সংস্থাপিত | ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ |
---|---|
থামে | ওয়াঘা, কর্তারপুর, পিপলি, সির্হিন্দ |
গন্তব্যস্থল | দিল্লি, লাহোর |
চালক | দিল্লি পরিবহন নিগম পাকিস্তান ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন |
দিল্লি-লাহোর বাস পরিষেবা, যা আনুষ্ঠানিকভাবে সদা-এ-সরহদ (উর্দু: صدائے سرحد, হিন্দি: सदा ए सरहद) নামে পরিচিত[১], ভারতের রাজধানী দিল্লির সঙ্গে পাকিস্তানের শহর লাহোরের সংযোগ রক্ষাকারী একটি যাত্রীবাহী বাস পরিষেবা। এই পরিষেবা শান্তি ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতি উভয় দেশের সরকারের সদিচ্ছার প্রতীক।[২]
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত বিভাজনের পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান এই দুই দেশের মধ্যে সড়ক ও রেল পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে চালু হওয়া সমঝৌতা এক্সপ্রেসের উদহারণকে সামনে রেখে উভয় দেশে পরস্পরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন আত্মীয়দের পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য এবং ভ্রমণ ও বাণিজ্যে গতি আনতে এই বাস পরিষেবা চালু হয়।[৩] ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারত দ্বারা পোখরান পরমাণু পরীক্ষা এবং তার জবাবে পাকিস্তানের চাঘাই পরমাণু পরীক্ষার ফলশ্রুতিতে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে যে অস্থিরতা তৈরী হয়, তা লাঘব করতে এই বাস পরিষেবা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।
১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই ও ১৪ই জানুয়ারি দুই দেশের সরকারি আধিকারিকদের ইয়ে পরীক্ষামূলক ভাবে এই বাস চালান হয়।[৪] ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৯শে ফেব্রুয়ারি প্রথম যাত্রার সময় এই বাসেই ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী লাহোর সম্মিলনে যোগ দিতে রওনা হন এবং ওয়াঘা সীমান্তে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ তাকে স্বাগত জানান।[১][২] বাজপেয়ীর বাস যাত্রা উভয় দেশের জনগণ সাদরে গ্রহণ করে ও সমগ্র বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারিত হয়।[৫] এই প্রথম যাত্রায় তার সঙ্গে দেব আনন্দ, সতীশ গুজরাল, জাভেদ আখতার, কুলদীপ নায়ার, কপিল দেব, শত্রুঘ্ন সিনহা এবং মল্লিকা সারাভাইয়ের মত বিখ্যাত ভারতীয় ব্যক্তিত্ব যাত্রা করেন।[৬] শীঘ্রই দুই দেশের সরকার ১৯৯৯-এর লাহোর ঘোষণা করেন, যেখানে কাশ্মীর সমস্যা সহ উভয় দেশের বিবাদের শান্তিপূর্ণ সমাধান ও সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের পক্ষে জোর দেওয়া হয়।[৫]
ঐ বছর ১৬ই মার্চ আনুষ্ঠানিক ভাবে বাসটি চালু হয় এবং দুই দেশের মধ্যে কার্গিল যুদ্ধ চলাকালীনও এই পরিষেবা অব্যাহত থাকে।[৪] ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই ডিসেম্বর ভারতীয় সংসদে জঙ্গি হামলা ঘটলে ভারত সরকার পাকিস্তানকে তার জন্য দায়ী করে[৭] ও এই বাস পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।[১][৮] পরবর্তীকালে উভয় দেশের সম্পর্কের উন্নতি ঘটলে ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই জুলাই এই পরিষেবা আবার চালু করা হয়।[১]
দিল্লি-লাহোর বাস যুগ্মভাবে দিল্লি পরিবহন নিগম ও পাকিস্তান ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন পরিচালনা করে থাকে। দিল্লির শহরের আম্বেদকর স্টেডিয়াম বাস টার্মিনাল এবং লাহোরের গুলবার্গ আনচলের লাহোর-দিল্লি বাস টার্মিনাল থেকে এই পরিষেবা পরিচালিত হয়ে থাকে। লাহোর যাওয়ার জন্য দিল্লি পরিবহন নিগমের বাস প্রতি সপ্তাহের সোমবার, বুধবার ও শুক্রবার এবং পাকিস্তান ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের বাস প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার, বৃহস্পতিবার ও শনিবার দিল্লি থেকে যাত্রা করে।[৯] অপরদিকে দিল্লি যাওয়ার জন্য দিল্লি পরিবহন নিগমের বাস প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার, বৃহস্পতিবার ও শনিবার এবং পাকিস্তান ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের বাস প্রতি সপ্তাহের সোমবার, বুধবার ও শুক্রবার লাহোর থেকে যাত্রা করে।[৯]
উভয় দেশের কর্তৃপক্ষ যাত্রী ও মালপত্রের কঠোর তল্লাশী করে থাকে। মূল্যবান সামগ্রী নথিভুক্ত করা হউ ও বিপজ্জনক সামগ্রী পরিবহন করা নিষিদ্ধ। পাকিস্তানের ওয়াঘা ও ভারতের কর্তারপুরে শুল্ক দপ্তরের তল্লাশী হয়। যাত্রীদের পাসপোর্ট, বৈধ ভিসা ও যাত্রার টিকিট বহন করতে হয়।[৯] ওয়াঘা ও কর্তারপুর ছাড়া ভারতের পিপলি ও সির্হিন্দ শহরে বিরতি নেওয়া হয়। ৫৩০ কিমি (৩২৯ মা) যাত্রার জন্য মোট ৮ ঘণ্টা সময় লাগে।