লেখক | সিমোন দ্য বোভোয়ার |
---|---|
মূল শিরোনাম | Le Deuxième Sexe |
দেশ | ফ্রান্স |
ভাষা | ফরাসি |
বিষয় | নারীবাদ |
প্রকাশিত | ১৯৪৯ |
মিডিয়া ধরন | ছাপা |
পৃষ্ঠাসংখ্যা | ২টি সংখ্যায় ৯৭৮[১][২] |
নারীবাদী দর্শন |
---|
সিরিজের একটি ধারাবাহিক অংশ |
প্রধান কর্ম |
প্রধান তাত্ত্বিকগণ |
মূল ধারণা |
দ্বিতীয় লিঙ্গ (ফরাসি: Le Deuxième Sexe ল্য দোজিয়েম সেক্স) হচ্ছে ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত ফরাসি অস্ত্বিবাদী দার্শনিক সিমোন দ্য বোভোয়ার এর লেখা একটি বই। এ বইটিতে তিনি ইতিহাসে নারীদের প্রতি অন্যদের আচরণ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। ১৯৪৬-১৯৪৯ সালের মধ্যে গবেষণা করে তিনি এ বইটি লিখেছেন।[৩] তিনি বইটিকে দুটি অংশে প্রকাশ করেন । অংশ দুটির নাম: ফ্যাক্টস এন্ড মিথস এবং লিভড এক্সপেরিয়ান্স (ফরাসি ভাষায়, Les faits et les mythes এবং L'expérience vécue)। কিছু অধ্যায় প্রথমে লেস টেমপ মোর্ডানেস -এ আবির্ভূত হয়।[৪][৫] এটি তার সবচেয়ে জনপ্রিয় কীর্তিগুলোর একটি। দ্বিতীয় লিঙ্গ বইটিকে অনেক সময় নারীবাদের গুরুত্বপূর্ণ কীর্তি এবং নারীবাদের দ্বিতীয় তরঙ্গের শুরু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। [৬]
বোভোয়ার প্রশ্ন করেন, “নারী কি?”।[৭] তিনি যুক্তি দেখান যে, পুরুষদের প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়, অপরদিকে নারীদের “অন্য কেউ”। “অনুরূপভাবে মনুষত্ব হলো পুরুষ, আর পুরুষ নারীকে আলাদা সত্ত্বা হিসেবে নয় বরং তার আত্মীয় হিসেবে বিবেচনা করে।” বোভোয়ার বিভিন্ন প্রাণীর (মাছ, পোকা, স্তন্যপায়ী প্রাণী) মধ্যে ডিম্বাশযয়ের সাথে শুক্রাণুর সম্পর্ক বর্ণনা করেন এবং তারপর মানুষ নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি এই প্রাণিদের মধ্যে নারীদের প্রজননের ক্ষেত্রে অধীনতা ব্যাখ্যা করেন এবং পুরুষ ও নারীর মধ্যে শারীরবৃত্তীয় তুলনা করেন। মূল্য শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্টের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হতে পারে না এবং জীব বিজ্ঞানের এ সত্য সত্তাতাত্ত্বিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং শারীরবৃত্তীয় বিষয়গুলোর আলোকে বিবেচনা করতে হবে।[৮]
তিনি সিগমুন্ড ফ্রয়েড, আলফ্রেড এ্যাডলার[৯] এবং ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস সহ অন্যান্য লেখকদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি যুক্তি দেন যে, যখন এঙ্গেলস তার দ্য অরিজিন অব দ্য ফ্যামিলি, প্রাইভেট প্রোপার্টি এন্ড দ্য স্ট্যাট -এ লিখেছেন, “নারী লিঙ্গের বড় ঐতিহাসিক পরাজয়” ব্রোন্জের আবিষ্কার এবং নিজস্ব সম্পত্তির আর্বিভাবের ফল, তার এ দাবি সমর্থিত হয় না।[১০]
