দিল্লী চুক্তির ভিত্তিতে অভিবাসী বিনিময় | |
---|---|
ধরণ | অভিবাসী প্রত্যাবাসন |
প্রেক্ষাপট | স্নায়ুযুদ্ধ |
খসড়া | ১৭ এপ্রিল ১৯৭৩ |
স্বাক্ষর | ৯ এপ্রিল ১৯৭৩ |
স্থান | নতুন দিল্লী, ভারত |
কার্যকর | ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ |
কার্যকর | ২৮ আগস্ট ১৯৭৩ |
শর্ত | উভয় পক্ষের অনুমোদন |
অবসান | ১ জুলাই ১৯৭৪ |
মধ্যস্থতাকারী | ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী |
আলোচনাকারী | ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় |
স্বাক্ষরকারী | |
অংশগ্রহণকারী | |
অনুমোদনকারী | ভারত ও পাকিস্তান সংসদ |
আমানতকারী |
|
আমানতকারীগণ | |
ভাষাসমূহ | ইংরেজি |
দিল্লি চুক্তি ছিল একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি যা ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যে ২৮ আগস্ট ১৯৭৩ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল; এবং শুধুমাত্র ভারত এবং পাকিস্তান কর্তৃক অনুমোদিত হয়।[১] এ চুক্তির মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনটি দেশে আটক যুদ্ধবন্দী এবং বন্দী কর্মকর্তাদের প্রত্যাবাসনের অনুমতি দেয়া হয়। যুদ্ধের সময় আচরণবিধী লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত ১৯৫ ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের হিসাব না রাখা এবং যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের ব্যবস্থা না করার জন্য চুক্তিটি বাংলাদেশে উর্দুভাষীদের প্রত্যাবাসনে পাকিস্তানের ব্যর্থতার জন্য সমালোচিত হয়।[২]
সিমলা চুক্তির পর নয়াদিল্লিতে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন।[১]
১৯৭১ সালের বাংলাদেশ যুদ্ধের সময়, পাকিস্তান সরকার হাজার হাজার বাঙালি আমলা ও সামরিক কর্মীকে তাদের পরিবারসহ পশ্চিম পাকিস্তানে বন্দী করে রাখে। বাংলাদেশে থাকা উর্দুভাষী সম্প্রদায়ের অনেকেই পাকিস্তানে স্থানান্তরিত হতে চেয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের পর ভারত কয়েক হাজার পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীকে বন্দী করে রাখে, যার মধ্যে ১৯৫ জন সামরিক অফিসার আচরণ লঙ্ঘনের জন্য আটক ছিল।
প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো হুমকি দিয়েছিলেন যে, বাংলাদেশ যদি কথিত পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের অভিযুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যায় তাহলে কারাগারে আটক বাঙালি কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।[৩]
চুক্তিটি ২৮ আগস্ট ১৯৭৩ সালে কার্যকর হয় এবং ১ জুলাই ১৯৭৪ সালে শেষ হয়। চুক্তির শর্তানুযায়ী, ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি নাগরিকদের প্রত্যাবাসনের তত্ত্বাবধান করে। জাতিসংঘের হিসাবে, ১,২১,৬৯৫ বাঙালি পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হয়েছিল। তাদের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বাঙালি বেসামরিক কর্মচারী এবং সামরিক কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১,০৮,৭৪৪ জন অবাঙালি বেসামরিক এবং বেসামরিক কর্মচারীকে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।[৪] ভারত ৬,৫০০ পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দি-কে ছেড়ে দেয়, যাদের বেশিরভাগকে ট্রেনে করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।[৫] ১৯৭৪ সালে, জেনারেল নিয়াজি ছিলেন শেষ পাকিস্তানি অফিসার যাকে ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে প্রতীকীভাবে প্রত্যাবাসন করা হয়েছিল।[৪]
যদিও চুক্তিতে বাংলাদেশে থাকা উর্দুভাষী বিহারীদের প্রত্যাবাসনের কথা বলা হয়েছিল, তবে পাকিস্তান সরকার তাদের পাকিস্তানে পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি থেকে পিছু হটে।[৬] যা বাংলাদেশে রাষ্ট্রহীনভাবে আটকে পড়া পাকিস্তানি সম্প্রদায়ের জন্ম দেয়।
যুদ্ধবন্দিদের মধ্যে, ভারতে বন্দী ১৯৫ জন পাকিস্তানি সামরিক অফিসারকে প্রধান যুদ্ধাপরাধের সন্দেহভাজন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। পাকিস্তান তাদের অন্যতম প্রধান দাবি হিসেবে তাদের মুক্তির জন্য চাপ দেয়। এমনকি ১৯৫ জন অফিসারকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বীকৃতি প্রত্যাহার করার জন্য বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশকে চাপ দেয়।[৭] ভারত তাদের পাকিস্তানে প্রত্যাবাসনের পক্ষে ছিল।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন বৈঠকে বলেন যে, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাব, আন্তর্জাতিক আইন, যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গণহত্যার প্রাসঙ্গিক বিধান অনুসারে গঠিত যুদ্ধবন্দীদের দ্বারা সংঘটিত বাড়াবাড়ি ও সহিংস অপরাধ এবং সর্বজনীন ঐকমত্য ছিল যে এই ধরনের অপরাধের জন্য অভিযুক্ত ১৯৫ পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীকে জবাবদিহি করতে হবে এবং আইনের যথাযথ প্রক্রিয়ার আওতায় আনতে হবে।[৫]যুদ্ধাপরাধের সন্দেহভাজনদের বিচারের জন্য বাংলাদেশের অনুরোধ এড়িয়ে যায় পাকিস্তান। যাইহোক, দিল্লির বৈঠকে পাকিস্তানি প্রতিনিধি আজিজ আহমেদ বলেছেন যে তার সরকার "যে কোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার জন্য গভীরভাবে অনুতপ্ত"।[২][৫]
প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি ১৯৭৪ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল। বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন হওয়া অনেক কর্মকর্তা বিশিষ্ট হয়ে উঠেন। একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ বাংলাদেশের নবম রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার। রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সহ অনেক প্রত্যাবাসিত সামরিক কর্মী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাংলাদেশে থাকা রাষ্ট্রহীন উর্দুভাষীদের প্রত্যাবাসনে পাকিস্তানের অস্বীকৃতি এবং সেইসাথে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচার করতে অস্বীকৃতি বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের একটি প্রধান ক্ষত বিন্দুতে পরিণত হয়।