দি ইমিটেশন গেম | |
---|---|
The Imitation Game | |
পরিচালক | মর্টেন টাইলডাম |
প্রযোজক |
|
চিত্রনাট্যকার | গ্রাহাম মুর |
উৎস | অ্যান্ড্রু হজ কর্তৃক অ্যালান টুরিং: দি এনিগমা |
শ্রেষ্ঠাংশে | |
সুরকার | আলেকসঁদ্র দেসপ্লা |
চিত্রগ্রাহক | অস্কার ফাউরা |
সম্পাদক | উইলিয়াম গোল্ডেনবার্গ |
পরিবেশক | |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ১১৪ মিনিট[১] |
দেশ | মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র[২][৩] |
ভাষা | ইংরেজি |
নির্মাণব্যয় | $১৪ মিলিয়ন[৪] |
আয় | $২৩৩.৬ মিলিয়ন[৫] |
দি ইমিটেশন গেম ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি ইতিহাস-আশ্রিত নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র। এটি পরিচালনা করেছেন মর্টেন টাইলডাম এবং অ্যান্ড্রু হজের ১৯৮৩ সালে রচিত জীবনী অ্যালান টুরিং: দি এনিগমা অবলম্বনে এর চিত্রনাট্য লিখেছেন গ্রাহাম মুর। চলচ্চিত্রের শিরোনামটি অ্যালান টুরিঙের ১৯৫০ সালের সেমিনাল পেপার "কম্পিউটিং মেশিনারি অ্যান্ড ইনটেলিজেন্স"-এ "মেশিন কি চিন্তা করতে পারে?" এই প্রশ্নের উত্তরে প্রস্তাবিত গেমের নামের থেকে নেওয়া হয়েছে। এই চলচ্চিত্রে বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ ব্রিটিশ তথ্যগুপ্তিবিদ্যা বিশ্লেষক অ্যালান টুরিং চরিত্রে অভিনয় করেন। টুরিং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকারের হয়ে জার্মান গোয়েন্দাদের বার্তা বিশ্লেষণ করে অর্থ খুঁজে বের করতেন। এতে অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেন কিয়ারা নাইটলি, ম্যাথু গুড, ররি কিনেয়ার, চার্লস ড্যান্স, ও মার্ক স্ট্রং।
দি ইমিটেশন গেম ২০১৪ সালের ২৮শে নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটি $১৪ মিলিয়ন নির্মাণব্যয়ের বিপরীতে বিশ্বব্যাপী $২৩৩ মিলিয়নের অধিক আয় করে, যা ২০১৪ সালের সর্বোচ্চ আয়কারী স্বাধীন চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি ৮৭তম একাডেমি পুরস্কারে আটটি বিভাগে মনোনয়ন থেকে শ্রেষ্ঠ উপযোগকৃত চিত্রনাট্য বিভাগে একটি পুরস্কার লাভ করে, ৭২তম গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারে পাঁচটি বিভাগে মনোনয়ন লাভ করে, এবং ২১তম স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কারে তিনটি মনোনয়ন লাভ করে। এছাড়া চলচ্চিত্রটি নয়টি বাফটা পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করে এবং ৩৯তম টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে পিপল্স চয়েস পুরস্কার অর্জন করে।
১৯৫১ সালে নক ও স্টাল নামে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা গণিতবিদ অ্যালন টুরিঙের বাড়িতে তদন্ত করতে যায়। নকের জিজ্ঞাসাবাদে টুরিং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ব্লেচলি পার্কে তার কাজ করার সময়ের কথা বলেন।