বোভোয়ার এর মতে, দুটি বিষয় নারীদের অবস্থার পরিবর্তন ব্যাখ্যা করতে পারে: উৎপাদনে অংশগ্রহণ এবং প্রজননের দাসত্ব থেকে মুক্তি।[১১] তিনি লেখেন, “মাতৃত্ব নারীকে পশুর মতো তার শরীরের মধ্যে আটকে দেয় এবং পুরুষকে তার এবং প্রকৃতির উপর আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ দেয়।”[১২] তিনি নারীর উপর পুরুষের ক্রমাগত আধিপত্য ব্যাখ্যা করেন। এক্ষেত্রে, তিনি সুসায় আবিস্কৃত দেবীর মুর্তি থেকে শুরু করে পিথাগোরাস, যিনি লিখেছেন, “একটা ভালো উৎস আছে যা নিয়ম, আলো এবং পুরুষ সৃষ্টি করেছে এবং একটি খারাপ উৎস আছে যা বিশৃঙ্খলা, অন্ধকার এবং নারী সৃষ্টি করেছে।” তার মতো প্রাচীন গ্রিকদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি আলোচনা করেন। তিনি লিখেছেন, “বিশ্বে পুরুষেরা শ্রেষ্ঠত্বের সাথে জয়ী হয় এবং অন্তর্নিহীততা নারীদের ভাগ্য।”[১৩] তিনি আরও লিখেছেন, পুরুষেরা যখন পরিবার এবং উত্তরাধিকার টিকিয়ে রাখতে চায় তখন তারা নারীদের উপর অত্যাচার করে। তিনি স্পার্টার মতো ব্যাতিক্রমী যেসব স্থানে নারীদের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না এবং তাদের সাথে প্রায় দাসের মতো আচরণ করা হতো, সেসব স্থান বাদ দিয়ে প্রাচীনের গ্রিসের সাথে রোমের নারীদের অবস্থার তুলনা করেন। রোমে পুরুষেরা কর্তা হিসেবে থাকলেও সেখানে নারীরা প্রাচীন গ্রিসের থেকে তুলনামূলক বেশি অধিকার লাভ করত, কিন্তু তারপরও তাদের প্রতি লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য করা হতো এবং তারা শূন্য স্বাধীনতা লাভ করত।[১৪]
তিনি খিষ্টধর্ম নিয়ে আলোচনা করেন এবং বিতর্ক করেন যে, খ্রিষ্টধর্ম এবং এর নেতারা নারীদের অধীনস্থ করতে কাজ করে।[১৫] তিনি পতিতাবৃত্তি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং বিংশ শতাব্দির কাছাকাছি সময়ে উদিত হওয়া কোর্টলি লাভ এর কারণে গতির পরিবর্তন ব্যাখা করেছেন।[১৬] তিনি ১৫শ শতাব্দির প্রথম দিকের "গ্রেট ইতালিয়ান লেডিস এন্ড কোর্টসেন্স" থেকে শুরু করে স্পেনীয়, আভিলার তেরেসা সম্পর্কে বিশেষভাবে আলোচনা করার মাধ্যমে নিজেকে “পুরুষের সমান উচ্চতায়” উঠান।[১৭] উনিশ শতাব্দিতে নারীর আইনী মর্যাদার পরিবর্তন হয় না কিন্তু মারগোরিতা দে নাভার এর মতো কেউ কেউ তাদের লেখা এবং অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে। কিছু পুরুষ তাদের কীর্তির মাধ্যমে নারীর মর্যাদাকে সমর্থন করে।[১৮] তিনি নেপলিয়ন এর নীতিতে সমস্যা খুজে পান এবং অগাস্ট কমট,[১৯] এবং অনরে দ্য বালজাক এর সমালোচনা করেন। তিনি পিয়েরে জোসেফ প্রুধোঁ -কে নারীবাদ বিরোধী বলে ব্যাখা করেন।[২০] উনিশ শতাব্দির শিল্প বিপ্লব নারীকে বাড়ি থেকে মুক্তি দেয়, তবে তাদেরকে তাদের কাজের জন্য সামান্য অর্থ দেওয়া হয়।[২১] শ্রমিক সংঘের বিকাশ এবং নারীদের অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধি চিহ্নিত করেন। তিনি জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বিস্তার এবং গর্ভপাতের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেন।[২২] তিনি নারীর ভোটাধিকারের বিষয়টি তুলে ধরেন[২৩] এবং লিখেন, মারি ক্যুরি এবং রোসা লুক্সেমবুর্গ এর মতো নারীরা “খুবই বুদ্ধিমত্তার সাথে দেখিয়েছেন যে, নারীদের অক্ষমতা তাদের ঐতিহাসিক তুচ্ছলতার কারণ নয়: তাদের ঐতিহাসিক তুচ্ছলতাই তাদের অক্ষমতা সৃষ্টি করেছে।”[২৪]
