দেলি সালতানাত كسولتانن دلي دارول ماءيمون | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১৬৩২–১৯৪৬ | |||||||||
রাজধানী | দেলি তুয়া লাবুহান দেলি মেদান | ||||||||
প্রচলিত ভাষা | মালয় | ||||||||
ধর্ম | ইসলাম (সুন্নি) | ||||||||
সরকার | রাজতন্ত্র | ||||||||
সুলতান | |||||||||
• ১৬৩২-১৬৬৯ | টুঙ্কু পাংলিমা গুচাহ পাহলাওয়ান | ||||||||
• ১৮৫৮-১৮৭৩ | সুলতান মাহমুদ আল রশিদ পেরকাসা আলম শাহ | ||||||||
• ১৯৪৫-১৯৬৭ | সুলতান উসমান আল সানি পেরকাসা আলম শাহ | ||||||||
• ২০০৫-বর্তমান | সুলতান মাহমুদ লামানজিজি পেরকাসা আলম | ||||||||
ইতিহাস | |||||||||
• প্রতিষ্ঠিত | ১৬৩২ | ||||||||
• ইন্দোনেশিয়ায় যোগদান | ১৯৪৬ | ||||||||
| |||||||||
বর্তমানে যার অংশ | Indonesia |
ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাস |
---|
ধারাবাহিকের একটি অংশ |
সময়রেখা |
ইন্দোনেশিয়া প্রবেশদ্বার |
দেলি সালতানাত (ইন্দোনেশীয়: Kesultanan Deli Darul Maimoon; জাউয়ি: كسولتانن دلي دارول ماءيمون) ১৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব সুমাত্রায় প্রতিষ্ঠিত একটি রাষ্ট্র। এর আয়তন ১,৮২০ বর্গকিমি। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ এটি একটি করদ রাজ্য ছিল। এসময় তারা স্বাধীনতা লাভ করে এবং সিয়াক সালতানাত থেকে বেরিয়ে আসে।
আচেহর শাসক ১৫শ শতাব্দীর মধ্যভাগে ইসলাম গ্রহণ করেন।[১] আলি মুগায়াত শাহ আচেহ সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি ১৫২০ খ্রিষ্টাব্দে উত্তর সুমাত্রায় তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য অভিযান শুরু করেন।[২] সুলতান ইসকান্দার মুদা তার অভিযানের মাধ্যমে আচেহর সীমানা বৃদ্ধি করেন। ১৬১২ খ্রিষ্টাব্দে দেলি পরাজিত হয় এবং আচেহর অন্তর্গত হয়। ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে ডাচদের হস্তক্ষেপের পরের বছর ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে সন্ধি হয় যা আচেহ ও সিয়াকের কাছ থেকে দেলির স্বাধীনতা স্বীকার করতে সহায়তা করে। এটি বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার অংশ। মেদানের ইতিহাসে সালতানাত প্রতীক হিসেবে টিকে রয়েছে।
সুলতান ইসকান্দার মুদার শাসনামলে আচেহ সালতানাতের সমৃদ্ধির যুগের সাথে দেলি সালতানাতের ইতিহাসের সম্পর্ক রয়েছে। ১৬১২ খ্রিষ্টাব্দে আচেহ দারুস সালামের বিস্তার শুরু হয়। এসময় সুমাত্রার পূর্ব উপকূলের শহরগুলোতে আক্রমণ করা হয়।[৩] দেলির উপকূল ছয় সপ্তাহের মধ্যে দখল করে নেয়া হয়। ১৬১৩ খ্রিষ্টাব্দের প্রথমদিকে আরু রাজ্য আত্মসমর্পণ করেছিল। পূর্ব সুমাত্রায় অবস্থিত আরু রাজ্যকে কিছু রচনা কর্মে যেমন দ্বিতীয় টুঙ্কু লোকমান সিনার বাসার শাহর লেখায় হারু রাজ্যও বলা হয়েছে। তিনি পূর্ব সুমাত্রার ইতিহাস নিয়ে নিয়মিত লিখে গেছেন।