১৯২৮ সালে তরুণ টুরিং তার বোর্ডিং স্কুলে নিপীড়নের স্বীকার হতেন। তিনি ক্রিস্টোফার মরকমের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেন যে তার মধ্যে তথ্যগুপ্তিবিদ্যার আগ্রহ জাগিয়ে তুলে। তার প্রতি টুরিঙের প্রণয় জেগে ওঠেছিল, কিন্তু ক্রিস্টোফার বোভিন টিউবারকিউলিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
১৯৩৯ সালে ব্রিটেন জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে টুরিং ব্লেচলি পার্কে আগমন করেন। কমান্ডার অ্যালাস্টেয়ার ডেনিস্টনের নির্দেশনায় তিনি হিউ আলেকজান্ডার, জন কেয়ার্নক্রস, পিটার হিল্টন, কিথ ফারম্যান ও চার্লস রিচার্ডসের সাথে তথ্যগুপ্তিবিদ্যা দলে যোগ দেন। দলটি এনিগমা মেশিন নিয়ে বিশ্লেষণ করছিলেন, যেটি দিয়ে নাৎসিরা বার্তা পাঠাত।
টুরিঙের সাথে কাজ করার বেশ জটিল ছিল এবং তিনি তার সহকর্মীদের হীন মনে করতেন। তিনি এনিগমা বার্তার অর্থোদ্ধারের লক্ষ্যে একটি মেশিন তৈরি করতে একাই কাজ করতে শুরু করেন। ডেনিস্টন এই মেশিন তৈরিতে তাকে তহবিল প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানালে টুরিং প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের নিকট চিঠি লিখেন। চার্চিল টুরিংকে দলের প্রধান করে মেশিনের জন্য তহবিল প্রদান করেন। টুরিং ফারম্যান ও রিচার্ডসকে বাদ দেন এবং তাদের স্থলাভিষিক্তের জন্য সংবাদপত্রে জটিল একটি ক্রসওয়ার্ড দেন। কেমব্রিজের স্নাতক জোন ক্লার্ক টুরিঙের এই পরীক্ষায় পাশ করেন, কিন্তু তার পিতামাতা তাকে একজন পুরুষ তথ্যগুপ্তিবিদের সাথে কাজ করতে দিতে নারাজ ছিলেন। টুরিং তার জন্য নারী কেরানিদের সাথে থাকার ও কাজ করার ব্যবস্থা করে দেন। ক্লার্কের সহযোগিতায় টুরিং তাকে সমীহ করতে শুরু করা অন্যান্য সহকর্মীদেরও কাজে উদ্বুদ্ধ করেন।
টুরিং তার নির্মিত মেশিনের নাম রাখেন ক্রিস্টোফার, কিন্তু এটি দ্রুত এনিগমা বার্তার অর্থোদ্ধার কুরতে পারত না কারণ জার্মানরা প্রতিদিন তাদের সেটিং পরিবর্তন করত। ডেনিস্টন এই মেশিনটি ধ্বংস করার ও টুরিংকে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দেন, কিন্তু অন্যান্য তথ্যগুপ্তিবিদরা টুরিং চলে গেলে তারাও চলে যাওয়ার হুমকি দেন। ক্লার্ক তার পিতামাতার ইচ্ছানুসারে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করলে টুরিং তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ক্লার্ক সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেন। তার বিয়ের অনুষ্ঠানে টুরিং কেয়ার্নক্রসের কাছে তার সমকামিতার কথা জানালে তিনি তাকে তা গোপন রাখার কথা বলেন। একজন নারী কেরানির কাছে তার নিকট আসা একটি বার্তা সংক্রান্ত আলাপ শুনে টুরিং বুঝতে পারেন যে তিনি অর্থোদ্ধারের জন্য মেশিন তৈরি করতে পারবেন। মেশিনটি পুনঃসংশোধনের পর তিনি দ্রুত একটি বার্তার অর্থোদ্ধার করেন এবং তথ্যগুপ্তিবিদরা তা নিয়ে উল্লাস করেন। টুরিং জানান তারা প্রতিটি অর্থোদ্ধারকৃত বার্তাতে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারবেন না তাতে জার্মানরা বুঝে যাবে যে তারা এনিগমা মেশিনের রহস্য উদ্ধার করে ফেলেছেন।
