দিল্লির লৌহস্তম্ভকুতুব মিনার চত্বরে অবস্থিত ৬০০০ কিলোগ্রামের বেশি ওজনের ৭.২১ মি (২৩.৭ ফু) উঁচু একটি স্তম্ভ।[১] যা তার মরচে-নিরোধক ধাতব উপাদানের জন্য বিখ্যাত। ক্ষয়নিরোধী চরিত্রের জন্য পুরাতাত্ত্বিক ও ধাতুবিদ্যা বিশারদেরা দিল্লির লৌহস্তম্ভকে "প্রাচীন ভারতের ধাতুবিদ্যার উন্নতির একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন" বলে মনে করেন।[২] স্তম্ভটির উপাদানে সমস্তরে আয়রন হাইড্রোজেন ফসফেটের কেলাস থাকায় লোহায়ফসফরাসের মাত্রা অনেক বেশি, যা এই উপাদানে ক্ষয়নিরোধক চরিত্রের জন্য দায়ী।[৩] যদিও এই বিষয়ে সন্দেহের প্রচুর অবকাশ রয়েছে, তবুও মনে করা হয়ে থাকে যে, ৪০২ খ্রিষ্টাব্দে গুপ্ত সাম্রাজ্যেরউদয়গিরিতে এই স্তম্ভটি প্রথম স্থাপিত হয়েছিল।[৪] ১২৩৩ খ্রিষ্টাব্দে স্তম্ভটিকে দিল্লির বর্তমান অবস্থানে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়।[৫]
পাদদেশ থেকে স্তম্ভশীর্ষ পর্য্যন্ত ছয় টন ওজনের এই স্তম্ভের দৈর্ঘ্য ৭.২১ মি (২৩.৭ ফু), যার মধ্যে ১.১২ মি (৩ ফু ৮ ইঞ্চি) মাটির তলায় প্রোথিত। ঘণ্টাকৃতি স্তম্ভশীর্ষটি ১.০৭ মি (৩ ফু ৬ ইঞ্চি) উচ্চ ও স্তম্ভশীর্ষটির ভূমি ০.৭১ মি (২ ফু ৪ ইঞ্চি) উচ্চতা বিশিষ্ট। স্তম্ভের নিচের অংশের পরিধি ৪২০ মিমি (১৭ ইঞ্চি) এবং ওপরের অংশের পরিধি ৩০৬ মিমি (১২.০ ইঞ্চি)।[৬] দর্শকদের দ্বারা ক্ষতিসাধনের নিরিখে ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে স্তম্ভের চারপাশেে একটি বেড়াজাল তৈরি করা হয়।
স্তম্ভটির প্রথম অবস্থান সম্বন্ধে বিতর্ক রয়েছে।[৭]
বালসুব্রহ্মণ্যম এই স্তম্ভের ধাতব উপাদান বিশ্লেষণ করেন।[৮] তার মতে, এই স্তম্ভ প্রথমে মধ্য প্রদেশেরবিদিশা নগরীর নিকটে উদয়গিরি গুহাসমূহে অবস্থিত ছিল।[৯] স্তম্ভের গায়ে উৎকীর্ণ লিপিতে স্তম্ভটির অবস্থান বিষ্ণুপদগিরিতে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। উদয়গিরি গুহাসমূহদ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং গুপ্ত যুগের বিষ্ণু উপাসনার জন্য পরিচিত বলে বিষ্ণুপদগিরি প্রকৃতপক্ষে এই স্থান বলেই মনে করা হয়েছে।[১০] এছাড়া উল্লেখ্য যে, মধ্য ভারতে লোহা খননের প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে দিল্লির সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুতমিশবিদিশা আক্রমণ করে এই স্তম্ভটিকে দিল্লি সরিয়ে নিয়ে যান।
এই স্তম্ভের গায়ে বিভিন্ন সময়ের বেশ কয়েকটি লিপি রয়েছে। এর মধ্যে প্রাচীনতম লেখটি গুপ্ত যুগেব্রাহ্মী লিপিতেসংস্কৃত ভাষায় উৎকীর্ণ রয়েছে।[১১] এই লেখ অনুসারে জানা যায়, এই স্তম্ভ বিষ্ণুর সম্মানে স্থাপিত হয়েছিল। এই লিপিতে চন্দ্র নামক এক রাজার সাহস ও গুণাবলী বর্নিত রয়েছে। কিন্তু কিছু পণ্ডিতের মতে চন্দ্র ও মৌর্য্য সম্রাটচন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য এক ব্যক্তি ছিলেন এবং স্তম্ভটির প্রতিষ্ঠাকাল ৯১২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ বলে মনে করেছেন।