তিনি অধিকাংশ সময় পুরুষের ভিন্নধর্মী দৃৃষ্টিভঙ্গি থেকে “নারীদের চিরন্তন হতাশা”[২৫] সম্পর্কে একটি উপস্থাপনা দেখান। তিনি নারীর রজঃস্রাব, কুমারীত্ব, পেশা, বিয়ে, মাতৃত্ব এবং পতিতাবৃত্তি সহ নারীর যৌনতা নিয়ে আলোচনা করেন। পুরুষের মধ্যে “নারীর ক্ষমতা বৃদ্ধির ভয়” এর অভিজ্ঞতা চিত্রিত করতে, বোভোয়ার ১৯৭৮ সালের ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে এ প্রকাশিত ব্রিটিশ মেডিক্যাল সংঘের একজন সদস্যের উক্তি যোগ করেন, যেখানে তিনি লিখেছিলেন, “এটি একটি অনস্বীকার্য সত্য যে, রজঃস্রাব করা নারীর স্পর্শে মাংস নষ্ট হয়ে যায়।”[২৬] তিনি অ্যান্ড্রে ব্রেটন, লিওপোল্ড লেদার সেংপোল্ড, মাইক লেরিস, পোল ভের্লেন, এডগার অ্যালান পো, পোল ভেলেরি, ইয়োহান ভল্ফগাং ফন গ্যোটে এবং উইলিয়াম শেকসপিয়র সহ আরও অনেক লেখক, দার্শনিক এবং চলচ্চিত্রের উদ্ধৃতি যোগ করেন।[২৭] তিনি লিখেছেন যে, যৌন অংশ সমকামিতার মাধ্যমে বজায় রাখা হয়।[২৫]
অ্যান্ড্রে ব্রেটন, হেনরি দে মন্দারল্যান্ড, ডেভিড হারবার্ট লরেন্স, পোল ক্লোডেল এবং স্টেনদাল এর কীর্তিগুলো পর্যালোচনা করে তিনি লিখেছেন, বড় সমষ্টিগত কুসংস্কারগুলো প্রত্যেকের লেখায় প্রতিফলিত হয়েছে।”[২৮] “হেনরি দে মন্দারল্যান্ড” নারী ভক্তিকে একটি দায়িত্ব হিসেবে দাবি করেছেন। স্বল্প অহংকারী, ব্রেটন, ক্লোডেল এবং স্টেনদাল এটিকে একটি মহৎ ইচ্ছা বলে প্রসংশা করেছেন।”[২৯] তিনি লিখেছেন, “নারী হলো সম্মানিত অন্য কেউ”। এখানে “অন্য কেউ” “কোনো ব্যাক্তির নিজের জন্য নিজের দেওয়া অবস্থানের উপর ভিত্তি করে সঙ্গায়িত হয়েছে।”[৩০] তিনি লিখেছিলেন, “নারী সমকক্ষ, নারী শিশু, আত্মীক বোন, নারী লিঙ্গ এবং নারী পশুর একমাত্র গন্তব্য সর্বদা পুরুষ।”[৩১] তিনি আরও লিখেছেন, “কোনো কাজের বস্তুতে নারী জাতীয় উপাাদানের অনুপস্থিতি এবং তুচ্ছলতা একটি নির্দেশক...আমাদের সময়ের মতো সময়ে গুরুত্ব হারায়, যেখানে প্রত্যেকের নিজস্ব সমস্যগুলো দ্বিতীয় উদাহরণ।”[৩২]
তিনি লিখেছেন, পুরুষের মিথ্যাচারের মধ্যে “রহস্য” রয়েছে।[৩৩] তিনি আরও লিখেছেন যে, রহস্য লিঙ্গ থেকে নারীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং এটি অবস্থা যা এটিকে কোনো দাসের সাথে সম্পর্কিত করে তার মধ্যে সীমাবদ্ধ।[৩৪] তিনি মনে করেন, এটি আঠারো শতাব্দিতে বিলীন হয়ে গেছে যখন পুরুষেরা বৃহত্তরভাবে নারীদের সমকক্ষ হিসেবে বিবেচনা করত।[৩৫] তিনি আর্তুর র্যাঁবো এর একটি উক্তি যোগ করেন, যিনি লিখেছিলেন যে, আশা করা যায়, নারীরা কোনো দিন সম্পূর্ণ মানুষ হতে পারবে যে দিন পুরুষেরা তাদের স্বাধীনতা দিবে।[৩৬]
বোভোয়ার একটি ছেলের সাথে লালিতপালিত হওয়া একটি মেয়েকে জন্ম নেওয়া থেকে উপস্থাপন করেন,[৩৭] যেখানে ছেলেটিকে বলা হয়, “ছোট”।[৩৮] অপরদিকে, মেয়েটিকে নারী হওয়ার এবং তার “নারীত্ব” গন্তব্য সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হয়।[৩৯] তার সহজাত কোনো “মাতৃপ্রবৃত্তি” থাকে না।[৪০] সে এগুলো বিশ্বাস করতে শুরু করে আর, কোনো পুরুষ ঈশ্বরের উপাসনা এবং কাল্পনিক পূর্ণ বয়স্ক প্রেমিকের কল্পনা করতে শুরু করে।[৪১] লিঙ্গ আবিষ্কার করা “দুধ ছাড়ানোর মতো কষ্টকর” এবং সে এটিকে ঘৃণার চোখে দেখে।[৪২] যখন সে জানতে পারে নারী নয়, পুরুষ পৃথিবীর কর্তা, তখন সেটি “তার নিজের প্রতি নিজের উপলদ্ধিকে নিষ্ঠুরভাবে পরিবর্তন করে”।[৪৩] তিনি বয়ঃসন্ধি, রজঃস্রাব এর থেকে শুরু করে মেয়েরা কীভাবে কোনো পুরুষের সাথে যৌন মিলনের কল্পনা করে তার বর্ণনা দেন।[৪৪] তিনি মেয়েদের কিশোর বয়সের শেষের দিকে তাদের “নারীত্ব” গ্রহণ করার পদ্ধতিগুলো ব্যাখ্যা করেন, যার মধ্যে বাড়ি থেকে পালানো, ঘৃণার প্রতি আকর্ষণ, প্রবৃত্তি অনুসরণ করা এবং চুরি করা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।[৪৫] তিনি পুরুষের সাথে নারীর যৌন সম্পর্কের ব্যাখ্যা দেন এবং বলেন, এগুলোর প্রথম অভিজ্ঞতাই তার সম্পূর্ণ জীবনকে অবহিত করে।[৪৬] তিনি নারীদের সাথে নারীদের যৌন সম্পর্কও ব্যাখ্যা করেছেন।[৪৭] তিনি লিখেছেন, “সমকামিতা একটি মারাত্মক অভিশাপ ব্যতীত কোনো ইচ্ছাকৃত বিকৃত যৌন আকাঙ্খা নয়”।[৪৮]
