দেরাদুন देहरादून দুন | |
---|---|
মহানগরী | |
উত্তরাখণ্ডে দেরাদুনের অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ৩০°১৯′০৫″ উত্তর ৭৮°০১′৪৪″ পূর্ব / ৩০.৩১৮° উত্তর ৭৮.০২৯° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
প্রদেশ | উত্তরখণ্ড |
জেলা | দেরাদুন |
সদর দপ্তর | দেরাদুন |
উচ্চতা | ৪৩৫ মিটার (১,৪২৭ ফুট) |
জনসংখ্যা (2011)[১] | |
• মহানগরী | ৫,৭৮,৪২০ |
• মহানগর[২] | ৭,১৪,২২৩ |
ভাষাসমূহ | |
• সরকারী | ইংরেজি, হিন্দী, সংস্কৃত, পাঞ্জাবি, উর্দু |
সময় অঞ্চল | আইএসটি (ইউটিসি+5:30) |
পিন | ২৪৮০০১ |
টেলিফোন কোড | ৯১-১৩৫ |
যানবাহন নিবন্ধন | ইউকে-০৭ |
ওয়েবসাইট | dehradun |
দেরাদুন (হিন্দি: देहरादून, প্রতিবর্ণীকৃত: দেহ্রাদূন্) ভারতের উত্তরভাগে অবস্থিত উত্তরাখণ্ড রাজ্যের শীতকালীন রাজধানী শহর। শহরটি রাজ্যের উত্তর-পশ্চিম অংশে গাড়োয়াল বিভাগে হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে সমুদ্রসমতল থেকে প্রায় ৬৭০ মিটার উচ্চতায়, ভারতের রাজধানী শহর নতুন দিল্লি থেকে ২৩৬ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। মূল দেরাদুন শহরে প্রায় ৫ লক্ষ ৭৮ হাজার লোক এবং বৃহত্তর মহানগর এলাকাতে প্রায় ৭ লক্ষ ১৪ হাজার লোকের বাস। জলবায়ু আর্দ্র ক্রান্তীয় ধরনের। মৌসুমী বায়ুর কারণে এখানে বর্ষাকালে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। গ্রীষ্মকালে কদাচিৎ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে। স্থানীয় লোকেরা মূলত গাড়োয়ালি ভাষাতে কথা বলে।
ধর্মদ্রোহী শিখ গুরু রাম রায়কে পাঞ্জাব থেকে বহিস্কার করার পর তিনি উত্তরাখণ্ডে এসে একটি মন্দির স্থাপন করেন এবং ফলে দেরাদুন লোকালয়টি ১৬৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮শ শতকে অঞ্চলটিতে একের পর এক বহিরাগত গোষ্ঠী আক্রমণ চালায়। এদের মধ্যে সর্বশেষ গোষ্ঠীটি ছিল নেপালি গুর্খা সৈন্যের দল। ১৮১৬ সালে গুর্খা যুদ্ধের অবসান ঘটলে অঞ্চলটি ব্রিটিশদের করায়ত্ত হয়। ব্রিটিশ রাজের শাসনামলে এর নাম ছিল দেরা। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর শহরটি উত্তর প্রদেশ নামক নবগঠিত রাজ্যের অঙ্গীভূত হয়। ২০০০ সালে উত্তর প্রদেশের উত্তর অংশটিকে বিচ্ছিন্ন করে উত্তরাখণ্ড রাজ্যটি প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং সেসময়ই দেরাদুনকে নতুন রাজ্যটির রাজধানীর মর্যাদা দেওয়া হয়। দেরাদুনের রাজধানী মর্যাদাটি ভবিষ্যতে রদ করে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। বর্তমানে গাড়োয়াল ও কুমায়ুন বিভাগের মধ্যবর্তী স্থানে রাজ্যের কেন্দ্রভাগে অবস্থিত গৈরসৈন নামের আরেকটি শহরকে উত্তরাখণ্ড রাজ্যের স্থায়ী রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।