আচেহ দারুসসালামের অভিযানগুলোতে মুহাম্মদ দালিক নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি স্রি পাদুকা টুঙ্কু গোচাহ পাহলাওয়ান উপাধি ধারণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত অভিজাত ব্যক্তি আমির মুহাম্মদ বদরউদ্দিন খানের বংশধর। আমির মুহাম্মদ সামুদেরা পাসাইয়ের সুলতানের কন্যা রাজকুমারী চন্দ্র দেউয়িকে বিয়ে করেছিলেন। মুহাম্মদ দালিনকে লক্ষণ কুদা বিনতান বলা হত। ১৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পর্তুগিজদের বিরুদ্ধে অভিযানে আচেহর সেনাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং ১৬১৭ খ্রিষ্টাব্দে পাহাং, ১৬২০ খ্রিষ্টাব্দে কেদাহ, ১৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে নিয়াস ও সেসাথে আরো কিছু এলাকা জয় করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়।[৪]
সুলতান ইসকান্দার মুদা আরু অঞ্চল স্রি পাদুকাকে প্রদান করেছিলেন। ১৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে স্রি পাদুকা টুঙ্কু গোচাহ পাহলাওয়ানকে আরুর প্রাক্তন এলাকা শাসনের জন্য সুলতানের প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয়।[৫] পর্তুগিজদের সহায়তাপ্রাপ্ত আরু রাজ্যের অবশিষ্ট প্রতিরোধ ভেঙে দেয়া, অভ্যন্তরীণ এলাকায় ইসলামের প্রসার ও আচেহর অংশে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা আচেহর উদ্দেশ্য ছিল।[৬]
আচেহর সুলতানের প্রতিনিধি হিসেবে আরুর শাসক হওয়ার অল্প কিছুকাল পরে স্রি পাদুকা টুঙ্কু পাহলাওয়ান বাতাক কারু উরুঙের চারটি রাজ্যের রাজা কর্তৃক দাতুক টুনগাল বা উলুন জানজি নিযুক্ত হন। এই পদ প্রধানমন্ত্রীর সমপর্যায়ের ছিল।[৭] এছাড়াও তার সরকারকে সহায়তা করার জন্য উপদেষ্টা পরিষদ হিসেবে লেমবাগা দাতুক বেরেমপাত প্রতিষ্ঠিত হয়। বাতাক কারুর চার রাজা এর সদস্য হন।
বাতাক কারুর চারজন রাজা এই অঞ্চলের চারটি রাজ্যের শাসক ছিলেন। তারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। স্রি পাদুকা টুঙ্কু গোচাহ পাহলাওয়ানের অভিযানের সময় তারা আচেহ কর্তৃক বিজিত হন। তাদের অন্যতম রাজা উন্দু সানগাল ছিলেন স্রি পাদুকার শ্বশুর। ১৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে স্রি পাদুকা রাজা উন্দু সানগালের কন্যা রাজকুমারী নাং বালুয়ান বেরু সুরবাকতিকে বিয়ে করেন।
স্রি পাদুকা ১৬৪১ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান। এরপর দেলির শাসনভার তার ছেলের হস্তগত হয়। তার ছেলে টুঙ্কু পাংলিমা পেরুনগিত এসময় পাংলিমা দেলি উপাধি ধারণ করেন। ইতিমধ্যে সুলতান ইসকান্দার মুদা ১৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দে আচেহে মারা গিয়েছিলেন। ইসকান্দার মুদার পর তার জামাতা ইসকান্দার থানি আচেহর নতুন শাসক হন। তিনি ১৬৪১ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান।
ইসকান্দার থানির মৃত্যুর পর আচেহ দুর্বল হয়ে পড়ে। তার স্ত্রী ও ইসকান্দার মুদার কন্যা সুলতানা সাফি আল-দীন তাজ আল-আলম উত্তরসুরি হন। এই পরিস্থিতি টুঙ্কু পাংলিমা পেরুনগিতের জন্য সুযোগ হিসেবে দেখা দেয়। ১৬৬৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আচেহ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং মালাক্কার ডাচদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন। এর মাধ্যমে দেলি সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হয়। লাবুহান ছিল এর রাজধানী। বর্তমান উত্তর সুমাত্রার রাজধানী মেদান থেকে ২০ কিমি দূরে এর অবস্থান ছিল।