টুরিং আবিষ্কার করেন যে কেয়ার্নক্রস একজন সোভিয়েত গুপ্তচর। টুরিং এই বিষয়টি নিয়ে তার মুখোমুখি কথা বলতে গেলে কেয়ার্নক্রস যুক্তি দেখান যে সোভিয়েতরাও একই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে এবং তিনি টুরিঙের যৌন অভিমুখিতা প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দেন। এমআইসিক্সের এজেন্ট স্টুয়ার্ট মেঞ্জিস ক্লার্ককে জেরা করতে আসলে টুরিং কেয়ার্নক্রসের গুপ্তচরবৃতির কথা প্রকাশ করেন। মেঞ্জিস জানান তিনি পূর্বেই তা জানতেন এবং ব্রিটিশদের সুবিধার জন্য সোভিয়েতের কাছে কেয়ার্নক্রস যে তথ্য পাচার করছে তা তৈরি করেন। ক্লার্কের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে টুরিং তাকে তার সমকামিতার কথা জানিয়ে তাকে ব্লেচলি পার্ক ছেড়ে যাওয়ার কথা বলেন। ক্লার্ক জানান তিনি সর্বদাই এই বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করতেন কিন্তু তিনি ভেবেছিলেন তারা একত্রে সুখে থাকবেন। টুরিং তাকে জানান তিনি কখনোই তাকে ভালোবাসতেন না বরং তাকে তার তথ্যগুপ্তির দক্ষতার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। ক্লার্ক তবুও তার সাথে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। যুদ্ধের পর মেঞ্জিস তথ্যগুপ্তিবিদদের তাদের কাজ ধ্বংস করে দেওয়ার কথা বলেন এবং জানান তারা কখনো একে অপরের সাথে দেখা করতে পারবেন না এবং তারা কি করেছেন এই ব্যাপারে কাউকে কিছু বলতে পারবেন না।
১৯৫০-এর দশকে টুরিং তার সামগ্রিক গর্হিত আচরণের জন্য অভিযুক্ত হন এবং জেলে পাঠানোর পরিবর্তে তাকে রাসায়নিক প্রদান করে খোজা করা দেওয়া হয়, যাতে তিনি তার কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। ক্লার্ক তার বাড়িতে গিয়ে তার শারীরিক ও মানসিক অবনতি দেখতে পান। তিনি তাকে জানান যে তার কাজের জন্য মিলিয়নের অধিক লোকের প্রাণ বেঁচে গেছে।
শেষ দৃশ্যে পর্দায় একটি বার্তা দেখা যায়, যেখানে বলা হয় "সরকার-প্রদত্ত হরমোনাল থেরাপি দেওয়ার এক বছর পর টুরিং ১৯৫৪ সালের ৭ই জুন আত্মহত্যা করেন। তার বয়স হয়েছিল ৪১ বছর। ১৮৮৫-১৯৬৭ সালের মধ্যে ব্রিটিশ আইনের অধীনে সামগ্রিক গর্হিত আচরণের জন্য প্রায় ৪৯,০০০ সমকামী ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়। ২০১৩ সালে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ টুরিংকে তার কৃতকর্মের সম্মানার্থে মরণোত্তর রাজকীয় ক্ষমা প্রদান করেন। ইতিহাসবেত্তাগণ ধারণা করেন এনিগমার অর্থোদ্ধারের কারণে যুদ্ধ দুই বছরের মধ্যে সমাপ্ত হয় এবং ১৪ মিলিয়নের অধিক প্রাণ বেঁচে যায়। ৫০ বছরের অধিক সময় এটি সরকার কর্তৃক গোপন রয়ে যায়। টুরিঙের কাজ পরবর্তী প্রজন্মকে গবেষণায় অনুপ্রাণিত করে, বিজ্ঞানীরা তার কাজের নামকরণ করেন "টুরিং মেশিন্স"। আজ, আমরা তাকে কম্পিউটার নামে ডাকি।"