দুআ খলিল আসওয়াদ | |
---|---|
জন্ম | ১৯৯০ |
মৃত্যু | আনুমানিক ৭ এপ্রিল ২০০৭ |
জাতীয়তা | ইরাকি |
দুআ খলিল আসওয়াদ (আরবি: دعاء خليل أسود) (জন্ম আনুমানিক ১৯৮৯- মৃ. আনুমানিক ৭ এপ্রিল ২০০৭) ইয়াজিদি ধর্মের ১৭ বছর বয়সী ইরাকি মেয়ে, যাকে ২০০৭ সালের এপ্রিলের প্রথম দিকে উত্তর ইরাকে পাথর মেরে হত্যা করা হয়। এটাকে ইরাকিরা সম্মান রক্ষার্থে হত্যা বলে অভিহিত করে। ঘটনার সময়কার পাথর ছোঁড়ার কোনো ভিডিও বা ফোন রেকর্ড ইন্টারনেটে উপলভ্য নেই।[১] তাকে হত্যার কারণ নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। পাথর ছোঁড়ার সাথে তার ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার গুজবটি সুন্নিদের দ্বারা ইয়াজিদিদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে উৎসাহিত করে। ফলে ২০০৭ মসুল হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়।[২][৩]
কিছু সংবাদে দাবি করা হযয়েছে যে, একজন ইরাকি সুন্নি মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করার জন্য আসওয়াদ নিজ ধর্ম পরিত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। এ অপরাধের জন্য তাকে পাথর মেরে হত্যা করা হয়।]][৪] অন্য সংবাদে বলা হয়, আসওয়াদ এক রাতে তার বাড়িতে ছিল না তাই তাকে হত্যা করা হয়।[৫] এক সাংবাদিক ইয়াজিদির মৃত্যুর কয়েকদিন পর জনৈক ব্যক্তির সাক্ষাৎকার বর্ণনা এভাবে দিয়েছে যে, সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার কারণে তাকে পাথর মেরে হত্যা করে ইসলামি এক ওয়েব সইটে পোস্ট করা হয়। কিন্তু আঞ্চলিক সংবাদে মাধ্যমে সে রকম তথ্য পাওয়া যায় নি। কারো কারো মতে, সে তার মুসলিম বয়ফ্রেন্ড এর সাথে মসুলের বাইরে এক চেকপয়েন্টে ধরা পড়ে। আবার কেহ বলে যে, তাকে তার বাবা ও চাচার সাথে দেখা যায়, যারা সেই মুসলিম ছেলের সাথে পারিবারিক বিষয়ে ঝগড়া করে এবং তাকে পুলিশে দেয়। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
কিছু সংবাদ সংস্থা জানায় যে আসওয়াদকে তার জীবনের ভয়ে বাশিকার এক ইয়াজিদি আদিবাসী নেতা আশ্রয় দিয়েছিলেন। সে তাকে বলে, তার পরিবার তাকে ক্ষমা করেছে এবং সে বাড়ি ফিরে যেতে পারে।[৫] অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে বোঝা যায় যে, তার পরিবর্তে একজন স্থানীয় মুসলিম শেখ তাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। এটা জানা যায়নি যে, তার পরিবারের সদস্যরা তাকে বাড়ি ফিরতে রাজি করেছিল এবং তার মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল কিনা? এটা স্পষ্ট নয় যে তার বাড়িতে ফেরার সময় তাকে হামলা করা হয়েছিল, নাকি জনতা তার বাড়িতে ঢুকে তাকে রাস্তায় টেনে নিয়ে গিয়েছিল। আক্রমণকারীর সংখ্যায শত শত বা এক হাজার [১] থেকে দুই হাজার পুরুষ পর্যন্ত ছিল।[৬]
আসওয়াদকে শহর চত্বরে নিয়ে যাওয়া হয়। সংবাদ অনুসারে জানা যায়, তাকে নগ্ন করে ফেলা হয়েছিল। কেননা সে তার পরিবার এবং ধর্মকে অসম্মান করেছে। তার কোমর থেকে কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয়। এ সময় সে একটি কমলা রঙের খেলাধুলার জ্যাকেট এবং কালো অন্তর্বাস পরিহিত ছিল। ভিড়ের মধ্যে কেউ কেউ তার নিচের শরীরকে অন্য জ্যাকেটের মতো ঢেকে রাখার চেষ্টা করে। তাকে ৩০ মিনিট ধরে পাথর মারা হয়। আসওয়াদ উঠে বসার চেষ্টা করে এবং সাহায্যের জন্য আহ্বান করে। কিন্তু জনতা তাকে তিরস্কার করে এবং বারবার তার মাথায় পাথর বা কংক্রিটের বড় অংশ ছুঁড়ে। টাউন স্কয়ারে তার মৃত্যুর পর আসওয়াদের লাশ একটি গাড়ির পিছনে বেঁধে রাস্তায় টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে অসম্মান করার জন্য একটি কুকুরের দেহাবশেষ দিয়ে কবর দেওয়া হয়।[৭] অবশেষে, তার মৃতদেহ "বের করা হয় এবং মসুলের মেডিকো-লিগ্যাল ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয় যাতে পরীক্ষা করা যায়, সে কুমারী মারা গেছে কিনা।"
আসওয়াদের হত্যার বিরুদ্ধে আরবিলে একটি বিক্ষোভ শত শত কুর্দিদের আকৃষ্ট করেছিল যারা অনার বা সম্মানজনক হত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিল।[৮][৯] এটা বিশ্বাস করা হয় যে, আসওয়াদের হত্যাকাণ্ডকে একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। ২২ এপ্রিল[১০] ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক[১১] দাবী করে তারা মসুলে প্রতিশোধমূলক হামলা করেছে। যাতে ২৩ জন ইয়াজিদি নিহত হয়।[৩] একই দিনে আরেকটি প্রতিশোধমূলক হামলাও হয়। জামায়াত আনসার আল-সুন্না দাবি করে,তারা একটি আত্মঘাতী গাড়ি বোমা দিয়ে তেল ইসকফ গ্রামকে লক্ষ্য করে, এতে ২৫ ইয়াজিদি এবং আসিরিয়ান খ্রিস্টান নিহত হয়।[১২][১৩] আসওয়াদের হত্যা ও প্রতিশোধকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল[৫] কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকার নিন্দা করে এবং ফেডারেল সরকারকে তদন্ত করতে বলে।[১৪] উত্তর ইরাকের কর্তৃপক্ষ হত্যার সাথে জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ২০০৭ সালের আগস্টে ইয়াজিদি শহর কাহতানিয়া ও জাজিরাতে সুন্নি মুসলমানদের দ্বারা বিধ্বংসী সন্ত্রাসী হামলা পরিচালিত হয়[২] এতে কমপক্ষে ৫০০ জন নিহত এবং ১,৫০০ জন আহত হয়।[১৫] তারা বলে,আসওয়াদকে পাথর মারার জন্য তারা প্রতিশোধ নিয়েছে ।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]