দেবিকা রাণী | |
---|---|
জন্ম | দেবিকা রাণী চৌধুরী ৩০ মার্চ ১৯০৮ |
মৃত্যু | ৯ মার্চ ১৯৯৪ | (বয়স ৮৫)
পেশা | টেক্সটাইল ডিজাইনার, অভিনেত্রী, গায়িকা, প্রযোজক |
কর্মজীবন | ১৯২৮-১৯৪৩ |
দাম্পত্য সঙ্গী |
|
পুরস্কার | পদ্মশ্রী দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার(১৯৬৯) |
স্বাক্ষর | |
দেবিকা রাণী চৌধুরী (৩০ মার্চ ১৯০৮ – ৯ মার্চ ১৯৯৪),[১], যিনি সচরাচর দেবিকা রাণী নামে পরিচিত, বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশক হতে চল্লিশের দশক পর্যন্ত ভারতীয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ফার্স্ট লেডি অফ ইণ্ডিয়ান স্ক্রিন খ্যাত অভিনেত্রী ছিলেন। [২]
দেবিকা রাণীর পৈতৃক নিবাস ছিল অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার হরিপুরে। পিতা তৎকালীন মাদ্রাজের প্রথম ভারতীয় সার্জেন জেনারেল কর্নেল এম এন চৌধুরী। তার জন্ম পিতার কর্মক্ষেত্র মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির বিশাখাপত্তনমে। দেবিকা রাণীর বাল্যকাল কাটে যুক্তরাজ্যে। লন্ডনের সাউথ হ্যামলেট স্কুলের বোর্ডিং-এ থেকে পড়াশোনা করতেন। [২] ১৯২৮ সালে তাঁর সঙ্গে ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রযোজক হিমাংশু রায়ের পরিচয় ঘটে, যিনি তাঁকে তাঁর প্রযোজনা দলে সামিল হতে অনুরোধ করেন। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে দেবিকা হিমাংশু রায়ের প্রযোজিত প্রপঞ্চ পাশ চলচ্চিত্রে পোশাক ডিজাইন এবং শিল্প নির্দেশনার কাজ করেন।[৩] ১৯২৯ সালে তারা বিবাহ করে জার্মানি যান, সেখানে বার্লিনের ইউএফএ স্টুডিওজে দেবিকা রাণী চলচ্চিত্র নির্মাণের বিভিন্ন বিষয় শেখেন। এরপর হিমাংশু রায় ১৯৩৩ সালে তাকে কর্ম চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ দেন এবং তার অভিনয় সাফল্য পায়। ১৯৩৪ সালে দেশে ফিরে হিমাংশু রায় বম্বে টকিজ নামে স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তী ৫-৬ বছর কয়েকটি ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। দেবিকা রাণী এই ছায়াছবি গুলোতে প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেন।
১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে হিমাংশু রায়ের মৃত্যুর পর দেবিকা রাণী স্টুডিওর কর্তৃত্ব নিজ হাতে নেন এবং অশোক কুমার ও শশধর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যৌথ ভাবে বিভিন্ন চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন। এই চলচ্চিত্র গুলি বাণিজ্যিক সাফল্য লাভ না করায় দেবিকা চলচ্চিত্র শিল্প থেকে সরে আসেন। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি স্বেতোস্লাভ রোয়েরিখ নামক এক রুশ চিত্রকরকে বিবাহ করেন এবং ব্যাঙ্গালোর শহরে একটি প্রাসাদোপম বাড়িতে শেষ জীবন অতিবাহিত করেন।
দেবিকা রাণী ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ মার্চ ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ওয়াল্টেয়ার নামক স্থানে এক অত্যন্ত সমৃদ্ধিশালী ও শিক্ষিত বাঙ্গালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতামহ রাজশাহী জেলার পাবনার জমিদার ছিলেন।[৪] দেবিকার পিতা কর্নেল মন্মথ নাথ চৌধুরী ছিলেন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির প্রথম ভারতীয় সার্জন-জেনারেল।[৫][৬][৭] তার তিন পিতৃব্য আশুতোষ চৌধুরী ছিলেন কলকাতা উচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি, যোগেশ চন্দ্র চৌধুরী ছিলেন কলকাতা শহরের বিশিষ্ট আইনজীবী এবং প্রমথ চৌধুরী ছিলেন একজন বিখ্যাত বাঙালি লেখক।[৮]
দেবিকা রাণী নোবেল পুরস্কার বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মীয় ছিলেন। দেবিকারানীর মা লীলা চৌধুরীর মাতামহী সৌদামিনী দেবী (গঙ্গোপাধ্যায়) ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড়দিদি।