দেরাদুন শহরটি একটি পাহাড়ি অবকাশযাপন কেন্দ্র। ভারতের সড়ক ও রেলব্যবস্থাগুলির সবচেয়ে উত্তর প্রান্তে অবস্থিত শহরগুলির একটি হল দেরাদুন। চা প্রক্রিয়াজাতকরণ এ শহরের প্রধান শিল্প। এছাড়া বিভিন্ন প্রযুক্তি ও সামরিক অস্ত্রশস্ত্রও প্রস্তুতের কারখানাও এখানে রয়েছে। দেরাদুনে ভারতীয় জরিপ সংস্থা ও বন বিভাগের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। এছাড়া এখানে বন গবেষণা ইন্সটিটিউট, প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ পরীক্ষাগার, ভারতীয় সামরিক একাডেমি, রাষ্ট্রীয় ভারতীয় সামরিক মহাবিদ্যালয়, হিমালয় ভূবিজ্ঞান বিষয়ক ওয়াদিয়া ইন্সটিটিউট এবং আরও বেশ কিছু শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবস্থিত।
পর্যটকদের জন্য উদ্ভিদ উদ্যান, আসান নদীর তীরে অবস্থিত তপকেশ্বর শিবমন্দির ও এর পবিত্র গুহা, স্নান করার প্রাকৃতিক পুকুরসমৃদ্ধ ডাকাতের গুহা বা গুছুপানি এবং সহস্রধারা জলপ্রপাত (গন্ধকযুক্ত পানি) কিছু আকর্ষণীয় স্থান। গুছুপানি গুহার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত মালসি হরিণ উদ্যানে সাধারণ হরিণ ও ভারতীয় অ্যান্টিলোপ হরিণ চরে বেড়ায়, এলাকাটি বনভোজনের জন্য জনপ্রিয়। শহরের কেন্দ্রে ছয়পার্শ্ববিশিষ্ট একটি ঘড়ির মিনার আছে, যার নাম ঘণ্টাঘর। শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমভাগে আছে ব্যস্ত পল্টন বাজার। পূর্বে আছে গুরুদুয়ারা নানাকসার নামের শিখ মন্দির, যার সাদা ও সোনালি গম্বুজগুলি অত্যন্ত কারুকার্যময়। দক্ষিণ-পশ্চিমে ক্লেমেন্ট টাউন এলাকাতে মিন্ডরোলিং মঠ নামের একটি তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্মীয় কেন্দ্র আছে যার মহাস্তুপের মধ্যে অর্চনাস্থল ও ১০৩ ফুট উঁচু বুদ্ধের মূর্তি আছে। বন গবেষণা ইন্সটিটিউটে একটি বড় জাদুঘর আছে, যেখানে বনরোগ ও কাঠের উপর বিভিন্ন প্রদর্শনী আছে। ব্রিটিশ জরিপ পরিচালক ও ভূগোলবিদ জর্জ এভারেস্টের বাসভবন ও গবেষণাগারটিও পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়; জর্জ এভারেস্টের নামেই বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতটির নাম রাখা হয়েছে। আরও আছে রাজা জি বাঘ অভয়ারণ্য। শহরের কাছে উত্তর দিকে মাসুরি নামের আরেকটি পাহাড়ি লোকালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থকেন্দ্র। নিকটবর্তী ঔলি শহরে পাহাড়ি পদযাত্রা ও স্কি করার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া হিন্দুদের তীর্থকেন্দ্র হরিদ্বার ও ঋষিকেশও দেরাদুনের কাছেই দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। শহরটি থেকে উত্তরে হিন্দুদের পবিত্র ধর্মীয় কিছু লোকালয়ে যাওয়া যায়, যাদেরকে একত্রে "ছোটা চার ধাম" নামে ডাকা হয়। দেরাদুনে ব্রিটিশরা অনেক আফগান রাজাকে নির্বাসিত করেছিল বলে শহরটির সাথে আফগান রাজপরিবারের সম্পর্ক আছে।