ভেরেনিগডে অস্ট ইন্দিসচে কোম্পাগনির আর্কাইভে ১৬৪১ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলের বিবরণে দেলির উল্লেখ রয়েছে। সে বছর ডাচরা মালাক্কা অবরোধ করে। এই বিবরণে বলা হয়েছে যে জহরের নৌ সেনাপতির রিপোর্ট অনুযায়ী আচেহর সেনাবাহিনী কুয়ালা দেলিতে সমবেত হয়েছিল। এই সময় আচেহ সালতানাত ও জহর সালতানাতের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল। ইতিপূর্বে প্রথমে পর্তুগিজ ও পরে ডাচরা এতে সহায়তা করে।
অন্য একটি ডাচ আর্কাইভে ১৬৪১ খ্রিষ্টাব্দের ৯ সেপ্টেম্বরের বিবরণে দেলির উল্লেখ রয়েছে। এতে সুলতানা সাফি আল-দীন তাজ আল-আলমের তরফ থেকে বাটাভিয়ায় গভর্নর জেনারেল এন্টনিও ভন ডিমেনের কাছে পাঠানো চিঠি রয়েছে। এই চিঠিতে সুলতানা লিখেছেন যে ডাচরা দেলি ও বেসিতাঙের সাথে বাণিজ্য করতে পারবে। ১৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরের রেকর্ড অনুযায়ী টূঙ্কু পাংলিমা দেলি নামক একজন শাসক মালাক্কার ডাচদেরকে চিঠি ও উপহার পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু দেলিতে পেনাজি নদীর কাছে তার প্রতিনিধি দল লুন্ঠিত হয়।
স্রি পাদুকা টুঙ্কু গোচাহ পাহলাওয়ানের পরবর্তী সুলতান ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান। তার উত্তরসুরি টুঙ্কু পাংলিমা পাদেরাপ ১৭২০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত শাসন করেছিলেন। টুঙ্কু পাংলিমা পাদেরাপের মৃত্যুর পর সালতানাতের ভেতর অভ্যন্তরীণ ভাঙন দেখা দেয়। তার উত্তরসুরি কে হবেন এই প্রশ্নে তার সন্তানদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়।
টূঙ্কু জালালউদ্দিন গেলার কেজুরুয়ান মেতার জ্যেষ্ঠ সন্তান হলেও চোখের সমস্যার কারণে দেলির সুলতান পদের প্রার্থীদের থেকে বাদ পড়েন। এই অবস্থায় দ্বিতীয় সন্তান টুঙ্কু পাংলিমা পাসুতান ক্ষমতা গ্রহণে ইচ্ছুক ছিলেন। তবে রাণীর সন্তান হওয়ায় চতুর্থ সন্তান টুঙ্কু উমর জোহান আলম শাহ গেলার কেজারুয়ান জুনজুনগান রাজা হওয়ার দাবিদার ছিলেন। দুই সন্তানের মধ্যে গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়। টুঙ্কু তাওয়ার গেলার কেজুরুয়ান সানতুন ভাইদের মধ্যকার যুদ্ধ এড়িয়ে যেতে চান। তিনি দেনাই চলে গিয়ে শাসন স্থাপন করেন যা পরবর্তীতে সেরবাজাদিতে বিস্তৃত হয়।
১৭৩২ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে টুঙ্কু পাংলিমা পাসুতান কর্তৃক টুঙ্কু উমর জোহান আলম শাহ গেলার কেজেরুয়ান জুনজুনগান পরাজিত হন। টুঙ্কু উমর জোহান ও তার মাকে বহিষ্কার করা হয়। তারা কামপুং বেসার নামক স্থানে আশ্রয় নেন। এর ফলে টুঙ্কু পাংলিমা পাসুতান দেলির স্বাধীন সুলতান হন।