[১২] কিন্তু লেখটির ব্রাহ্মী লিপি ও সংস্কৃত ভাষার চরিত্র বিশ্লেষণ করে স্থির করা হয়েছে, যে এই লেখটি গুপ্ত যুগের এবং রাজা চন্দ্র ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত একই ব্যক্তি। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে পণ্ডিত বাঁকে রায় লেখটির বক্তব্য বিশ্লেষণ করেন। তার বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় রাজা চন্দ্র বঙ্গ দেশে যুদ্ধ করেন ও সপ্ত সিন্ধু অতিক্রম করে বাহ্লীক দেশ অধিকার করেন। এই স্তম্ভটি তার মৃত্যুর পর বিষ্ণুর সম্মানার্থে বিষ্ণুপদগিরিতে স্থাপিত হয়।[১৩]
↑On the Corrosion Resistance of the Delhi Iron Pillar, R. Balasubramaniam, Corrosion Science, Volume 42 (2000) pp. 2103–2129. "Corrosion Science" is a publication specialized in corrosion science and engineering.
↑Identity of Chandra and Vishnupadagiri of the Delhi Iron Pillar Inscription: Numismatic, Archaeological and Literary Evidence, R Balasubramaniam, Bulletin of Metals Museum, 32 (2000) 42–64.
↑On the Astronomical Significance of the Delhi Iron Pillar, R Balasubramaniam and Meera I Dass, Current Science, volume 86 (2004) pp. 1134–1142.[১]ওয়েব্যাক মেশিনেআর্কাইভকৃত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে
King Chandra and the Mehrauli Pillar, M.C. Joshi, S.K. Gupta and Shankar Goyal, Eds., Kusumanjali Publications, Meerut, 1989.
The Rustless Wonder – A Study of the Iron Pillar at Delhi, T.R. Anantharaman, Vigyan Prakashan, New Delhi, 1996.
Delhi Iron Pillar: New Insights. R. Balasubramaniam, Delhi: Aryan Books International and Shimla: Indian Institute of Advanced Studies, 2002, Hardbound, ISBN 81-7305-223-9. [২][৩]
The Delhi Iron Pillar : Its Art, Metallurgy and Inscriptions, M.C. Joshi, S.K. Gupta and Shankar Goyal, Eds., Kusumanjali Publications, Meerut, 1996.
The World Heritage Complex of the Qutub, R Balasubramaniam, Aryan Books International, New Delhi, 2005, Hardbound, আইএসবিএন৮১-৭৩০৫-২৯৩-X.
Story of the Delhi Iron Pillar, R Balasubramaniam, Foundation Books, New Delhi, 2005, Paperback, ISBN 81-7596-278-X.
Delhi Iron Pillar (in two parts), R. Balasubramaniam, IIM Metal News Volume 7, No. 2, April 2004, pp. 11–17. and IIM Metal News Volume 7, No. 3, June 2004, pp. 5–13. [৪]
New Insights on the 1600-Year Old Corrosion Resistant Delhi Iron Pillar, R. Balasubramaniam, Indian Journal of History of Science, 36 (2001) 1-49. [৫]
The Early use of Iron In India. Dilip K. Chakrabarti. 1992. New Delhi: The Oxford University Press.