দ্বিতীয় গোপাল | |
---|---|
পাল সম্রাট | |
রাজত্ব | ৮৭২ খ্রিষ্টাব্দের পর |
পূর্বসূরি | প্রথম শূরপাল |
উত্তরসূরি | প্রথম বিগ্রহপাল |
বংশধর | নেই |
রাজবংশ | পাল |
পিতা | প্রথম শূরপাল |
মাতা | মানিক্যদেবী |
২য় গোপাল (রাজত্বকাল ৮৭২ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে) হলেন ভারতীয় উপমহাদেশের বাংলা-বিহার অঞ্চলের পাল সাম্রাজ্যের ষষ্ঠ শাসনকর্তা। তিনি অন্তত চার বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি ছিলেন পালরাজা প্রথম শূরপালের বংশধর। এক ব্যক্তিগত সংগ্রাহকের কাছে থাকা এক অজানা পালরাজার দুইটি তাম্রশাসন লস অ্যাঞ্জেলস কাউন্টি শিল্প জাদুঘরে পরিষ্করণের জন্য পাঠানোর পর বাঙালি ইতিহাসবিদ গৌরীশ্বর ভট্টাচার্য এটি নিয়ে গবেষণা করেন এবং ১৯৯৫ সালে তার গবেষণা থেকে এই পালরাজা গোপালের অস্তিত্ব সামনে আসে।[১] এই গোপালকে পাল রাজত্বের পরিক্রমা অনুযায়ী দ্বিতীয় গোপাল হিসেবে অভিহিত করা হয় এবং পূর্বের অভিধার দ্বিতীয় ও তৃতীয় গোপালকে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ গোপাল হিসেবে অভিহিত করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে রায়োসুকে ফুরুই তাম্রশাসন দুইটির পাঠোদ্ধার করে সম্পাদনা করেন।[২]
অদ্যাবধি রাজা দ্বিতীয় গোপালের তিনটি তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে একটি তার রাজত্বকালের তৃতীয় বর্ষে এবং অপর দুইটি (লস অ্যাঞ্জেলসে শনাক্তকৃত দুইটি) চতুর্থ বর্ষের একই তারিখে জারি করা হয়। এই তাম্রশাসনগুলো অনুযায়ী দ্বিতীয় গোপাল রাজা প্রথম শূরপালের পুত্র ও দেবপালের নাতি ছিলেন। তার মা মানিক্যদেবী ছিলেন রাজা অবন্তিকার কন্যা এবং রাজা ত্রামনের পৌত্রী।[৩] তার শাসনকাল সম্পর্কে এখনও জানা যায়। গোপাল নামের রাজাদের আমলে উৎকীর্ণ অনেক প্রস্তরলেখ, চিত্রলেখ, বৌদ্ধ পাণ্ডুলিপি এর পূর্বেই প্রকাশিত হয়েছে। তবে কোন গোপালের আমলে এগুলো তৈরি করা হয়েছিল তা এখনও নির্ধারিত হয়নি।
১৯৭০ সালের পূর্বে মহেন্দ্রপাল, প্রথম শূরপাল ও দ্বিতীয় গোপাল— তিন পালরাজার বিষয়ে খুব বেশি জানা যায়নি। বিভিন্ন চিত্র, মন্দিরের গায়ে ও পাথরে উৎকীর্ণ লেখা এবং বিভিন্ন পাণ্ডুলিপিতে অনেক সূত্র পাওয়া গেলেও তা ভুলভাবে ভিন্ন রাজার বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। যেমন: মহেন্দ্রপালের উল্লেখকে গুর্জর-প্রতীহার রাজবংশের প্রথম মহেন্দ্রপালের সাথে মিলিয়ে ফেলা হয় এবং ফলস্বরূপ সেই সময়কার গৌড় রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত বিহার অঞ্চল প্রতীহার রাজবংশ দখল করে ফেলেছিল বলে মনে করা হতো।