দারুল আমান প্রাসাদ | |
---|---|
قصر دارالامان - د دارالامان ماڼۍ | |
সাধারণ তথ্যাবলী | |
অবস্থা | ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের শততম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে পুনর্নির্মিত |
ধরন | প্রাসাদ |
স্থাপত্যশৈলী | নব্যধ্রুপদীয় |
দেশ | আফগানিস্তান |
নির্মাণ শুরু | ১৯২৫ |
সম্পূর্ণ | ১৯২৭ |
উদ্বোধন | ১৯ আগস্ট ২০১৯ (সংস্কার) |
সংস্কার | ২০১৬-২০১৯ |
সংস্কার ব্যয় | $২০ মিলিয়ন |
উচ্চতা | ১০৭ ফুট (৩৩ মিটার) |
কারিগরী বিবরণ | |
তলার সংখ্যা | ৩ |
নকশা ও নির্মাণ | |
স্থপতি | ওয়াল্টার হার্টেন এ. গদার এম. গদার |
অন্যান্য তথ্য | |
কক্ষসংখ্যা | ১৫০ |
দারুল আমান প্রাসাদ ( ফার্সি: قصر دارالامان ; পশতু: د دارالامان ماڼۍ ; "শান্তির বাসস্থান" বা অন্য অর্থে "আমানের [উল্লাহ] বাসস্থান")[১] আফগানিস্তানের কাবুলের কেন্দ্র থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় ১৬ কিলোমিটার (৯.৯ মাইল) দূরে অবস্থিত একটি প্রাসাদ । এটি আফগান সংসদের ঠিক বিপরীতে এবং আফগানিস্তানের জাতীয় জাদুঘর ও আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটে অবস্থিত।
২০১৯ সালের ১৯ আগস্ট, প্রাসাদটি আফগানিস্তানের শততম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে পুনর্নির্মিত হয়।[২][৩]
আফগানিস্তানের আধুনিকীকরণের জন্য বাদশাহ আমানউল্লাহ খানের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ১৯২০-এর দশকের শুরুর দিকে দারুল আমান প্রাসাদ নির্মাণ শুরু হয়। এটি দারুলআমান নামের নতুন রাজধানী শহরের অংশ হওয়ার কথা ছিল, যা একটি ন্যারো গেজ রেলপথ দ্বারা কাবুলের সাথে সংযুক্ত ছিলো।[৪] আমানউল্লাহ খান প্রাসাদটি নির্মাণের জন্য জার্মানি ও ফ্রান্স থেকে ২২ জন স্থপতি আমন্ত্রণ করেন।[৫] প্রাসাদটি আফগান-জার্মান সম্পর্কের একটি সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেহেতু এর নকশা জার্মান প্রকৌশলী ওয়াল্টার হার্টেন এবং তার দল কর্তৃক করা হয়েছে।[৬]
এই নব্যধ্রুপদীয় প্রাসাদটি আফগানিস্তানের রাজধানীর পশ্চিম অংশে একটি সমতল, ধুলোময় উপত্যকা উপেক্ষাকারী একটি পাহাড়ের উপর স্থাপিত। ফরাসি স্থপতি এ. গদার ও এম. গদার এর পাশাপাশি জার্মান স্থপতিদের দ্বারা নকশাকৃত এই ভবনটি দেশের প্রথম দিকের ভবন যাতে কেন্দ্রীয় হিটিং এবং উন্নত জল সরবরাহ ব্যবস্থা বিদ্যমান।[৩][৭] হাবিবউল্লাহ কালাকানির অধীনে ধর্মীয় রক্ষণশীলরা ১৯২৯ সালে আমানউল্লাহকে ক্ষমতা থেকে জোর করে সরিয়ে দিয়ে তার সবরকম সংস্কার স্থগিত করার পর ভবনটি বহু বছর ধরে অব্যবহৃত এবং আংশিক সম্পন্ন অবস্থায় ছিলো। পরবর্তী বছরগুলোতে এটি কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল স্কুল, গুদাম এবং বেশ কয়েকটি ছোট ছোট মন্ত্রণালয়ের আসন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।[৩]