নয় বছর বয়সে দেবিকা এবং তার ভাইকে ইংল্যান্ডের বোর্ডিং স্কুলে পাঠানো হয়। তাদের পিতা ইংরেজি পাবলিক স্কুলে শিক্ষালাভ করে তৎকালীন ঔপনিবেশিক যুগে উন্নতি লাভ করেছিলেন, তাই তিনি তার সন্তানদের যতটা সম্ভব ইউরোপীয় হিসাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। সেই কারণে দেবিকার শৈশবের বেশিরভাগ ইংল্যান্ডে অতিবাহিত হয় এবং সেই সময় তার পিতা-মাতার সঙ্গে তার সামান্যই যোগাযোগ ছিল।
দেবিকা ১৯২০ দশকের শুরুতে তার স্কুলজীবন শেষ হলে[৯] ভারতে তার পিতা-মাতার নিকট ফিরে আসার সময় উপস্থিত হয়। কিন্তু এই প্রত্যাবর্তনকে যতটা সম্ভব বিলম্ব করতে তিনি লন্ডনের রয়্যাল অ্যাকাডেমি অব ড্রামাটিক আর্ট ও রয়্যাল অ্যাকাডেমি অব মিউজিক নামক সুইটি প্রতিষ্ঠানে অভিনয় ও সঙ্গীত শিক্ষার উদ্দেশ্যে ভর্তি হন।[৬][১০] তাঁর পরিবাবের জন্য অর্থ কোন সমস্যা ছিল না। তাই এই শিক্ষাক্রম শেষে তিনি বস্ত্র নকশার শিক্ষার জন্য ভর্তি হন এবং এলিজাবেথ আর্ডেনের নিকট শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ করেন। এরপর, তিনি থিয়েটার সেট এবং পোশাক ডিজাইনার হিসেবে কাজ করার পরিকল্পনা করলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি।[১১]
১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে কুড়ি বছর বয়সী দেবিকার সঙ্গে তার চেয়ে ষোল বছরের বড় হিমাংশু রায়ের সাক্ষাৎ ঘটে। একজন ভারতীয় আইনজীবী হিসেবে জীবন শুরু করলেও হিমাংশু চলচ্চিত্র নির্মাণকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। এই সময় হিমাংশু লন্ডন শহরে তার প্রপঞ্চ পাশ চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজে ব্যস্ত ছিলেন[১০][১২] দেবিকার দক্ষতায় মুগ্ধ হিমাংশু তাকে এই চলচ্চিত্রের প্রযোজনা দলে আমন্ত্রণ জানান।[১] দেবিকা এই অনুরোধ রাখেন এবং পোশাক ডিজাইন এবং শিল্প নির্দেশনার কাজে সহায়তা করার জন্য হিমাংশুর সাথে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হন।[১৩] চলচ্চিত্র নির্মাণের পরে তাঁরা জার্মানি যান, যেখানে দেবিকা ফ্রিৎজ ল্যাং প্রমুখ জার্মান চলচ্চিত্র শিল্পীদের নিকট চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্বন্ধে শিক্ষালাভ করেন।[১] তাঁদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে দেবিকা বার্লিনের ইউএফএ স্টুডিওজে চলচ্চিত্র নির্মাণের শিক্ষাক্রমে ভর্তি হন।[১], যেখানে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণের সাথে সাথে অভিনয়ের শিক্ষাও লাভ করেন।[১০]
১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রপঞ্চ পাশ মুক্তিলাভের পর দেবিকা রাণী ও হিমাংশু রায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।[১] এই সময় তাঁরা দুইজন একসঙ্গে অভিনয় করতেন, যার জন্য তাঁরা সুইজারল্যান্ড ও স্ক্যান্ডিনেভিয় দেশগুলিতে বহু সম্মান ও পুরস্কার লাভ করেন। এই সময় দেবিকা অস্ট্রিয় নাট্য পরিচালক ম্যাক্স রাইনহার্টের নিকটেও প্রশিক্ষণ লাভ করেন।[১৪]
দেবিকা এবং হিমাংশু ১৯৩৩ সালে জার্মানি থেকে ভারতে চলে আসেন এবং হিমাংশু কর্ম নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এটি ছিল তাঁর প্রথম সবাক চলচ্চিত্র এবং তার আগের চলচ্চিত্র গুলির মতো এই চলচ্চিত্রটিও ভারত, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রযোজিত হয়। এই চলচ্চিত্রে হিমাংশু মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন। তিনি দেবিকাকে এই চলচ্চিত্রে মুখ্য নারী চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ করে দেন। কর্ম একজন ভারতীয় দ্বারা নির্মিত প্রথম ইংরেজি ভাষার চলচ্চিত্র এবং প্রথমদিকের চুম্বন দৃশ্যসম্বলিত ভারতীয় চলচ্চিত্রের একটি।[১৫] এই চলচ্চিত্রে হিমাংশু এবং দেবিকার চুম্বন প্রায় চার মিনিট ধরে দৃশ্যায়িত করা হয়,[১৬] এবং ২০১৪ সালের হিসাব মতো দীর্ঘ আশি বছর পরেও ভারতীয় চলচ্চিত্রে দীর্ঘতম চুম্বন দৃশ্যের রেকর্ড এই চলচ্চিত্রের কুক্ষিগত।[১৭][১৮] দেবিকা রাণী এই চলচ্চিত্রে হিন্দি ও ইংরেজিতে একটি দোভাষী গান গেয়েছেন, যা বলিউডের প্রথম ইংরেজি গান হিসেবে মনে করা হয়।[১৯][২০]
হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রটি ১৯৩৩ সালের মে মাসে লন্ডনে প্রথম দেখানো হয়। উইন্ডসর এ রয়েল পরিবারের জন্য একটি বিশেষ পরিবেশনার পাশাপাশি, এই ছবিটি সমগ্র ইউরোপে সমাদৃত হয়।[২১] লন্ডনের সংবাদমাধ্যম দেবিকার অভিনয়ের প্রশংসা করায় তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাত লাভ করেন।[১] দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় এক সমালোচক দেবিকা রাণীর "সৌন্দর্য" এবং "কমনীয়তা" উল্লেখ করে তাকে প্রথম শ্রেণীর উদীয়মান তারকা আখ্যা দেন।[২১] ১৯৩৩ সালে বিবিসি ব্রিটেনে তাদের প্রথম টেলিভিশনে সম্প্রচারের অভিনয় করার জন্য দেবিকাকে আমন্ত্রণ জানায়। তিনি ভারতে বিবিসির শর্ট ওয়েভ রেডিও সম্প্রচারও উদ্বোধন করেন[২২] ইংল্যান্ডে সাফল্য সত্ত্বেও ১৯৩৪ সালে ভারতে "নাগিন কি রাগিণী" নামে হিন্দিতে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রটি ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে পারেনি।[১] যাইহোক, এটি সমালচকদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করে যা পরবর্তীতে তাকে ভারতীয় চলচ্চিত্রে অন্যতম প্রধান নায়িকার আসনে বসায়।
১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে দেবিকা রাণী ও হিমাংশু রায় ভারতে ফিরে আসেন। হিমাংশু পরিচালক ফ্রাঞ্জ ওস্টেন[২৩] ও বাঙালি নাট্যকার নিরঞ্জন পালের[৭] সঙ্গে মিলিত ভাবে বম্বে টকিজ নামক একটি চলচ্চিত্র স্টুডিও নির্মাণ করেন। বম্বে টকিজ যখন শুরু হয়, তখন এটি ভারতের সবচেয়ে উন্নত স্টুডিও হিসেবে পরিগণিত হত। এই স্টুডিও থেকে অশোক কুমার, দিলীপ কুমার, রাজ কাপুর, মধুবালা, লীলা চিটনিস, মুমতাজের মতো বিখ্যাত অভিনেতাদের চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দেয়।[২৪] ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে এই স্টুডিও থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র জওয়ানি কি হাওয়াতে[২৫] দেবিকা রাণী ও নজম-উল-হাসান অভিনয় করেন।[১]
বম্বে টকিজের পরবর্তী চলচ্চিত্র জীবন নাইয়ার অভিনয়ের সময় দেবিকা রাণীর সঙ্গে সহ-অভিনেতা নজম-উল-হাসানের প্রণয়-ঘটিত সম্পর্ক তৈরী হয় এবং তারা দুইজনে পালিয়ে যান। এই ঘটনায় বিধ্বস্ত হিমাংশু চলচ্চিত্রটির নির্মাণ মাঝপথে বন্ধ করতে বাধ্য হন এবং এতে স্টুডিও ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। স্টুডিওর সহকারী শব্দ-প্রকৌশলী শশধর মুখোপাধ্যায় দেবিকা রাণীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে তাঁর স্বামী হিমাংশুর কাছে ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু এরপর দেবিকা রাণীর সঙ্গে তাঁর স্বামীর সম্পর্ক আর স্বাভাবিক হয়নি। দেবিকা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুবাদে পৃথক ভাবে অর্থের দাবী জানান, যা হিমাংশু মেনে নেন। নতুন করে অভিনয় করালে বেশি অর্থ খরচ হবে জেনেও হিমাংশু নায়কের চরিত্রে নজম-উল-হাসানের পরিবর্তে শশধর মুখোপাধ্যায়ের শ্যালক অশোক কুমারকে সুযোগ করে দেন। নজম-উল-হাসানকে স্টুডিও থেকে বরখাস্ত করা হয়। অন্য কোন স্টুডিও তাঁকে অভিনয়ের সুযোগ না দেওয়ায় নজম-উল-হাসানের কর্মজীবন সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যায়।[২৬]