ইতিমধ্যে টুঙ্কু উমর জোহান আলম শাহ গেলার কেজেরুয়ান জুনজুনগান সেরদাং সালতানাত প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তুতি নেন। টুঙ্কু উমর জোহান আলম শাহর প্রতি দুই বাতাক কারু শাসক রাজা উরুং সুনগাল ও রাজা উরুং সেনেমবাহর বলিষ্ঠ সমর্থনের ফলে এই সালতানাতের জন্ম হয়। অধিকন্তু তানজুং মারাওয়ার সেরদাং অঞ্চলের উচ্চ অংশ শাসনকারী রাজা উরুং বাতাক তিমুর ও আচেহর একজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তি কেজেরুয়ান লুমু সেরদাং প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন। ১৭২৩ খ্রিষ্টাব্দে টুঙ্কু উমর জোহান আলম শাহ গেলার কেজেরুয়ান জুনজুনগান সেরদাং সালতানাতের প্রথম সুলতান হিসেবে অভিষিক্ত হন। টুঙ্কু পাংলিমা পাদেরাপের তৃতীয় পুত্র টুঙ্কু তাওয়ার কেজেরুয়ান সানতুন তার নিজ অঞ্চলকে সেরদাঙের সাথে যুক্ত করেন।
দেলির অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতার কারণে প্রভাব নিয়ে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত অন্য রাজ্যগুলোর দেলিকে নিজেদের লক্ষ্যবস্তু বানায়। দেলিকে অধিকার করতে চাওয়া রাজ্যগুলোর মধ্যে ছিল সিয়াক স্রি ইন্দেরাপুরা সালতানাত, জহর সালতানাত ও আচেহ সালতানাত।
দেলি খুবই লাভজনক অঞ্চল বলে বিবেচিত হত। মূলত প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য এই অঞ্চল লাভজনক ছিল। দেলির সুগন্ধি, চন্দনকাঠ ও কর্পূর বিখ্যাত ছিল, এছাড়াও ডাচরা দেলি থেকে চাল, মোম ও ঘোড়া সংগ্রহ করত।[৮] অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে ডাচরা দেলির কর্তৃপক্ষের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখে। তারা দেলি থেকে কাপড়ও ক্রয় করত।
দেলির চতুর্থ সুলতান টুঙ্কু পাংলিমা পাসুতান ১৭৬১ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান। কানদুহিদ এরপর থেকে সালতানাতের সরকার পরিচালনা করতে থাকেন। তিনি পাংলিমা গান্দার ওয়াহিদ উপাধি ধারণ করেন। ১৮০৫ খ্রিষ্টাব্দে পাংলিমা গান্দার ওয়াহিদ মারা যান। টুঙ্কু আমালউদ্দিন তার উত্তরসুরি হন। এসময় দেলির উপর সিয়াক স্রি ইন্দেরাপুরা সালতানাতের প্রভাব ছিল। ফলে ফলে দেলির সুলতানের অভিষেকের তারিখ সিয়াকের সুলতানের জারিকৃত সনদের তারিখ অনুযায়ী ৮ আগস্ট ১৮১৪ বিবেচিত হয়। সরকারিভাবে দেলির সুলতান হওয়ার পর টুঙ্কু পাংলিমা আমালউদ্দিন "সুলতান পাংলিমা মানগেদার আলম" নামক সম্মানসূচক নাম লাভ করেন।
সেকিতার সুকু মেলাজু, বাতাক, আতজেহ, দান কেরাদজান দেলি (১৯৫৬) তে মেউরাজা লিখেছেন যে ১৬৬৯ খ্রিষ্টাব্দে আচেহ সালতানাতের কাছ থেকে সিয়াক স্রি ইন্দেরাপুরা সালতানাত দেলি সালতানাতকে ছিনিয়ে নেয়। তবে সিয়াক স্রি ইন্দেরাপুরা সালতানাত যখন জওহর সালতানাতের অধীনতা মেনে নেয় তখন দেলি সালতানাতের এলাকা জওহর সালতানাতের অধীনস্থ ছিল।
১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে আচেহ পুনরায় দেলির জন্য অগ্রসর হয়। টেওকু হুসিন এতে নেতৃত্ব দেন। দেলির শাসক সুলতান উসমান পেরকাসা আলম শাহকে আচেহর রাজপ্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর দেলিকে আচেহর অংশ করা হয়। সুলতান সুলাইমান শাহ এসময় আচেহর সুলতান ছিলেন। আচেহ সালতানাত কর্তৃক রোকান থেকে দক্ষিণে তামিয়াঙের সীমানা পর্যন্ত দেলির সীমান্ত নির্ধারিত হয়।
