগে দক্ষিণরায়ের মন্দিরে পূজা দেন। কেউ কেউ মাথার পিছন দিকে দক্ষিণরায়ের মুখোশ পরে জঙ্গলে ঢোকেন যাতে বাঘ সেই মুখোশ দেখে ভয় পেয়ে তার কাছে না আসে।[২]
কলকাতার গড়িয়া রেলস্টেশনের কাছে লক্ষ্মীকান্তপুর ও ধপধপির কয়েক মেইল দূরে একটি দক্ষিণরায় মন্দির আছে। এই অঞ্চলটি এক সময়ে সুন্দরবনের অন্তর্গত ছিল। এখনও এই অঞ্চলের অধিবাসীরা দক্ষিণরায় মন্দিরে পূজা দেন। দক্ষিণরায়ের মূর্তিতে একটি বিরাট গোঁফ দেখা যায়। তার শরীর শীর্ণ, চকচকে এবং হলদেটে। গায়ে বাঘের মতো ডোরাকাটা দাগ দেখা যায়। মুখের দুদিক থেকেই লালা ঝরে। তার একটি ছয় মিটার দীর্ঘ লেজও আছে।
কবি কৃষ্ণরাম দাসের রায়মঙ্গল, ছাড়াও হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, দীনেশচন্দ্র সেন, নীহাররঞ্জন রায়, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় দক্ষিণরায় সম্পর্কে লিখেছেন।[৫] রাজশেখর বসু (পরশুরাম)র বিখ্যাত ছোটগল্পে এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর কিশোর রহস্য উপন্যাস 'জংগলের মধ্যে গম্বুজ' বইতে দক্ষিণরায়ের কথা আছে।
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)