বম্বে টকিজ স্টুডিওএ পরবর্তী অছুত কন্যা নামক চলচ্চিত্রে দেবিকা রাণী ও অশোক কুমার মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন। একজন অচ্ছুত মহিলার ভূমিকায় দেবিকা্র সঙ্গে ব্রাহ্মণের অভিনয়ে অশোকের প্রেমের কাহিনী নিয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্র[২৭] ভারতের জাতপাত প্রথাকে সরাসরি বিরুদ্ধতার সম্মুখীন করে। যদিও ধনী পরিবারে বড় হয়ে ওঠা দেবিকা রাণীর পক্ষে একজন অচ্ছুত মহিলার চরিত্রে অভিনয় মানানসই ছিল না,[২৮] তাহলেও অশোক কুমারের সাথে তার জুটি এত জনপ্রিয় হয়, যে তাঁরা একসঙ্গে দশটি চলচ্চিত্রে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন।[১][২৭] ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে জীবন প্রভাত নামক চলচ্চিত্রে দেবিকা রাণী একজন ব্রাহ্মণ মহিলার ভূমিকায় অভিনয় করেন, বিপরীতে অশোক কুমার একজন অচ্ছুতের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত ও রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েটের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত ইজ্জত নামক চলচ্চিত্রটি মারাঠা দুইটি শত্রু গোষ্ঠীর দুই নারী-পুরুষের প্রেমকাহিনীকে উপজীব্য করে নির্মিত হয়।[২৭] পরের বছর মুক্তিপ্রাপ্ত নির্মলা নামক চলচ্চিত্রে দেবিকা একজন সন্তানহীনা মহিলার ভূমিকায়[২৭] ও বচন নামক চলচ্চিত্রে একজন রাজপুত রাজকন্যার ভূমিকায় অভিনয় করেন।[২৯] একজন অনাথ মেয়ে ও একজন গ্রামীণ চিকিৎসকের প্রণয়ের কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে তার একমাত্র চলচ্চিত্র দুর্গা মুক্তিলাভ করে।[১][৩০]
১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে হিমাংশু রায় মৃত্যুবরণ করলে দেবিকা রাণী ও শশধর মুখোপাধ্যায় স্টুডিওর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে দেবিকা অনজান নামক একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন ও অশোক কুমারের বিপরীতে অভিনয় করেন। পরবর্তী বছরগুলিতে তিনি বসন্ত ও কিসমত নামক দুটি বাণিজ্যিকভাবে সফল চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন। ব্রিটিশ বিরোধী বার্তা থাকায় কিসমত তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।[৩১] ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে দেবিকা হমারি বাত চলচ্চিত্রে শেষ বারের মত অভিনয় করেন। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে তার প্রযোজিত জোয়ার ভাঁটা নামক চলচ্চিত্রে তিনি নবাগত দিলীপ কুমারকে সুযোগ দেন। এই সময় স্টুডিওর অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে অশোক কুমার ও শশধর মুখোপাধ্যায় বম্বে টকিজ স্টুডিও থেকে সরে এসে ফিল্মিস্তান নামক একটি নতুন স্টুডিও তৈরী করেন।[৩১][৩২] এরপর দেবিকা চলচ্চিত্র জগৎ থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।[৩৩]
চলচ্চিত্র জগৎ থেকে অবসর নেওয়ার পর দেবিকা ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে রুশ চিত্রশিল্পী স্বেতোস্লাভ রোয়েরিখকে বিবাহ করেন। বিবাহের পর তাঁরা মানালি শহরে বসবাস শুরু করেন। এই সময় দেবিকা বন্যপ্রাণ নিয়ে কয়েকটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। মানালি শহরে কয়েক বছর বসবাসের পর তাঁরা ব্যাঙ্গালোর শহরে বসবাস শুরু করেন,[৩৪] যেখানে শহরের প্রান্তে তাঁরা ৪৫০ একর (১৮,০০,০০০ মি২) মাপের একটি বাড়ি বানিয়ে বাকি জীবন অতিবাহিত করেন।[১][৩৫] ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ মার্চ শ্বাসনালীর সংক্রমণের ফলে এই শহরেই দেবিকার মৃত্যু ঘটে।[৩৬][৩৭] রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার মৃতদেহের সৎকার করা হয়।[৩৮]
১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকার দেবিকা রাণীকে পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রথম দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন।[৩৮][৩৯] ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে সোভিয়েত রাশিয়া তাকে সোভিয়েত ল্যান্ড নেহরু পুরস্কার প্রদান করে।[৪০] ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক থেকে তার সম্মানে একটি ডাকটিকিট চালু করে।[৪১]