ডাচদের চাপের পর দেলি ও সেরদাঙের মধ্যে গৃহযুদ্ধ ২০শ শতাব্দীর প্রথমদিকে শেষ হয়। পারস্পরিক প্রয়োজনে দেলি সালতানাত ও ডাচরা এক অন্যের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। ডাচরা দেলি থেকে নানা প্রকার প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করত। অন্যদিকে দেলি সুরক্ষার জন্য ডাচদের সহায়তা নেয়।
সিয়াক স্রি ইন্দেরাপুরা সালতানাতের প্রভাবাধীন থাকাকালীন সময়ে দেলি ও ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সম্পর্ক ভালো ছিল। ১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট জুড়ে রিয়ায়ুর রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালনকারী এলিসা নেটচের পূর্ব সুমাত্রার রাজ্য ভ্রমণের সময় সিয়াকের সহকারী রেসিডেন্ট ও সিয়াক সালতানাতের কিছু শাসকের সহায়তা পান। পূর্ব সুমাত্রার কিছু রাজ্য সিয়াকের আধিপত্য মেনে নিচ্ছিল না বলে সিয়াক সালতানাতের তরফ থেকে এই ভ্রমণের অনুরোধ করা হয়েছিল। দেলিও এদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পূর্ব সুমাত্রার রাজ্যগুলো সিয়াককে দুর্বল বিবেচনা করে আচেহর সাথে সম্পর্ক জোরদার করে।
১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দের ২১ আগস্ট এলিসা নিটচেরের দল কুয়ালা সুনগাই দেলিতে প্রবেশ করে। সুলতান মাহমুদ আল রশিদ পেরকাসা আলম শাহ তাদের অভ্যর্থনা জানান। তিনি তাদের জানান যে সিয়াকের ব্যাপারে দেলির কিছু করার নেই এবং তাই তিনি কোনো পক্ষ থেকে স্বীকৃতি চাইছেন না। তবে সিয়াকের কর্তৃত্ব যাতে দেলির উপর থাকে সে ব্যাপারে নেটচার চেষ্টা চালান। এরপর থেকে দেলির সাথে ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ সরকারের রাজনৈতিক সমঝোতা হয়।
১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান মাহমুদ আল রশিদ পেরকাসা আলম শাহর শাসন সমাপ্ত হয়। এরপর তার পুত্র সুলতান মাকমুন আল রশিদ পেরকাসা আলম উপাধি ধারণ করে শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করেন। নবম সুলতানের শাসনামলে তামাক চাষ, দেলি কোম্পানির বৃদ্ধি এবং অন্যান্য বিদেশি উদ্যোক্তাদের কারণে দেলি সমৃদ্ধি লাভ করে। এসকল উদ্যোক্তা তামাক চাষ করত। ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে দেলিতে ১৩টি বিদেশি মালিকানাধীন চাষাবাদ ক্ষেত্র ছিল। দেলির মাটি বিশ্বমানের তামাক উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত ছিল। এসব তামাক ইউরোপের বাজারে চুরুট তৈরিতে ব্যবহৃত হত।
১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে দেলির তামাক চাষ ক্ষেত্র ৪৪টি এস্টেট পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। পরের বছর উৎপাদিত তামাকের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পায়। ফলে দেলি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তামাক উৎপাদনকারী দেশ এবং আমস্টারডাম বিশ্বের সবচেয়ে বড় তামাকের বাজারে পরিণত হয়। এসব চাষাবাদ ক্ষেত্র ও জমি থেকে প্রাপ্ত ভাড়ার কারণে দেলির সুলতান খুব ধনী হয়ে উঠেন।
