দৌরা-সুরুওয়াল (दौरा सुरुवाल) হলো নেপালি পুরুষদের জাতীয় পোশাকগুলির মধ্যে একটি।[১] দৌরা হলো পাঞ্জাবি বা কুর্তার একটি বিকল্প রূপ। এটি উপরের পোশাক হিসাবে পরিধান করা হয়। আর সুরুওয়াল হলো পাজামা বা ট্রাউজার। ১৯ শতকে নেপালের প্রধানমন্ত্রী জং বাহাদুর রানা দৌরা-সুরুওয়াল পোশাকের সাথে কোট পরা প্রচলন করেন। এই পোশাকটি ভারতের দার্জিলিংয়েও ভারতীয় গোর্খা বংশোদ্ভূত মানুষদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।[২]
দৌরা-সুরুওয়াল হলো নেওয়ার পুরুষদের একটি ঐতিহ্যবাহী পোশাক তপালন (নেপালি ভাষা: तपालं) এর আধুনিক রূপ। এটি ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষদের পোশাক হিসেবে পরিধান করা হতো যা তপালন নামে একটি লম্বা পাঞ্জাবি বা কুর্তার সঙ্গে সুরুওয়া (নেপালি ভাষা: सुरुवा:) নামে পরিচিত আঁটসাঁট পাজামা বা ট্রাউজার নিয়ে গঠিত। এই পোশাকের সঙ্গে একটি কোমরকোট বা কোট এবং সঙ্গে একটি টুপি পরিধান করলে পোশাকটি সম্পূর্ণ হয়। এই টুপিকে তাপুলি বা টপি (নেপালি ভাষা: तपुली) বলা হয়।
নেপালে দৌরা-সুরুওয়াল পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী পোষাক যা জাতীয় পোষাকও বটে। এটি নেপালি জামা যাকে বলা হয় দৌরা [৩] এবং নেপালি পাজামা যাকে বলা হয় সুরুওয়াল নিয়ে দৌরা-সুরুওয়াল (নেপালি ভাষা: दौरा सुरूवाल) স্যুট তৈরি হয়।[৪] নাজিয়া হুসেনের (২০১৮) মতে, "দৌরা হল একটি বন্ধ গলার শার্ট যেটি পাঁচটি প্লীট এবং আটটি কাপড়ের দড়ি দিয়ে শরীরের চারপাশ বেঁধে রাখে"।[৫]
দৌরা অর্থাৎ উপরের পোশাকটি গুজরাটি কেদিউ পোশাকের অনুরূপ, যদিও বুকের উপর দিয়ে যাওয়া প্লীট এতে নেই, তবে আড়াআড়ি বাঁধার ব্যবস্থা রয়েছে।[৬][৭]
নেপালি সুরুওয়া বা সুরুওয়াল হলো চুড়িদার[৮][৯] এবং গুজরাটের উপকূলীয় অঞ্চলে বিশেষ করে সৌরাষ্ট্র এবং কচ্ছের মানুষদের পরিধান করা পোশাকের সংমিশ্রণ যেখানে পোশাকটিকে সুরুওয়াল বা চর্নো বা কাফনিও বলা হয়।[৪] পোশাকটি পা বরাবর আঁটসাঁট কিন্তু নিতম্বের দিকে চওড়া।[১০] সুরুওয়াল পরিধান করলে পায়ের চারপাশে বেশ আরামদায়ক লাগে। গোড়ালির চারপাশেও দেখতে বেশ মানানসই।[১১]
১৯ শতকে নেপালের প্রধানমন্ত্রী বীর শমসের জং বাহাদুর রানা যুক্তরাজ্যে একটি বেসরকারী সফরের সময় দৌরা-সুরুওয়াল পরিধান করেছিলেন, তার পর থেকে নেপালে এই পোশাকটিকে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯ শতকে জং বাহাদুর রানা নেপালে এই পোশাকের সাথে কোট চালু করেন। তৎকালীন যুক্তরাজ্যের রানী জং বাহাদুর রানাকে একটি কোট উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। পরে তিনি দৌরা-সুরুওয়ালের সাথে কোট পরার প্রথা প্রচলন করেন। পুরুষরাও ওয়েস্টকোটের সাথে দৌরা-সুরুওয়াল পরে থাকেন।
দৌরা পোশাকে আটটি কাপড়ের স্ট্রিং বা দড়ি থাকে যা দৌরাকে শরীরের সঙ্গে ধরে রাখতে ব্যবহৃত হয়। এটি আটটি কাপড়ের স্ট্রিং বা দড়িকে অষ্টমাত্রিকা-সিঙ্গিনী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এই অষ্টমাত্রিকা হলেন:
নেপালি পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, আট সংখ্যাটি একটি ভাগ্যবান সংখ্যা। পাঁচটি প্লীট বা ক্যালিস পঞ্চ বুদ্ধ বা পঞ্চ রত্নকে বোঝায়। দৌরার বন্ধ গলাটি ভগবান শিবের ঘাড়ের চারপাশে সাপকে নির্দেশ করে।[১২][১৩]