তিনি লিখেছেন, “ব্যবহারিক, সামাজিক, নৈতিক বন্ধনে আবদ্ধ দুজন স্ত্রীকে যৌন বিচারে একে অপরকে সারা জীবনের জন্য সন্তুষ্ট করতে বলা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক”।[৪৯] তিনি “এটি মৃত্যু থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে কিন্তু জীবনকেও প্রত্যাখ্যান করছে”[৫০] -লিখে বিবাহিত নারীদের কাজ বর্ণনা করেছেন, যেমন: ঘর পরিষ্কার। তিনি মনে করেন, “স্ত্রী-দাসের ভাগ্য অপূর্ণ তার কাজের ক্ষেত্রের জন্য, যা তাকে সম্পূর্ণভাবে সাধারণ এবং অপ্রয়োজনীয় করে তুলেছে।”[৫১] তিনি আরও লিখেছেন যে, নারী তার দাসত্ব স্বীকার করে মর্যাদা পায়, যা বিছানার “সেবা” এবং বাড়ির কাজের “সেবা”।[৫২] একজন নারীকে বিয়ের পর তার পরিবার থেকে দুরে সরিয়ে তার সাথে যৌন সম্পর্ক সৃষ্টি করা হয়।[৫২] তিনি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অনেক অসমতা চিহ্নিত করেন এবং পরিলক্ষিত করেন যে, তারা ভালোবাসার মধ্যে সময় অতিবাহিত করে না বরং তারা “বিবাহিত ভালোবাসায়” সময় অতিবাহিত করে।[৫৩] তিনি মনে করেন, “বিয়ে প্রায় সবদাই নারীকে ধ্বংস করে দেয়”।[৫৪] বোভোয়ার সোফিয়া টোলসটায়া এর উদ্ধৃতি যোগ করেন, যা তিনি ডায়েরিতে লিখেছিলেন: “তুমি সেখানেই চিরকালের জন্য বন্দি এবং তোমাকে সেখানেই বসতে হবে”।[৫৪] বোভোয়ার মনে করেন, “বিয়ে একটি বিকৃত সংঘ, যা নারী এবং পুরুষকে উভকেই নিপিড়ন করছে”।[৫৫]
তার মতে, ডাক্তার বৈধভাবে গর্ভপাত করলে তা মায়ের জন্য সামান্য আশঙ্কাজনক হবে।[৫৬] ক্যাথলিক চার্চ দাবি করতে পারবে না যে, জন্ম না হওয়া শিশুটির আত্মা খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত না হওয়ার কারণে স্বর্গে যাবে না কারণ তা অন্য চার্চের শিক্ষার বিরুদ্ধে যায়।[৫৭] তিনি লিখেন যে, পর্ভপাতের সমস্যা কোনো নৈতিকতার সমস্যা নয় বরং নারীর প্রতি “পুরুষত্ব দুঃখবাদ” এর একটি সমস্যা।[৫৭] তিনি গর্ভধারণ ব্যাখ্যা করেছেন, যা নারীরা উপহার এবং অভিশাপ দুইভাবেই বিবেচনা করা যায়।[৫৮] নতুন জীবনের এই সৃষ্টিতে নারী নিজেকে “একটি নিষ্ক্রিয় যন্ত্র ব্যতীত অন্য কিছু হিসেবে দেখে না” সে নিজেকে হারিয়ে ফেলে।[৫৯] তিনি লিখেছেন যে, “মাতৃ সাদোমোসোচিজম কন্যার জন্য অপরাধীর অনুভূতি সৃষ্টি করে, যে নিজেকে তার সন্তানদের সামনে সাদোমোসোচিজম আচরনের মধ্যে নিজেকে প্রকাশ করবে অন্তহীনভাবে[৬০] এবং সমাজতান্ত্রিক সন্তান লালনপালন করার অনুশীলনকে উৎসাহিত করে।”[৬১]