১৯৬৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর আগুন লেগে ভবনটি ভস্মীভূত হয়, পরবর্তীতে পুনরুদ্ধার করে ১৯৭০-৮০ এর দশকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৮৭৮ সালের কমিউনিস্ট অভ্যুত্থানের সময় ভবনটিতে আবার আগুন দেওয়া হয়। ১৯৯০ সালের ৬ মার্চ শাহনাওয়াজ তানাই এর ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সময় ট্যাংকের গোলার আঘাতে ভবনের অধিকাংশ অংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।[৮] ১৯৯০-এর দশকে মুজাহিদীন দলগুলোর কাবুল দখলের লড়াই এর সময় এটি আবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুজাহিদদের প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ ভবনটিকে ধ্বংস করে দেয়। এসময় ভবনের গ্যারেজে রক্ষিত সাবেক রাজার বাহনগুলো সরিয়ে জায়গাটিকে টার্গেট অনুশীলনের স্থল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে বাহনগুলো ধ্বংস করা হয়। ২০০০ এর দশকের শুরুর দিক পর্যন্ত এটি মূলত একটি শরণার্থী শিবির এবং একটি যাযাবর বসতি হিসাবে ব্যবহৃত হয়, এরপর এটিকে আফগান জাতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর করা হয়।[৩]
২০০৫ সালে, আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ সংসদ হিসাবে ব্যবহারের জন্য প্রাসাদটি সংস্কারের একটি পরিকল্পনা উন্মোচিত হয়।[৯] প্রাথমিকভাবে বিদেশী এবং ধনী আফগানদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত অনুদানের মাধ্যমে এর অর্থায়নের কথা ছিলো। ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল, তালিবান কর্তৃক দায় স্বীকারকৃত একটি ধারাবাহিক হামলার বেশ কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে অন্যতম ছিলো এই প্রাসাদটি।[১০] অবশেষে ভারত কর্তৃক প্রদত্ত অনুদানের মাধ্যমে সংসদ গঠনের জন্য প্রাসাদটির বিপরীতে একটি নতুন ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যার নির্মাণ ২০১৫ সালে সম্পন্ন হয়।
১৯১৯ সালে আফগানিস্তানের স্বাধীনতার শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রাসাদটি সংস্কারের উদ্দেশ্যে, ২০১৬ সালের শুরুতে, একটি $২০ মিলিয়ন মূল্যের পুনরুদ্ধার প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ১৫০ কক্ষের এই ভবন থেকে প্রায় ৬০০ টন ধ্বংসাবশেষ প্রাথমিকভাবে অপসারণ করা হয় এবং ২০১৭ সালের বসন্তকাল অবধি, শ্রমিকরা ভেতরের দেয়াল থেকে প্লাস্টার এবং কংক্রিট অপসারণের কাজ শুরু করে।[৩] ৮০ জনেরও বেশি প্রকৌশলী এবং স্থপতি এই প্রকল্পের সাথে জড়িত ছিলেন, যার মধ্যে ২৫ শতাংশই ছিলেন নারী। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঘোষণা করা হয় ভবনটির প্রায় ৫০ শতাংশ সংস্কারকার্য সম্পন্ন হয়েছে এবং তারপর ২০১৯ সালের জুলাই মাসে সংস্কারকাজটি পুরোপুরিভাবে সম্পন্ন হয়।[১১]
আফগানিস্তানে করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর কালে, ২০২০ সালের ১৮ এপ্রিল, প্রাসাদটিকে ২০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি কোভিড-১৯ চিকিৎসা কেন্দ্রে রূপান্তরিত করে একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।[১২][১৩]
ইউরোপীয় নব্যধ্রুপদীয় ধাচে নির্মিত এই প্রাসাদটি একটি ইউ-আকৃতির ইট-নির্মিত ভবন। একটি অর্ধবৃত্তাকার প্রধান হল সহ এতে ১৫০ টি কক্ষ ও তিনটি তলা রয়েছে। ভবনটির সর্বোচ্চ বিন্দু সমতল থেকে প্রায় ৩৩ মিটার (১০৮ ফুট) উঁচুতে অবস্থিত। এর ছাদে চারটি গম্বুজ রয়েছে। তৃতীয় তলার দক্ষিণ দিকের গ্যালারিগুলো বেশ কিছু করিন্থীয় স্তম্ভ দ্বারা সজ্জিত। প্রত্যেকটি তলাই মার্বেল নির্মিত সর্পিলাকার সিঁড়ি দ্বারা যুক্ত।[১৪][১৫][১৬]