দুর্ঘটনা (ইংরেজি: Accident) একটি অদৃষ্টপূর্ব, অকল্পনীয় এবং আকস্মিক ঘটনা বা বিষয় যা প্রায়শঃই অমনোযোগীতা কিংবা প্রয়োজন-অপ্রয়োজনের ফলে সৃষ্ট হয়ে থাকে। সচরাচর ক্ষেত্রে এটি প্রায়শঃই ব্যক্তিকেন্দ্রীক, মানসিক কিংবা সামাজিক বিপর্যয় বয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু আকস্মিকভাবে ঘটনা ঘটার পূর্বেই যদি দুর্ঘটনা চিহ্নিত করা যায়, তাহলে এ সমস্যা দূর করা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার মাধ্যমে।
আঘাত থেকে মুক্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা দুর্ঘটনাকে শুধুমাত্র একটি বিষয় হিসেবে মেনে নেয়ার পক্ষপাতি নন। তাদের অভিমত, দুর্ঘটনা এমন একটি বিষয় যা আঘাতের মাধ্যমে ঘটে থাকে। অধিকাংশ আঘাতজনিত ঘটনাকেই তারা চিহ্নিত করার মাধ্যমে পূর্ব সংকেত প্রদান করে নিরাময়ের উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। এ ধরনের ঘটনাগুলো যখন ব্যাপক আকারে পূর্ব সঙ্কেত প্রদানপূর্বক যথাযথ প্রচার ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়া হয়, তখন তা অনেকখানিই সহনীয় মাত্রায় এসে যায় এবং ক্ষয়-ক্ষতির সম্ভাবনাও তুলনামূলকভাবে কম হয়। ঘটনা পরম্পরায় দুর্ঘটনার সংজ্ঞা ভিন্নতর হয়ে থাকে। তন্মধ্যে সংঘর্ষ, পানিতে ডুবে যাওয়া, সাপে কাটা, অগ্নিকাণ্ড কিংবা উঁচু স্থান থেকে পতিত হওয়া অন্যতম।
সাধারণতঃ সড়ক দুর্ঘটনায়গাড়ীর মুখোমুখি সংঘর্ষ, অগ্নিকাণ্ড ইত্যাদি সাধারণ দুর্ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এ জাতীয় দুর্ঘটনাগুলো সরেজমিনে তদন্তপূর্বক চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে ভবিষ্যতে এড়িয়ে যাওয়া যায় যা 'তৃণমূল পর্যায়ে কারণ চিহ্নিত বিশ্লেষণ' নামে পরিচিত। কিন্তু সচরাচর তা ব্যাপক আকারে ও অদৃষ্টবাদজনিত কারণে প্রতিপালিত হয় না। তৃণমূল পর্যায়ের কারণগুলো একই ধরনের নয় এবং পুরোটাই চক্রাকারে দুর্ঘটনা আকারে ফিরে আসে যা কখনোই চিহ্নিত করা সম্ভবপর হয়ে উঠে না। এরফলে ভবিষ্যতে এটি একই ধরনের দুর্ঘটনার পুণরাবৃত্তি নয় বিধায় তা 'আকস্মিক ঘটনা' হিসেবেই রয়ে যায়।
শারীরিক বা বাহ্যিক দুর্ঘটনার মধ্যে রয়েছে অনাকাঙ্খিতভাবে সংঘর্ষ বা পতন। ধারালো জিনিসপত্র, খুব গরম তৈল কিংবা পানি, বৈদ্যুতিক সামগ্রীর সংস্পর্শ অথবা বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শ এর উদাহরণ।
অভ্যন্তরীণ দুর্ঘটনার মধ্যে রয়েছে অপ্রত্যাশিতভাবে গোপন তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে ফাঁস হয়ে যাওয়া কিংবা ভুলক্রমে ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোন বিষয়ে অংশগ্রহণ করতে ব্যর্থ হওয়া ইত্যাদি। এছাড়াও, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি ভুলে যাওয়া, জরুরী কম্পিউটার ফাইল মুছে ফেলা কিংবা অন্যকে কপি করে দেয়া এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণের ফলে আকস্মিকভাবে সংঘটিত দুর্ঘটনা 'কর্মকালীন দুর্ঘটনা' নামে পরিচিত। বিভিন্ন ধরনের বৃহৎ শিল্প - কাচ শিল্প, খনির অভ্যন্তরে প্রবেশ, লৌহ শিল্প এর অন্যতম উদাহরণ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা আইএলও'র সূত্র মোতাবেক জানা যায়, বিশ্বেগড়ে প্রতি বছর ৩৩৭ মিলিয়নেরও অধিকবার চাকুরীতে কর্মকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনাসহ নিযুক্ত ব্যক্তিদেরকে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হবার ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এছাড়াও, প্রতি বছর ২.৩ মিলিয়নেরও বেশি লোক কর্মকালীন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন।[১]
সাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে মূলতঃ চর্চা ও সচেতনতার অভাবে এবং রাস্তায় ভুলভাবে পরিচালনা করলে। রাস্তায় সাইকেল চালনা-সহ রাস্তায় প্রচলিত নিয়ম-কানুন যথাযথভাবে প্রতিপালনের অভাবই এর অন্যতম কারণ। রাতে সাইকেলে বাতি প্রজ্জ্বলনে দুর্ঘটনা অনেকাংশেই হ্রাস করা সম্ভব। এছাড়াও, সঠিকভাবে শারীরিক ভারসাম্য রক্ষা না করা কিংবা কোন যানবাহনের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে এ জাতীয় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।
ট্রাম দুর্ঘটনা সাধারণতঃ ট্রাম কিংবা ট্রাম পরিচালনা পদ্ধতির সাথে সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনাবিশেষ। ট্রাম ট্রাফিকব্যবস্থাপনাকেপরিবেশ বান্ধব, কার্যোপযোগী এবং তুলনামূলকভাবে নিরাপদযানবাহন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[৩] উল্লেখ্য, ১৪ই অক্টোবর, ১৯৫৪ সালে কলকাতার বালিগঞ্জে ট্রাম দুর্ঘটনায় ক্যাচারে আটকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাংলা কবিজীবনানন্দ দাশের শরীর দলিত হয়ে গিয়েছিল। ভেঙ্গে গিয়েছিল কণ্ঠা, ঊরু এবং পাঁজরের হাড়।[৪] গুরুতরভাবে আহত হয়ে ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪ সালে মারা যান তিনি।
গাড়ী দুর্ঘটনায় একটি গাড়ী অপর একটি গাড়ীকে কিংবা অন্য কোন যানবাহনকে সামনে অথবা পিছন দিক দিয়ে ধাক্কা মারার ফলে হয়ে থাকে। এছাড়াও, জীব-জন্তুর আক্রমণ কিংবা বাঁচানোর প্রয়াস, রাস্তা যান চলাচলের অনুপযোগী অথবা গাছের সাথে ধাক্কা লাগার ফলে এ জাতীয় দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এর ফলাফলস্বরূপ ব্যক্তিগত আঘাত, মৃত্যু এবং সম্পত্তি ধ্বংসের মতো ঘটনাগুলো ঘটে থাকে।
নৌ দুর্ঘটনা মূলতঃ আকস্মিকভাবে সংগঠিত ঝড় কিংবা যুদ্ধের মতো প্রতিকূল পরিবেশের সাথে মোকাবিলা করে পানিতে ডুবে যাবার মতো ঘটনাকে বুঝায়। এছাড়াও, লঞ্চ, স্টীমার, জাহাজ, তেলবাহী লরীগুলোয় নাবিকের অসচেতনতা, মাস্তুল বা পাল ছিড়ে যাওয়া-সহ অগ্নিকাণ্ডের ফলে সৃষ্ট দুর্ঘটনা এর জন্য দায়ী।
১৫ এপ্রিল, ১৯১২ সালে তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে বিশাল এবং বিলাসবহুল টাইটানিক জাহাজ বিরাটাকৃতি বরফখণ্ডের সাথে ধাক্কা লেগে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে গিয়েছিল। এ ঘটনায় ২২২৩ জন যাত্রীর মধ্যে ১৫১৭ জনই প্রাণ হারিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়।[৫]
সাধারণতঃ শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত অথবা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালেচিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র প্রদান করা হয়। অধিকাংশ দুর্ঘটনাই সাধারণতঃ যানবাহনের সংঘর্ষ ও পতনজনিত কারণে হয়ে থাকে। তবে শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্তি হিংসাত্মক আক্রমণজনিত কারণেও হতে পারে।[৬]
কর্মকালীন সময়ে সংঘটিত যে-কোন ধরনের দুর্ঘটনাতেই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কোন না কোন কারণ এবং প্রতিক্রিয়া থাকে যা দুর্ঘটনা এবং কাজের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করে।