এ সময় সুলতান মাহমুদ আল রশিদ পেরকাসা আলম শাহ সমৃদ্ধি প্রতীক নির্মাণ করেন। অন্যান্যের মধ্যে আছে ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত কামপুং বাহারি (লাবুহান) ও ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত মাইমুন প্রাসাদ। তার উত্তরসুরি সুলতান মামুন আল রশিদ পেরকাসা আলম শাহ এসকল নির্মাণ কাজ চালু রাখেন। তিনি ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে মাহকামাহ কেরাপাতান বেসার ভবন ও ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান আল মানসুন মসজিদ নির্মাণ করেন। মাইমুন প্রাসাদ ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সুলতানের প্রশাসনিক কর্মস্থল ও বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ইতিপূর্বে সুলতান ও তার পরিবার কামপুং বাহারিতে থাকতেন। ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ ঔপনিবেশিক সেনাবাহিনীর সৈনিক ক্যাপ্টেন টিএইচ. ভন এরপ এই প্রাসাদের স্থপতি ছিলেন।
১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে ইন্দোনেশিয়া স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে নেদারল্যান্ড দেলিকে স্বীকৃতি দেয়। দেলি এ সময় পূর্ব সুমাত্রা অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের পর তা উত্তর সুমাত্রা প্রদেশের অংশ করে নেয়া হয় এবং বর্তমানেও এই অবস্থা বজায় রয়েছে। অন্যদিকে এসময় দেলি ও উত্তর সুমাত্রার অবস্থা শান্তিপূর্ণ ছিল না। উত্তর সুমাত্রার রাজপরিবারগুলো রাজতন্ত্র বিরোধী দলগুলোর হুমকির সম্মুখীন হয়। রাজপরিবারকে এসময় ডাচদের হাতের পুতুল ও সামন্ত শ্রেণীর অংশ বলে মনে করা হত।
টেংকু লুকমান সিনার লিখেছেন যে ইন্দোনেশিয়ায় জাপানি আধিপত্যের সময় ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাস থেকে বিদ্রোহের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমে কৃষকদের ধান উৎপাদন ও ফসল কাটার উৎসব শেষ হওয়ার পর বিদ্রোহ শুরু হয়।[৯]
১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে সামাজিক বিপ্লব বলে পরিচিত রক্তাক্ত ঘটনার পর অভিজাতদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চরমে পৌছায়। উত্তর সুমাত্রার অনেক রাজা ও রাজপরিবারের সদস্যদের এসময় হত্যা করা হয় এবং তাদের সম্পদ লুঠ করা হয়। নিহতদের মধ্যে ইন্দোনেশীয় কবি টেংকু আমির হামজাও ছিলেন। দেলি ও সেরদাঙের রাজপরিবার বেঁচে যায়। জাপানের আত্মসমর্পণ গ্রহণের জন্য মিত্রবাহিনীর সৈনিকরা এসময় এখানে দায়িত্বে ছিল ফলে রাজপরিবারের ক্ষতি হয়নি। সামাজিক বিপ্লব সেই বছর শেষ হয়। অন্যান্য প্রায় সকল প্রাসাদ ধ্বংস হলেও দেলির রাজপরিবার মাইমুন প্রাসাদ লাভ করে। মিত্রবাহিনীর সৈনিকদের পাহারার কারণে প্রাসাদের ক্ষতি হয়নি।