বোভোয়ার নারীর পোশাক, তার মেয়ে বন্ধু এবং পুুরুষদের সাথে সম্পর্ক তার ব্যাখ্যা করেছেন।[৬২] তিনি লিখেছেন, “নারীর প্রেমমূলক সন্তুষ্টি ব্যহত করে বিয়ে তাদের অনুভূতির স্বাধীনতা এবং নিজস্বতা নষ্ট করে, তাদেরকে ব্যভিচারের দিকে নিয়ে যায়”।[৬৩] তিনি পতিতা ব্যাখ্যা করেন এবং কারবারিদের সাথে তাদের সম্পর্ক ও হেতাইরা ব্যাখ্যা করেন।[৬৪] পতিতাদের সাথে হেতাইরারাও মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে এবং সফল হলে স্বতন্ত্র হতে পারে।[৬৫] নারীদের রজোনিবৃত্তির পন্থা তাদের মধ্যে সমকামিতা জাগিয়ে দিতে পারে (যা বোভোয়ার মনে করেন অধিকাংশ নারীর মধ্যেই সুপ্ত আছে)। যখন সে বড় হতে চায় তার পূর্ণবয়স্ক জীবনের অর্ধেকটা অতিবাহিত সে বৃদ্ধ হয়ে যায়।[৬৬] কোনো নারী তার সন্তানের (প্রায় ক্ষেত্রেই পুত্রসন্তান) অথবা নাতি-নাতনির সাহায্যে বাঁচতে চান তখন সে একাকিত্ব, অনুতাপ এবং অবসাদের মুখোমুখি হন।[৬৭] সময় অতিবাহিত করতে সে জল রং, গান, পড়া অথবা দাতব্য সংস্থায় যোগ দিতে পারে।[৬৮] যদিও খুব কম সংখ্যক নারীরা কোনো উদ্দেশ্যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থেকেছে বা তাদের মনে কোনো লক্ষ্য রেখেছিল, তারপরও তিনি বলেন, “একটি নারী পরজীবির জন্য সর্বোচ্চ ধরনের স্বাধীনতা হতে পারে সরল অবজ্ঞা বা সংশয়যুক্ত কঠিনত্ব”।[৬৯]
বোভোয়ার এর মতে, যখন কোনো নারী পুরুষের মতো সক্রিয়, কার্যকর এবং নীরব হতে জানে তখন তার পরিস্থিতি তাকে খাবার তৈরি করতে এবং কাপড় ও বাড়ি প্রস্তুত করতে।[৭০][৭০] কিছু না করায় সে চিন্তিত হয়ে পড়ে, সে অভিযোগ করে, সে কাদে এবং আত্মহত্যার হুমকি দেয়। কিন্তু সে নিজের ভাগ্য থেকে পালাতে পারে না।[৭১] সে ভার্জিনিয়া উল্ফ এবং কেথরিন ম্যানসফিল্ড এর চিত্রিত করা “একত্রে” এবং “ভালো” থাকার মধ্যে সুখ পেতে পারে।[৭২] বোভোয়ার মনে করেন, নারী উচ্চতর না নিম্নতর তা নির্ধারণ করা যুক্তিহীন কিন্তু পুরুষের অবস্থা “অসীমভাবে পছন্দনীয়”।[৭৩] তিনি লিখেছেন, “নারীর কাছে তার স্বাধীনতার জন্য কাজ করা ব্যতীত বের হওয়ার জন্য অন্য কোনো উপায় নাই”।[৭৩]
বোভোয়ার তিনি বিবাহিত জীবনে এবং অবিবাহিত জীবনে নারী, আর আত্মকেন্দ্রিক নারীর বর্ণনা দেন, যারা নিজেকে দর্পনে অথবা থিয়েটারে খুজে পেতে পারে।[৭৪] তিনি লিখেছেন, “যে দিন নারীদের জন্য দুর্বলতার মাধ্যমে নয়,বরং তার সক্ষমতার মাধ্যমে এবং তার নিজের কাছ থেকে পালাতে নয়, বরং তার নিজেকে খুজে পেতে ভালোবাসা, জোর করে নয়, নিশ্চিত করে ভালোবাসা সম্ভব হবে, সেদিন ভালোবাসা তার এবং পুরুষের জন্য জীবনের উৎস হয়ে যাবে নৈতিক, বিপজ্জয় নয়।”[৭৫] তিনি বিভিন্ন নারীর জীবন নিয়ে আলোচনা করেন, যার মধ্যে কয়েক জন স্টিগমাটা স্থাপন করেছেন।[৭৬] তিনি তাদের সম্পর্কে লিখেছেন যে, এই নারীরা হয়তো “কোনো অবাস্তব কিছুর সাথে” সম্পর্ক তৈরি করেছেন অথবা তার তারা “কোনো বাস্তব সত্তার সাথে অবাস্তব সম্পর্ক” তৈরি করেছেন।[৭৭] তিনি কাজে নিয়জিত নারীদের কথা উল্লেখ করেছেন, যারা দুঃখবাদ এবং ম্যাসোচিজম থেকে বাঁচতে পেরেছেন।[৭৮] তিনি একটি পাদটীকায় লিখেছেন যে, খুব অল্প সংখ্যক নারী মানসম্মত অবস্থায় পৌছাতে পেরেছে, তিনি ক্লেরা সুম্যান এবং রোবার্ট সুম্যান এর উদাহরণ দেন।[৭৯] তিনি বলেছেন স্ত্রীদের লক্ষ্য আরও অপ্রতিরোধ্য হতে পারে: একজন স্ত্রী ভদ্র, ভালো গৃহিনী এবং ভালো মা হওয়ার চেষ্টা করতে পারে।[৮০] তিনি “অভিনেত্রী, নৃত্যশিল্পী এবং গায়িকাদের” ব্যাতিক্রম হিসেবে ধরেন কারন তারা স্বাধীনতা পেতে পারে।