দীপঙ্কর দাস শর্মা (সাধারণ্যে ডি.ডি.শর্মা নামেও পরিচিত) একজন ভারতীয় গাঠনিক রসায়নবিদ।[১] কঠিন দশার রসায়ন, বর্ণালিমিতি, ঘনীভূত বস্তুর পদার্থবিজ্ঞান, কণাবিজ্ঞান ও ন্যানোপ্রযুক্তি নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি সুপরিচিত।[২][৩][৪][৫] তিনি উন্নততর বস্তুকণা কেন্দ্রের (সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়ালস) একজন প্রাক্তন এমএলএস চেয়ার অধ্যাপক ও সভাপতি। এছাড়াও তিনি সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন।[৬] তিনি টোয়াস পদার্থবিজ্ঞান পুরস্কার ও ইউনেস্কো দ্বিবার্ষিক জাভেদ হুসেইন পুরস্কার লাভ করেছেন।[৭] ১৯৯৪ সালে ভারতের শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা কাউন্সিল তাকে শান্তিস্বরূপ ভাটনগর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পুরস্কারে ভূষিত করে।[৮]
১৯৫৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দীপঙ্কর দাস শর্মা পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে ভারতীয় প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের কানপুর শাখা হতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত ভারতীয় বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে(আইআইএসসি) গবেষণা শুরু করেন। ১৯৮২ সালে দীপঙ্কর যশস্বী কঠিন দশার রসায়নবিদ সি.এন.আর.রাওয়ের অধীনে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮২-৮৩ সালে তিনি আইআইএসসিতে গবেষণা সহযোগী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৪ সালে তিনি জার্মানির জুলিখ গবেষণা কেন্দ্রে (ফরশুংসজেন্ট্রাম জুলিখ) অতিথি বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৬ সালে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়ে তিনি আইআইএসসিতে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৮৯ সালে সহকারী অধ্যাপক,১৯৯৩ সালে সহযোগী অধ্যাপক ও ১৯৯৯ সালে অধ্যাপক পদে তিনি পদোন্নতি লাভ করেন। উক্ত ইনস্টিটিউটের কঠিন দশা ও গাঠনিক রসায়ন শাখার অধ্যাপক ও সভাপতি পদে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন অধ্যাপক (২০০১-২০০২) হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। ২০০২ সালে ইনস্টুটো ডি স্ট্রুটুরা ডেলা ম্যাটেরিয়ার রোম ও ত্রিয়েস্তে শাখায়য়ও তিনি খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ভারত ও বিদেশে তিনি একাধিক পদে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের কঠিন দশা ও গাঠনিক রসায়ন বিষয়ের জে.এন.টাটা চেয়ার অধ্যাপক। তিনি উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি বিজ্ঞানী, সিএসআইআর সৌরশক্তি ইনস্টিটিউটের ডিস্টিংগুইশড বিজ্ঞানী, বেঙ্গালুরুর জওহরলাল নেহরু ফলিত বিজ্ঞান কেন্দ্রের অবৈতনিক অধ্যাপক ও কলকাতায় অবস্থিত ভারতীয় বিজ্ঞানচর্চা সমিতির খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মুম্বাইয়ের টাটা মৌলিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবেও নিয়োজিত আছেন। ২০০৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে ও ২০১৪ থেকে বর্তমান পর্যন্ত দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে ও ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত দ্বিতীয় মেয়াদে ভারতীয় বিজ্ঞানচর্চা সমিতিতে অধ্যাপনা করেন। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দীপঙ্কর ভারতীয় বিজ্ঞান ও শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটে সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি এস.এন.বোস জাতীয় মৌলিক বিজ্ঞান কেন্দ্রে জ্যেষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দীপঙ্কর ইউজিসি-ডিজিএ বিজ্ঞান কনসোর্টিয়ামের অনুষদ সদস্য।
ন্যানোপ্রযুক্তি বিষয়ে দীপঙ্কর বিশদ গবেষণা করেছেন। উচ্চশক্তির বর্ণালিমিতি ব্যবহার করে কঠিন বস্তুসমূহের এক নতুন দশা আবিষ্কারে তিনি সক্ষম হয়েছেন।[৮] গুগল স্কলারে তার ৬৫৬টি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ সংরক্ষিত আছে। ২০,০০০ এরও অধিক গবেষণা প্রবন্ধে তার বৈজ্ঞানিক নিবন্ধগুলো উদ্বৃত্ত হয়েছে। তার অনেকগুলো পেটেন্ট রয়েছে, অনলাইনে এর মধ্যে ১৬টি পেটেন্ট রেকর্ড করা হয়েছে।
১৯৮১ সালে শর্মা জে.সি.ঘোষ পদক ও ১৯৮৩ সালে ভারতীয় বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে তরুণ বৈজ্ঞানিক পদক লাভ করেন। ১৯৮৯ সালে ইউনেস্কো তাকে জাভেদ হুসেইন পুরস্কারে ভূষিত করে।
|তারিখ=
(সাহায্য)