দেরাদুনের আশেপাশের এলাকাতে পর্বতশৃঙ্গগুলি প্রায় ২৫০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত উঠে গেছে। দুন নামের অঞ্চলটি আসলে একটি উপত্যকা যার উত্তরে হিমালয় এবং দক্ষিণে সিওয়ালিক পর্বতশ্রেণী। শহরটির পূর্বে গঙ্গা ও পশ্চিমে যমুনা নদী। দেরাদুনে বাসমতি চাল (আফগানিস্তান থেকে প্রাপ্ত একটি প্রজাতি), যব, চা, লিচু ও অন্যান্য খাদ্যশস্যের আবাদ হয় এবং মূল্যবান কাঠও আহরণ করা হয়।
নগর নিগম দেরাদুন নামের পৌরসভাটি দেরাদুন শহরটি পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত। বর্তমানে দেরাদুনকে দিল্লি জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের একটি "প্রতিচুম্বক" (কাউন্টার ম্যাগনেট) শহর হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে, যাতে রাজধানী অঞ্চলে মানুষের অভিবাসনের কারণে জনসংখ্যা বিস্ফোরণের ঝুঁকি কমানো যায়।
দেরাদুন-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) | ২৪.৬ (৭৬.৩) |
৩১.২ (৮৮.২) |
৩৭.২ (৯৯.০) |
৪০.৮ (১০৫.৪) |
৪২.৮ (১০৯.০) |
৪৪.৬ (১১২.৩) |
৪০.৬ (১০৫.১) |
৩৭.২ (৯৯.০) |
৩৬.৬ (৯৭.৯) |
৩৬.১ (৯৭.০) |
৩০.৬ (৮৭.১) |
২৭.৪ (৮১.৩) |
৪৪.৬ (১১২.৩) |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ১৯.৩ (৬৬.৭) |
২১.৫ (৭০.৭) |
২৬.৪ (৭৯.৫) |
৩২.১ (৮৯.৮) |
৩৫.৬ (৯৬.১) |
৩৪.৮ (৯৪.৬) |
৩০.৫ (৮৬.৯) |
২৯.৪ (৮৪.৯) |
২৯.৭ (৮৫.৫) |
২৮.৫ (৮৩.৩) |
২৫.০ (৭৭.০) |
২১.১ (৭০.০) |
২৭.৮ (৮২.০) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ৬.০ (৪২.৮) |
৭.৮ (৪৬.০) |
১২.০ (৫৩.৬) |
১৬.৭ (৬২.১) |
২০.৭ (৬৯.৩) |
২৩.০ (৭৩.৪) |
২২.৮ (৭৩.০) |
২২.৪ (৭২.৩) |
২০.৮ (৬৯.৪) |
১৫.৭ (৬০.৩) |
১০.৪ (৫০.৭) |
৬.৮ (৪৪.২) |
১৫.৪ (৫৯.৭) |
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) | −১.১ (৩০.০) |
−১.১ (৩০.০) |
২.২ (৩৬.০) |
৭.২ (৪৫.০) |
১১.৩ (৫২.৩) |
১৩.১ (৫৫.৬) |
১৩.২ (৫৫.৮) |
১৮.০ (৬৪.৪) |
১৪.৩ (৫৭.৭) |
৮.৪ (৪৭.১) |
২.৮ (৩৭.০) |
০.০ (৩২.০) |
−১.১ (৩০.০) |
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ৫৫.০ (২.১৭) |
৫৮.৮ (২.৩১) |
৪৯.০ (১.৯৩) |
২২.৫ (০.৮৯) |
৪১.৭ (১.৬৪) |
২০১.৮ (৭.৯৪) |
৬৭২.৬ (২৬.৪৮) |
৭২৮.২ (২৮.৬৭) |
২৯৬.৫ (১১.৬৭) |
৪৯.৮ (১.৯৬) |
৮.৬ (০.৩৪) |
২৪.৪ (০.৯৬) |
২,২০৮.৯ (৮৬.৯৬) |
আপেক্ষিক আদ্রতার গড় (%) | ৭২ | ৬৬ | ৫৭ | ৪৬ | ৪৮ | ৬৬ | ৮৫ | ৮৬ | ৮১ | ৬৯ | ৬৮ | ৭১ | ৬৮ |
উৎস ১: IMD[৩][৪] | |||||||||||||
উৎস ২: MyWeather.com[৫] |
ভারতের অন্যান্য শহরের মতো এখানেও ক্রিকেট বেশ জনপ্রিয়। নবনির্মিত রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, দেরাদুন এর মূল স্টেডিয়াম।
বিমান রুটে দেরাদুন দেশের সকল অঞ্চলের সাথে যুক্ত। এয়ার ইন্ডিয়া, স্পাইস জেট,