দুধসাদা মানিকজোড় | |
---|---|
![]() | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Ciconiiformes |
পরিবার: | Ciconiidae |
গণ: | Mycteria |
প্রজাতি: | M. cinerea |
দ্বিপদী নাম | |
Mycteria cinerea Raffles, 1822 |
দুধসাদা মানিকজোড় (বৈজ্ঞানিক নাম: Mycteria cinerea) Ciconiidae (সিকোনিডাই) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Mycteria (মাইক্টেরিয়া) গণের অন্তর্গত এক প্রজাতির বড় আকারের জলচর পাখি। দুধসাদা মানিকজোড়ের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ছাইরঙা পেটরা পাখি (গ্রিক mukter = পেটরা; লাতিন: cinereus = ছাইরঙা)। পাখিটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গুটিকয়েক দেশে দেখা যায়। সারা পৃথিবীতে মাত্র ১ লক্ষ ১০ হাজার ৩০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে এদের আবাস।[২] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে সংকটাপন্ন বলে ঘোষণা করেছে।[৩] সারা পৃথিবীতে প্রাপ্তবয়স্ক দুধসাদা মানিকজোড়ের সংখ্যা মাত্র ৩,৩০০টি।[২]
একসময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অধিকাংশ দেশে সচরাচর দুধসাদা মানিকজোড় দেখা যেত। এখন কেবল মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়ায় এদের দেখা মেলে। সিঙ্গাপুরে এদের অবমুক্ত করা হয়েছে।[২][৩]
দুধসাদা মানিকজোড় বেশ বড়সড় সাদা জলচর পাখি। এর দৈর্ঘ্য ৯১-৯৫ সেন্টিমিটার, ডানা ৪৩.৫-৫০ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ১৯.৪-২৭.৫ সেন্টিমিটার, লেজ ১৪.৫-১৭ সেন্টিমিটার ও পা ১৮.৮-২৫.৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৩ কেজি।[৪] প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মুখ পালকহীন ও চামড়া লালচে বা ফিকে গোলাপি। এ চামড়া প্রজনন মৌসুমে লাল রঙ ধারণ করে। ঘাড়, গলা ও পিঠ দুধসাদা। দেহতলও সাদা। ডানার প্রান্ত-পালক কালো। ডানার কালো পালক-ঢাকনিতে সাদা ডোরা দেখা যায়। লেজের পালক কালচে। চোখের রঙ খড়-হলুদ। লম্বা ঠোঁটের গোড়া কমলা-হলুদ। নিম্নমুখী ঠোঁটের আগা পাটকিলে। পা ও পায়ের পাতা মেটে বাদামি থেকে লালচে। স্ত্রী ও পুরুষ মানিকজোড় দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি মলিন সাদা।
দুধসাদা মানিকজোড় নদীর পাড়, জলমগ্ন মাঠ, হ্রদ, কাদাচর, লবণ চাষের জমিতে ও নদীর মোহনায় বিচরণ করে। সচরাচর জোড়ায় কিংবা ছোট দলে থাকে। অগভীর পানিতে হেঁটে ঠোঁট খুলে কাদায় ঢুকিয়ে এরা খাবার খুঁজে বেড়ায়। ঠোঁটে মাছ বা অন্যান্য খাবারের অস্তিত্ব টের পেলেই এরা সাথে সাথে ঠোঁট বন্ধ করে ফেলে। খাদ্যতালিকায় রয়েছে মাছ, ব্যাঙ, চিংড়ি, কাঁকড়া, জলজ পোকামাকড় ও ছোট সরীসৃপ। পানির ধারে এরা প্রায়ই একপায়ে ঠায় দাঁড়িয়ে বিশ্রাম করে। ওড়ার সময় প্রলম্বিত পা ও গলা কিছুটা নিচের দিকে ঝুঁকে থাকে। বৃত্তাকারে ধীরলয়ে ওড়ে, ক্রমে ওপরে উঠে যায়। গলায় তেমন শব্দ নেই। ভয় পেলে, উত্তেজিত হলে, আনন্দিত হলে বা বিপদে পড়লে দু'ঠোঁটে বাড়ি মেরে ঠক ঠক শব্দ তোলে। প্রজনন ঋতুতে এক গাছে বা পাশাপাশি একাধিক গাছে অনেকগুলো পাখি মিলে কলোনি করে বাসা করে। এসব কলোনিতে পানকৌড়ি ও অন্যান্য বকও বাসা করে।