[৮১] লেখকদের মধ্যে তিনি এমিলি ব্রন্টি, উলফ এবং (“কখনো কখনো”) মেরি ওয়েব (কোলেট এবং ম্যানসফিল্ডকে তিনি উল্লেখ করেছেন) এর কথা বলেছেন। তারা “প্রকৃতি অমানবিক স্বাধীনতার মধ্যে” চেষ্ট করেছেন। তারপর তিনি বলেন, নারীরা মানুষের অবস্থাকে বাধার সম্মুখীন করে না এবং কিছু মহান মানুষদের তুলনায় একজন নারীকে “সাধারন” হিসেবে গন্য করা হয় এবং আরও কিছু সময়ের জন্য সে সেই পর্যায়েই থাকবে।[৮২] একজন নারী হয়তো কখনো ভিনসেন্ট ভ্যান গখ অথবা ফ্রান্ৎস কাফকা হতে পারেননি। তিনি মনে করেন, সকল নারীর মধ্যে সেন্ট তেরেসা একমাত্র নিজের জন্য বেঁচেছেন।[৮৩] এমনটা খুবই কম হয় যে, একজন নারী তার সুযোগ সন্ধানের জন্য বের হয়।[৮৪]
শেষে বোভোয়ার ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য করেছেন, যখন নারী এবং পুরুষ সমান হবে, যা “সোভিয়েত বিপ্লব প্রতিজ্ঞা করেছিল” কিন্তু কখনো বাস্তবায়ন করেনি।[৮৫] “এই মহান বিজয় পাওয়ার জন্য নারী এবং পুরুষের অবশ্যই অন্যান্য কিছুর মধ্যে, তাদের প্রকৃতিগত পার্থক্যের বাহিরে স্বচ্ছ ভাতৃত্ববোধ নিশ্চিত করতে হবে।”[৮৬]
দ্বিতীয় লিঙ্গ এর প্রথম সংস্করণ ফরাসি প্রকাশনায় এক সপ্তাহে প্রায় ২২,০০০ কপি বিক্রি হয়।[৮৭] তারপর এটিকে চল্লিশটি ভাষায় অনুবাদ করা হয়।[৮৮] ভেটিক্যান এটিকে তাদের নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেছে।[৬] লিঙ্গ গবেষক, আলফ্রেড কিনসি এর মতে, একটি আকর্ষণীয় সাহিত্য হলেও এটিতে আগ্রহজনক প্রকৃত উপাত্ত এবং বিজ্ঞানের গুরুত্ব নেই।[৮৯] ১৯৬০ সালে, বোভোয়ার লিখেছেন যে, দ্বিতীয় লিঙ্গ ছিল “কেন এখন, এমনকি আজও, একজন নারীর অবস্থা কীভাবে তাকে পৃথিবীর সাধারণ সমস্যাগুলো উদ্ভাবন করা থেকে বিরত রাখে” তা ব্যাখ্যা করার একটি চেষ্টা।[৯০] বইটিতে মনোবিজ্ঞানের উপর করা আক্রমণ পরবর্তী নারীবাদী বিতর্কগুলোকে সমর্থন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বেটি ফ্রাইডম্যান এর দ্য ফেমিনাইন মিস্টিক, কেইট মিলেট এর “সেক্সুয়াল পলিটিকস” এবং জার্মেইন গ্রিয়ার এর “দ্য ফিমেল ইউনিক” -তে করা বিতর্কগুলো।[৯১] ১৯৮৯ সালে, কেইট মিলেট বলেছেন যে, যখন তিনি “সেক্সুয়াল পলিটিকস” লিখেছিলেন, তিনি বোভোয়ার এর কাছে কি পরিমাণ ঋণী ছিলেন তা তিনি জানতেন না।[৯২]
দার্শনিক, যুদিথ বাটলার লিখেছেন যে, বোভোয়ার এর সূত্র “কেউ নারী হয়ে জন্মগ্রহণ করে না বরং নারী হয়ে যায়” "সেক্স" এবং "জেন্ডার" এ দুটি শব্দের মধ্যে পার্থক্য করছে। বোর্ড এবং মালোভানি চেভ্যালার তাদের সম্পূর্ণ ইংরেজি অনুবাদে এই সূত্রটিকে অনুবাদ করেন এভাবে: "কেউ নারী হয়ে জন্মগ্রহণ করে না, কিন্তু নারী হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে বইতে থাকা “নারীর” বিভিন্ন ব্যবহারের মধ্যে একটিকে নির্দেশ করা হচ্ছে", বোভোয়ার এই কথাটি ব্যবহার করেছেন নারীকে একটি নির্মাণ হিসেবে বর্ণনা করতে। বাটলার লিখেছেন যে, বইটির মতে, লিঙ্গ পরিচিতির একটি ক্ষেত্র, যা “ক্রমাগত অর্জিত হচ্ছে”। বাটলার দ্বিতীয় লিঙ্গ বইটি সম্ভবত লিঙ্গের সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দিচ্ছে বলে মনে করেন।[৯৩]