[৪] বর্তমান বাংলাদেশের বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার (বর্তমান নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলা) বাদল গ্রামে “গরুড় স্তম্ভ” (স্থানীয়ভাবে ভিমের পান্টি নামে পরিচিত) নামে একটি স্তম্ভ পাওয়া যায়। এতে পালরাজা নারায়ণপালের প্রধানমন্ত্রী গুরভমিশ্রের শাসন লেখা রয়েছে। এটি “বাদল প্রশস্তি” নামেও পরিচিত। এতে গুরভমিশ্রের পূর্বপুরুষদের মধ্যে যারা পালরাজাদের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছিলেন, তাদের বর্ণনার পাশাপাশি তারা যেই পালরাজার অধীনে ছিলেন, তাদের বর্ণনাও পাওয়া যায়। এতে মহেন্দ্রপালকে প্রত্যক্ষভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। তাই এই অংশের উল্লেখ রাজা দেবপালের বলে ধরে নেওয়া হয়। একইসাথে “গোপাল”-এর উল্লেখকে কৃষ্ণ এবং “শূরপাল”-এর উল্লেখকে প্রথম বিগ্রহপালের অপর একটি নাম বলে ধরে নেওয়া হয়।[৫]
এরপর ১৯৭০ সালে প্রথম শূরপালের মির্জাপুর তাম্রশাসন, ১৯৮৭ সালে মহেন্দ্রপালের জগজ্জীবনপুর তাম্রশাসন ও ১৯৯৫ সালে দ্বিতীয় গোপালের লস অ্যাঞ্জেলস তাম্রশাসন আবিষ্কারের পর পালরাজাদের বংশলতিকা পুনরায় নতুনভাবে সাজানোর প্রয়োজন পড়ে। ২০০৮ সালে ইতিহাসবিদ সুরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য বাদল প্রশস্তির লেখাগুলো পুনরায় পরীক্ষা করেন এবং সেখানে উল্লিখিত নামগুলোকে পুনরায় বিভিন্ন শাসকদের নামে শনাক্ত করেন।[৬]
১৯৯৮ সালে গৌরীশ্বর ভট্টাচার্য এই নতুন আবিষ্কৃত রাজাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে পাল সাম্রাজ্যের নতুন বংশলতিকা নির্ধারণ করেন।[৭] এতে দ্বিতীয় বিগ্রহপাল, দ্বিতীয় মহীপাল ও দ্বিতীয় শূরপালের রাজত্বকাল আরও দীর্ঘ হয়। পূর্বে পালরাজাদের প্রচলিত শাসনকাল হিসেবে নতুন রাজাদের স্থানসংকুলান সম্ভব হচ্ছিল না। বিশেষ করে বালগুদারের নারায়ণ চিত্রলিপি থেকে মদনপালের রাজত্বের ১৮শ বর্ষ ১০৮৩ শকাব্দ (১১৬১ খ্রিষ্টাব্দ) বলে জানা যায়;[৮] ফলে রজত স্যানাল রাজা প্রথম গোপালের (পালসাম্রাজ্যের প্রথম রাজা) শাসনকালের শুরুর বছর ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পিছিয়ে ৭৪১ খ্রিষ্টাব্দ বলে স্থির করেন।[৯] তৎকালে পাল রাজাদের সাথে প্রতিবেশী গুর্জর-প্রতীহার, রাষ্ট্রকূট ও অন্যান্য সমসাময়িক রাজাদের যুদ্ধ লেগে থাকত। রজত স্যানাল সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী পাল রাজাদের পরিচিতিও পুনর্নির্ধারণ করেন। তবে এ থেকে প্রাপ্ত বর্তমান চিত্রও সম্পূর্ণ নয় বলে ধারণা করা হয়।
পূর্বসূরী প্রথম শূরপাল |
পাল সম্রাট ৮৭২ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে |
উত্তরসূরী প্রথম বিগ্রহপাল |