বিপ্লব ও স্বাধীনতার পরও সালতানাত টিকে রয়েছে। তবে এর কোনো রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নেই। "নতুন ধারার যুগ" বলে পরিচিত যুগে প্রবেশের পর সুলতান আজমি পেরকাসা আলম আলহাজ ১৯৬৭ থেকে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সিংহাসনে ছিলেন। সুলতান ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ৫ মে থেকে সুলতান ওতেমান মাহমুদ পেরকাসা আলম সুলতান হন। তিনি ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীতে একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ছিলেন। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ২১ জুলাই আচেহর মালিকুস সালেহ বিমানবন্দরে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে তিনি মারা যান। ২২ জুলাই যুবরাজ সিংহাসনে বসেন এবং সুলতান মাহমুদ লামানজিজি পেরকাসা আলম উপাধিধারণ করেন।
লাবুহান দেলি, লাংকাত, সুকা পিরিং, বুলুহ চিনা, দেনাই, সেরবাজাদি এবং সুমাত্রা দ্বীপের পূর্ব উপকূলের অন্যান্য কিছু অঞ্চল দেলি সালতানাতের অংশ। ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে আচেহ সালতানাত নিয়ন্ত্রণ পুনরায় লাভ করলে আচেহর নিয়ন্ত্রণে দেলি স্বাধীনতা ঘোষণা করে। রোকান থেকে দক্ষিণে তামিয়াঙের সীমান্ত পর্যন্ত এর সীমানা নির্ধারিত হয়।
ডাচ ঔপনিবেশিক সরকারের সময় দেলি সালতানাত ও ঔপনিবেশিক সরকারের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী সালতানাতে নিম্নোক্ত অংশগুলো ছিল:
সাধারণভাবে সালতানাতের এলাকাগুলো দুইটি ভাগে বিভক্ত ছিল। একটি ছিল হিলির অঞ্চল যাতে ইসলাম গ্রহণকারী মালয়ীরা বসবাস করত, অন্যটি ছিল হুলু অঞ্চল যাতে পূর্বের ধর্মের অনুসারী কারু গোত্র বসবাস করত।
টুঙ্কু স্রি পাদুকা টুঙ্কু গোচাহ পাহলাওয়ান কর্তৃক প্রতিষ্ঠার পর থেকে সরকারি উপদেষ্টা পরিষদ হিসেবে লেমবাগা দাতুক বেরেমপাত নামক প্রতিষ্ঠান ছিল। এসময় লেমবাগা দাতুক বেরেমপাত চারজন কারু বাতাক রাজালে নিয়ে গঠিত ছিল। এই রাজারা দেলির স্বাধীনতা ঘোষণার সময় থেকে দেলিকে সমর্থন করেছিলেন। দেলির সুলতানের অভিষেক অনুষ্ঠানে লেমবাগা দাতুক বেরেমপাতের কেন্দ্রীয় ভূমিকা ছিল।
সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হিসেবে দেলির সুলতান সরকার প্রধানের দায়িত্বের পাশাপাশি ধর্মীয় প্রধান ও মালয়ী প্রথা প্রধান ছিলেন। দায়িত্ব পালনকালে কোষাধ্যক্ষ, উপকূল্প্রধান ও রাজকীয় কর্মচারীরা তাকে সহায়তা করত। তাদের দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে ভাগ করা ছিল।
ডাচ ঔপনিবেশিক যুগে সরকারি ব্যবস্থা রাজনৈতিক চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল। টেংকু লুকমান সিনার লিখিত সেজারাহ মেদান টেম্পু দোলে (২০০৭) অনুযায়ী দেলি সালতানাত ও ডাচদের মধ্যে সম্পাদিত রাজনৈতিক সমঝোতা নিম্নরূপে বিভক্ত ছিল:
দেলির সুলতান দেওয়ান ওরাং-ওরাং বেসারকে (লেমবাগা দাতুক বেরেমপাতের বদলে) নিয়ে শাসন পরিচালনা করতেন। ডাচ ইস্ট ইন্ডিজের ঔপনিবেশিক সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে অবস্থান করা রেসিডেন্টের সাথে আলোচনা করে ওরাং-ওরাং বেসার কাজ করত। এটি চারজন উরুং ও কেজেরুয়ান পেরকুত নিয়ে গঠিত হয়েছিল। রেসিডেন্টের সাথে আলোচনা করে সুলতান তাদের নিয়োগ বা পদচ্যুত করতে পারতেন। অধিকন্তু ওরাং-ওরাং বেসারের বৈঠকে রেসিডেন্টের অংশগ্রহণের অধিকার ছিল (সিনার, ২০০৭:৩০)। সরকারকে সহায়তার জন্য দেলিতে আরো কিছু প্রতিষ্ঠান ছিল। এদের মধ্যে রয়েছে বিচারবিভাগ বা কেরাপাতান বেসার, পুলিশ ও ধর্মীয় আদালত।