জীবনীবিদ, ডাইড্রে বেইর তার “ইন্ট্রোডাকশন টু দ্য ভিনটেজ এডিশন” -এ উল্লেখ করেছেন যে, বোভোয়ার এর “সবচেয়ে দৃঢ় সমালোচনাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে যে, তিনি নারীদের বিষয়ে লেখার সময়ে তাদের থেকে তিনি নিজেকে পৃথক করে ফেলায় বোভোয়ার “অজান্তে নারী-বিদ্বেষের অপরাধী”।[৯৪] তিনি আরও লিখেছেন যে, ফরাসি লেখক, ফ্রান্সিস জেনসন এবং ব্রিটিশ লেখক, স্টিভ স্মিথ একই রকম সমালোচনা করেছেন। স্মিথ এর ভাষায়: “তিনি নারীদের বিষয়ে একটি বৃহদাকার বই লিখেছেন এবং এখানে বোঝা যায় যে, তিনি তাদের পছন্দ করে না এবং তার নারী হওয়ার ব্যাপারটিও পছন্দনীয় নয়”।[৯৫] তিনি ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ, সি. বি. রেডফোর্ড এর উদ্ধৃতিও যোগ করেন। তার উদ্ধৃতি ছিল: “নারীদের নিজের রঙে রাঙানোর অপরাধী” কারণ দ্বিতীয় লিঙ্গ একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর নথি, তাই তার আত্মজীবনীমূলক প্রভাবে বিকৃত হয়ে লেখকের নিজস্ব সমস্যাগুলো তার নারীত্ব আলোচনায় একটি অতিরঞ্জিত গুরুত্ব পেয়েছে।[৯৫]
প্রথম শ্রেণীর বিশেষজ্ঞ, ডেভিড এম. হেলপেরিন লিখেছেন যে, বোভোয়ার “দ্বিতীয় লিঙ্গ” -তে নারীদের মধ্যে যৌন সম্পর্কের একটি আদর্শ বণনা দেন, যা নির্দেশ করে সেই সম্পর্কগুলো তৈরি হয় নির্দিষ্ট স্বচ্ছতা এবং পারস্পরিকতার সাথে যা একজন নারীর প্রেমমূলকতার বৈশিষ্ট প্রদান করে।[৯৬] সমালোচক, কামিল পাগলিয়া “দ্বিতীয় লিঙ্গ” বইটিকে “অসাধারণ” এবং “আধুনিক নারীবাদের অন্যন্য কীর্তি” বলে প্রশংসা করেন। তিনি লিখেছেন যে, আধুনিক নারীবাদীরা বোঝে না যে তাদের কীর্তি কতটা বোভোয়ার এর বিতর্কগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটায় এবং সেগুলোকে সঠিক বলে প্রমাণ করে।[৯৭] তিনি “ফ্রি ওমেন, ফ্রি মেন” -এ লিখেছেন যে, তিনি ১৬ বছর বয়সে বোভোয়ার এর কতৃত্বমূলক এবং নির্ভরযোগ্য ধ্বনি এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষাময় স্থান এবং সময়ে এগিয়ে যাওয়া” দ্বারা স্তব্ধ হয়ে যান। যা তাকে তার সাহিত্য সমালোচনার কীর্তি, “সেক্সুয়াল পারসোনায়” (১৯৯০) লিখতে অনুপ্রাণিত করে।[৯৮]
“দ্বিতীয় লিঙ্গ” এর স্পেনীয় ভাষায় অনুবাদ (আর্জেন্টিনায় মুদ্রিত) ১৯৫৫ সালে, ফ্রান্সিস্কো ফ্রাঙ্কো এর অধীনে থাকা স্পেনে নিষিদ্ধ ছিল। স্পেনীয় নারীবাদীরা বইটিকে অবৈধভাবে নিয়ে আসে এবং গোপনে প্রচার করে। ১৯৯৮ সালে, বইটির একটি সম্পূর্ণ কাস্টিলীয় স্পেনীয় অনুবাদ প্রকাশ করা হয়।[৯৯]
বোভোয়ার এর থেকে অনুপ্রানীত বেটি ফ্রাইডেন হয়ে এর বই, “দ্য ফেমিনাইন মিস্টিক” নারীবাদের দ্বিতীয় তরঙ্গের উত্থান ত্বরাণ্বিত করে কিন্তু এটি ইউরোপে পৌছে সেখানকার নারীদের জীবনে প্রভাব ফেলতে অনেক দীর্ঘ সময় লাগে। যদিও “দ্বিতীয় লিঙ্গ” এবং “দ্য ফেমিনাইন মিস্টিক” ১৯৪৯ এবং ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত হয়, তারপরও ফরাসিরা এর অর্ন্তভুক্ত পারিবারিক বিষয়গুলোতে সমতা বৃদ্ধিকে তাদের ফরাসি নৈতিকতার প্রতি হানিকারক বলে মনে করে। ১৯৬৬ সালে, ইউরোপে তখনও গর্ভপাত নিষিদ্ধ এবং গর্ভনিরোধ খুবই কঠিন ছিল। এগুলোর বৈধকরন পুরুষদের কাছ থেকে “তার গর্বিত পুরুষত্বের চেতনা” ছিনিয়ে নিবে এবং নারীদেরকে “কোনো বস্তু এবং অনুর্বর যৌন আকষর্ণ” ব্যতীত অন্য কিছু করবে না বলে ভয় পেত।[১০০] ১৯৬৭ সালে, ফরাসি আইনসভা কিছু কঠিন বিধিনিষেধ সাপেক্ষে গর্ভনিরোধকে বৈধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সামাজিক নারীবাদীরা দাবি করে যে, নারীরা মনস্ততাত্ত্বিক এবং শারীরবৃত্তিয়ভাবে পুরুষের থেকে আলাদা[১০০]....এবং তারা লিঙ্গ পার্থক্যগুলোতে জোর দেয়। তারা সরল সমতার পরিবর্তে, নারীদের বাড়িতে থাকার এবং পরিবার গড়ে তোলার অধিকার আছে বলে। যদি তারা অর্থনৈতিক স্বীকৃতির জন্য খুব ইচ্ছা করে বা সমস্যার কারণে অথবা কেথলিক চার্চ এর পরামর্শের জন্য কাজে যোগ দেয়, তাহলে সে জাতীয়ভাবে অর্থায়িত ডে-কেয়ার এবং পিতামাতার জন্য বরাদ্দ ছুটিগুলো ব্যবহার করে তাদের সন্তানদের সাহায্য করবে। সেই সময়ের এই ঐতিহাসিক বিষয়টি একটি বিশ্বাসের (“কোনো সমাজকে তার পুরুষদের কর্তৃক নারীদের প্রচুর সেবা চেষ্টা এবং সমাজের সমগ্র উদ্দেশ্যের ক্ষতি করার উপর ভিত্তি করে সমাজকে ভাগ করা যায়”) অন্তর্ভুক্ত ছিল যে।[১০০] আর তাই, এসব সুবিধার অগ্রসরতার ফলস্বরূপ ইউরোপীয় নারীরা আরো রাজনীতির সাথে যুক্ত হয় এবং ১৯৯০ সালের মধ্যে তারা আইনসভায় যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ছয় থেকে সাত গুণ বেশি আসন লাভ করে, যা ব্যবহার করে নারী ও শিশু বিষয়ক সুবিধাগুলোর সমর্থনে এই প্রক্রিয়াটিকে প্রভাবিত করতে পারে।[১০০]
অনেকে উল্লেখ করেছেন যে, ১৯৫৩ সালে প্রকাশিত এইচ. এম. পারসলে এর প্রায় পুনঃপ্রকাশ অনুবাদ মানসম্মত নয়।[১০১] দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস এর একজন পর্যালোচক বলেন, যে প্রাণিবিদকে এটি অনুববাদ করতে ভাড়া করা হয় তার ফরাসি ভাষার জ্ঞান “কলেজের অস্নাতকের ফরাসি ভাষার জ্ঞানের” সমান।[৬] দর্শন ধারণার সূক্ষ্ম শব্দগুলো প্রায়ই ভুল অনুবাদ করা হয়েছে এবং লেখার গুরুত্বপূর্ণ সোয়াথগুলো বাদ গিয়েছে।.[১০২] আলফ্রেড এ. নোপফ.ইনক -এর কাছে বইটির ইংরেজি প্রকাশনার অধিকার রয়েছে। প্রকাশকদের ইংরেজি অনুবাদটির সমস্যাগুলোর বিষয়ে জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা বইটির নতুন অনুবাদের আসলেই কোনো প্রয়োজন নেই বলে দীর্ঘ বিবৃতি দেয়।[১০১] যদিও ১৯৮৫ সালের একটি সাক্ষাতকারে বোভোয়ার নিজে একটি নতুন অনুবাদের আবেদন করে বলেন: আমি চাই দ্বিতীয় লিঙ্গের আরেকটি অনুবাদ করা হোক, যা আরো সঠিক, সম্পূর্ণ এবং নির্ভরযোগ্য হবে।[১০৩]
প্রকাশকেরা এই অনুরোধ রাখতে সক্ষম হননি এবং কোন্সটেন্স বোর্ড ও সেলিয়া মালোভানি-চেভেলিয়ারকে কমিশনকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়।[১০৪] ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে এর ফলাফল প্রকাশিত হয়।[১০৫] এটি সাহিত্য সমালোচকদের কাছ থেকে সাধারণত ভালো সমালোচনা পায়, যারা কোন্সটেন্স বোর্ড ও সেলিয়া মালোভানি-চেভেলিয়ারকে পারসলে সংস্করণে না থাকা লেখাগুলো ঠিক করা এবং সেটির অনেক ভুল দূর করার জন্য স্বীকৃতি দেওয়া হয়।[১০৬][১০৭][১০৮][১০৯]
১৯৫১ সালের অনুবাদের সমুচ্চ সমালোচকদের একজন, টোরিল মোই সহ অন্যান্য সমালোচকেরা নতুন অনুবাদের ধরনের সাথে কথার ধরন, বাক্যগঠন, দর্শন এবং বাক্যগঠন সংক্রান্ত মিল নিয়ে সমালোচনা করেন।[৬][১১০][১১১]
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস এর পর্যালোচক “আমাদের কি নতুন অনুবাদে আবির্ভূত হওয়া এই প্রথম দ্বিতীয় লিঙ্গ এর পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ উদ্যাপন করা উচিত? আমি মনে করি না।”, বলে নতুন সংস্করণে বিভ্রান্তিকর ইংরেজি রয়েছে, যেখানে পারসলে এর সংস্করণটি সরল ছিল -এমনটি উদ্ধৃতি দেন।[৬]